আল বিদা
আব্বা খুবই রাগী মানুষ ছিল। বড়দের কাছে শুনেছি আব্বা তার ছোটবেলা থেকেই রাগী। আমিও ছোটবেলায় বেশী দুষ্টু ছিলাম। আদর করার মত দুষ্টু না মাইর দেয়ার মত দুষ্টু। এবং এই মাইর নিয়মিতই গ্রহন করতে হইছে।
বিশেষ করে যে দিনগুলাতে পরীক্ষার result দিত। আমার রোল ১০ এর মধ্যে থাকলেও তা গ্রহনযোগ্য না।
সন্ধ্যায় মাইর, ভোরে মাইর, বিকেলে মাঠ থেকে ডেকে মাইর - সারাদিনই মাইর। হুট করে একদিন অংক নিয়ে বসত এবং আলহামদুলিল্লাহ্। কয় মিনিটে ঘন্টা যেত কে জানে।
এই শাসন কখনও কখনও বন্ধুরা উপভোগ করে নির্মল আনন্দ পেত। বাসায় কখনও পা তুলে বসলে বা সোফার হাতায় বসলেও বকা খেতে হত।
আমাকে প্রিয় মানুষ কে জিজ্ঞেস করলে আম্মার নাম বলতে দেরী হত না। কারন আব্বার জন্য কোন ভালবাসাই ঐকালে ছিল না।
২০০০ সালে অনার্স ভর্তি হওয়ার জন্য চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় আসলাম।
একটা কলেজে ভর্তি হলাম। আমি কোন ভার্সিটিতে চান্স পাই নাই এই রাগ হয়ত এখনও তার আছে।
একদিন ভোরের বাসে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় আসতেছি। আব্বা বলল বড়পোল স্টেষনে পৌছে দিবে কীনা। আমি মানা করলাম।
আব্বা ভোরে হাটতে চলে গেল (আব্বার ডায়াবেটিস)। আমি বাসের অপেক্ষা করছি। দেখি আব্বা সামনের রাস্তা দিয়ে হেটে যাচ্ছে এবং পুরোটা পথ বাস্ কাউন্টারের দিকে তাকিয়ে থাকল। যদি এক পলক আমাকে দেখা যায়। অথবা আমি ঠিকমত বাসে উঠলাম কিনা।
আব্বা আমাকে দেখে নাই। কিন্তু আমি দেখলাম। এতদূর থেকেও মনে হয় তার চোখ দেখলাম। তার সন্তানদের জন্য কতটা মায়া ভালবাসা ছিল ঐ চোখে। আফসোস হয় আগে কেন কোনদিন খেয়াল করি নাই ঐ চোখ।
সেদিন থেকে আব্বাই আমার প্রিয় মানুষ। ঐদিন আব্বাকে বলতে পারি নাই যে আমি স্যরি। এজীবনেও হয়ত বলা হবে না। এখন আমার আব্বা অনেক শান্ত হয়ে গেছেন। আমার বোনের দুই বাচ্চার জন্য তার আদরের শেষ নাই।
এখন আমি চাকরী করি। তবুও আব্বা তার চাকরী ছাড়ে না। বলে আমার নাকি কষ্ট হবে।
এখন তো আমারও বয়স হইছে। তবুও কখন ইচ্ছা করে আব্বাকে একটু জড়িয়ে ধরতে।
একটু যদি পা ধরে বসে থাকতে পারতাম!
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।