আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ইসলাম ধর্মে নারী [-] আন্ত:ধর্মীয় বিশ্লেষণ শেষ পর্ব

---
পৃথিবীর প্রধান প্রধান ধর্মগুলো খৃষ্ট , ইহুদী ও হিন্দু ধর্মে নারীর আন্ত:ধর্মীয় অবস্থান বিশ্লেষণের পর এবার ইসলামে নারীর অবস্থান নিয়ে আলোচনা করবো। অনেকে বলবেন আমি নিরুপেক্ষতা বজায় রাখতে পারিনি। বলবেন " আপনি পক্ষপাতপুষ্ট"! মানুষের জন্মগত সীমাবদ্ধতা নিয়ে নিরুপেক্ষতার দাবী কেউ করতে পারে না । তাই নিরুপেক্ষ দাবী করাটা মস্ত বড় মিথ্যা। মানুষ তার সমাজ, সংস্কৃতি , কৃষ্টি-কালচার , প্রথা , ধর্ম ইত্যাদির প্রভাব কখনও পুরোপুরি কাটিয়ে উঠতে পারে না।

তবে যুক্তির নিরীখে ভাল মন্দ বিচার করে সিদ্ধান্তে আসতে পারে মানুষ। তার এই প্রচেষ্টা পক্ষপাতমুক্ত না পক্ষপাতদুষ্ট তা বড় কথা নয় , বড় হল তার সেই প্রচেষ্টা। কারণ এ থেকেই সত্যকে বের করে আনা যায়। ফিরে যাই এবার মূল প্রসঙ্গে। আরবে অন্ধকার যুগে নারীদের অবস্থা ছিল করুণ।

সেখানে তাকে অকথ্যভাবে ঘৃণা করা হত। মেয়ে শিশুকে জীবন্ত পুঁতে ফেলা হত । কোরআনে তৎকালিন আরব সমাজের নারীর অবস্থান এইভাবে বর্ণণা করা হয়েছে। “সে সমাজে কাউকে তার কন্যা-সন্তান জন্ম হওয়ার সুসংবাদ দেয়া হলে সারাদিন তার মুখ কালো হয়ে থাকত। সে ক্ষুব্ধ হত এবং মনে মনে ভীষণ দু:খ পেত।

লজ্জায় সে মুখ লুকিয়ে চলত। সে চিন্তা করত ,অপমান সহ্য করে মেয়েকে বাচিঁয়ে রাখবে না তাকে মাটির তলায় পুঁতে ফেলবে। কত নিকৃষ্ট সিদ্ধান্ত নিত তারা! ” - কোরআন যেখানে মেয়ে জন্ম নিলে মাটিতে জীবন্ত পুঁতে ফেলার সামাজিক প্রথা কার্যকর সেখানে মেয়ের জন্ম হওয়াকে সুসংবাদ বলা হয় এবং মেয়ে শিশুদের মাটিতে পুঁতে ফেলাকে কঠোর ভাষায় নিন্দা করা হয়েছে। নবী মুহাম্মদের শিক্ষায় অসংখ্যবার নারী নির্যাতনের কার্যকর বিরোধিতা করা হয়েছে। স্বল্প বিস্তরে তা বর্ণনা করা সম্ভব নয়।

বাইবেলে ও Old Testament এ উল্ল্যেখ করা হয়েছে নারীর প্ররোচণায় আদম নিষিদ্ধ ফল খায় । যার কারণে খৃষ্টান ও ইহুদি সমাজে নারীরা ছিল ঘৃণিত। অথচ পুরো কোরানে এই ঘটনার জন্য নারীকে কোথাও দায়ী করা হয় নি। এবার আসি নারী শিক্ষার ব্যাপারে। নারীরা শিক্ষাদীক্ষায় ছিল এক্কেবারেই ধর্তব্যের বাইরে।

অ্ন্যান্য ধর্ম ও সমাজ নারী শিক্ষার প্রশ্নে ছিল চরম উদাসীন । আর রাষ্ট্রীয়ভাবে তাদের শিক্ষাদীক্ষার কোন ব্যবস্থা ছিল না। পরিকল্পিতভাবে পুরুষতান্ত্রিক সমাজ তাকে শুধু ভোগের উপকরণ বানিয়ে শোসন করে চলছিল হাজার হাজার বছর ধরে। নারী শিক্ষার ক্ষেত্রে এক পাহাড়সম প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হয়েছিল । নবী মুহাম্মদের একটি বাণী সেই পাহাড়কে বিচূর্ণ করে দিল"।

তিনি করুণাময়ের নির্দেশে নিয়ম করে দিলেন " প্রত্যেক নারী ও পুরুষের জন্য বিদ্যা অর্জন বাধ্যতামূলক" । যে নারীসমাজ শতশত বছর ধরে ছিল অবহেলিত , অশিক্ষা আর কুসংস্কারের নখড়ে ছিল ক্ষতবিক্ষত , সেই নারীর শিক্ষাদীক্ষার ব্যাবস্থা করা হল রাষ্ট্রীয়ভাবে। সম্ভবত রাষ্টৃীয়ভাবে ও রাষ্ট্রীয় খরচে পৃথিবীর ইতিহাসে নারীকে শিক্ষিত করার প্রয়াস এই প্রথম। নবী মুহাম্মদ মানবতার মুক্তি ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠার যে বিপ্লবী বাণী শুনিয়েছেন, তাতে যুগান্তকালের পংকিলতা ও পাশবিকতার সমাপ্তি ঘটে । ইসলাম ধর্মীয় ও সামাজিক বলয়ে যে সব নজিরবিহীন বৈপ্লবীক পরিবর্তন নিয়ে আসে, তা শুধু ধর্মীয় গ্রন্থের মুখভরা মহৎ তাত্ত্বিক বুলি ছিল না, বরং সমাজ ও রাষ্ট্রে তা বাস্তবায়িত করা হয় ।

ইতিহাসে তা মাইলফলক হয়ে আছে। সংক্ষেপে বলতে গেলে : □ ইসলাম মেয়েদের জীবন্ত কবর দেয়ার প্রথা চিরতরে উচ্ছেদ করে। □ পিতৃ ও স্বামীর সম্পত্তিতে স্থায়ীভাবে তাদের অংশীদার গণ্য করে। □ ব্যবসায় ব্যক্তিগত মালিকানার অধিকার দেয়। □ রাষ্ট্রীয়ভাবে অবৈতনিক নারী শিক্ষার ব্যবস্থা করা হয়।

□ বিধবাদের আবারো বিয়ে করার পূর্ণ স্বাধীনতা দেয়া হয়। □ এবং নারী ও পুরুষ উভয়ের জন্য তালাক প্রথাকে সহজ করে দেয়া হয় । পৃথিবীর প্রধান প্রধান ধর্মগুলোতে নারীর আন্ত:ধর্মীয় অবস্থান বিশ্লেষণ করা হয়েছে। এ তুলনামূলক বিশ্লেষণে কোন ধর্মে নারী অধিকারকে প্রাধান্য দেয়া হয়েছে তা বিচার করবেন পাঠকরাই।
 


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.