চোখ খুবলে নেয়া অন্ধকার, স্ফুলিঙ্গ জ্বেলে দাও!
নির্বাচনের পর মার্কিন-ভারতের নীল নকশা বাস্তবায়নের কাজ বিরাট লাফ দিয়ে দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলছে। মার্কিন (সাম্রাজ্যবাদ) ও ভারত (সম্প্রসারণবাদ) অর্থনৈতিক নীলনকশার অংশ হিসাবে টিফা, ট্রানজিট, 'বিনিয়োগ, উন্নয়ন ও সুরক্ষা চুক্তি' এবং সামরিক নীলনকশার অংশ হিসাবে বন্দী বিনিময়, সন্ত্রাসবাদ বিরোধী টাস্কফোর্স/গ্রুপ ইত্যাদি বিষয়ে তৎপরতা শুরু করেছে। এসব এজেন্ডা নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিন এশীয় সহকারী মন্ত্রী বাউচার এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রণব মুখার্জী ফেব্রুয়ারির ২য় সপ্তাহে বাংলাদেশে এসেছেন।
এরক আরো অনেক কিছুই আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে। রাজনৈতিক নীলনকশার অংশ হিসাবে ১/১১ অভুত্থান, জরুরী অবস্থা এবং নির্বাচনে সফল হওয়ার পর সর্বগ্রাসী থাবা বিস্তারের এই কাজ গতি লাভ করারই কথা এবং তা-ই হচ্ছে।
নীলনকশার অথনৈতিক সংস্কার ও তৎপরতা সম্পর্কে সতর্ক হোন; রুখে দাঁড়ান!
সীমান্তে হত্যাকান্ড, কাঁটাতার, ফারাক্কা-টিপাইমুখ বাঁধ ও পানির হিস্যা, বিপুল বাণিজ্য ঘাটতি সত্ত্বেও শুল্ক সুবিধা না দেয়ার পরও ভারত না-কি "ন্যাশনাল ট্রিটমেন্ট" চায়। "বিনিয়োগ, উন্নয়ন ও সুরক্ষা চুক্তি'র মাধ্যমে তারা ভারতীয় বিনিয়োগকারীদের জন্য এ 'ন্যাশনাল ট্রিটমেন্ট" চায়। অর্থাৎ বাংলাদেশী বিনিয়োগকারীরা নাগরিক হিসাবে এদেশে যেসব সুযোগ-সুবিধা ভোগ করে, এই চুক্তির আওতায় ভারতীয় বিনিয়োগকারীরাও সেই একই সুবিধা ভোগ করবে। এই চুক্তি সম্পাদিত হলে ভারতীয় কোন বিনিয়োগকে কোন অবস্থাতেই জাতীয়করণ করা যাবে না। উল্লেখ্য, একই ধরনের চুক্তি সুযোগ নিয়ে ভারতীয় ব্যবসায়ীরা নেপালের সমগ্র অর্থনীতির হর্তাকর্তায় পরিণত হয়েছিল।
এই চুক্তির ফলে এদেশের অর্থনীতি ভারতীয় ব্যবসায়ীদের হাতের মুঠোয় প্রবেশ করবে। এ চুক্তির মাধ্যমে টাটার মত সর্বগ্রাসী শিল্পগ্রুপের বাংলাদেশে প্রবেশের পথে আর কোন বাধা থাকবে না। এর ফলে এ চুক্তির টাটা বা অন্য যে কোন ভারতীয় কোম্পানী বাংলাদেশের কৃষি জমি হতে কৃষকদের উচ্ছেদ করে শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলবে যা দিয়ে অর্জিত মুনাফা ভারতে পাচার হবে। এখানে উল্লেখ্য, টাটা তার নিজ দেশের কৃষকদের প্রতিবাদের মুখে গাড়ির কারখানা গুটাতে বাধ্য হয়ে নতুন বিনিয়োগের জায়গা খুঁজছে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ তার প্রধান টার্গেট।
ইতিপূর্বে টাটা, সস্তা কয়লা, গ্যাস ও শ্রম ব্যবহারের একচেটিয়া সুযোগ নিতে বাংলাদেশে আসতে চেয়েছিল। কিন্তু, প্রতিবাদের মুখে বিএনপি সরকার তখন পিছু হটতে বাধ্য হয়।
উল্লেখিত নতুন চুক্তির সাথে টাটার মত বিনিয়োগের প্রত্যক্ষ সম্পর্ক আছে। একইভাবে টাটা-র বিনিয়োগের সাথে সম্পর্ক রয়েছে বড়পুকুরিয়া কয়লা খনি উন্মুক্ত পদ্ধতিতে খননের সরকারী ঘোষণার। এর আগে কুখ্যাত এশিয়া এনার্জি ফুলবাড়ীতে উন্মুক্ত কয়লা খনি করতে চাওয়ায় বুকের তাজার রক্ত ঢেলে জনতা তা রুখে দাঁড়ায়।
টাটা-র আগ্রহ ছিল ফুলবাড়ির কয়লায়। ভারতীয় এবং সাম্রাজ্যবাদী জ্বালানী কোম্পানীগুলোর স্বার্থে বিনিয়োগ চুক্তি, কয়লা নীতি প্রণয়ণের পাশাপাশি সরকার পরিবেশ ধ্বংসকারী উন্মুক্ত খনন এবং সমূদ্রবক্ষের তেল-গ্যাস ব্লক বিদেশীদের ইজারা দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে।
ভারত বাণিজ্যিক-সামরিক প্রয়োজনে ট্রানজিট ও বাংলাদেশের বন্দরগুলোর উপর আধিপত্য চায়। ট্রানজিট নিয়ে রাজনৈতিক চাপ থাকায় সরকার পুরনো বাণিজ্য চুক্তি নবায়নের আওতায় ট্রান্সশিপমেন্টের নামে ভারতকে বন্দর, সড়ক, রেলপথ ব্যবহারের ব্যবস্থা প্রায় পাকাপাকি করে ফেলেছে। ট্রানজিট দেয়ার ক্ষেত্রে এটা এক ধরনের বড় রকমের অগ্রগতি।
সুতরাং, অচিরেই ফুলবাড়ী, বিদ্যুত, বন্দর, পরিবহন, আইটিসহ জাতীয় সম্পদ ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে এই করালগ্রাস বিস্তৃত হতে দেখলে অবাক হওয়ার কিছু তাকবে না।
শুধু ভারত নয়, মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ সূদুরপ্রসারী অর্থনৈতিক আধিপত্য বিস্তারের লক্ষে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ কাঠামো বা টিফা চুক্তি করার জন্য সরকারকে বারবার তাগাদা দিচ্ছে। গোপনে এ চুক্তির কাজ প্রায় শেষ করা হয়েছে। এ চুক্তি হলে মার্কিনের স্বার্থের অনুকূলে বাঁধাধরা ছকেই বাংলাদেশকে সব ধরনের বাণিজ্য চুক্তি করতে হবে। এর আওতায় প্রাপ্ত সুবিধা কাজে লাগিয়ে তারা বাংলাদেশে জ্বালানী, বিদ্যুত, টেলিকমিউনিকেশন, পরিবহন, বন্দর ইত্যাদি ক্ষেত্রে বিনিয়োগের একচ্ছত্র অধিকার লাভ করবে।
বাংলাদেশ বহুপাক্ষিক বাণিজ্যের সুবিধা থেকে বঞ্চিত হবে। মেধাস্বত্ত্ব আইনের আওতায় সফটওয়ারসহ বিভিন্ন পণ্যের জন্য বাংলাদেশ বিপুল পরিমাণ অর্থ পরিশোধে বাধ্য।
এদিকে ভারতীয় পণ্যের ডাম্পিং এর কারণে দেশীয় টেক্সটাইল ও চিনি শিল্প ধ্বংস হতে বসেছে। সমূদ্রে তালপট্টি দখল করে নেয়ার পর এবার তারা বাংলাদেশের সমূদ্রাঞ্চল দখল করার দিকে অগ্রসর হচ্ছে। অপরদিকে, মহাজোট সরকার ডিজিটাল বাংলাদেশের "অত্যাশ্চার্য স্বপ্ন "দেখাচ্ছে, যার মূল কথা হলো মোবাইল ফোন, গার্মেন্টস শিল্প মার্কা সাম্রাজ্যবাদ-সম্প্রসারণবাদ নির্ভর, শ্রম দাসত্ব ও সম্পদ পাচারকারী আইটি ব্যবসার সম্প্রসারণ।
নীলনকশার সামরিক তৎপরতা সম্পর্কে সতর্ক হোন; রুখে দাঁড়ান!
মার্কিন-ভারতের এদেশীয় দালাল বড় ধনীক-বনিকরা বহুদিন ধরেই ভারতকে ট্রানজিট দেয়ার তৎপরতা চালাচেছ। তারা প্রচার করছে ট্রানজিট দিলে বাংলাদেশ বিরাট আর্থিক সুবিধা পাবে। ট্রানজিটকে আর্থিক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখতে হবে। অথচ দুর্বল দেশ নেপালকে দেয়া কয়েক কিলোমিটারের ট্রানজিট চুক্তি করে ভারত মাত্র ১৫ দিনের মাথায় নিরাপত্তার ইস্যুতে বন্ধ করে দেয়। সকলেই জানেন, ভারতের জন্য অথনৈতিক বিবেচনায় ট্রানজিট যতটা না দরকার তার চেয়ে বেশি দরকার তার সামরিক-রাজনৈতিক নীলনকশা বাস্তবায়নের জন্য।
মূলতঃ তার উত্তর পূর্বাঞ্চলে স্বাধীনতাকামী নিপীড়িত জাতিগোষ্ঠীকে দমন করবার জন্য ভারতের এই ট্রানজিট প্রয়োজন।
কিছুদিন আগে ভূটান সরকারের সাহায্য নিয়ে ভারতীয় বাহিনী উত্তর-পূর্বাঞ্চলে স্বাধীনতাকামীদের বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়েছিল। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকেও তারা একই কাজে ব্যবহার করছে। এর অংশ হিসাবে বিগত ২২ ফেব্রুয়ারী আসামে ভারত-বাংলাদেশ যৌথ সামরিক মহড়া শুরু হওয়ার কথা । ভারতের দালাল তৎকালিন ফখরুদ্দিন সরকার তার শেষমুহূর্তে এই মহড়ার পরিকল্পনা চূড়ান্ত করে।
এটা অনিবার্যভাবে বাংলাদেশকে ভারতীয় জাতিগত স্বাধীনতাকামীদের আক্রমণের লক্ষ্যে পরিণত করবে। শুধু তা-ই নয়, ভারত বাংলাদেশের ভূমিতে ভারত বিরোধী সন্ত্রাসী ও জঙ্গীদের অস্তিত্বের যে দাবী করছে, এই মহড়া হলো তার পরিস্কার স্বীকৃতি। এর ফলে "তালেবান সন্ত্রাসী"দের ধ্বংস করার নামে পাকিস্তানের ভূ খন্ডে মার্কিন আক্রমণের মত একই যুক্তিতে বাংলাদেশের ভূ-খন্ডে ভারতীয় আক্রমণের পথ সম্পূর্ণ উন্মুক্ত হবে। এভাবে তা বাংলাদেশকে তথাকথিত "সন্ত্রাসবাদ বিরোধী" যুদ্ধ ক্ষেত্রে পরিণত করবে। এছাড়া ভারত বন্দী বিনিময় চুক্তি করতে চায় যার অন্যতম টার্গেট এদেশে বন্দী আসামের উলফা প্রধান অনুপ চেটিয়া।
অপরদিকে, বর্তমান বিশ্ব অর্থনৈতিক সংকটকালে ইউরোপ-আমেরিকা নয়, ল্যাটিন আমেরিকা ও দক্ষিন এশিয়াকে সাম্রাজ্যবাদীরা রাজনৈতিকভাবে সবচেয়ে বিপদজনক মনে করছে। কারণ এখানে রয়েছে শক্তিশালী মাওবাদী গণযুদ্ধ, নিপীড়িত জাতিগোষ্ঠীগুলোর সশস্ত্র সংগ্রাম, আফগানিস্তানের সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী যুদ্ধ; যাদের সংকট পরিস্থিতিকে কাজে লাগিয়ে বিপ্লব সৃষ্টির সামর্থ্য রয়েছে। সুতরাং, সাম্রাজ্যবাদ,ভারতীয় সম্প্রসারণবাদ এবং এতদ অঞ্চলের প্রতিক্রিয়াশীলরা বিপ্লব ও বিদ্রোহ দমনের জন্য আরো বেশী তৎপর হয়ে উঠেছে। এজন্য তারা "সন্ত্রাসবাদ দমন" এর নামে অশুভ জোট গঠন করঠে এবং মার্কিনের নেতৃত্বে ১৯৯০ দশক থেকে শুরু করা বিশ্বব্যাপী সাম্রাজ্যবাদী প্রতিবিপ্লবী যুদ্ধকে শক্তিশালী ও বিস্তৃত করছে। মনমোহন প্রস্তাবিত হাসিনা ঘোষিত "সন্ত্রাসবাদ বিরোধী দক্ষিন এশীয় টাস্কফোর্স"-এ বৃটেন ও যুক্তরাষ্ট্র অংশীদার হবে।
দালাল সরকারগুলো মার্কিনের সাথে ইতিপূর্বে গোপনে সোফাসহ নানা চুক্তি করেছে, যার আওতায় মার্কিন সেনাবাহিনী বিনা পাসপোর্টে অহরহ বাংলাদেশে ঢুকছে, দক্ষিন এশীয়ব্যাপী তাদের প্রতিবিপ্লবী যুদ্ধ ফ্রন্টের তৎপরতা এগিয়ে নিচ্ছে। মার্কিন সেন্টমার্টিন এবং ভারত সীমান্ত সংলগ্ন বাগেরহাটসহ উপকূলীয় অঞ্চলে দুর্যোগ সহযোগিতার নামে দীর্ঘদিন ধরে তৎপরতা চালাচ্ছে। এভাবে তারা এখানে বেনামে সামরিক ঘাঁটি স্থাপনের কাজ অগ্রসর করছে।
উপরন্তু, মার্কিন সেনাবাহিনী রেব-সেনাবাহিনী-পুলিশকে প্রশিক্ষন ও সরঞ্জাম দিচ্ছে, যারা ক্রসফায়ারের নামে শ্রমিক-কৃষকরে আন্দোলন দম এবং বিপ্লবীদের হত্যা করে চলেছে। সাম্রাজ্যবাদী সামরিক নির্দেশনায় বিগত সরকার জঘন্য "সন্ত্রাস বিরোধী" কালো আইন তৈরি করেছে।
যার প্রকৃত টার্গেট হলো বিপ্লবী জনগণ। কারণ তারা জানে সাম্রাজ্যবাদী ও ভারতীয় সম্প্রসারণবাদী নীলনকশা বাস্তবায়নের তাদের দালাল শাসকশ্রেণী ও তাঁবেদার সরকার যত সহযোগিতাই করুক, তা এদেশের জনগণের দিক থেকে প্রবল প্রতিরোধের জন্ম দেবে; সুতরাং, রাষ্ট্রকে আরো বেশী দমনমূলক করে তোলা ছাড়া এই নীলনকশার অর্থনৈতিক-রাজনৈতিক-সামরিক সংস্কার এগিয়ে নেয়া তাদের পক্ষে সম্ভব নয়।
সুতরাং, এই "সন্ত্রাসবাদ বিরোধী" গ্রুপ/টাস্কফোর্স, যৌথ সামরিক মহড়া, রেব-পুলিশের প্রশিক্ষণ ইত্যাদি ইত্যাদি প্রকৃতপক্ষে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ এবং ভারতীয় সম্প্রসারণবাদের সামরিক নীলনকশা ও প্রতিবিপ্লবী যুদ্ধের অংশ। এবং "ট্রানজিট ইস্যু"কেও এই রাজনৈতিক-সামরিক প্রেক্ষাপট থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেখার কোন সুযোগ নেই। এ সমগ্র সামরিক নীল নকশা বাস্তবায়নের অর্থ হলো প্রতিবিপ্লবী যুদ্ধে বাংলাদেশকে আরও বেশী করে জড়িয়ে ফেলা; ভারতের পূর্বাঞ্চলের নিপীড়িত জনগোষ্ঠীর মুক্তি সংগ্রামসহ দক্ষিন এশিয়া, সর্বোপরি বাংলাদেশের বিপ্লবী শক্তির বিপক্ষে ফ্যাসিস্ট শক্তি ও যুদ্ধকে মদদ দেওয়া।
যার ফলে বাংলাদেশও ভারতীয় স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র যোদ্ধাদের ঘৃণা ও আক্রমণের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হবে। এসব কিছুর রক্তাক্ত ফলাফল ভোগ করবে এদেশের শান্তিপ্রিয় জনগণ।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।