আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আদিবাসীদের মাতৃভাষাকে টিকিয়ে রাখতে সরকারসহ সকলের আন্তরিকতা প্রয়োজন

wanna know and show everything I can......

Haudenosaunee Chief Deskahe, ১৯২৩ সালে তাঁর জনগণের নিজস্ব আইন, নিজস্ব ভূমি ও নিজস্ব বিশ্বাসের উপর অধিকারকে সমর্থন জানিয়ে লীগ অব নেশনে বক্তৃতা দেওয়ার জন্য জেনেভায় যান। কিন্তু তাঁকে বক্তৃতা দিতে দেওয়া হয়নি। পরবর্তীতে তাঁর এই চিন্তা এসব অধিকার সংরক্ষনের ক্ষেত্রে নিয়ামক হিসেবে কাজ করে যাচ্ছে। মাওরি নেতা T.W. Ratana ওয়াইটাঙ্গী চুক্তি ( নিউজিল্যান্ডের মাওরি আদিবাসীদের ভুমির অধিকার প্রাপ্তির চুক্তি, ১৮৪০) ভঙ্গের প্রতিবাদ জানাতে প্রথমে লন্ডনে রাজা জর্জের সাথে সাক্ষাৎলাভের চেষ্টা করেন। কিন্তু সাক্ষাৎলাভে ব্যর্থ হন।

পরে ১৯২৫ সালে লীগ অব নেশনের সাথেও সাক্ষাৎলাভ হয়নি। এসব ঘটনা জাতিসংঘের আদিবাসী বিষয়ক ঘোষনার নিয়ামক হিসেবে কাজ করেছে। বর্তমানে পৃথিবীর ৯০ টি দেশে প্রায় ৩৫০ মিলিয়নের মত আদিবাসী জনগোষ্ঠীর বসবাস। তাদের রয়েছে নিজস্ব স্বকীয় সমাজ, সংস্কৃতি, ভাষা, ঐতিহ্য, ও জীবনধারা। বিভিন্ন আদিবাসী জনগোষ্ঠীর মাঝে রয়েছে বৈচিত্র্যতা ও ভিন্নতা।

বর্তমানে তারা বিভিন্নভাবে শাসকগোষ্ঠীর কাছে তাদের অধিকার আদায়ে সোচ্চার। কারন তারা যুগযুগ ধরে শাসকগোষ্ঠীর মাধ্যমে নিজস্ব অধিকার থেকে বঞিত। যার কারনে হারিয়ে যাচ্ছে তাদের সংস্কৃতি ও ভাষা। ভাষা ও সংস্কৃতির অধিকার নিয়ে বিভিন্ন দেশের সংবিধানে তেমন গুরুত্বের সাথে নেওয়া হয়নি। সংবিধান রচনার সময় লক্ষ্য রাখা হয় কেবল শাসকগোষ্ঠীর ভাষা ও সংস্কৃতির উপরে।

তাই ভুলে যাওয়া হয় অন্যান্য ভাষা ও সংস্কৃতিগুলোকে। এই ভুলে যাওয়া যে কি ক্ষতি করছে তা শাসকগোষ্ঠীরা অবগত নয়। তাদের এই সামান্য ভূল বিলীন করে দিচ্ছে হাজারো ভাষা ও সংস্কৃতির। যার পরিনতিতে বিলীন হয়ে যাচ্ছে অনেক আদিবাসী জনগোষ্ঠীর। যেগুলো টিকে আছে সেগুলোও কোনোরকমে।

UNESCO এর হিসাবমতে পৃথিবী থেকে প্রায় ৬০০ টির মতো ভাষা বিলুপ্ত হয়েছে কেবলমাত্র গতশতকে। যা বর্তমানে প্রায় ১টি বিলুপ্ত হচ্ছে প্রতি দুই সপ্তাহে। যদি এই হিসাবে বিলুপ্ত হতে থাকে তাহলে এই শতকের শেষে গিয়ে প্রায় ৯০% ভাষার বিলুপ্তি ঘটবে বলে মনে করা হচ্ছে। প্রায় ৭০০০ ভাষা পৃথিবীতে বর্তমান আছে যার মাঝে ৫০০০টি আদিবাসী ভাষা হিসেবে ধরা হয়। সবচেয়ে বেশি ভাষায় কথা বলা হয় পাপুয়া নিউগিনিতে, যেখানে প্রায় ৮৪৭ টির মতো ভাষা ব্যবহার করা হয়।

ইন্দোনেশিয়ায় ৬৫৫ টি, নাইজেরিয়ায় ৩৭৬ টি, ভারতে ৩০৯ টি, অস্ট্রেলিয়ায় ২৬১ টি, মেক্সিকোতে ২৩০, কেমেরুনে ২০১ টি, ব্রাজিলে ১৮৫ টি, জায়ারে ১৫৮ টি এবং ফিলিপাইনে ১৫৩ টি ভিন্ন ধরনের ভাষায় কথা বলা হয়(Darrell Addison Posey, Oxford Center for the Environment, Ethics and Society, Mansfield College, University of Oxford, Britain, and winner of the Global 500 environmental prize awarded by the United Nations)। "All indigenous languages are unique and adapted to the local environment. This is what unites all Indigenous Peoples – our languages as a specialized part of our cultures and windows to our relationship with nature. Scientific assessments made regarding the future of indigenous and minority languages are not optimistic. Many languages will die in the near future." আদিবাসী ভাষার উপর জাতিসংঘের স্থায়ী ফোরামের বৈঠকে উক্তিটি প্রদান করা হয়। Klemetti Näkkäjärvi, ফিনল্যান্ডের সামি পার্লামেন্টের সভাপতি বর্তমানে আদিবাসী ভাষার ক্রান্তিকাল সম্পর্কে বর্ণনা করেন এবং আদিবাসী ভাষার উপর জাতিসংঘের ঘোষনার গুরুত্বারোপ করেন। তিনি বলেন "For me, the situation of indigenous languages is one of the most important issues in the international cooperation related to indigenous issues. I have, however, noted that languages have not always been at the heart of the cooperation in this context"। তাঁর মতে আদিবাসী ভাষাকে অগ্রাহ্য করলে আদিবাসী জনগোষ্ঠীকে দূরে ঠেলে দেওয়া হবে, এতে কখনো সংঘবদ্ধতা আসবেনা।

আর যদি আদিবাসী ভাষার ব্যাপারে সচেতন থাকা যায় তাহলে ঐক্যতা আসবে। "Language diversity is essential to the human heritage. Each and every language embodies the unique cultural wisdom of a people. The loss of any language is thus a loss for all humanity. The extinction of each language results in the irrecoverable loss of unique cultural, historical and ecological knowledge. Each language is a unique expression of the human experience of the world. Thus, the knowledge of any single language may be the key to answering fundamental questions of the future. Every time a language dies, we have less evidence for understanding patterns in the structure and function of human language, human prehistory and the maintenance of the world’s diverse ecosystems. Above all, speakers of these languages may experience the loss of their language as a loss of their original ethnic and cultural identity".(Language Vitality and Endangerment, UNESCO Document, 2002)। জাতিসংঘের মতে, নিজস্ব ভাষা ব্যবহার ও সংরক্ষনের পাশাপাশি আদিবাসীদের ভাষার অধিকারে আরো যা আছে সেগুলো হলো: ১) মাতৃভাষায় শিক্ষালাভের অধিকার, ২) আদিবাসী ভাষার সাংবিধানিক স্বীকৃতি লাভের অধিকার, ৩) বৈষম্য মুক্ত ভাবে বাস লাভের অধিকার, ৪) আদিবাসী ভাষায় মিডিয়ায় প্রবেশ লাভের অধিকার। আদিবাসী ভাষাকে রক্ষা ও সংরক্ষনের জন্য জাতিসংঘ যেসব পদক্ষেপ নেওয়া দরকার বলে মনে করেন সেগুলো হল: ১) মাতৃভাষায় আদিবাসী শিক্ষার্থীদের শিক্ষালাভের নিশ্চয়তা প্রদান করা, ২) আদিবাসী ভাষাকে সংরক্ষন ও উন্নয়নের জন্য পর্যাপ্ত ফান্ড বরাদ্দ রাখা, ৩) আইন ও রাজনৈতিক মূলধারাসমূহ আদিবাসী ভাষায় অনুবাদ করা যাতে করে আদিবাসীরা রাজনৈতিক ও আইনগত দিকগুলোতে ভালোভাবে অংশগ্রহন করতে পারে, ৪)আদিবাসী ছাত্র ও বয়স্কদের জন্য ভাষাসংলিষ্ট প্রোগ্রামের ব্যবস্থা করা, ৫) প্রসাশনিক ও শিক্ষাক্ষেত্রে আদিবাসী ভাষার ব্যবহার বাড়িয়ে আদিবাসী ভাষার সন্মান বৃদ্ধি করা, ৬) আদিবাসী ভাষা ব্যবহার করা যাতে করে সেগুলো বংশপরম্পরায় টিকে থাকে। বাংলাদেশে প্রায় ২.৫ মিলিয়ন আদিবাসীর বসবাস, যারা ৪৫ টি ভিন্ন আদিবাসীগোষ্ঠিভূক্ত যাদের নিজস্ব সংস্কৃতি ও ভাষা রয়েছে।

UNCRC এর ২৮ অনুচ্ছেদে শিশুদের বিনাবেতনে পড়াশুনা করার অধিকার এবং ৩০ অনুচ্ছেদে আদিবাসী শিশুদের ভাষা ও সংস্কৃতির অধিকার নিশ্চিত করা হয়েছে। Convention on the Rights of the Child এর Article 30: "In those States in which ethnic, religious or linguistic minorities or persons of indigenous origin exist, a child belonging to such a minority or who is indigenous shall not be denied the right, in community with other members of his or her group, to enjoy his or her own culture, to profess and practise his or her own religion, or to use his or her own language"। Article 14: "Education rights – Right of Indigenous peoples to “establish and control” educational systems and institutions; Right of Indigenous people “particularly children” to access all state education without discrimination; State’s responsibility, exercised in conjunction with Indigenous peoples, to ensure access to education “particularly children" পার্বত্য শান্তিচুক্তি(১৯৯৭) এর খ(৩৩/খ/২) ধারায় "মাতৃভাষার মাধ্যমে প্রাথমিক শিক্ষা" কথাটি উল্লেখ রয়েছে। কিন্তু আজ ১২ বছরেও এর বাস্তবায়নের দেখা মেলেনি। বাংলাদেশের সংবিধানের ২/ক ধারায় মুসলিম ধর্মকে রাষ্ট্র ধর্ম হিসেবে বলা হয়েছে এবং সেই সাথে অন্যান্য ধর্মসমূহ নির্ভিগ্নে পালন করা যাবে এই নিশ্চয়তা দেওয়া হয়েছে।

যা খুবই গ্রহনযোগ্য। কিন্তু ৩ ধারায় কেবল বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা বলা হয়েছে। মূল জনগোষ্ঠীর ভাষা হিসেবে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা অবশ্যই বলা যায়। কিন্তু সেই সাথে অন্যান্য ভাষাসমূহের স্বীকৃতি প্রদান করা উচিত। যেখানে ধর্মের ক্ষেত্রে করা হয়েছে সেখানে ভাষার ক্ষেত্রেও প্রয়োগ করা যেতে পারতো।

সংবিধান রচনাকালে এই ইস্যুটি এড়িয়ে যাওয়া হয়। তাই বর্তমানে এই ইস্যুতি গুরুত্ব সহকারে নেওয়া প্রয়োজন। সেই সাথে পার্বত্য শান্তিচুক্তি অনুযায়ী মাতৃভাষার মাধ্যমে প্রাথমিক শিক্ষার ব্যবস্থা করা উচিৎ। আর এজন্য মাতৃভাষার একটি পাঠ্যপুস্তক অন্তর্ভূক্ত করা যেতে পারে যা বাংলা ভাষা বুঝার সহায়িকা হিসেবে কাজ করবে এবং আদিবাসীদের মাতৃভাষাকে টিকিয়ে রাখার মতো সহায়ক হবে। বাংলাদেশ সরকার এখনো জাতিসংঘের আদিবাসী বিষয়ক ঘোষনাপত্রে স্বাক্ষর করেনি।

কি কারনে করেনি তা কেবল সরকারই বলতে পারে। স্বাক্ষর করলে আদিবাসীদের সাথে অনেক বৈষম্য দূর হতো বৈ বাড়তো না। এই ঘোষনায় বাংলাদেশ বাদে সকল এশিয়ার রাষ্ট্রসমূহসহ ১৪৪টি দেশ পক্ষে স্বাক্ষর করে। বিপক্ষে স্বাক্ষর করে ৪ টি দেশ(আমেরিকা, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড) এবং নিরব ভূমিকা পালন করে বাংলাদেশ সহ ১১ টি দেশ। বাংলাদেশে আদিবাসী শিশুদের প্রাইমারি পর্যায়ে ঝরে পড়ার হার ৭০%, যেখানে সমতলে ঝড়ে পড়ার হার মাত্র ৩০%।

প্রায় ৪০% শিশু স্কুল থেকে ঝরে পড়ে ভাষাগত সমস্যার কারনে (ব্রাক,১৯৯৪)। রাংগামাটিতে প্রায় ৭৩% শিশু স্কুলে ভর্তি হয়, কিন্তু বড়ই দু্ঃখের বিষয় এর প্রায় ৫৫% প্রাইমারি শিক্ষা শেষ করতে পারে না। ১৯৯১ সালের সুমারি অনুযায়ী আদিবাসীদের শিক্ষার হার মাত্র ১৪.১%। রাংগামাটিতে বিভিন্ন আদিবাসীগোষ্ঠীর শিক্ষার হার হলো ৫৫%(চাকমা), ২৫% (বোম), ২০%(মার্মা), ৩১%(তঞঙ্গ্যা), ৫%(চাক), ৩০%(ত্রিপুরা), ১৪% (কিয়াং)। (ফজলে রাব্বী, UNESCO, ২০০৪)।

অনেক আদিবাসী শিশু রয়েছে যারা বাংলা ভাষাকে জীবনে শুনেনি। বাংলা ভাষা বুঝার ক্ষেত্রে হয়তো শহর এলাকার আদিবাসী শিশুরা এগিয়ে থাকবে। কিন্তু যারা শহর থেকে বিচ্ছিন্ন পাহারি এলাকায় থাকে তাদের খুব অসহায় হতে হয় বাংলা ভাষায় লেখাপড়া শুরু করতে গিয়ে। যারা প্রথমে ইংরেজী শিখে তাদেরকে প্রথমে শব্দার্থ শিখতে হয়। এর উচ্চারণ ও বাংলায় দেওয়া থাকে।

এতে করে ইংরেজী শিখা অনেক সহজ হয়ে উঠে। কিন্তু যারা আদিবাসী, যাদের পূর্ব পুরুষেরা বাংলায় কথা বলার বা লেখাপড়া করার সুযোগ হয়নি, তাদের সে সুযোগটুকু নেই। যদি তারা সে সুবিধাটুকু পেত তাহলে তাদের শিখার অনেক সুবিধা হতো। কিন্তু আদিবাসী শিশুদের সেই সুবিধাটুকুও নেই। ফলে সেইসব শিশুরা কেবল স্কুলে আসে আর যায়।

এরপর সে যখন শিক্ষক বা শিক্ষিকার কাছে ধমক খাবে তখন সে স্কুল নামক ভুবনকে মনে করবে রাজ্যের আঁধার। কোনকিছু না বুঝলে জিজ্ঞাসা করার ভয় কাজ করে। সে দাদীর কাছে গল্প শুনতে শুনতে লেখাপড়া শিখতে পারবে না। কারন তার দাদী বা পরিবারের অন্য সদস্যরাতো বাংলাভাষায় লেখাপড়া করেনি বা লেখাপড়ার সুযোগ পায়নি। বাংলাভাষাকে সে মনে করবে ভিনদেশি ভাষা।

জাপানি ভাষা না বুঝা কাউকে যদি সুন্দর জাপানি গল্প শুনিয়ে পড়ালেখায় বসানো হয় তাহলে কি ঘটবে তা বলার আর প্রয়োজন বোধ করছিনা। শিশুকে যদি তার ইচ্ছামতো বাড়তে দেওয়া হয় তাহলে তার মনস্তাত্ত্বিক বৃদ্ধি ঘটে। ছোটকালে সে যেসব জিনিসের সাথে অব্যস্থ্ বা পরিচিত সেগুলোকে তারা সহজে আপন করে নিতে পারে। তাই আদিবাসী শিশুটি যদি নিজের ভাষার মাধ্যমে অন্যান্য ভাষাগুলো আয়ত্ত্ব করতে পারে তাহলে সেটির স্থায়িত্ব বাড়বে। রচনা মুখস্থ করে যেমন কোনো লাভ নেই, ঠিক তেমনই আদিবাসী শিশুরা যদি না বুঝে বাংলা ভাষা মুখস্থ করে তাহলে এর কোনো লাভ নেই।

এতে করে তাদের লেখাপড়ার প্রতি আগ্রহই কমে যাবে। পার্বত্য এলাকার আদিবাসী গ্রামের স্কুলগুলোতে ঘুরে দেখলে বুঝা যাবে আসলে তারা বর্তমান শিক্ষাপদ্ধতিতে লাভবান হচ্ছে নাকি ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। হয়তো দেখা যাবে ৫ম শ্রেনীর ছাত্ররাও ভালোমতো বাংলা বলতে পারে না। কারন বাংলা নামের যে শিক্ষাটি পেয়েছে তা কেবল না বুঝে মূখস্থ করেছে। এভাবে যদি কেউ না বুঝে কোনোকিছু মুখস্থ করে তাহলে তার শিক্ষা নামের যে জিনিসটা হবে তাকে কখনোই শিক্ষা বলা যাবে না।

এই শিক্ষা লাভের চেয়ে কৃষিকাজ করা অনেক ভালো। অনেকের মতে আদিবাসী ভাষার শিক্ষা দিলে আদিবাসীরা মূলস্রোত থেকে পিছিয়ে পড়বে। কিন্তু সেই ধারনা কখনোই বাস্তবতার সাথে মানাসই হতে পারে না। কারন আদিবাসী ভাষার মাধ্যমে সে যদি বাংলাভাষার আয়ত্ত্ব করে তাহলে সে বাংলা ভাষাকে আরো ভালোভাবে আয়ত্ত্ব করতে পারবে। আবার অনেকেই মনে করে আদিবাসী ভাষা শিখতে গেলে শিশুদের একসংগে অনেক ভাষা শিখতে গিয়ে চাপের মধ্যে থাকতে হবে।

কিন্তু এটা সত্য যে যারা যত বেশি ভাষা জানে তাদের বুঝার ক্ষমতা অনেক বেশি। মানুষের একটা ভালো স্বভাব হচ্ছে মানুষ যত বেশি জানে ততই তার জানার আগ্রহ বা পরিধি বাড়তে থাকে। আর একটা কথা হয়তো সবাই স্বীকার করবে আমরা যে ভাষাতেই কোনোকিছু বলি বা লিখিনা কেন তা আগে মাতৃভাষায় কল্পনা করে পরবর্তীতে তা ঐ ভাষাতে পরিবর্তন করে নিই। অবশ্য যারা মুখষ্থ বিদ্যায় অব্যস্থ তাদের কথা আলাদা। মাতৃভাষায় আমারা যতটুকু চিন্তা করতে পারি তা অন্য ভাষায় কখনো সম্ভব নয়।

আদিবাসী ছাত্রদের অনেকেই মূখস্থবিদ্যার উপর পাশ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো বড় পরিসরে প্রবেশ করে। এতে করে সে আর তাল দিতে পারে না বিশ্ববিদয়ালয়ের বিদ্যাভান্ডারে। দেখা যাবে যে ছাত্রটি স্কুল-কলেজ পর্যায়ে অনেক ভালো ছিলো সে বিশ্ববিদ্যালয়ে তেমন কিছু করতে পারছে না। এর জন্য কখনো সেই আদিবাসী ছাত্রটি দায়ী হতে পারে না। কারন তাকেইতো গড়ে তোলা হয়ছে সেভাবেই।

তাকে মাতৃভাষায় কল্পনা করার সুযোগ দেওয়া হয়নি। একজন বাঙ্গালি যেমন ইংরেজীতে ভালোমানের উপন্যাস, সাহিত্য, কবিতা লিখতে পারবে না, ঠিক তেমনিই একজন আদিবাসীও নিজ ভাষা বাদে বাংলা বা ইংরেজীতে উপন্যাস, সাহিত্য, কবিতা, কাব্য ইত্যাদি রচনা করতে পারবে না। কেউ কেউ হয়তো ব্যতিক্রম থাকতে পারে। কিন্তু এক্ষেত্রে সামগ্রিকভাবে চিন্তা করা প্রয়োজন। একটা জিনিসকে অনেকভাবে দেখা যেতে পারে।

একটা মাটির উপরে সোজা হয়ে দাড়ানো গাছকে যদি উল্টা বা বাঁকা হয়ে দেখা হয় তাহলে সেটিকে উল্টা বা বাঁকা দেখাবে তা স্বাভাবিক। তাই দেখতে হবে কোন ধরনের অবস্থান থেকে দেখলে জিনিসটি সুন্দর এবং মানাসই দেখাবে। তাই সকলের উচিৎ হবে আদিবাসীদের সমস্যাগুলোকে সব দিক থেকে বিবেচনা করে কার্যকরী পদক্ষেপ নেয়া বা মন্তব্য করা। সব জিনিসেরই ভালোমন্দ থাকতে পারে, কাজেই আদিবাসীদের এই ইস্যুটিও অনেকে ভালো চোখে দেখবে আবার অনেকে খারাপ চোখে দেখবে। কিন্তু আপনি যে মতালম্বী হোন না কেন সব কিছুর বাস্তবতা আছে।

কেউ যদি তার দৃষ্টিকোন থেকে এই ইস্যুর বিপক্ষে হন তাহলে সেই ঠিক। তবে তার যতার্থতা থাকা প্রয়োজন। আর যারা ইস্যুতির পক্ষে থাকবেন তার ও যথার্থতা থাকতে হবে। আশা করি কেউ শুধুমাত্র ঘৃণা বা বিদ্বেষ থেকে মন্তব্য দিবেন না। অনেকেই হয়তো বলতে পারেন আদিবাসীদের এই ভাষাগুলোকে সংরক্ষন করা হলে তাহলে বাংলাদেশের অন্যান্য আঞলিক ভাষাগুলোও সংরক্ষন করা প্রয়োজন।

হ্যাঁ, অবশ্যই প্রয়োজন হতে পারে। যদি সেই ভাষাগুলোর আলাদা বৈশিষ্ট্য থাকে। তাই বাংলাদেশ সরকারের প্রয়োজন বাংলাদেশের সকল স্বকীয় ভাষাগুলোকে সংরক্ষন করা। আমার জানামতে চট্টগ্রাম আর সিলেটের ভাষা মূল বাংলা ভাষার চেয়ে অনেক ভিন্ন। এগুলো অবশ্যই টিকে থাকা প্রয়োজন।

এদের উৎপত্তি যাই হোক না কেন অন্তত এই ভাষাগুলোর আলাদা স্বকীয়তা আছে। আর চট্টগ্রাম ও সিলেটের ভাষা অনেক সমৃদ্ধ , যে ভাষার মাধ্যমে জড়িয়ে রয়েছে অনেক গানের কলি, কবিতার ছন্দ, কাব্য-উপন্যাস-নাটকের উপাখ্যান-উক্তি, জড়িয়ে রয়েছে অনেক ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির। এগুলোকে কোনো জাতি বিলুপ্ত হতে দিতে পারে না। বাংলাদেশের কেউ চাইবে না এই বৈচিত্র্যতা ধ্বংস হোক। এমনকি বাংলাদেশ সরকারও তা কামনা করে না।

আমরাতো সবাই রাষ্ট্র ভাষা হিসেবে বাংলায় কথা বলি। কাজেই বাংলা ভাষার অপরিহার্যতা নিয়ে কেউ দ্বিমত পোষণ করবে না বলে মনে করি। তাই, আজকের এই লেখাটি আমি কারো বিরুদ্ধে লিখেছি বলে আমি মনে করি না। আমি শুধুমাত্র আদিবাসীদের অধিকার এবং আদিবাসীদের ভাষা ও সংস্কৃতিকে টিকিয়ে রাখার আকুতি করেছি। এতে যদি কারো ভালো না লাগে তাহলে দয়া করে এমন কোন মন্তব্য করবেন না যা বিবেধের জন্ম দেয়।

আমারা সবাই বাংলাদেশি। আর সকলের অধিকার আছে নিজস্ব মত প্রকাশের। তাই পক্ষ-বিপক্ষ সকলের প্রতি আমার আকুতি সভ্য ভাষায় আমরা মন্তব্য প্রদান করবো এবং ইস্যুটি নিয়ে আলোচনা করবো। লিখতে লিখতে লেখাটি অনেক দীর্ঘ হয়ে গেলো। এজন্য আমি খুব দু্ঃখিত।

লেখাটি পড়ার জন্য সবাইকে ধন্যবাদ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.