এই ফাগুনের লাল রোষে আমি আজ ভালো নেই- ক্রোধ নেই। যেখান থেকে জ্বলে উঠতে পারে ছাই ছাপা আগুন। তাতে কোন প্রাণের ফুৎকার নেই। আমি কী বুড়িয়ে গেছি তবে ? নিরবতার দায়ে অপরাধী ? আমার কী দায় নেই-প্রাণের প্রান্তরে প্রণোদনা নেই। তবু অসুবিধা নেই, আমার-আমাদের অন্ধ পাগল ভাইগুলো-বোনগুলো-বন্ধুগুলো-সারথীগুলো তো আছে।
কোথায় আছে- কেমন আছে-কী তার পরিণাম-ফলাফল.....?
আমি আঁতকে উঠি। যেমনটা একরাশ বিক্ষোভের মাঝে হঠাৎ লুটিয়ে পড়া রক্তের ফিনকি স্রোতের সাথে আকষ্মিক নিরবতার চিত্র ভেসে আসে মনে। পাগল বোনেরা-ভাইদের অনেকেই বোঝেনা এ আকুতি। ওদের কী করে দেই দোষ। বয়সের একেকটা বাঁকে বাঁকে মানুষের হৃদয় পেয়ালা থাকে আবেগের স্রোতে টম্বুর।
একটু কাত হলেই উপচে পড়ে, কখনো বা তলানিতে। যারা এই জমায়েতে ক্ষোভের মশাল নিলো হাতে-তাদের বোঝাবো কী করে- এ আগুন সামলানো বড় বেসামাল। যেনবা পুড়িয়ে না দেয় নিরূপদ্রব-নির্বিকার পড়শির ঘর-নিজের শরীর।
আজকের এই শাহবাগে- কেউ কেউ তাহরীর দেখে-আমি দেখি দিল্লিতোরণ-বিজয়চকের পথ। পাগল মেয়েটি বলে সেদিনের সেই আগুন-আজকের এই বহ্নিশিখার পালে বিস্তর ব্যবধান।
কি করে বোঝাই তাকে, মানচিত্রের সীমারেখা-বিষয়ের বিভাজন ছাড়া যেখানে রয়েছে মিল সেখানে তাকাও তুমি। সেদিনের সেই কৃষ্ণচুড়া-বিদেশি ফাগুনে, ফুটেছিল তোমাদের-আমাদের তরুন-প্রাণিত গাছে। তাহাদের কোন পার্থ ছিলনা-সারথীও নয়। তবু তারা জল কামানের বৃষ্টিধারায় ভিজেছিল। টিয়ারের দোষে কেঁদেছিল।
গলা ভেঙেছিল কারো স্কুল-কলেজের ব্যাগে। তবু তারা খালি হাতে ফিরেছিল। দামিনিকে তারা প্রত্যাবর্তনের মালা দিতে না পেরে অনেকেই নিজেদের জীর্ণছিন্ন চপ্পল জোড়াও ছুড়ে ফেলে গেলো। দামিনি পেলোনা আর প্রিয়তম ঘর-অসম্পন্ন জীবনের প্রত্যাশিত অনিশ্চিত দোলাচল। অর্বাচীন অনুজাকে কী করে বোঝাই।
-দৃষ্টি যদি পুরনো না হয়-যতই ফুরাও পাতা পুস্তকের-কথিত জার্নাল। তুমি তার অধরাই রবে। চেতণার প্রণোদনা হৃদয়ে বসত গড়ে। বরং সেই তারুণ্যের দাবি ছিল বৈশ্বিক-ধর্ষণের মতো অমানবিক অপরাধের বিরুদ্ধে। তুমিও মানবে নিশ্চয়, আমাদের আজকের এই দাবি বয়সের ভারে বহুধা বিভক্ত-কিছুটা বিভ্রান্ত হতচ্ছাড়া জাতি।
কিন্তু দামিনির ঘটনার কালে যে আওয়াজ উঠেছিল তাতে কোন দল-অঞ্চলের বিভাজন ছিলনা-রিপাবলিকান-সিপিএিম-বিএনপি-আওয়ামী সভ্য সকলের সমর্থণ ছিল। তবু তার ফলাফল খুঁজে নিতে তুমি নাও দূরবীন-ম্যাগনিফায়িং গ্লাস। আর আমি দেখি তারপরে আমাদের দিনাজপুরে-পঞ্চগড়ে- কোলকাতার সড়কের মোড়ে আরো কতো দামিনির ছবি-আর কতো বেহিসাবি- বেকুব জীবন। তুমিও তেমন। সেদিনও লিখেছিলাম- তোমরাও বলেছো ভালো....
(দামিনির জন্য দমদম বসে....
এই দমদম-পাতাল রেলের পথ
থামবেনা এখানে কখনো এসে শাসকের জয়রথ
বিজয় চকের সাথে বাংলার বিজয় স্মরণী
খুব বেশি ব্যবধান তখনো হয়নি
উর্দি পরা লাঠিগুলো ধষৃকের উত্থিত শিশ্নের প্ররোচক
জলকামানের তোড়ে প্রজ্জ্বলিত পতঙ্গের দল
ভেসে যায় দামিনির পরমা কাজল
ওমা বল-আমি তোর কেমন পাগল
তোর মেয়েকেই ভালোবাসি-ডাকি বোন-
রাস্তায় টেনে ধরি তারই আঁচল
একটুও পড়েনি হেলে লজ্জ্বানত দিল্লিতোরণ
দিনশেষে অগণিত স্যাণ্ডেল-ভাঙ্গা ইট
আর ক্ষোভের কেতন কুড়োতে কুড়োতে
গান ধরে পৌরসেবকের দল-
সারে জাঁহাসে আচ্ছা...)
সকালের টক শো’তে তোমাদের-আমাদের অগ্রজরা (বরেণ্য সাংবাদিক মনজুরুল আহসান বুলবুল-জাবি উপাচার্যসহ আরো কেউ কেউ) বলে গেলেন, চেহারাকিতাব অথবা ফেসবুক যে নামেই ডাকো তাকে, মূলত এসব কিছু সামাজিক টুলস-কার্যকর উপাদান।
এর চোঙা মুখে লাগিয়ে ফুঁ দিলেই তার শব্দ ছুটে যায় বিশ্বের আনাচে-কানাচে। তার গতি তীব্রতর। পাগলা ঘোড়ার মতো তার টান। তার রাশ টেনে ধরা অতীব জরুরী। এর বল্গাহীন উদ্দেশ্যপ্রবণ ব্যবহারের নির্মম শিকার রামুর পোড়াচিত্র আমরা ভুলে যেতে পারি-তারা কি ভুলেছে..? যাদের শরীরে এখনো মলম।
একথা বোঝেনা যারা তাদের বেকুব কিছু প্রতিনিধি শ্বাপদের তৃতীয় শাবক। তাই তারা এমন এমন কিছু শব্দ ব্যবহার করে ফেসবুকে- তোমার-আমার বুকে। তাদের ক্ষোভের থু থু এতোটাই বেসামাল যে- তার সাথে তারা প্রিয়নবী হয়রত আর নিন্দিত ওইসব পাপিষ্ঠ-পাপাত্মার নাম নিয়ে তালগোল পাকানো কোন বাক্যবাণ ছুঁড়ে দেয়। বাক্যালাপের গতিপথ ঘুরে যায় অন্যদিকে-অন্য কোন মোড়ে। আমাদের নির্বোধ শব্দপ্রেমী ভোরের শিউলি আর রক্তজবার দল ভুল করে তাহাদের মতো।
মত্ত হয় অন্তকাজিয়ায়। ওইদিকে প্রথম যে দিয়েছে তার গলা ভেঙ্গে যায় বলে অথবা কৌশলে মাইক কেড়ে নেয় সুযোগ সন্ধানী ক্ষমতাপিপাসুর পাল। এরাই সুবিধা নেয়Ñআমাদের পাঁজরের হাড় দিয়ে বানায় ওদের সিড়ি ওপরে ওঠার। বুমেরাং-আমাকে কাঁদায়। আমি জানি সঠিক নেতৃত্বহীন প্রাণের জোয়ার হয়তো ভাসায়-দেদীপ্যমান শিখা পুড়িয়ে ওড়ায় ছাই।
যদি লক্ষ্যভ্রস্ট হয়, শুকনো আগাছা আর পরগাছা শত্র“র কেল্লা-প্রহরী একটুও হেলে না পড়ে-তবে শুধু শক্তিক্ষয়-সময়ের অপচয়। মাঝে মাঝে মনে হয় আমাদের হৃদয়ে ক্ষত তীব্র না হলে আমাদের চিৎকার গগনবিদারি হয়না তেমন। ওরা বহু ছল জানে-ছদ্মবেশ জানে-তোমাদের অর্বাচীন সারল্যের ফাঁকফোকরের সবগুলো পথ ভালো করে চেনে। চিরচেনা নেতাদের আর তোমরা আগের মতো করোনা বিশ্বাস। যারা ইতোমধ্যেই পাঞ্জাবির পকেটে বিভ্রান্তির বানরশলাকা রেখে তোমাদের মাইক কেড়ে নিতে তৎপর তাদের ডাকোনা।
অথচ একজন নেতা বড় বেশি দরকার। যেমন পেয়েছিল নেতা রেসকোর্স ময়দান-বৃটিশবিরোধী অহিংস প্রতিবাদ। তোমাদের মাঝে কেউ যদি থাকে বন্ধু তেমন তবে বুক চিতিয়ে পাঠ শুরু আগামীর ইশতেহার-মহাকাব্য নতুন যুগের। তার আগে তোমরা যদিও আমাকেই ভুল বোঝো। আমাদের আপত্তি নেই কোন।
আচ্ছা গণজোয়ার কাকে বলে...? সেই জোয়ার থেকে কী সকল শ্রেণী-পেশার লোক বাইরে থাকে...? তবুও আমি হতাশ নই । আমি আছি তোমাদের ব্যতিক্রম সমর্থক.............................। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।