~ ভাষা হোক উন্মুক্ত ~
সন্ধে মিলিয়ে গেছে কিছুক্ষন আগে। প্রতিবেশীদের আনাগোনাও কমে গেছে ততক্ষনে। মফস্বল শহরে রাত নেমে আসে দ্রুতই। এমন সময় সবুজ একটি জীপ গাড়ী এসে থামে সিও সাহেবের বাসার সামনে। গাড়ী থেকে নেমে আসেন বাচ্চাটির বাবা।
বাচ্চা হবার খবর পেয়েই কর্মস্থল থেকে রওনা হয়ে গিয়েছিলেন তিনি, পৌছুলেন সন্ধ্যের পরে। ঘরে ঢুকে সৌজন্য বিনিময়ের পর তিনি সোজা চলে গেলেন বাচ্চাটার মা'র ঘরে। কিন্তু সাত আট ঘন্টা গাড়ী চালানোর পরে তার কোলে তখনই বাচ্চাটা দিতে নারাজ জাহানারা বেগম, তাই কাপড় পাল্টে গোসলে ঢুকলেন তিনি। গোসল শেষে নামাজ আদায় করে বাচ্চাকে দেখতে চাইলেন। জায়নামাজে বসা অবস্থাতেই তার কোলে তুলে দেয়া হলো তার প্রথম সন্তানটিকে।
তুলোয় মোড়ানো ছোট্ট বাচ্চাটার মুখের দিকে তাকিয়ে তার মনে হলো এ যেন তারই প্রতিচ্ছবি, সন্তানকে বুকে জড়িয়ে কেঁদে ফেললেন বাবা, এই কান্নার কারনটা অনেকের কাছেই অজানা। কেবল একজন বাবাই বলতে পারবেন তার সেই সময়ের অনুভুতি।
রাত গভীর হতে থাকে আর সেই সাথে বাড়তে থাকে জাহানারা বেগমের আশঙ্কা। অন্ধকার আজ যেন ভয়াল দৈত্য দানবের রুপ নিয়ে এগিয়ে আসে তার কাছে। না - কোন ভাবেই হার মানবেননা তিনি, এক মুহুর্তের জন্য কোল থেকে নামাবেননা আত্মজার সন্তানটিকে।
খাটের ওপর হেলান দিয়ে বসে থাকায় সারা দিনের ক্লান্তিতে শেষ রাতের দিকে চোখের পাতা বুঁজে আসে তার। চমকে জেগে ওঠেন বাচ্চাটার সামান্য নড়াচড়ায়। তাকিয়ে দেখেন নীল হয়ে গেছে বাচ্চাটা, শ্বাস নিতে পারছেনা কিছুতেই। সেই মুহুর্তে জাহানারা অনুভব করলেন যেন তার চারপাশের পরিবেশ পালটে গেছে, নিজেকে আবিস্কার করলেন খোলা এক মাঠের ভেতর ... যতদুর চোখ যায় ধুধু প্রান্তর ... কোথাও কেউ নেই। ভয় আর আসঙ্কার শীতল এক স্রোত নেমে গেল তার মেরুদন্ড বেয়ে।
সেই মুহুর্তে প্রথম যে চিন্তাটি মাথায় এলো তার, তা হলো যে কোন ভাবে বাচ্চার শ্বাস প্রশ্বাস চালু করতে হবে খুব দ্রুত। মুখ ভর্তি বাতাস টেনে নিয়ে খুব অল্প অল্প করে বাচ্চাটার মুখে মুখ লাগিয়ে কৃত্তিম শ্বাস প্রশ্বাস দেয়া শুরু করলেন তিনি। অল্পক্ষন পরেই বুঝতে পারলেন আস্তে আস্তে স্বাভাবিক হয়ে আসছে শক্ত হয়ে যাওয়া বাচ্চাটা। ছোট্ট বুকটা স্বাভাবিক ছন্দে ওঠানামা করতে শুরু করেছে আবারও। শ্বাস নিতে পারছে বাচ্চাটা এখন।
ক্রমে নীলচে ভাবটা মিলিয়ে গেল বাচ্চার গোলাপী শরীর থেকে। জাহানারা নিজেও ফিরে এলেন স্বাভাবিক পৃথিবীতে। বাকি রাতটুকুতে আর কোন সমস্যা হয়নি বাচ্চাটার।
পরের ছয়টা দিন কেটে গেল একই ভাবে। এই কয়েক দিনে নানীর বুকের মাঝে একটু একটু করে বেড়ে উঠেছে বাচ্চাটা, ক্ষিধে পেলে ঘুম থেকে জেগে উঠে চিৎকার করেছে, খেতে খেতেই ঘুমিয়ে গেছে আবার।
জন্মের দ্বিতীয় দিন থেকেই দিনে দুই বার করে তাকে দেখে গেছে ডাক্তার। একমাত্র শিশু জন্ডিসের লক্ষন দেখা যাওয়া ছাড়া আর তেমন কোন সমস্যা হয়নি তার। ওটা জন্মের পর সব বাচ্চারই হয়, এতে চিন্তার তেমন কিছুই নেই।
উৎসবের সাজে সেজেছে আজ সেই বাড়ীটা। চারিদিক থেকে এসেছেন আত্নীয় স্বজনেরা, আজ বাচ্চাটার আকিকা।
কিন্তু শহরের গন্যমান্য ব্যাক্তিবর্গের চাইতে সেদিনের অনুষ্ঠানে প্রাধান্য পেয়েছিলো অনাহারে অর্ধাহারে দিন কাটানো গরীব লোকগুলো। আকিকা অনুষ্ঠানের সময় বাচ্চার দাদার পছন্দ করা নামেই নামকরন করা হয় তার। কিন্তু সবার অলক্ষ্যে কিশোরী মা তার সন্তানের নাম দেন 'জয়'। যে নামটির কথা জানতো শুধু সেই মমতাময়ী আর তার সন্তান।
ক্রমশ ...
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।