ঘামতে ঘামতে আব্বা এসে নামলেন রিক্সা থেকে। সাথে এক কেজি টমেটো। খাঁ খাঁ রোদ, বয়স্ক মানুষটা একেবারেই লবেজান। এই গরমে বাজার যাওয়ার কারণ আর কিছুই না, আব্বার বাসায় এসে দুপুরে টমেটো কই মাছ দিয়ে ভাত খেতে খেতে বলেছিলাম যে এবছর এটাই আমার প্রথম টমেটো খাওয়া। শুনে চুপচাপ আব্বা একফাঁকে বাজারে চলে গিয়েছিলেন, মরশুমের দামী টমেটো আমার জন্য কিনতে।
ঘটনাটা প্রায় বছর বারো আগের।
মারা গেলেন তার কাছাকাছি সময়েই, ছিয়ানব্বুইয়ের এক রাতে। রোজার প্রথম রাতে। তখন টেলিফোন ছিল না বাসায়। চারতলার ভাই এসে সেহরীর কিছু আগে খবর দিলেন।
হাউমাউ করে কাঁদতে লাগলাম। তার মাত্র সাতদিন আগে অফিস থেকে কিছু কেনাকাটা করবো বলে বের হয়েছিলাম, হঠাৎ দেখি যথেষ্ট টাকা নেই সংগে। আব্বার বাসায় গিয়ে বল্লাম 'আব্বা টাকা দ্যান'। আব্বা সাতশ টাকা দিলেন, কেনাকাটা করলাম, সেই শেষ আব্বাকে জীবিত দেখা। কত ব্যস্ত আমি, আমার কেরিয়ার নিয়ে, সেই বয়স্ক মানুষটার জন্য সময় কোথা।
পয়সা কম পড়লে তাঁর কথা মনে হত, কিন্তু ওই টুকুই।
সেই অপ্রয়োজনীয় লোকটি আজ আর কোথাও নেই, তার অভাবে কোন কিছু আটকেও নেই, আমাদের কেরিয়ারের তরণী তরতর করে চলছে, কিন্তু আমাদের তুচ্ছতম অর্জনে যেই লোকটি এত বিবেচনাহীনের মত খুশী হয়ে উঠতো সেই লোকটিকে আর খুঁজে পাইনা। তরমুজ খেতে ভালোবাসতাম বলে তরমুজ কেটে কেটে কেউ ফ্রীজে রেখে দিয়ে যায় না আমি কলেজ ফেরত এসে খাব বলে।
আমি বহুদিন হয় আর কলেজ যাই না। আমি কত গম্ভীর একজন ব্যাক্তি এখন।
তবুও হঠাৎ কখনও একদম কোন কারণ ছাড়াই ভেতরে কে একটা ছোট মানুষ যেন চীৎকার করতে থাকে 'আব্বা, আব্বা আপনি কোথায়, আপনাকে এতদিন দেখিনা কেন?'
অফিসে বসেও চোখের পানি কেন লুকাতে পারিনা।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।