জলছবি স্মৃতি ছুঁয়ে থাকে হৃদয়াবেগ , ধুয়ে গেছে ধ্বনি তার ; শব্দহীন সময়ের পারাবার ।
১ম পর্ব : Click This Link
২য় পর্ব : Click This Link
৩য় পর্ব : Click This Link
হীরার রিপোর্টিং বিকেল পাচঁটায় । তিনটা বাজে । কফি খায় বসে দুজন ; মনে হচ্ছে সময় দ্রুত ফুরিয়ে যাচ্ছে । ভাল লাগা সময় পালিয়ে যায় পলকে ।
হীরা বার বার উদাস হয়ে যেতে থাকে । বাদল বলে , শোন , আমরা অনেক দূরে থাকবো , সেটা মেনে নিয়ে সুখী হবার চেষ্টা করো , দু:খ অন্তত বাড়িও না । তোমার বর খালিদের আগে আমি তোমার হাত ধরে নিজের করে নিতে চাইতে পারতাম , সেটা যখন হয়নি , যা হয়েছে সেটা নিয়ে ভাল থাকা জরুরী । আমার খুব ভাল লাগে ভাবতে , খালিদ তোমায় কত ভালবাসে । নিজ ভুবন আলো করে সুখে থেকো তুমি ।
তুমি ভাল আছো জানলে আমিও ভাল থাকবো যেখানে যত দূরে থাকি , মনে রেখ । আমি দেশে গেলে তোমার সাথে যোগাযোগ করবো , একসময়ের সহপাঠি হিসেবে । তবে শিউলী তোমার ব্যাপারে অত্যন্ত স্পর্শকাতর , তাই ভেবে চিন্তে করতে হয় অনেককিছু । শিউলী এত বছরে আগ্রহ নিয়ে তোমার বিষয়ে জানতে গিয়ে তোমার সম্পর্কে ভাল কথা শুনতে হয়েছে বিভিন্ন জনের কাছ থেকে , সব মিলিয়ে সে নিজে কষ্ট পায় ; অনেকটা মন গড়া বলতে পারো । আমি চাই সে আমার স্ত্রী , সন্তানের মা - সে ভাল থাকুক ।
আর একটা কথা , আজ আলাদা হবার সময় একদম মন খারাপ করবে না । আমিও করবো না । আমি তোমার হাসিমুখ দেখতে চাই যাবার সময়ে ।
তুমি কিছু বলবে না হীরা ? জানতে চায় সে । হীরা বলে , তুমি দেশে গেলে তোমার বাড়ির আঙিনায় ছাতিম গাছ লাগাবে , বড় চারা দেখে ।
আমি যেদিন যাব তোমাদের বাড়ি , দূর থেকে ছাতিম ফুলের গন্ধ শুকে শুকে চিনে নেব পথ , গন্তব্য আমার !
বাদলের ঘোর লেগে যায় , ওতো পারেনা হীরার মত করে ভাবতে আর বলতে ।
নিজের ব্যাগ রুমে রাখতে বেরিয়ে যায় । হীরা এগিয়ে যায় সেই চেয়ারটার কাছে , যেটাতে বসে বাদল , ছুঁয়ে দেখে , গন্ধ নেয় । তারপরে আয়নার কাছে এসে হাতব্যাগ খোলে । হীরার নাকফুল পরে নেয় সাবধানে ।
সারা চোখে মুখে আলো ছড়িয়ে পড়ে - ভাল লাগার আলো , আনন্দ আলো , ভালবাসার আলো । খুশীতে উদ্ভাসিত নিজেকে অচেনা মনে হয় আয়নায় । পুরোনটা খুলে চেয়ারটাতে রাখে ।
এমন সময় ঘরে ঢোকে বাদল , বলে , দেরী করা যাবে না , চল -- বলতে বলতে চোখ পড়ে হীরার মুখে ; নির্বাক হয়ে যায় । বলে তুমি আমার দেয়া নাকফুল পরে নিয়েছো ? হীরা বলে , হ্যা , পরে নিলাম , চুরি যাবার ভয় নেই আর ।
চোখের সামনে থাকবে সারাক্ষন । আর বড় হীরেটাই তো চুরি হয়ে গিয়েছে সেই কবে , ছোট হীরার জন্য চিন্তা করে আর কি হবে ? তারপরে বলে -- আমি সমাজের সে সংস্কার মানিনা , যা মেনে নিয়ে কেবল বঞ্চিত হতে হয় পদে পদে । আমার সংস্কার আমার কাছে , তাকে অস্বীকার করতে পারবো না আর কোন কারনে । সমস্ত বোধ যেদিন লুপ্ত হবে আমার চিরতরে , চলে যাব সকল বাঁধন ছিড়ে সেদিন , শুধু সেদিন এ ফুল আমার থেকে আলাদা করা যাবে , তার আগে নয় । চেয়ারের উপরে রাখা পুরোন নাকফুল দেখিয়ে বলে ওটা আমার কেনা মামুলী একটা ফুল , আমার মত সাধারন ।
থাকল এখানে । বাদল তুলে নেয় , তুলে নতুন কেনা কাল শার্টের বুক পকেটে রাখে ।
চল যাওয়া যাক বলে স্যুটকেসটা নিতে যেতেই হীরা এসে দুহাতে তার ডান হাতটা ধরে , কাঁপা কাঁপা ঠোটে সে হাতের এ পিঠে ও পিঠে আদর মাখে । বলে আমি কেন ঋনী রব , দিলাম শোধ করে দেনা । বাদল কোন ভাবে আবেগ প্রকাশ করতে চায় না আজ এখন ! কোন ভাবে না ।
বাদল জানে আজ রাত তার ঝড়ের রাত , একা । তবে এখন কোন পূর্বাভাস নয় সে ঝড়ের । হাসিমুখে দুজন আলাদা হবে , সেটা গেঁথে নেবে মনের কুঠরীতে । সে তার স্বর্গীয় হাসি ছড়িয়ে বলে , অনেক ধন্যবাদ হীরা।
দুজনে ট্যাক্সিতে বসে এয়ারপোর্ট পর্যন্ত যায় চুপচাপ হাতে হাত রেখে শক্ত করে ,ছেড়ে যাবার আগের শেষ চেষ্টার মত ।
এয়ারপোর্টে যখন হাত নেড়ে বিদায় নিচ্ছিল হীরা , বাদল দেখে সম্মেলন শেষে একজন মাহজাবীন আহমেদ তার দেশে রওয়ানা হয়েছেন । তার হীরা তার কাছে আছে , যেখানে যেমন করেছিল এতদিন এতরাত । বাম পাশের পকেটে ছোট একটুকরো ভাললাগা হাত দিয়ে ধরে চেপে সে । সেই হোটেলে তাকে ফিরতে হয় এক রাতের জন্য যেখানে দীর্ঘ অনাবৃষ্টির পর হঠাৎ বর্ষা নেমেছিল অঝোরে , সকল শীতল করে দিয়েছে । খনিগর্ভে লুকিয়ে থাকা রত্ন রাজ তার হাতের মুঠোয় ছিল , স্পর্শ রেখে গেছে অমলিন ।
আর হীরা , প্রলম্বিত অধীর প্রতীক্ষার উপহার তিনদিন তিনরাত্রিকে ঐশ্বর্য্য করে ফিরে চলে পুরোন চেনা জগতে । দেশে পৌছুলে সবাই তাকে দেখে মুগ্ধ হয়ে বলবে , নাকফুলটা দারুন মানিয়েছে , একেবারে অন্যরকম নতুন রূপ দিয়েছে ।
হীরার নাকফুল যে !
পাদটীকা : গল্প গল্পই , সেখানে কখনো কখনো মোহনীয় পরিবেশ তৈরী হয় , আতশবাজীর মত মিলিয়েও যায় । মানুষ কল্পনা করে , স্বপ্ন দেখে --তারা হাত ধরে ধরে পার করে নিয়ে যায় সাত সমুদ্র তের নদী পারে , স্বর্গের উদ্যানে । সেই বা কম কি ?
ছাতিম ফুলের সুগন্ধ বাতাসে ভেসে আসবে বলে অপেক্ষায় থাকে সে , যে একদিন ভালবেসেছিল ।
ভুল করে নয় , দৈবক্রমে নয় ;তার মনের মত মানুষ সামনে এসে দাড়িয়েছিল বলে । অপেক্ষার মাধুর্য্য তাকে ভরিয়ে রাখে সারা বেলা ।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।