রাজনীতি ও অর্থনীতি এই দুই সাপ পরস্পর পরস্পরকে লেজের দিক থেকে অনবরত খেয়ে যাচ্ছে
আধুনিক কবিতা তেমন বুঝি না। উত্তরাধুনিক কবিতা তো নাইই। তারপরেও হঠাৎ হঠাৎ দু’একটা বুঝে ফেলি। যেমন নৃসিংহমুরারি দের এই কবিতা। পশ্চিমবঙ্গে এই নামে যে একজন কামেল কবি আছেন সেটাই তো জানতাম না।
কবিতা পাই বুদ্ধিজীবীর নোট বই নামের একটি বইয়ের মূখবন্ধে। আত্মপরিচয়ের সংকট বুঝাতে যেয়ে এই কবিতার এই কটি লাইনের উদাহরণ।
আপনার বাড়িতে ফ্রিজ আছে।
বিদেশী রঙ্গিন টিভি আছে
এবং এন্তার ভিডিও ক্যাসেট আছে।
আপনার অনেক লকার আছে
ভল্ট আছে-
আপনার এয়ারকন্ডিশন্ড গাড়ি আছে-
উলেন কার্পেট এবং জাজিম আছে।
আপনার পাঁচটা বিলিতি কুকুর আছে-
বাথরুমে ইলেকট্রিক শাওয়ার আছে।
আচ্ছা বেশ তো-
আপনি কোথায় আছেন আপনার বাড়িতে?
কবিতাটা পড়ার পর আসেন নিজের আত্মপরিচয়টা বের করার চেষ্টা করি। কেউ কি সফল হলেন? আপনার বাড়িতে আপনি আসলেই কৈ?
কিংবা ধরেন এই কবিতাটা-
টুং টাং
মনে করো যেন বিদেশ ঘুরে মাকে নিয়ে যাচ্ছি অনেক দূরে
টুং টাং
পছন্দসই চাকরি পেতে হলে লিরিল সাবান ব্যবহার করুণ
টুং টাং
ভারতবর্ষ বাবাদের দেশ
টুং টাং
ভারতেরর রাজনীতি ও অর্থনীতি এই দুই
এঁটুলি সাপ পরস্পর পরস্পরকে
লেজের দিক থেকে অনবরত খেয়ে যাচ্ছে।
(সোমক দাস)
কেমন যেন লাগে না? মনে হয় এক লাইন কবিতার পরেই বলছে এখন এখন বিজ্ঞাপন বিরতি। আমাদের সাথেই থাকুন।
তবে চমৎকৃত হলাম শেষ লাইনগুলো পড়ে। আসলেই কি বাংলাদেশের অর্থনীতি ও রাজনীতি পরস্পরকে খাচ্ছে না? খাচ্ছেই তো। ভারতের চেয়ে দ্রুত গতিতে খাচ্ছে।
বিজ্ঞাপন প্রসঙ্গই যখন আসলো তখন শঙ্খ ঘোষের সেই বিখ্যাত কবিতাটা একটু পড়ি। শেষ লাইনটা সবসময়ই শোনা যায়।
বিশেষ করে বিজ্ঞপনের আধিক্যের বা বিজ্ঞাপন নির্ভরতার উদাহরণ দিতে গিয়ে।
একলা হয়ে দাঁড়িয়ে আছি
তোমার জন্য গলির কোণে
ভাবি আমার মুখ দেখাব
মুখ ঢেকে যায় বিজ্ঞাপনে।
এবার একটা কবিতার মাত্র একটা লাইন।
সারাজীবন একটা গরম কড়াইয়ের ওপর নেচে গেলাম।
এই লাইনটা ভাস্কর চক্রবর্তী নামের এক কবির এক কবিতা থেকে নেওয়া।
আত্মপরিচয়ের সংকটের কথা শুরুতে বলেছিলাম। কে বলে সংকট? এই তো আমি জানি। এই যে গরম কড়াইয়ের উপর নাচছে যে লোকটি সেটি আসলে আমিই।
তারচেয়ে বরং সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের উপর ভর করি। গরম কড়াইর উপর নাচতে থাকা ভাল না টুপ করে জীবনটা খসে পড়লা বেশি ভালো? কে দেবে উত্তর?
একদিন গোগ্রাসে গিলতে গিলতে
দু-আঙুলের ফাঁক দিয়ে
কখন
খসে পড়লো তার জীবন
লোকটা জানলই না।
(সুভাষ মুখোপাধ্যায়)
সুভাষ অধ্যায় আগে শেষ করি। তার এই কবিতাটা বরং পড়ি। পড়ে কেমন যেন গোলমেলে লাগে। মনে হয় চলতি বিশ্বমন্দা নিয়ে লেখা। আসলে সুভাষ যে কথা বলেছেন সেই মন্দা আমাদের মতো দেশে সারা বছরই লেগে থাকে।
যার হাত আছে তার কাজ নেই
যার কাজ আছে তার হাত নেই
আর যার ভাত আছে তার হাত নেই।
(সুভাষ মুখোপাধ্যায়)
আগে বলছিলাম অর্থনীতি আর রাজনীতি পরস্পরকে খাচ্ছে। তাহলে পুরা পৃথিবীর কি অবস্থা? পৃথিবী নাকি কেবলচি ঘুরছে, সূর্যকে কেন্দ্র করে। প্রশ্ন হলো কিভাবে ঘুরছে। সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের কবিতাটি পড়ি তাহলে।
পৃথিবীটা যেন রাস্তার খেঁকী কুকুরের মতো
পোকার জ্বালায়
নিজের ল্যাজ কামড়ে ধরে
কেবলি পাক খাচ্ছে।
(সুভাষ মুখোপাধ্যায়)
তাহলে উপায় কী? বদলাতে হবে। পরিবর্তনের সনদ বানাতে হবে। শ্লোগান দিয়ে গাইতে হবে দিনবদলের গান। শপথ করতে হবে বদলে দেওয়ার, বদলে যাওয়ার।
কিন্তু কারা বদলাবে? যারা আগেও বদলাবার কথা বলেছিল তারা কৈ?
আমার যে বন্ধুরা পৃথিবীকে বদলাবে বলেছিল
ত্বর সইতে না পেরে
এখন তারা নিজেরাই নিজেদের বদলে ফেলছে।
(সুভাষ মুখোপাধ্যায়)
আসলে কিছুই শেষ পর্যন্ত বদলায় না। কেন বদলায় না? সমস্যাটা কোথায়? সম্প্রতি আদালত যে রায় দিয়েছে সেটা কথা মনে করি। বলেছে, যাদের চোর বলেছিলাম তারা আসলে কেউই চোর না। অন্তত ভুল ভাবে চোর ধরায় তাদের আর চোর বলা যাবে না।
আইনসিদ্ধ পথে আবার চোর ধরতে হবে। সুতরাং আবার চোর ধরার আগ পর্যন্ত তরা সবাই সাধু। আর এই সাধুরা এখন কী করছে?-
অসুস্থ অসুখী দেশ। চোর
প্রহরী তাড়ায়।
(দিনেশ দাশ)
অনেক ভারী ভারী কথা বললাম।
এবার একটু প্রেম-পীরিতি নিয়ে আলাপ করা যায়। প্রেমের কথা বলবো, নাকি প্রেমহীনতার কথা বলবো? বরং দুইটাই বলি-
এরা বিয়ের আগে করে প্রেম
প্রেম থাকে না-
শুধু বিয়ে থেকে যায়।
তারপর বিয়ের পর করে প্রেম
প্রেম মেলে না-
শুধু বিয়ে ভেঙ্গে যায়।
(সন্তোষকুমার ঘোষ)
বিরহের কথাও না হয় একটু বলি। বিরহ নিয়ে কি কবিতার অভাব আছে।
আবার বিরহের ভিন্ন ভিন্ন মাত্রাও আছে। যেমন এই কবিতাটা-
বিয়ের দিন সকল মেয়ের
সত্যিকার দরাজ মন
বিফল প্রেমিক পাবেই পাবে
রঙিন খামে নিমন্ত্রণ।
(অমিতাভ চৌধুরী)
সত্যি করে বলি, সবার দিব্যি, আমার প্রেমিকার বিয়ের কার্ড একটা আমিও পেয়েছিলাম। কয়টা পেয়েছিলাম? সময় লাগবে যে গুণতে!
হাতের উপর হাত রাখা খুব সহজ নয়
সারা জীবন বইতে পারা সহজ নয়
এক কথা খুব সহজ, কিন্তু কে না জানে
সহজ কথা ঠিক ততটা সহজ নয়।
(শঙ্খ ঘোষ)
প্রেম বা বিরহ যাই বলিনা কেন, হাতের উপর হাত রাখা আসলেই সহজ না।
গোপন কথা বলি, প্রথম যখন প্রেমে পড়ি তখন বালিকাকে বলেছিলাম, ‘তোমার হাতটা একটু ধরবো?’। এর ফলাফল? ঐ যে বললাম একটা কার্ড পেয়েছিলাম, বিয়ের কার্ড।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।