কত আজানারে জানাইলে তুমি, কত ঘরে দিলে ঠাঁই দূরকে করিলে নিকট,বন্ধু, পরকে করিলে ভাই।
কলিং বেলের শব্দে ঘুম ভাঙ্গল। কাল অনেক রাতে শুয়েছি। এখন বাজে ভোর পাঁচটা। কে এল এত সকালে? খুব বিরক্তি নিয়ে দরজা খুলে যাদের দেখলাম, তাদের দেখে আমার বিরক্তি কোথায় যে উড়ে গেল? খুবই আবাক হলাম!! চিৎকার করে বলে উঠলাম,"তোমরা??"
রেবা আপু, ইমরান ভাইয়া আর ওদের দুই ছেলে।
রেবা আপু বলল,” ঘুম ভাঙিয়ে দিলাম তাই না, সরি। । “
----- “বিদেশে থেকে থেকে খুব ভদ্রতা শিখেছ। ওসব সরি ফরি বিদেশে যেয়ে বলো। খুব আমার ভদ্রলোক হইছেরে।
দেশে এসেছ আর আমার বাসায় না আসলে খবর ছিল তোমাদের??”
ইমরান ভাইয়া বলল --“এখনও তো সকাল হয় নি তাই বলছি। “
---“সকাল হয়নি তো কি?, ঢাকা থেকে যারা রাতে রওনা দেয় তারা এই সময়ই এখানে পৌঁছায়। এটা কোন ব্যাপার হল। তোমরা খবর দিয়ে আসলেই সমস্যা হত , উত্তেজনায় ঘুমাতেই পাড়তাম না। “
ইমরান ভাইয়া বলল,”এইটাই আমাদের দেশ, খবর দেয়া দেয়ির কোন ব্যাপার নাই, চোখের সামনে আসলেই হলো একেবারে হৃদয়ে পৌঁছে যাবে।
“
কত্তদিন পর ওদের সাথে দেখা। ! আমরা তখন ধানমন্ডিতে থাকতাম। বাবা ডাক্তার, বাবার ক্লিনিকটাও আমাদের বাসার পাশেই। রেবা আপু, আমার চাচাতো বোন। আমরা ডাকি রেবাপু বলে।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স দিয়ে আমাদের বাসায় এসেছে। উদ্দেশ্য বিসিএস দেবে চাকুরী খুঁজবে। মুখে এক কথা --আগে চাকুরী তারপর বিয়ে শাদির কথা ভাবা যাবে।
একরাতে রেবাপুর প্রচন্ড পেট ব্যথা শুরু হয়। রাতেই ক্লিনিকে নেয়া হয়।
পরদিন রাতে অপারেশন হয়। পেটে টিউমার। অপারেশনটা বাবার করার কথা ছিল কিন্তু তিনি তার ভাতিজীর শরীরে ছুরি চালাতে পারেননি। তাই অপারেশন করেছে বাবার খুব প্রিয় ছাত্র ইমরান ভাইয়া, বাবা পাশে দাঁড়িয়ে থেকেছেন।
অপারেশনের পর রেবাপুর মাথায় কে যেন ঢুকিয়ে দিয়েছে যেহেতু তার পেটের টিউমার অপারেশন হয়েছে তাই সে আর কোন দিন মা হতে পারবে না।
অতএব সে একেবারে কঠোর সিদ্ধান্ত নিতে আর একমূহুর্ত দেরি করল না। সে সরাসরি জানিয়ে দিল আমি বিয়ে করব না। বাবা মা তো মহা বিরক্ত --" কে তোকে এই সব বলে? এই সব উদ্ভট কথা বিশ্বাস করার জন্য কি ইউনিভার্সিটিতে পড়েছিস। আমি ডাক্তার আমার চেয়ে তুই বেশি জানিস। "
এদিকে ইমরান ভাইয়াদের বাসা থেকে নাকি বাবার কাছে প্রস্তাব এসেছে রেবাপুকে ইমরান ভাইয়া বিয়ে করতে চাচ্ছে।
রেবাপু কিছুতেই রাজি হচ্ছে না । তার এক কথা বিয়ের পর যদি বাচ্চা কাচ্চা না হয়, সেই ঝামেলার চেয়ে এই ভাল। ।
একদিন কলেজ থেকে এসে দেখি মা রেবাপুর সাথে খুব রাগারাগি করছে আর রেবাপু কাদঁছে। মা বলছে --"তোমাকে আর কত বোঝাব? মেয়ের এক জেদ।
"
আমিও বকা খেলাম,-- "এখানে দাঁড়িয়ে কি শুনছ? যাও এখান থেকে। " কিছুই বুঝলাম না। ?
সকালে কলেজে যাবার জন্য বাসার বাইরে আসতেই দেখি ইমরান ভাইয়া, আমার গাড়ি থামাতে বলছে।
গাড়িতে উঠে বলল-- "কলেজ যাচ্ছ। চল তোমার সাথে যাব।
"
সে যাবে মেডিকেল কলেজ আর আমি যাব ইডেন কলেজ। পথে অনেক কথার মাঝে হঠাৎ ইমরান ভাইয়া বলল,-- "আমি তোমার রেবাপুর সাথে কথা বলতে চাই, আজ বিকালে। তুমি কি তোমার আপুকে বলবে। "
আমি রাজি হলাম। ভাইয়া বলল -- "তোমার আপু মনে হয় রাজি হবে না তুমি তাকে রাজি করাতে পারবে।
"
আমি বললাম-- "পারব। আর রাজি না হলে মাকে বললেই হবে। রেবাপু বাধ্য মেয়ের মত দেখা করবে। "
মার কথা বলার সাথে সাথে ভাইয়া বলল ,-- "না না আন্টিকে কিছু বলার দরকার নাই। তুমি নিজেই বলে দেখ।
তোমার আম্মুকে কিছু বল না। "
মাথা ঝাঁকালাম ঠিক আছে।
খুব মজা মজা লাগল। একটা উত্তেজনা শরীরের ভিতরে প্রবাহিত হয়ে গেল। একটা নিষিদ্ধ কিছুর যেন আভাস পেলাম।
খুব পুলক অনুভব করলাম । বড় হয়েছি এমন একটা ভাব ও এসে গেল।
কলেজ থেকে ফিরে রেবাপুকে বললাম---" ইমরান ভাইয়া তোমার সাথে কথা বলতে চাচ্ছে। "
রেবাপু ও আমাকে অবাক করে দিয়ে বলল-- "আমি ও চাচ্ছি। "
লে হালুয়া!!! তবে রে ভাই আমি কে? রেবাপু বলল --"তোর ভাইয়াকে বল সন্ধ্যায় ছাদে আসতে।
আর তুই কোথাও যাবি না আমার সাথে থাকবি। " ---তথাস্থ। ।
সন্ধ্যায় ছাদে আমি ও রেবাপু এসে দেখি ভাইয়া দাঁড়িয়ে আছে। ভাইয়া খুব স্মার্টলী বলল--- "আমি তো জানি ইউনিভার্সিটিতে পড়ুয়া মেয়েরা যথেষ্ট স্মার্ট হয়।
আপনার মধ্য এত জড়তা কেন?" মনে হল উহ্ ভাইয়া কি স্মার্ট । ততধিক স্মার্ট রেবাপু উত্তর দিল -----"এখন ও তো পরিচয়ই হয় নি,তাতেই বুঝে গেলেন আমি কেমন?"
এবার মনে হল আসলেই ভাইয়াটা গাধা, আপু স্মার্ট। আপু একেবারে খুব সাবলীল ভাবে ভাইয়াকে বলল, “আপনি কি জন্য আমাকে ডেকেছে তা আমি জানি এবং তার উত্তর হচ্ছে না । এই কথা আমি আপনাদের জানিয়ে দিয়েছি,কি কারনে আমি রাজি হচ্ছিনা তাও আপনেরা জানেন! তবে কেন আপনারা আমার সাথে ঝুলে আছেন? আপনারা এইভাবে ঝুলে আছেন বলেই আমাকে প্রতিদিন আনাকাঙ্খিত কিছু সমস্যার মুখোমুখি হতে হচ্ছে। প্লিজ আপনারা আমাকে রেহাই দেন।
” বলতে বলতে আপু প্রায় কেঁদেই ফেলল। মনে হচ্ছে আপু যেন সব কথা রেডি করে নিয়ে এসেছে এবং এক নিঃশ্বাসে বলে গেল, শেষের দিকে আর সামলাতে না পেরে কেঁদেই ফেলল ।
ভাইয়া আপুকে বলল--"এ ছাড়া আর কোন কারন কি আছে? যদি না থাকে তবে আমার কিছু কথা আছে, সেই কথাগুলো আপনাকে শুনতে হবে, এর পরেও আপনার যদি আপত্তি থাকে তবে আমি আর কিছু বলবে না। “
--"না আর কোন কারন নেই। " আপু শুনতে রাজি হল এবং চুপচাপ শুনে গেল।
----"আপনার অপারেশন আমি করেছি। কি অপারেশন হয়েছে, কি ভাবে হয়েছে এটা আমি জানি। আপনি যে ভয়টা পাচ্ছেন তা অহেতুক এর কোন ভিত্তি নাই। হ্যাঁ আনেক দম্পতি নিঃসন্তান আছে। এটা তাদের ভবিতব্য।
আর ভবিতব্যের উপরে তো আমাদের হাত নেই। এটা তো যে কারও জীবনে হতে পারে। আমরা কি আমাদের ভবিষ্যত বলতে পারি। " বলে ভাইয়া থামলেন।
একটু চুপ থেকে আপু বললেন ---"এই কথাগুলো খুব পুরানো, আমি জানি।
"
ভাইয়া কোন উত্তর দিলেন না? আমি ভাবছি আপুটা এত কঠিন। ছিঃ! ছিঃ! ভাইয়া কত সুন্দর করে বুঝাচ্ছে !! ভাইয়ার উচিৎ আপুর পিছনে আর সময় নষ্ট না করা । এই কঠিন মহিলা সারা জীবন কঠিনই থাকবে । । ভাইয়ার জীবন শেষ করে ফেলবে।
আমার তখন যা বয়স সেই বয়সে আমি প্রেমিক আর প্রেমিকাকেই খুঁজে ফিরছি। যুক্তি তর্ক অযৌক্তিক মনে হচ্ছে । এখানে কেন আসবে যুক্তি ??
আবার কিছুক্ষন চুপ থেকে আপু বলল-- "আপনি কি আর কিছু বলবেন?"
ভাইয়া একটু চুপ করে থেকে বলল-- " তোমার নাভীর নিচের বাঁ দিকে যে বড় কালো তিলটা আছে, সেটা আমি ছাড়া আর কেউ দেখুক তা আমি চাই না। তোমার ছাড়া আর কারও গায়ের তিলও আমি খুঁজতে চাই না। " বলেই ভাইয়া হন হন করে হেঁটে চলে গেল।
আপু হঁা করে দাঁড়িয়ে রইল।
আমি ভাইয়ার কথা শুনে বিমোহিত। ওয়াও কি রোমান্টিক।
আমি উৎসাহে আপুকে জড়িয়ে ধরলাম। বললাম--" দেখেছ আপু কি ভাল ভাইয়াটা, কি সুন্দর করে কথা বলে?"
আপু দিল ধমক "পাকামী হচ্ছে না? বদ কোথাকার?একটা বাজে কথা বলে গেল আর তুই লাফাচ্ছিস বাঁদর।
"
বাজে কথা ?!! কি বাজে কথা!! আমারতো দারুন লাগল! আপু কান ধরে দিল একটা টান আর বলল --""এই কথা যেন কেউ না জানে? বেটা বেক্কল??" বলেই ওড়না মুখে চেপে হাসি লুকাবার চেষ্টা করল।
এই কথা কাউকে না বলে তো হজম করতে পারছি না। নীচে নেমেই প্রথমে মাকে পেলাম তাকে বলার সাথে সাথে মা হেসে বলল "কাউকে বলিস না সময় মত সবাই জানবে আসলেই ছেলেটার মাথায় কিছু নাই নইলে তোর সামনে এই কথা বলে?"
কি মুশকিল আমি শোনা টাই দোষ?
অতঃপর তাহারা এখন আমার বাসায় বেড়াতে এসেছে, দুই ছেলে সহ।
রেবাপুর ভাষায় দুটাই বাপের মত বাঁদর।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।