আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

উত্তরাধিকার সম্পত্তিতে কন্যাসন্তানের অধিকার : আইন ও বাস্তবতা

সকলের তরে সকলে আমরা...

মুসলিম পারিবারিক আইনে পিতার উত্তরাধিকার সম্পত্তিতে কন্যা সন্তানের অংশ স্বয়ং পবিত্র কুরআন দ্বারা নির্ধারিত। ফারায়েযের নিয়মানুসারে সহোদর ভাইয়ের অবর্তমানে এক বোন থাকলে সেই বোন পাবেন পিতার মিরাসি সম্পত্তির পুরো অর্ধেক। বোনের সংখ্যা একের অধিক হলে সেক্ষেত্রে তারা সমষ্টিগতভাবে সম্পত্তির দুই-তৃতীয়াংশ পাবেন। আর সহোদর ভাইয়ের বর্তমানে বোন পাবেন ভাইয়ের অর্ধেক। ইসলামের এই সুবিন্যস্ত বণ্টন পদ্ধতিতে পৈত্রিক উত্তরাধিকার সম্পত্তিতে কন্যা সন্তান একটি সম্মানজনক অংশ পেয়ে থাকেন, যা তার সামাজিক নিরাপত্তা বিধানে অত্যন্ত সহায়ক ভূমিকা পালন করে।

পিতার মিরাসি সম্পত্তি থেকে কন্যা সন্তানের এই নির্দিষ্ট অংশ গ্রহণের অধিকার ইসলাম ও আমাদের রাষ্ট্র কর্তৃক স্বীকৃত। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে এই যে, আমাদের দেশের অধিকাংশ অঞ্চলেই নারীরা তাদের এই অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। আইনানুসারে কন্যা সন্তানকে সম্পত্তির অংশ দেবার নির্দেশনা থাকলেও বাস্তবে তারা তা পাচ্ছেন না বললেই চলে। দেশের নির্দিষ্ট কিছু অঞ্চল ছাড়া প্রায় সবখানেই কন্যা সন্তানদের উত্তরাধিকার সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করার একটি সামাজিক ট্র্যাডিশন তৈরি হয়ে গেছে। পৈত্রিক সম্পত্তি থেকে নারীদের বঞ্চিত করার ক্ষেত্রে আমাদের সমাজগুলোতে দু’ধরনের প্রথা গড়ে ওঠেছে।

কোনো কোনো সমাজে প্রথাটি এমন যে, উত্তরাধিকার সম্পত্তি বণ্টনের সময় কন্যা সন্তানকে তার অংশ দেয়া হবে বটে; কিন্তু সেই নারীটি তার সম্পত্তি গ্রহণ করবেন না; বরং তার ভাইদের জন্যে তার অংশটুকু ছেড়ে দেবেন। এই প্রথার বাস্তবায়নে নারীর মাঝে সমাজ এক বিশেষ ধারণা তৈরি করেছে। তা হলো, পিতার সম্পত্তির অংশ কড়ায়-গণ্ডায় গ্রহণ করলে ভাইদের কাছে ভবিষ্যতে বোনদের আর কোনো দাবি-দাওয়া অবশিষ্ট থাকবে না। মামা বাড়িতে থাকবে না ভাগ্নে-ভাগ্নি কিংবা বোন জামাইয়ের কদর! সুতরাং, জমির দাবি উত্থাপন করে ভাইদের সাথে বাদানুবাদে না জড়ানোই শ্রেয় মনে করেন তারা। কোনো কোনো অঞ্চলে আবার কন্যা সন্তানদের বঞ্চিত করা হয় আরেকটি প্রতারণার মাধ্যমে।

উত্তরাধিকার সম্পত্তির অংশ তাদের দেয়া হয় ঠিকই, কিন্তু তারা তা নিজেদের মালিকানায় ধরে রাখতে পারেন না বেশিদিন। খুব সত্বর ভাইদের কাছে নিজেদের অংশ বিক্রি করে দিয়ে আসতে হয় তাদের। এক্ষেত্রে কোনো কোনো স্থানে ভাইয়েরা বোনদের প্রাপ্ত সম্পত্তি বাজার দরে কিনে নিলেও অধিকাংশ জায়গাতেই বোনদের নামমাত্র মূল্য দিয়ে বিদায় করে দেয়া হয়। এভাবে বিভিন্ন আকৃতিতে আমাদের সমাজে নারীরা তাদের পৈত্রিক সম্পত্তির অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। কোথাও তাদের বোঝানো হচ্ছে যে, সম্পত্তি নিয়ে নিলে ভাইদের সাথে বোনের সুসম্পর্ক ব্যাহত হবে।

আবার কোথাও কোথাও সম্পত্তি নিজ মালিকানায় রাখবার ব্যাপারে তাদের অধিকার হরণ করা হচ্ছে। সামাজিকভাবে তাদের বাধ্য করা হচ্ছে ভাইদের কাছে জমি বিক্রি করে দিয়ে আসতে। এর প্রত্যেকটিই নারী অধিকারহীনতার একেকটি অনাকাক্সিক্ষত রূপ। আমাদের দেশে নারীবাদীরা উত্তরাধিকার সম্পত্তিতে নারী ও পুরুষের অংশ সমান করবার আন্দোলনে বেশ সরব। কিন্তু তারা এটি ভেবে দেখছেন না যে, মুসলিম আইনানুসারে নারীর যে পরিমাণ অংশ পাবার কথা, সেটুকুও তারা পাচ্ছেন না আমাদের এ সমাজব্যবস্থায়।

যৌতুক, বাল্যবিবাহ ইত্যাদি ইস্যুতে জনসচেতনতা বাড়াবার বহু কর্মসূচি দেখা গেলেও নারীকে সম্পত্তি প্রদানের ক্ষেত্রে সমাজের ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে তোলার ব্যাপারে নারীবাদীদের কোনো ভূমিকাই এখন পর্যন্ত লক্ষ্যণীয় নয়। নারীর প্রতি সকল প্রকার বৈষম্য দূরীকরণে বাংলাদেশ প্রতিশ্র“তিবদ্ধ। উত্তরাধিকার সম্পত্তি পাওয়া এবং তা নিজ মালিকানায় রাখবার ব্যাপারে নারীর আইনানুগ অধিকার রয়েছে। এ অধিকার বাস্তবায়িত হচ্ছে না সমাজের বিকৃত ও সঙ্কীর্ণ মানসিকতার কারণে। নারীসমাজকে তাদের এ অধিকার প্রতিষ্ঠায় সচেতন ও বলিষ্ঠ হতে হবে।

সাথে সাথে সমাজের সর্বস্তরের মানুষের মাঝে নারীর সম্পত্তি গ্রহণ ও তা নিজ মালিকানায় রাখবার অধিকারের ব্যাপারে ইতিবাচক মানসিকতা গড়ে তুলতে হবে। আর এর সবই করতে হবে সরকারি বেসরকারি পৃষ্ঠপোষকতায়। মিডিয়াকে এব্যাপারে কার্যকরী ভূমিকা পালনে ব্যবহার করা যেতে পারে।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।