আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আমি একটি সিনেমা বানাবো ** দেখুনতো হবে কি না?

পাখি এক্সপ্রেস

ফিল্মের নাম : সরলরেখা (বাংলায়) \ স্ট্রেইট লাইন (ইংরেজী)। ধরণ : শর্টফিল্ম মহাসড়ক থেকে একটি সরু রাস্তা খালের মতো নদীর ওপর কাঠের পুল ধার করে ওপার গিয়ে পাহাড়ের বুকে ঢুকেছে। তার আগে এপারে পুলের গোড়াতেই কতগুলো ফুলের দোকান আর দু’টি টি-ষ্টল। তারও আগে রাস্তার দু’পাশে ছোট ছোট বসতঘর আর দু’চারটি ছোট ছোট টিলা। রাস্তার একপাশ ধরে পনের ষোল বছর বয়সী একটি ছেলে স্কুল ব্যাগ কাঁদে খুব সতেজ মনে হেঁটে যাচ্ছে।

হাতের দু’মুঠেই ছোট ছোট পাথরের টুকরো। ছেলেটা যে খুব স্বাধীন তা তার হাঁটার ধরনেই বুঝা যাচ্ছে। রাস্তার ডান পাশে প্রথম যে ঘরটা ঠিক তার পরের ঘরের সামনেই রাস্তার পাশ ঘেঁষে ময়লা জামা পরা পাঁচ ছ’বছর বয়সী একটি মেয়ে বিড়ালছানা কোলে নিয়ে বসে বসে মাটির গায়ে কাঁঠি দিয়ে ছবি আঁকছে। খুবই স্বাধীনচেতা হাঁটার গতি থমকে যায়। কয়েক সেকেন্ড স্থির থেকে ছেলেটি ওই ছোট্ট মেয়ের সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে অত:পর বসে পড়ে।

মেয়েটি ভয় পেয়ে গালে কালি মাখানো গাল আরো কালো করে বিড়ালছানা বুকে জড়িয়ে কপালে ভাঁজ ফেলে পাশ ফিরে ঘাঁড়টি ছেলেটির দিকে বাঁকিয়ে চেয়ে থাকে। ছেলেটির হাসির চেষ্টার পরও তার ভয় কাটে না। ভয় ভাঙাতে ছেলেটি হাতের পাথরের টুকরো পকেটে পুরে তার সাদা শার্টে বালু লাগাতে থাকে। এবার মেয়েটির কপালের ভাঁজ মিলে যেতে থাকে। উৎসাহী বালক গালেও বালু লাগায়।

মজা পেয়ে মেয়েটি হাসতে হাসতে তার গাল থেকে কালি নিয়ে বালকের মুখে লাগিয়ে খিল খিল করে হেসে ওঠে। এর মাঝে ঘরের দরজা দিয়ে শরীরের অর্ধেক বের করে মেয়েটির মা ডাক দিতেই বিড়াল ছানা বুকে নিয়ে দৌড়ে মেয়েটি চলে যায়। মেয়েটির এতো তাড়াতাড়ি চলে যাওয়া আশা করেনি বালক। মুখ ঘোমরা করে হাঁটু ঘেঁড়ে বসে বসে মেয়েটির অসমাপ্ত ছবিটি সমাপ্ত করে খুব দ্রুত ওঠে পড়ে। পকেট থেকে পাথরের টুকরো নিয়ে দু’মুঠে ভাগ করে ডান হাতেরগুলো শূণ্যে ছুঁড়ে মারে।

এবার অনেকটা ধীর আলসেমীর হাঁটা হাঁটতে থাকে। মুখে বিষন্নতা লক্ষ করা যাচ্ছে। পশ্চিম থেকে বিকেলের রোদ খুব সাবলীলভাবে ছড়াচ্ছে। বালক কিছুক্ষণ পর পর পশ্চিম দিকে তায়িকে থাকছে। কিছুদূর যাওয়ার পর পুলের গোড়ায় ফুলের দোকানগুলোর সামনে ধীরে ধীরে গতি থামিয়ে দাঁড়িয়ে বাঁকা হয়ে দোকানে দোকানে খন্ড চোখ বুলাতে থাকে।

চারটি ফুলের দোকান আর দু’টি টি-ষ্টল। সর্বশেষ দোকানে চেয়ে আবার আগের দেখে নেয়া একটি ফুলের দোকানে তাকিয়ে দেখে। সমবয়সী একটি মেয়ে পাহাড়ী ফুলের ডাঁটা থেকে পাতা ছড়াচ্ছে। তার পাশের দোকানটা টিÑষ্টল। মেয়েটির দিকে তাকিয়ে থেকে আস্তে আস্তে গিয়ে টি-ষ্টলের একটি খালি বেঞ্চিতে বসে।

কিন্তু অতটা যুইত করতে পারছে না। মেয়েটির সাথে চোখাচোখির কোন সুযোগ নেই। টি-ষ্টলে কতগুলো ভারী বয়সী আদিবাসী বুড়ো চাদর গায়ে বিড়ি ফুঁকছে। আর পুরো দোকানগুলো ঘিরে যার যার মতো ব্যস্ততার কথোপকথন চলছে। কেউ তাদের নিজস্ব ভাষায় কেউ বাংলা ভাষায় কথা বলছে।

টি-ষ্টল থেকে এক বুড়ো উঠে যেতেই তার যায়গা দখল করে নেয় বালকটি। এবার দোকানীর সাথে চোখাচোখির সুযোগ আছে। হলোও তাই। মেয়েটি একবার ছেলেটিকে দেখে নিলো। গায়ের ময়লা কাপড় আর মুখ দেখে একটু একটু (মুচকি) হাসি ছাড়লো।

ছেলেটি তৃপ্তি পেলো। মেয়েটিকে আরো আকৃষ্ট করতে জামার ময়লা তাড়াতে লাগলো। মেয়েটির উৎসাহ বালককে আরো এগিয়ে নিচ্ছে। চেহারার বিষন্নতা ছুটি নিলে বালকটি এখন খুব সাবলীল। বিকেলের শীত গায়ে লাগতে শুরু করলে দোকানী তার দোকানের খুঁটির সাথে লাগানো স্যুয়েটারটি নিয়ে গায়ে পরে নেয়।

দুষ্টুমি জমাতে গিয়ে বালকও ব্যাগ থেকে স্যুয়েটার বের করে পরে নেয়। মেয়েটির মুখে এবার খুবই স্বাচ্ছন্দ্য হাসি লাগলো। বিকেলের নামাজের আযান কানে আসতেই মেয়েটি মাথায় ওড়না পরে নেয়। স্যুয়েটারের মাথায় পরার অংশ উঠিয়ে নিয়ে বালকটি মেয়েটির সাথে ভাগ বসালো। মেয়েটি হাসতে শুরু করলেই দোকানের সামনে থেকে ভ্যানে বসা এক যুবকের ডাকে হাতের ফুল ফেলে রেখে দৌড়ে ভ্যানে গিয়ে ওঠে যুবকের সাথে কথোপকথনে ভ্যানটি চলতে শুরু করে।

দোকান থেকে ভ্যান পর্যন্ত একবার হলেও বালকের দিকে না তাকানোর বিষয়টি বালকের কাছে অবিশ্বাস্য মনে হলো। এবারও মনে হলো মেয়েটি খুব তাড়াতাড়ি চলে গেলো। হাসিমাখা মুখ আস্তে আস্তে মলিন হতে থাকলো। মাথা থেকে স্যুয়েটারের টুপি নামিয়ে জিপারটির অর্ধেকের মতো লাগিয়ে নেয়। টি-ষ্টলের টেবিলে রাখা গ্লাসে পানি ঢেলে ঢকঢক করে গিলতে থাকে।

হাতের উল্টো পিঠে মুখ মুছে রাস্তায় এসে দাড়ায় বালকটি। বালকের দিকে খেয়াল করার মতো সময় আশপাশের মানুষদের নেই। হাঁটতে হাঁটতে পুলের গোড়ায় গিয়েই পকেট থেকে পাথরের টুকরো বের করে একটি একটি করে ফুটবলের মতো লাথি মারতে থাকে। সর্বশেষ পাথরটি পুলের ওপর জেরে ছুড়ে মারলে ড্রপ খেয়ে পুলের ওপার গিয়ে পাহাড়ের ঝোপে পড়ে যায়। কাঁধ থেকে ব্যাগ নিয়ে বুকে জড়িয়ে ব্যাগের ওপরের অংশে মাথা রেখে পশ্চিমের রোদ থেকে চোখ বাঁচাতে মিনমিনে চোখে হাঁটা চালিয়ে যায় বালক।

চেহারায় অসম্ভব হারানোর চিহ্ন। পুল পেরিয়ে পাহাড়ের মাঝ দিয়ে রাস্তা ধরে হাটতে আর রোদের অত্যাচার নেই। কতদূর গিয়ে পাহাড়ের ভাঁজে ছোট্ট একটি জলপ্রপাত চোখে পড়ে। আরেকটু এগুলেই পর্যটন স্পট থাকলেও এ জলপ্রপাতকে ঘিরে কোন পর্যটক নেই। পড়তে থাকা পানির গায়ে রোদগুলো মনে হচ্ছে পানির সাথে সাথে গড়িয়ে পড়ছে।

নিচে ছড়ানো ছিটানে পাথরগুলোর ভাঁজ দিয়ে ছোট ছোট ঘাসফুলের মতো ফুল। দু’একটি প্রজাপতিও দেখা যাচ্ছে। বালকের চোখ সেখানে আটকে যায়। প্রজাপতির লুকোচুরি দেখে মাঝে মাঝে শরীর নাড়িয়ে হেসে ওঠে। আবার প্রজাপতির ওড়ার তালে তালে অঙ্গভঙ্গিও করে।

একটু আগের জমানো বিষন্নতা পুরোপুরি ছুটি নেয়। ধীরে ধীরে প্রজাপতিগুলোর কাছে যায়। বালকের অবস্থানে প্রজাপতিও স্থান ত্যাগ করে। বুকের ব্যাগ কোলে নিয়ে পাথরের টুকরোয় বসে পা’দুটো ছড়িয়ে পানি ধরে আর রোদের ঝিকিমিকি দেখে। স্বচ্ছ পানির সাথে সাথে রোদের নড়াছড়া অসম্ভব ভালোলাগার।

তালুতে পানি নিয়ে মুখ ভেজায়, মাথার চুলে ছিটাতে থাকে। কোলের ব্যাগ পাশের পাথরের টুকরোয় রেখে উঠে গিয়ে জলপ্রপাতের পানির নিচে দাড়িয়ে থাকে। চোখ বন্ধ করে হাত দু’টো সামনে বাড়িয়ে মাথা উঁচু করে ভিজতে ভিজতে পানির ভেতর থেকেই লম্বা চুলসহ মাথা ঝাঁকাতে থাকে। এবার পানি থেকে সরে এসে মুখের ওপর শুয়ে থাকা চুলগুলো থেকে চেপে চেপে পানি সারাচ্ছে। গায়ের জামা খুলে চিবিয়ে পানি সারিয়ে আবার পরে নিলো।

ততোক্ষণে গায়ে শীতের কাঁপন লাগতে শুরু করলে কাঁপতে কাঁপতে ব্যাগটি হাতে নিয়ে সুয়্যেটার বের করে পাথরের ওপর ব্যাগ, তার ওপর স্যুয়েটার রেখে জামা খুলে স্যুয়েটারটি পরে নিলো। ভেজা জামা ব্যাগে পুরে ভেজা প্যান্ট আর ক্যাডস পরে মাথার ভেজা চুলেগুলো পেছনে সরিয়ে ব্যাগ কাঁদে নিয়ে খুবই সতেজ মনে একটু হেঁটে একটু দৌড়ে প্রফুল্ল চলনে পাহাড়ী রাস্তা ধরে চলে যেতে থাকলো। মিনিট খানেক হাঁটার পর পাহাড়ের ঢাক ঘেঁষে মোড় নেয়া রাস্তায় বালকের মোড় নেয়াতে সামনে খালি রাস্তাটিই পড়ে থাকলো। এসময় একটি গানের লাইন দু'য়েক বাজতে থাকলে অতটা মন্দ হবে না। (কেট উইন্সলেন্সের ‘জুড’ মুভিটি দেখার সময় একটি মুভি বানানোর পুরোনো শখ নাড়া দিয়ে ওঠে।

সর্বশেষ ‘স্লামডগ মিলিওনার’ মুভিটিতে ছোট বাচ্চাদের অভিনয় আর ক্যামেরার কাজ দেখে একটি শর্টফিল্ম বানানোর খুব শখ জেগেছে। কয়েক মিনিট ভাবতেই মানুষের জীবনে ভালোলাগার আগমন আর প্রস্থান নিয়ে এই থিমটি মাথায় এলো। উপরের গল্পটি কেন জানি আমার খুব ভালো লাগে। ভাবলাম আমার পরিবারে সেটা শেয়ার করি। তাই ব্লগে দেয়া।

মূল্যায়ন ও সাজেশন নির্ভর মন্তব্য আশা করছি। সবাই ভালো থাকুন। ) ০৪.০২.০৯ রাত ১.০৪ মি.

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.