চোখ খুবলে নেয়া অন্ধকার, স্ফুলিঙ্গ জ্বেলে দাও!
নীলনকশার রাজনৈতিক তৎপরতা রুখে দাঁড়ান!সেনা প্রধান লিখেছেন, সাম্রাজ্যবাদী সংস্থা জাতিসংঘের এক কর্মচারী এবং ভারতীয় রাষ্ট্রদূত তাকে ২০ জানুয়ারি নির্বাচন সমর্থন না করার জন্য নির্দেশ দিয়েছিল। অন্যথায়, শান্তি মিশনের চাকরি কেড়ে নেয়ার হুমকি দিয়েছিল। তখন সেনাপ্রধান আশঙ্কা করছিলেন জাতিসংঘের মোটা বেতনের চাকরি না থাকলে সামরিক বাহিনীর নিয়ন্ত্রণ ভেঙ্গে পড়তে পারে। একেমন "দেশপ্রেমিক" বাহিনী! এই নির্লজ্জ দালালী ও চক্রান্তের ধিক্কার জানাবার ভাষা খুঁজে পাওয়া দুষ্কর!
আমরা আমাদের ঘোষণায় উল্লেখ করেছিলাম:
ফখরুদ্দিনের উপদেষ্টা সরকার হচ্ছে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের নেতৃত্বে সাম্রাজ্যবাদ ও ভারতীয় সম্প্রসারণবাদের আজ্ঞাবহ সরকার। এ সরকার হচ্ছে জাতিসংঘ শান্তি মিশনের আওতায় সাম্রাজ্যবাদের সামরিক ব্যবস্থায় আত্মীকৃত, সাম্রাজ্যবাদের বিশ্বস্ত মিত্র সেনা বাহিনীতর প্রত্যক্ষ হস্তক্ষেপে প্রতিষ্ঠিত ও নিয়ন্ত্রিত।
এ সরকার দেশের গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, রাষ্ট্রীয় ও সামরিক সংস্কারের সাম্রাজ্যবাদী নীলনকশা বাস্তবায়ন করে। এইসব সংস্কার এদেশেকে উপনিবেশিক কায়দায় শোষণ-নিপীড়নের পথে চালিত করছে।
আজ এটা সুস্পষ্ট হয়ে গেছে যে, সাম্রাজ্যবাদ ও ভারতীয় সম্প্রসারণবাদ এদেশের উপর তার একচ্ছত্র আধিপত্য রক্ষা ও বিস্তারের লক্ষ্যে এক নীলনকশা বাস্তবায়ন করে চলেছে। ১/১১-এর ক্যু-দেতা হতে শুরু করে নির্বাচন পর্যন্ত সবকিছুই এই নীলনকশার অধীনে পরিচালিত হয়েছে এবং এখনও হচ্ছে। যদিও বিগত তত্ত্বাবধায় সরকারের দুর্বিসহ শাসন থেকে মুক্তি পেতে "অন্ততঃ মন্দের ভালো হতে পারে" আশা করে জনগণ মহাজোট মুখি হওয়ায় তাদের ''সোনায়-সোহাগা" হয়েছে।
কিন্তু, প্রতিদিন এটা স্পষ্টতর হচ্ছে যে, আঁতাতের মাধ্যমে মহাজোট এই নীলনকশা বাস্তবায়নের প্রধান ঠিকাদার হয়েছে।
আমরা নির্বাচনপূর্ব এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছিলাম, ফখরুদ্দিন সরকার নির্বাচনের মধ্য দিয়ে এমন এক বশংবদ নির্বাচিত সংসদ ও সরকার প্রতিষ্ঠা করতে সচেষ্ট, যারা তাদের দায়মুক্তি ও বৈধতা দান করবে। ইলেকশান ইঞ্জিনিয়ারিং-এর বিতর্কে না গিয়েও বলা যায়, দায়মুক্তি প্রশ্নে মহাজোটের সাথে সাম্রাজ্যবাদ-সম্প্রসারণবাদের নিয়ন্ত্রণে ফখরুদ্দিন সরকারের পূর্ব সমঝোতা ছিল দিবালোকের মত সুস্পষ্ট। ফখরুদ্দিন সরকারের দায়মুক্তি এবং গণবিরোধী অপকর্মের বৈধতাদানের জন্য মহাজোট সরকার যে তোড়জোড় শুরু করেছে, তা সেই পূর্ব সমঝোতাকেই প্রমাণ করছে।
মহাজোট সরকার দায়মুক্তি ব্যবস্থা করতে তা-ই নয়, তারা ফখরুদ্দিন সরকারের নীলনকশাজাত অপকর্মগুলোর বৈধতাদান করারও উদ্যোগ নিচ্ছে।
সাম্রাজ্যবাদী নীলনকশার সংস্কার পরিকল্পনা অংশ হিসাবে চরম ফ্যাসিস্ট "সন্ত্রাস বিরোধী আইন", শ্রমিক বিরোধী "শ্রম আইন", পাটকল বন্ধ, অগণতান্ত্রিক ও গণরাজনীতি বিরোধী "গণপ্রতিণিধিত্ব অধ্যাদেশ", জাতীয় স্বার্থ বিরোধী গ্যাসব্লক ইজারা, কয়লা নীতি, কৃষক বিরোধী হাইব্রীড বীজ বিক্রি ইত্যাদি জঘন্য অপকর্মগুলো অনুমোদন করতে যাচ্ছে এই সরকার ও সংসদ।
ফখরুদ্দিন সরকারের দায়মুক্তি ও অপকর্মের বৈধতাদান করা হলে, তা দেশ বিক্রি, বিদেশী মদদে ক্ষমতা জবর দখল, গণবিরোধী জরুরী অবস্থা ও স্বৈরাচারকে সাংবিধানিকভাবে রক্ষা করার ন্যাক্কারজনক দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। যদিও একথা সত্য, এই সংবিধান শুরু থেকে জাতীয় পরাধীনতা, হত্যা, অবৈধ ক্ষমতা দখল, স্বৈরাচার, ধর্মের রাজনৈতিক ব্যবহারসহ জাতীয় স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব বিরোধী অগণতান্ত্রিক ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত ও বিকশিত হয়েছে। আজ আবারো মহাজোট সরকার ও নবগঠিত সংসদ সেই পুরনো প্রতিক্রিয়াশীল পথে সংবিধান সংশোধন করতে যাচ্ছে, যা এই রাষ্ট্রকে আরো বেশী প্রতিক্রিয়াশীল ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত করবে। এই সংবিধান সংশোধনী আবারো প্রমাণ করবে এই সরকার, সংসদ, সংবিধান ও রাষ্ট্র জনগণের উপর সাম্রাজ্যবাদ ও ভারতীয় সম্প্রসারণবাদের দালাল বড় পুঁজিপতি ও সামন্ত শাসকশ্রেণীর প্রতিক্রিয়াশীল একনায়কত্বের হাতিয়ার ছাড়া অধিক কিছু নয়।
আর এসব কিছুই বর্তমান প্রতিক্রিয়াশীল সরকার, সংবিধান ও রাষ্ট্র উৎখাত করে জনগণের প্রকৃত স্বাধীন ও গণতান্ত্রিক সরকার, সংবিধান ও রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার গণদাবীকে আরো বেশী ন্যায্য ও জোরালো করে তুলেছে।
আমরা সকলেই জানি, এক/এগারো পূর্ব জ্বলন্ত উনুন থেকে এদেশ এক/এগারো পরবর্তী ফুটন্ত কড়াইয়ে পড়েছিল। জনগণ এই ফুটন্ত কড়াই থেকে মুক্তির আশায় ভোট দিয়েছে। জনগণ ফখরুদ্দিন সরকারের দায়মুক্তি এবং তার অপকর্মের বৈধতাদানের জন্য কাউকে ম্যান্ডেট দেয়নি। জনগণ ফখরুদ্দিন সরকারের কন্ঠরোধকারী জরুরী শাসনে নিপীড়িত, নির্যাতিত ও শোষিত হয়েছে।
জনগণ এই অপরাধের বিচায় চায়। এই মহাজোট সরকার ও সংসদ যদি জনগণের আকাঙ্খাকে উপেক্ষা করে, সাম্রাজ্যবাদ ও ভারতীয় সম্প্রসারণবাদের নীলনকশা অনুসারে সংবিধান সংশোধন করে, ফখরুদ্দিন সরকারের দায়মুক্তি এবং দেশ-জাতি-জনগণবিরোধী কর্মকান্ডের বৈধতা দান করে, তবে তা হবে জাতি ও জনগণের সাথে এক চরম বেঈমানি।
ইতিমধ্যে ফখরুদ্দি সরকারের ধারাবাহিকতায় সাম্রাজ্যবাধী নীলনকশার সংস্কারের অংশরূপে দেশে উপজেলা নির্বাচন করা হয়েছে। সাম্রাজ্যবাদ ও ভারতীয় সম্প্রসারণবাদ এবং তার দালাল শাসক শ্রেণীর স্বার্থরক্ষক ভগ্নদশাগ্রস্ত দমন-নিপীড়নমূলক রাষ্ট্র ও শাসন ব্যবস্থাকে মজবুত করার লক্ষ্যে এ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। ভোটার অনুপস্থিতি, ব্যালটবাক্স ছিনতাই, হানাহানির এ নির্বাচন মহাজোট ও শাসকশ্রেণীর রাজনীতির "দিন বদল" এর স্বরূপ প্রকাশ করে দিয়েছে।
আমরা জানি, বৃটিশ উপনিবেশিক আমল থেকেই স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা জনপ্রতিণিধিত্বের নামে উপনিবেশবাদী-আমলাতান্ত্রিক রাষ্ট্রের সহায়ক প্রতিক্রিয়াশীল শক্তি রূপে কাজ করছে। সুতরাং, এই নির্বাচন কেবলমাত্র ব্যাপক-জনগণের উপর দমন-নিপীড়নমূলক রাষ্ট্র ও শাসন ব্যবস্থাকেই আরো বেশী শক্তিশালী করেছে। একইভাবে দমন-নিপীড়নমূলক রাষ্ট্রকে আরো শক্তিশালী করার জন্য ভবিষ্যতে নিরাপত্তা কাউন্সি, রাষ্ট্র প্রধানকে ক্ষমতা প্রদানের মত নানা সংস্কার করা হতে পারে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।