আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

জারজ ও জন্মদাত্রী

আমার কথা সিরিয়াসলি নিয়া বাঁশ খাইলে নিজ দায়িত্বে বাঁশ খাইয়েন

আড়াই বছর ধরে তসলিমা আক্তার অসুস্থ্য। এই আড়াই বছরে সে একবারও স্বামীর সাথে সহবাস করতে পারেন নি। এই নিয়ে তার দুঃখের শেষ নেই। একবার স্বামীকে আবার বিয়ে দেয়ার চিন্তাও মাথায় এসেছিল। কিন্তু নারীজাতি স্বামীর দখল সহ্য করতে পারেনা।

ঘরে সতীন আসলে তার স্বামী তখন তাকে বাদ দিয়ে সতীনকে ভালবাসবে-এমনটা ভাবলেই তার চোখে জল জমে যায়। কোনোভাবেই সতীন আনা যাবে না। অথচ স্বামীর সুবিধা-অসুবিধার ব্যাপারটাও মাথায় না আনলে চলছেনা। যে স্বামী তার অসুস্থ্যতার সময় তার জন্য সেবা-যত্নের বিন্দুমাত্র কমতি করছে না,সেই মানুষটার সুবিধা-অসুবিধাও তো দেখতে হয়। এক সময় তসলিমা তার স্বামী নুরুল ইসলামকে বলল যৌনপল্লিতে যেতে।

কিন্তু নুরুল ইসলাম সাবধানী মানুষ। যৌনপল্লীর মেয়েছেলেগুলোর শরীরের ভিতর নানান রোগের বসবাস। তাছাড়া গ্রামে নুরুল ইসলামের একটা আলাদা প্রভাব প্রতিপত্তি আছে। মানুষ যখন জানবে নুরুল ইসলাম খারাপ জায়গায় যায় তখন তার সম্মান কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে? অনেক ভাবনা চিন্তার পর তসলিমাই বের করল-সতীন না এনে একটা রক্ষিতা রাখলে কেমন হয়?ঘরের কাজের লোকের মত থাকল। ঘরের কাজ করল।

আবার তার স্বামীরও একটু সেবা-যত্ন করল! এইসব চিন্তা ভাবনা থেকেই তসলিমা আর নুরুল ইসলাম জোবায়েদাকে আনল। বলতে গেলে,তারা জোবায়েদাকে কিনে ফেলল। জোবায়েদার বয়স ১৬ বছর। নীরিহ গোবেচারা ধরনের মেয়ে। জোবায়েদা দিনেরবেলা ঘরের কাজ করতে লাগল।

আর রাতে নুরুল ইসলামকে খুশি করতে শুরু করল। তসলিমা এতে যে কষ্ট পেত না-তা নয়। কিন্তু স্বামী-সংসারের দখল হাতে রাখতে হলে এইটুকু কষ্ট সহ্য করতেই হবে। তসলিমার দিনকাল খারাপ যাচ্ছে না। সে জানে,সে যা করছে তা পাপ।

কিন্তু এছাড়া তো তার কোনো উপায় নেই। তার মামা তাকে এদের কাছে বিক্রি করে দিয়েছে। মামার সংসারে সে ঠিক মত খেতেও পেত না। এখানে খাবারের কোনো অভাব নেই। সেই সাথে নুরুল ইসলাম প্রায়ই তসলিমার অগোচরে তাকে চুড়ি-ফিতা কিনে দিয়ে যাচ্ছে।

লোকটা তাকে ভালই বাসে। লোকটা তো একবার তাকে বলেওছিল যে তসলিমা যদি রাজী হত তাহলে সে জোবায়েদাকে ঘরের বউ বানিয়ে ফেলত। জোবায়েদার এখন আর বিয়ে শাদী নিয়ে কোনো স্বপ্ন নেই। সে জানে,বাকি জীবন তাকে এভাবে রক্ষিতা হয়ে পাপ কাজ করেই কাটিয়ে দিতে হবে। এ বাড়িতে জোবায়েদার তেমন কোনো সমস্যা নাই।

একটাই সমস্যা হল-তসলিমা। এই মহিলা তাকে বড় বেশী শাসনের মধ্যে রাখে। নুরুল ইসলাম বাড়িতে না থাকলেই তাকে উল্টা-পাল্টা কথা বলে। এই তো সেদিনো ডেকে বলল-ঐ ছেমড়ি,বড়ি ঠিকমত খাইতেছোস তো? -জ্বি আফা,খাইতেছি। -শোন একটা কথা বইলা রাখি,খবরদার কোনোভাবেই যেন পেটে বাচ্চা না আইসা পড়ে।

-আচ্ছা আফা। -এখন তুই যা। -আচ্ছা আফা যাই। -ঐ ছেমড়ী,যাওয়ার আগে একটা কথা শুইনা যা। -জ্বী আফা কন।

-আমার স্বামীর লগে ছলা-কলা একটু কম করবি। কি কইছি বুজছোস? -জ্বি বুজছি। জোবায়েদা নিয়মিত বার্থকন্ট্রোল পিল খায়। জোবায়েদা নিজেও চায় না তার পেটে বাচ্চা আসুক। পাপের ফসল দুনিয়াতে নিয়ে আসলে অশান্তিই বাড়বে।

ঐসব অবৈধ ছেলেপুলেগুলোর উপর শয়তানের আছড় থাকে। ওগুলো ভালও হয়না। ছেলে হলে হয়তো বড় হয়ে চোর-ছ্যাচড় হবে। আর মেয়ে হলে হবে হয়তো বেশ্যা। তাছাড়া,সব চেয়ে বড় কথা হল,সন্তান একটা হলে সে কার পরিচয়ে মানুষ হবে? জোবায়েদা পিল খাওয়া এক দিনের জন্যেও বন্ধ করেনা।

নুরুল ইসলামও নিয়মিত জোবায়েদার কাছে আসে। এরই মধ্যে জোবায়েদা হঠাৎ অসুস্থ্য হয়ে পরে। প্রথম প্রথম সে অসুস্থ্যতা লুকাতে চাইলেও তসলিমার চোখকে সে ফাকি দিতে পারেনা। তসলিমা তার ভাবে সাবে ঠিকই বুঝে ফেলে যে জোবায়েদার পেটে বাচ্চা এসেছে। সাথে সাথে তসলিমার মাথায় রক্ত চড়ে গেল।

জোবায়েদাকে তার ঘরে ডেকে ঠাস-ঠাস করে কয়েকটা চড় লাগিয়ে দিল। তারপর চুলের মুঠি ধরে ঝাকাতে ঝাকাতে বলতে লাগলঃ-ঐ বেশ্যা,তোর বেশী সুখ হইছে না?তোরে না আমি পই পই কইরা কইছি বাচ্চা নিবি না?তোর ঘরের বউ হওয়ার শখ লাগছে নাকি?তুই ক্যান বাচ্চা নিলি? জোবায়েদা কোনোভাবেই তসলিমাকে বোঝাতে পারেনা যে সে এই বাচ্চা ইচ্ছাকৃত ভাবে নেয়নি। তসলিমা তখন শোনার মত অবস্থায়ও নেই। সে অন্ধের মত জোবায়েদাকে মারতে লাগল। বেশ কিছুক্ষণ পর জোবায়েদা তসলিমার হাত থেকে ছাড়া পেল।

জোবায়েদার ভীষন রাগ হচ্ছে। রাগটা বিধাতার উপর লাগছে নাকি পেটের বাচ্চাটার উপর লাগছে সে তা বুঝতে পারছেনা। এই বাচ্চাকে কিছুতেই দুনিয়ার মুখ দেখানো যাবে না। এটা বাচ্চা না। এটা হল রাক্ষস।

তার সুখ-শান্তি নষ্ট করার জন্য দুনিয়াতে আসতে চায়। এটাকে ধাত্রী ডাকিয়ে নষ্ট করে ফেলতে হবে। নিশ্চয়ই তসলিমা খুব তাড়াতাড়ি একটা ব্যবস্থা করে ফেলবে। সন্ধ্যার দিকে নুরুল ইসলাম তার ঘরে ঢুকল। এসেই বলল-শুনলাম তুই নাকি পোয়াতি হইছিস? নুরুল ইসলাম তাকে কখনই তুই করে বলেনা।

সব-সময় তুমি করে ডাকে। আজকে তুই বলছে তার মানে আজকে জোবায়েদার কপালে দুঃখ আছে। জোবায়েদা মনে মনে আবার একবার পেটের ভিতরে থাকা রাক্ষসটাকে গালি দেয়। তারপর জবাব দেয়-হ। বুজবার পারলাম না ক্যামনে হইল! -কি বুঝবার পারোস নাই?তুই কি আমারে বলদ ভাবছোস?তুই বাচ্চা হওয়াইয়া সমাজে আমার ইজ্জত মারতে চাস-এইটা আমি বুঝিনা ভাবছোস? -এইডা আপ্নে কি কন? হঠাৎ নুরুল ইসলাম জোবায়েদার গলা চেপে ধরে।

আর বলে-শোন,আমার লগে চালাকি করবি না। কাইলকা খুব সকালে কামলার ব্যাটা লতিফের লগে শহরের ক্লিনিকে গিয়া বাচ্চা ফালায়ে আসবি। নুরুল ইসলাম এই কথা বলেই জোবায়েদার ঘর থেকে বের হয়ে গেল। জোবায়েদার প্রচন্ড কান্না আসল। এই লোকটাকে সে ভালবেসে ফেলেছিল।

অথচ এই মানুষটাও বুঝল না যে সে ইচ্ছা করে গর্ভধারণ করেনি। সব দোষ এই পেটের ভিতরের রাক্ষসটার। আগামীকাল সকালেই সে এটাকে নষ্ট করে ফেলবে। হঠাৎ জোবায়েদা শুনতে পেল কে যেন বলে উঠল-মা,আমারে খুন কইরো না! আরে কে কথা বলে? জোবায়েদা আবার শুনল-মা আমি তোমার মাইয়া। সাথে সাথে জোবায়েদার মেরুদন্ডের ভিতর দিয়ে একটা শীতল বাতাস বয়ে গেল।

এ নিশ্চয়ই শয়তানের কাজ। পাপের ফসল যখন একবার তার পেটে এসেছে,শয়তানও সেই সাথে তার উপর ভর করেছে। জোবায়েদা তাড়াতাড়ি ঘর থেকে বের হয়ে রান্না ঘরে চলে আসে। রান্না ঘরে সুফিয়ার মা রান্না করছিল। সেখানে গিয়েও জোবায়েদা শুনল-মা,ভয় পাও ক্যান?আমি তো তোমার মাইয়া।

আমি ক্যান রাক্ষস হমু?আমি ক্যান শয়তান হমু? জোবায়েদা সুফিয়ার মায়ের দিকে তাকিয়ে দেখল সুফিয়ার মা নির্বিকার ভাবে রান্না করছে। তার মানে যা শুনছে তা কেবল জোবায়েদা একাই শুনতে পাচ্ছে। জোবায়েদা আবার নিজের ঘরে ফিরে আসে। সে নিশ্চিত পাগল হয়ে যাচ্ছে। -না মা,তুমি পাগল হওনাই।

তুমি সত্য-সত্যই আমার কথা শুনতেছ। -যাহ তুই শয়তান। তুই আমারে ভাও দিতাছোস। -তুমি কেমন মা?তোমার মা কি তোমার লগে এমনে কথা কইতো? জোবায়েদার বহুবছর আগের কথা মনে পড়ে গেল। প্রতিদিন সন্ধ্যায় এমন সময়ে তার মা তাকে চুলে তেল দিয়ে বেনী করে দিত।

এখন জোবায়েদার সাথে যে কথা বলছে সেও দাবী করছে সে জোবায়েদার মেয়ে। জোবায়েদার হঠাৎ ইচ্ছা হল-সে এই মেয়েটার চুলে তেল দিয়ে একটু বেনী বেধে দেবে। কন্ঠটা আবার বলে উঠল-মা,তুমি আমারে দুনিয়াতে আসতে দেও। আমারেও প্রতিদিন সন্ধ্যায় তুমি চুল বাইন্ধা দিও। মা দোহাই লাগে আমারে তুমি খুন কইরো না।

আরে এই বাচ্চাটা বলে কি?জোবায়েদা কেন খুন করবে?সে তো জীবনে কারো গায়েও হাত তোলেনি। সে কিভাবে খুন করবে? কন্ঠটা আবার বলল-মা আমি জানি তুমি আমারে খুন করবা না। কিন্তু ওরা তো আমারে বাচতে দিব না। তুমি আমারে দুনিয়াতে খালি নিয়া আসো। আমি তোমার সব দুঃখ ভুলায়ে দিমু।

জোবায়েদা তার পেটে হাতটা বুলায়। এইখানটাতেই তো মনে হয় বাচ্চাটা আছে। কি সুন্দর মিষ্টি করে কথা বলছে!কি গভীরভাবে বেচে থাকার আকুতি জানাচ্ছে!এ কোনোভাবেই অশুভ কিছু হতে পারেনা। এটা তার সন্তান। তার সন্তান কোনোভাবেই খারাপ হতে পারেনা।

জোবায়েদা আবার তার ঘর থেকে বের হয়। বাড়িতে তেমন কেউ নেই। তসলিমা আর নুরুল ইসলাম শোবার ঘরে। সুফিয়ার মা রান্না করছে। কামলারাও বাইরের বাড়িতে।

তসলিমা দরজা আস্তে করে সদর দরজাটা খুলে বাড়ির বাইরে বের হল। অন্ধকারে তাকে তেমন দেখা যাচ্ছে না। সে চলতে লাগল। কিছুদূর যেতেই লতিফ কামলার ছেলের কন্ঠ শুনতে পেল-ঐ কেডা যায় এই রাত্তিরে? সাথে সাথে জোবায়েদা দৌড়াতে শুরু করল। লতিফ কামলার ছেলেও ‘ঐ কেডারে’ বলে জোবায়েদার পিছনে ছুটতে শুরু করল।

জোবায়েদার এখন আর কোনো হুশ নেই। সে দিগবিদিক জ্ঞান শূন্য হয়ে ছুটছে। বাচ্চাটাকে বাচাতেই হবে। জোবায়েদা পালাতে পেরেছিল কিনা সেটা জানা যায় নি। তবে সবচেয়ে বড় কথা,সে চেয়েছিল তার সন্তান এই পৃথিবীর মুখ দেখুক।

এটাই ছিল তার জীবনের প্রধান চাওয়া!


এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.