মানুষ যা কল্পনা করতে পারে, তা সে অর্জন করেত পারে।
আমার দুবন্ধু কবি পলাশ দত্ত ও আনন্দ রোজারিও একটি অন্তর্জালীয় আলোচনায় এসেছিলেন ফেসবুকে। সেটা এখানে তুলে দেয়া হল। পড়ে আপনার কথা বলুন নির্ভয়ে, নিঃসংকোচে।
.................................................................................................
10:26pm Polash- কবিতা লেখা বিষয়ে একটা কথা।
10:26pm Ananda- বলুন-
10:27pm Polash- আপনি কিছু দেখে প্রতিক্রিয়ায় কবিতা লেখেন। সেক্ষেত্রে কিছু দেখে আপনার কেমন লাগলো সেটা লেখা নয়, লেখা উচিত- আপনি কী দেখলেন। আপনার কী মত।
10:24pm Ananda- এটা আমি ভালো করে বলতে পারবো না। আমার যেটা হয়- আমি হয়তো কোন শব্দের ঘ্রাণ পাই।
সেখান থেকে শব্দটি আসে। শব্দটি পিছু পিছু আরও শব্দ আসে। তারা একটি ইমেজ তৈরি করে। এই হয়তো আমার দেখা না-দেখার মধ্যেকার কোনো ইমেজ।
10:30pm Polash হুম।
কিন্তু এইমাত্র মনে পড়লো আমার বক্তব্যের সঙ্গে এ্যারিস্টটলের বক্তব্য মিলে যায়। তিনি বলেছিলেন পোয়েট্রি- ইন এ সেন্নস অল দ্য ওয়ার্ড-আর্ট- ইজ ইমিটেশন। তিনি অবশ্য ঠিক এই ভাষায় বলেন নাই। আপনি যে শব্দ-ঘ্রাণ পান সেই শব্দটি কি কোনো প্রত্যক্ষ দৃশ্যমানতা থেকে আসে?
10:30pm Ananda- ধরুন- আমি পার্কে গেছি। দুটি শিশু খেলছে।
মেয়ে শিশুটি একসময় ডেকে উঠল- ভাই।
আর ছেলে শিশুটি সাড়া দিল- কী বোন। ওরা দুজনে কাছে এসে গেল। ওদের দেখে আর পার্কের গাছপালার ভেতর দিয়ে হাটতে হাটতে মনে পড়ে গেল শব্দ- ভাই-গাছ । এর পর এসে গেল বোন-গাছ ।
এর পরে এসে গেল একটি দৃশ্য কল্প।
10:34pm Polash- হ্যা। এগুলোও তো একরকমের কবিতা। কল্পকবিতা। এবং বাংলারাজ্যে আপাতত এই কবিতার গ্রহণীয়তা বেশি।
10:35pm Ananda- আমারতো পড়াশোনা কম।
10:35pm Polash- আমার পড়াশোনা বলতে গেলে নাই। কিন্তু কবিতা বিষয়টাকে শিল্প মানতে আমি একদমই নারাজ।
10:35pmAnanda- আমি এইভাবে কখনো দেখি। সেদিন খুব মেঘ করলো।
এর মধ্যে ন্যাট এসে বহুরূপীর করা ডাকঘর নাটকটি দিয়ে গেল। আর আমার ছোট মেয়েটি বলে উঠল, দ্যাখো বাবা- মেইল ম্যান এসেছে। মেইল ম্যান শব্দটা থেকে বাংলা শব্দ এসে গেল- ডাক হরকরা। ডাক কথাটা আমার মাথার মধ্যে নেই্, আছে হরকরা শব্দ। আর আকাশের মেঘ থেকে মেঘ শব্দটি।
মিলে মিশে হয়ে গেল মেঘ-হরকরা।
10:36pm Polash- আপনি পেলেন মেঘ-হরকরা শব্দটি?
10:3৬pmAnanda- এই রকম করে শব্দটি এসে গেল। ।
10:36pm Polash- ওটা কিন্তু চমৎকার ব্যাপার।
10:37pmAnanda- হ্যা পেলাম শব্দটি।
শব্দটি হয়তো পুরনো। কখনো এটা কবিতা হয়ে উঠবে। কবিতা হয়ে উঠলে শব্দটি আবার নতুনের মতো বেজে উঠবে।
10:37pm Polash- নীরেনের কবিতা আপনার খুব একটা ভালো লাগে না বোধহয়।
10:37pm Ananda- কেন ভালো লাগবে না।
উনিতো পণ্ডিত মানুষ। অনেক গভীর ভাবনাকে সহজ করে বলেন। আবার তার ভেতরে যে দৃশ্যকল্প থাকে কখনো তা সাধারণ চিঠির মতো মনে হয়।
10:38pm Polash- শুনুন আমি একটা পাণ্ডলিপি বানাচ্ছি। নাম ক্যাশিয়ারের নোটবুক
10:39pm Ananda- ভালই হবে মনে হয়।
হ্যা, এটা ভাল কাজ হবে। আমার বাবা মুদি দোকানী ছিলেন। তার একটা ক্যাশবুক ছিল।
10:41pm Polash- আমার কাজ ভালোমন্দ দিয়ে কিছুই হবে না। আই শ্যাল রিমেইন আনরেড আমোঙ মাই ফেলো পোয়েটস টিল মাই ডেথ।
বাট দ্য ফ্যাক্ট ইজ আই ডোন্ট কেয়ার কমেন্টস অব মাই ফেলো পোয়েটস; আই ওনলি রেসপেক্ট দ্য রিডার হুম আই ডোন্ট নো, হুম আই শ্যাল নেভার নো।
আপনি দান্তের লেখাপত্তর কিছু পড়েছেন? আমি কিন্তু পড়িনি আগেই বলে রাখি।
10:42pm Ananda- আমার পড়া আছে। এখন আবার পড়া দরকার।
10:42pm Polash- ডিভাইন কমেডি?
10:43pm Ananda- হ্যা।
অনেক আগে। আমার প্রয়াত বন্ধু প্রতিকের সাথে পড়েছি। ওতো কবি ছিল। কবির মতো করে পড়ে শোনাতো। শব্দকে মন্ত্রের মতো শোনা যেত।
আবার দৃশ্যকেও ধরা যেত। সবকিছু অন্যরকম হয়ে যেত। কবিরা যখন বলে তখনতো ভেতর থেকে বলে। কোনো অসত্য- অহিত কবিদের মধ্যে থাকে না। এজন্য কবি সবসময়ই বিবেকের কাজ করে।
একটি বিবেক-বীথি বলতে পারেন। ওর বিবেক-বীথি ছিল। এইসব নিয়ে প্রতিকতো নিজেই একসময় ডিভাইনের দিকে চলে গেল।
10:43pm Polash তার প্রথম বইটা ছিলো বোধহয় ভিতা নুওভা বাংলায় নবীন জীবন নামে অনুবাদ হইছে। অবশ্যই ভারতবর্ষ থেকে।
ওটা পড়ার চেষ্টা করি মাঝেমাঝে। আর দু:খ হয় আমরা কী চমত্কার পরচর্চায় সময় কাটাই।
10:43pm Ananda- হ্যা। অনেকে এরকম বলেন।
10:44pm Polash- কাল একটা ছেলেকে খুব বকলাম।
মজার বিষয় হচ্ছে আমরা পরস্পর দেখা হলে কবিতা নিয়ে শিল্প নিয়ে কথা বলি না। ব্যক্তি সম্পর্কে কথা বলি।
10:44pm Ananda- বলুন-
10:44pm Polash- তার সঙ্গে আমার প্রায়ই দেখা হয়। সে শুধু ব্যক্তির কথা বলে। ব্যক্তিগুলো আসলেই মিডিওকার।
কিন্তু তাদের নিয়ে আমি কথা শুনতে আগ্রহী নই এবং তাকে বললাম আপনারা খালি পরচর্চা করেন। এই কারণে আমি কারো সাথে মিশি না । ক্ল্যাসিকের সাথে আর কনটেম্পোরারি টেক্টটের সাথে আমার দেখা হবে। এই তো যথেষ্ট। আর কারো সঙ্গে কথা হলে কথা হবে বিষয় নিয়ে ব্যক্তি নিয়ে নয়।
10:46pm Ananda- আমি কিন্তু এই জায়গাটাতেই কথা বলতে চাই। আপনি পলাশ। আপনি একজন ব্যক্তি।
10:46pm Polash-ব্যক্তির সঙ্গে কথা? তা তো হবেই। কিন্তু ব্যক্তি নিয়ে নয়।
10:46pm Ananda-আপনার সাথে তো আমার পূর্ব পরিচয় ছিল না। ফেসবুকে আপনার লেখা, আপনার চিন্তাভাবনাই আমার সঙ্গে আপনাকে পরিচিত করেছে। ব্যক্তি পলাশ নয়। ব্যক্তি পলাশ পরে এসেছে। সেটা সামাজিক ব্যকরণমাত্র।
আমার সাথে বিরোধ হবে আপনার চিন্তার সাথে। ভাবনার সাথে। আমি কোনো ব্যক্তিকে আক্রমণ করবো না। আক্রমণ করবো তার ভাবনাকে, যেটা আমার কাছে অসৎ মনে হচ্ছে। ব্যক্তির অসততাকে আক্রমণ করবো।
অসভ্যতাকে ধরিয়ে দেবো। কিন্তু এখানে কোনো ব্যক্তির অসৎ ভাবনাকে দেখিয়ে দিন। দেখবেন, আপনার বিরুদ্ধে জেহাদ লাগিয়ে দেবে। তার ভাবনার সাথে না পারলে তাকে শারীরিকভাবে আক্রমণ করবে। না-মানুষেরা তাকে শেষ করে দেবে।
হা-মানুষ কবি হুমায়ূন কবীর, হুমায়ূন আজাদকে এভাবে মেরে ফেলা হয়েছে। এজন্য অনেকে অসৎ ভাবনাকে স্বনামে দেখিয়ে দিতে ভয় পান। তারা নিরাপত্তাহীনতায় ভোগে।
10:48pm Polash- হ্যা। নিজেকে আড়ালের ভিতরে টেনে আনেন আত্মরক্ষার তাগিদে।
10:48pm Ananda- আসল বিষয় হল- আপনি একজন কবি। ঈশপোনিষদে কবিদের কি বলা হয় জানেন- বলা হয় কবি মানে বৃদ্ধ। বৃদ্ধ বয়েসে কোনো ব্যক্তির আর একক কোন সত্বা থাকেন না। তখন তিনি সমগ্রকে ধারণ করেন। একটি সময়কে ধারণ করেন।
একটি সভ্যতাকে ধারণ করেন। তার একটি পুঞ্জাক্ষী তৈরী হয়ে যায়। তিনি অতীত দেখেছেন। বর্তমানকে দেখছেন। এবং এই মিলে তিনি দেখেন কৃষ্ণ দ্বৈপায়ন ব্যাসের মতো ভবিষ্যৎকে।
সবাই তার কাছে ধর্ণা দেন। সবাই নিদান চান তার কাছে। যেমন মহামতি ভীষ্মের কাছে এসেছিলেন জয়ী পাণ্ডবগণ। তিনি শরশয্যায় শুয়ে তার অর্জিত অভিজ্ঞান বলেছেন সকলকে- মহাভারতের শান্তি পর্বে লেখা আছে সব।
যে চ মূঢ়তমা লোকে যে চ বুদ্ধেঃ পরং গতাঃ।
তে নরাঃ সুখমেধন্তে ক্লিশ্যত্যন্তরিতো জনঃ। ।
দেখুন ঈশ্বরকেই কবি বলা হচ্ছে উপনিষদে। বিভুতি ভূষণের কুশল পাহাড়ী গল্পটি পড়ুন। বৃদ্ধ সাধু বলছেন- কবি তিনিই বটে বাবা।
এখানে বসে বসে দেখি। এই শালগাছটিতে ফুল ফোটে, বর্ষাকালে পাহাড়ে ময়ূর ডাকে, ঝর্ণা দিয়ে জল বয়ে যায়, তখন ভাবি, কবি বটে তিনি। .. তাঁর এই কবিরুপ দেখে ধন্য হয়েছি।
10:50pm Polash- আচ্ছা কবি মানে দ্রষ্টা এটা আপনি মানেন?
10:50pm Ananda-'কবির্মনীষী পরিভূঃ স্বয়ম্বূঃ'। যিনি বৃদ্ধ তিনিতো তার অভিজ্ঞতা থেকেই ফোরকাস্ট করতে পারেন।
এজন্যই তিনি দ্রষ্টা।
10:50pm Polash- হ্যা। কিন্তু শূন্য দশকের কেউ কেউ মনে করেন কবি মানে জ্ঞানী।
10:53pm Ananda- জ্ঞানী তো বটেই। কিন্তু সে জ্ঞানতো তত্বজ্ঞান হতে হবে।
পূর্ন ভাবনার মধ্যে থাকতে হবে। পূর্ণর দিকে যাত্রার সক্ষমতা থাকেতে হবে। একটি বিবেকবীথির বানী হয়ে উঠতে হবে। একক ব্যক্তি যখন কথা বলে তখন আর পরার্থপরতা থাকে না। তা হয়ে উঠতে পারে স্বার্থপরতা, যা কখনো ভয়ানক হয়ে উঠতে পারে।
আলোকবিনাশী হতে পারে। দরকার পূর্ণত্বের দিকে যাত্রা। একটি সমগ্রকে দেখার অভিপ্রায়। খণ্ড খণ্ডকে জোড়া লাগানো। রবীন্দ্রনাথ একে বলেছেন একাকার হয়ে যাওয়া।
জলকে কখনো খণ্ড করা যায় না। জলের যাত্রা কিন্তু সব সময়ই অখণ্ডের দিকে। সমুদ্রের দিকে। উৎসের কাছে ফেরার দিকে। এটা হা-জ্ঞান।
10:56pm Polash-সমকালীণ কাব্যচেতনা বোঝাতে এলো এটা। এদের কেউ কেউ জ্ঞানী হয়ে সমগ্রতার ধার ধারছেন না। নিছক ব্যক্তিমাত্র হয়ে উঠছেন। একক ব্যক্তির মতো লেখালেখির ব্যাপারী হয়ে উঠছেন। এজন্য তারা ঠেলাঠেলি করছেন।
বিবেকবীথি দিয়ে নয়- দেখছেন ধূর্ততার এক চোখ দিয়ে। নগত মালকড়ির দিকেই তার চোখ। এরা না-জ্ঞানী।
10:51pm Ananda- হতে পারে, তবে ভয় নেই। প্রকৃত বিবেকবীথি যখন জেগে ওঠবে তখন এইসব না-জ্ঞান বিদায় হবে।
10:58pm Polash- কিন্তু আজকে আমাকে বিদায় নিতে হবে। মেয়েকে নিয়ে বেরোবো। আমার বাবা-মার বাসায় তাকে রেখে আমি অফিস যাবো। স্ত্রী ইতিমধ্যে চলে গেছেন।
11.00pm Ananda- ঠিক আছে।
ধন্যবাদ ভাল থাকবেন।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।