২০১৩-০৮-২৮ ০১:০৯:৩৯
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাজের সমালোচনা অনেকেই করেছেন। কিন্তু তাঁর নেতৃত্বের প্রতি এ রকম অনাস্থা কেউ প্রকাশ করেনি, যেমনটি করলেন তাঁরই মন্ত্রিসভার অন্যতম জ্যেষ্ঠ সদস্য আবদুল লতিফ সিদ্দিকী। তিনি সরকারের পাট ও বস্ত্রমন্ত্রী। কিন্তু পাট ও বস্ত্র নিয়ে কথা কমই বলেন। জাতিকে রাজনীতি ও আইনের আজগুবি পাঠ শেখান।
এই না হলে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের মন্ত্রী!
সোমবার জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে ও ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলার প্রতিবাদে আয়োজিত ‘বঙ্গবন্ধুর শিক্ষা ভাবনা: বর্তমান পরিপ্রেক্ষিত’ শীর্ষক সেমিনারে মন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দিকী বলেছেন, ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিষয়ে ড. মুহাম্মদ ইউনূস যে মন্তব্য করেছেন, তা রাষ্ট্রদ্রোহের শামিল। তিনি (আবদুল লতিফ সিদ্দিকী) যদি দেশের প্রধানমন্ত্রী হতেন, তাহলে এত দিন তাঁকে (ড. মুহাম্মদ ইউনূস) কারাগারে থাকতে হতো। তিনি এও বলেছেন যে ইউনূসের ভাগ্য ভালো যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর বিরুদ্ধে এখনো ব্যবস্থা নেননি। (প্রথম আলো, ২৬ আগস্ট ২০১৩)।
পাটমন্ত্রীর এই বক্তব্যে যে বিষয়টি স্পষ্ট তা হলো, নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ ও গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা ড. মুহাম্মদ ইউনূস তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিষয়ে কথা বলে রাষ্ট্রদ্রোহের কাজ করেছেন।
অতএব, কারাগারই তাঁর উপযুক্ত জায়গা। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁকে কারাগারে না রেখে একজন রাষ্ট্রদ্রোহীর সঙ্গে আপস করেছেন।
এই ধরনের আপসকারী প্রধানমন্ত্রীর মন্ত্রিসভায় নিরাপসী আবদুল লতিফ সিদ্দিকীর থাকা কতটা সমীচীন, সেই প্রশ্ন না করে পারছি না। লতিফ সিদ্দিকী প্রধানমন্ত্রী হলে যাঁকে কারাগারে পাঠাতেন, শেখ হাসিনা তাঁকে অবাধে চলাফেরা ও কথা বলতে দিচ্ছেন, এত বড় অন্যায় তিনি কীভাবে মেনে নিচ্ছেন? এর পরও মন্ত্রিত্ব করছেন!
একই অনুষ্ঠানে আবদুল লতিফ সিদ্দিকী বলেছেন, ‘যুদ্ধাপরাধের বিচারে গঠিত আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনাল পৃথিবীর সবচেয়ে স্বাধীন ও নিরপেক্ষ। তাই ট্রাইব্যুনালের বিরুদ্ধে যারা হরতাল দেবে, তাদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে হত্যা করতে হবে।
কারণ হরতালকারীরা আদালত অমান্যকারী ও রাষ্ট্রদোহী। (সূত্র: ওই)
এর আগে ১৬ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতেই এক সভায় পাটমন্ত্রী বলেছিলেন, ‘বসে থাকার সময় নেই, আর কেউ হরতাল করলে তাদের বাড়িতে গিয়ে হত্যা করতে হবে। (প্রথম আলো, ১৭ আগস্ট ২০১৩)। মানুষ অপরাধীর বিচার বা ফাঁসির দাবি করতে পারে। কিন্তু হত্যা করার কথা বলতে পারে না।
এটি গুরুতর অপরাধ।
ছাত্রলীগের কর্মীদের উদ্দেশ করে তিনি আক্ষেপ করেছেন, ‘নিজেদের মধ্যে মারামারি করতে পারো। কিন্তু বিরোধীরা যখন হরতাল দেয়, তখন প্রতিহত করতে পারে না। ’
মন্ত্রীর এই বক্তব্যের পর যদি ছাত্রলীগের ছেলেরা বিরোধীদের হরতাল প্রতিহত করতে গিয়ে কোনো অঘটন ঘটায়, আর নতুন কোনো বিশ্বজিত্ সেই অঘটনের শিকার হয়, তার দায়দায়িত্বও তাঁকে নিতে হবে।
মন্ত্রী ও সাংসদ হিসেবে আবদুল লতিফ সিদ্দিকী দেশের প্রচলিত আইন ও সংবিধান রক্ষারই শপথ নিয়েছেন।
তিনি কোনোভাবেই সেই শপথ ভঙ্গ কিংবা সংবিধান লঙ্ঘন করতে পারেন না।
আবদুল লতিফ সিদ্দিকী যদি মনে করেন, কেউ রাষ্ট্রদ্রোহিতা করেছেন, তিনি আদালতে তার প্রতিকার চাইতে পারতেন। হরতাল আহ্বানকারীদের বিরুদ্ধে মামলা করতে পারতেন। কিন্তু আইন-কানুনের তোয়াক্কা না করে মন্ত্রী নিজেই আইন হাতে তুলে নেওয়ার কথা বলছেন। কাউকে কারাগারে পাঠাচ্ছেন।
বাড়ি বাড়ি গিয়ে কাউকে হত্যার হুকুম দিচ্ছেন।
দেশে যদি ন্যূনতম আইনের শাসন থাকে, তাহলে এসব বেআইনি কথাবার্তার জন্যই মন্ত্রীকে অবশ্যই জবাবদিহি করতে হতো। তাঁকে শাস্তি পেতে হতো। কিন্তু দেশটা যে বাংলাদেশ। এখানে মন্ত্রী-সাংসদের আইন মানতে হয় না।
যুদ্ধাপরাধীদের বিচার সমগ্র জাতির দাবি। যারা এই বিচারের বিরোধিতা করবে, আমরা তাদের বিরুদ্ধে আন্দোলন করব। জনমত গড়ে তুলব। প্রয়োজনে সারা দেশে গণজাগরণ মঞ্চ বানাব। আদালতে তাদের শাস্তি চাইব।
কিন্তু তাই বলে যারাই হরতাল ডাকবে, তাদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে হত্যা করতে হবে? এসব কীসের ইঙ্গিত?
১৬ আগস্ট পাটমন্ত্রী যখন প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতেই হরতালকারীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে হত্যা করার কথা বলেছিলেন, তখন কেউ প্রতিবাদ করেননি। এমনকি প্রধানমন্ত্রীও না। তাহলে কি আমরা ধরে নেব যে পাটমন্ত্রীর এসব বল্গাহীন, কাণ্ডজ্ঞানহীন কথাবার্তায় প্রধানমন্ত্রীর সায় আছে?
তাহলে আমরা কি আইয়ামে জাহেলিয়াতের যুগে ফিরে যাচ্ছি, যেখানে হত্যার বদলে হত্যা জায়েজ ছিল?
সোহরাব হাসান: কবি, সাংবাদিক।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।