বেদনার পায়ে চুমু খেয়ে বলি এই তো জীবন
রুমানা বৈশাখীর লেখা পড়লাম। নারীবাদ ব্যাপারটা আমাকে ভীষণ ভাবালো। মাঝে মাঝে অবাক হয়ে ভাবি, এই যে নারীরাÑ এরা চিরকাল নারীই থেকে গেলÑ কোনদিন মানুষ হতে পারল না!!
আদিকাল থেকেই নারীত্বের খোলসে আটকে আছে ওরা। ঘরের ভেতর সে নারী। ঘরের বাহিরে সে নারী।
জন্মগত কারণে ৯ আউন্স কম মগজ আর ৬০ ড্রাম ছোট হৃৎপিণ্ড নিয়ে জন্মে নারীরা সবখানেই ছোট হয়ে থাকে। তাদের সমস্ত পারঙ্গমতা কিভাবে যেন পুরুষের পায়ের তলায় দলিত হয়! নারীবাদ পাতা ভরায়। ক্যাকটাসের তাই পুরুষবাদী হয়ে দেখতে ইচ্ছে করে। নারীবাদের ব্যাপারখানা কী? তাই ক্যাকটাস আজ পুরুষবাদী!!!
আজ কলেজে যাওয়ার সময় মহিলা বাসে উঠেছিলামÑ দেখি একতলায় জায়গা নেই। বেশ কিছু মেয়ে দাঁড়িয়ে।
দোতলায় উঠতেই কন্ট্রাক্টরের সহযোগী পিচ্চি ছোড়াটা চিল্লিয়ে ওঠেÑ আপা বাম সাইডে বসেন, বাম সাইডে। বাম সাইডে বসতে বসতে কিমাশ্চর্যম হয়ে দেখলাম ডান পাশটা পুরোটাই পুরুষদের দখলে! অথচ মেয়েরা নিচে দাঁড়িয়ে।
মেজাজ খুব খারাপ হয়ে গেল। আমার মত আরো অনেকে যারা অনেকে যারা নুতন তারা মহিলা বাসের এই অবস্থা দেখে ভিমরী খেয়েছে। কিন্তু কিছু বলতে পারে নি।
আর যারা পুরানো তারা নির্বিকার।
আমাকেও নির্বিকার হয়ে বসে বসে দেখতে হল, বাসওয়ালা মহিলাবাসে একে একে পুরুষযাত্রী তোলার লোভে জায়গায় জায়গায় থামছে। মহিলাযাত্রীদের কর্মস্থলে দেরী হচ্ছিল। আমারও হচ্ছিল। তাও কিছু বলতে পারিনি।
কারণ আমি নারী। বাসওয়ালার কলার খামচে ধরে পুরুষের মত কয়েকটা চড় থাপ্পড় কষে দিয়ে বলতে পারিনিÑ শালারপুত! মহিলা বাসে পুরুষ তোল আবার জায়গায় থামিয়ে লেট কর? সরকারী বাসে দশটাকা ভাড়া মারো শালারা!
পারি নি কারণ আমি একটা আপাদমস্তক নারী। পুরুষ হলে পারতাম। হয়তো আরও দশটা পুরুষ আমার দিকে এগিয়ে আসতো।
ধন্য পুরুষ, তোমাদের কথার ওপর কথা বলার সাহস মেয়েদের নেই।
মেয়েরা তোমাদের ভয় পায়। ধন্য পুরুষ, তোমরা কেউ রাস্তায় হেঁটে যাওয়া কোন মেয়ের কাছ থেকে শরীর সম্পর্কিত টিজ পাও না, বাসে ভিড়ে তোমরা কোন মেয়ের কাছ থেকে অযাচিত স্পর্শ পাও না। লজ্জা, অপমান আর নীরব ক্ষোভে তোমাদের চুপসে যেতে হয় না।
তাই ক্যাকটাস আজ পুরুষদের পক্ষে। পৃথিবাটা আজ তাদের।
ক্যাকটাস আজ পুরুষবাদী!
আমি গর্ব করি সেই সব বীরপুরুষদের জন্য যারা একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে সভ্রমহারা অসহায় নারীদের বধূ করেছিল। দিয়েছিল তাদের নতুন জীবন। অনেক যুদ্ধশিশু তাদের কারণে বাবার পরিচয় পেয়েছিল। তাদের পায়ে আমার অজস্র সালাম।
কিন্তু তখনই আমি ম্লান হয়ে যাই যখন ভাবি, একাত্তরে সভ্রমহারা নারীরা যারা সেই সব প্রাণপুরুষদের সহযোগিতা পায় নিÑ তারা গলায় ফাঁসি দিয়ে আত্মহত্যা করেছে।
পাক ক্যাম্পগুলোতেও ধষর্ণের পর মেয়েরা সেখানেই শাড়ী পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করেছে।
এখনও পেপার পত্রিকায় পড়ি, ধর্ষিত কিশোরীর আত্মহত্যা। সেটা কী কেবল এ কারণেই যে নারীত্ব হারালে নারীর কাছে আর কিছু থাকে না! একটা কিংবা একদল ছেলে তাকে ধর্ষণ করবেÑ যার শাস্তি হিসেবে তাকে মরেই যেতে হয়!!
পুরুষের কাছে সে পচে যায়! হয়ে যায় অস্পৃশ্য! কই? একটা ছেলে তো অজস্র মেয়ের সান্নিধ্যে আসে। তারা তো পচে যায় না? বরং তাদের সম্পর্কে শুনি অভিভাবকদেরও আহ্লাদিত কথাবার্তাÑ ছেলেরা ওসব একটু একটু করে!
দেহপসারীনির দিকে লোকে থুথু ছিটায়, সমাজে তাদের কোন স্থান নেই। পুরুষরা নিশ্চয় এটা অস্বীকার করবেন নাÑ যারা দেহপসারীনির কাছে যায় তারা তো দিব্যি সমাজে চরে খাচ্ছে।
কোন নারী সমাজ তাদের মুখে থুতু ছিটোতে আসে???
ধন্য পুরুষ! আমি তোমার পক্ষে!
আমি ধন্য, যে তুমি বাসে উঠে গিয়ে আমাদের সিট করে দাও। আমাদের প্রতি মহিমা দেখাও। আমরা নিলর্জ্জ নারীরা সেটা মেনে নিয়ে বসে পড়ি।
অথচ প্রতিবাদ করতে পারি না ৫২টি সিটে কেন মাত্র ছয়টি সিট মেয়েদের জন্য? তাও আবার মহিলা ও প্রতিবন্ধীদের জন্য সংরক্ষিত। প্রতিবন্ধী তো পুরুষও হতে পারে।
তাহলে? ব্যাপারটা কী দাঁড়ায়!!!
ধন্য ধন্য। পুরুষ মেয়েদের জন্য ছয়টি সিট নির্ধরিত করে দিয়ে তাদের প্রতি করুণা দেখাতে পার। চাকরীর বাজারে মহিলা অগ্রাধিকারের মত নির্লজ্জ বাক্য বলতে পার।
মেয়েদের কী তবে যোগ্যতা নেই?
তারা পড়াশুনা করে না?
একই সার্টিফিকেট হাতে চাকরীর আশায় এখানে ওখানে ইন্টারভ্যু দিতে দিতে তাদেরও কী ঘাম ঝরে না?
তবুও পুরুষ তোমারই জয়ধ্বনি? স্বয়ং সৃষ্টিকর্তাই যেখানে তোমাদের সব ক্ষমতা দিয়ে গেছেন সেখানে আমরা অসহায়।
জয়েতু পুরুষ! জয়েতু পুরুষ!! জয়েতু পুরুষ!!!
সঙ্গত কারণেই ক্যাকটাস আজ পুরুষবাদী!!!
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।