আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

একটি বাংলা সিনেমার পুলিশীয় রম্য

কাগু ক্যান স্টার্ট অ্যা ফায়ার ইউজিং জাস্ট টু আইস কিউবস

লৈথুর ঠোঁটটি বড়ই কাঁটা । কাকে কি বলিতে হইবে কোথায় গিয়া পা চাটিতে হইবে কোথায় ভীমরুপে লম্ফঝম্পে অবতীর্ণ হইতে হইবে বুঝিয়া উঠিতে পারে না সে সহজে । তদুপরি মাথাটি তাহার প্রায়ঃশই প্রতারণা করিয়া বসে । এমনিতে ভালো বুদ্ধিমান সমঝদার বাবুটির মত চলিলেও মাস কয়েক পরপর একটি না একটি গোল বাঁধাইয়া লোকের লাথি খাইতে হয় তাহাকে । শেষটায় নামই রটিয়া গেল লৈথুন বলিয়া ।

তথাপি ঠোঁটকাটা স্বভাবের কারণে শত্রুর পাশাপাশি বন্ধুও দুএকজন যে সে জুটায় নাই তাহা নহে । শত্রুরাতো তাহাকে দুই চোখে দেখিতে পারিতই না বরং বন্ধুরাও তাহার অনেক এলোমেলো কথার অর্থ বুঝিতে পারিত না । পাগল নাম রটিয়া যাওয়ায় সে যাহা খুশি বলিয়া বেড়াইত । শুধু গাঁয়ের সমঝদাররাই বুঝিতেন লৈথু সবসময় পাগলামি করিয়া বেড়ায় না । সে যাহাই হোক কথার কারণে তাহার টুঁটিটি চাপিয়া ধরিতে কেহ কখনো আসে নাই ।

গোল বাধাইল গাঁয়ের চৌধুরিদের কন্যা দুর্গন্ধমেদিনী । "ঘোষেদের বাড়ীর বউ-ঝিরা না শহরের মত জামা পরে না গাঁয়ের মত । দুইএর মাঝামাঝি পড়িয়া তাহারা তালগোল পাকাইয়া ফেলিয়াছে । " গাঁয়ের সুভাষিণী বলিয়া পরিচিত বৃটিশরাজ প্রদত্ত রাজা বাড়ীর বউ অধরা তাহা নিয়া টিটকারি করিতেছিল দেখিয়া লৈথুর মাথা বোধহয় গোলাইয়া গেল । পাক্কা বদমাশটির মত বলিয়া উঠিল, "আপনার এত জ্বলুনি কেন গো দিদি ।

বাঁদরখোলা লেগে গিয়েছে নাকি আজ ওখানটায় । " অধরা যারপরনাই অপমানিত বোধ করিলেও লৈথুর মাথা আজ হয়ত ঠিক নাই ভাবিয়া , নিজ চরকায় তেল দাওগে ঠাকুরপো বলিয়া অন্দরে চলিয়া গেলেন । চৌধুরিদের কন্যা দুর্গন্ধমেদিনী দীর্ঘকাল শহরে পড়ালেখা করিয়া মাত্র কমাস হৈল গাঁয়ে ফিরিয়া আসিয়াছে । গাঁয়ে আসিয়াই নতুন বধূ হইয়া আসা অধরা বৌদির বড়ই নেওটা হইয়া উঠিল সে কদিনেই । প্রায় সারাদিনই এ বাড়ি আসিয়া বসিয়া থাকে ।

অধরা বোদির সাথে গল্প করে । আজ সে বাড়ীর ভিতরেই ছিল । অধরা দি তাহাকে ঘরে রাখিয়া পালেদের বাড়ীর ছোট বউএর সাথে কথা বলিতে গেলে লৈথু বদমাশটার ঘটনাটা ঘটে । দুর্গন্ধমেদিনী হয়ত শুনিতে পায়নাই ভাবিয়া অধরা তাহাকে কিছু বলিতে চাইল না । কিন্তু গোঁ ধরিয়া সে ঠিকই বলাইয়া ছাড়িল ।

কি মনে করিয়া প্রণাম করিয়া বৌদির পায়ের ধূলাটি শিরোধার্য করিয়া কহিল এর প্রতিশোধ লইবই । তুমি দেখে নিও বোদি । আরে পাগলি করিস কি করিস কি বলিয়া হাঁহাঁ করিয়া উঠিলেও দুর্গন্ধমেদিনীকে থামানো গেলো না । গাঁয়ে নতুন আসিবার পরে প্রথম প্রথম দুর্গন্ধমেদিনীর কথাকে কেহ তেমন গুরুত্ব দিত না । এ গাঁয়ের লোকগুলোই কেমন যেন এরকম ।

নতুন কাহারো কথা তা সে যতই ভারী হোক না কেন কানে তুলিতে চায় না । সেবার এক ইঁচড়েপাকা ছোকড়া তাহাকে অপমান করিয়া কথা বলিলে কত দ্বারে দ্বারে ঘুরিয়াছে দুর্গন্ধমেদিনী, কোথাও বিচার পায় নাই । কাঁদিয়া কাটিয়া পর্যন্ত বলিয়াছে । কাহারো ঘুম ভাঙাইতে পারে নাই । তারপর হইতে নিজের কর্মপন্থাটি সংশোধন করিয়া লইয়াছে সে ।

একটু হাসিটি ঢঙটি রঙটি করিলেতো আর নিজের শরীর খসিয়া পড়িবে না । তাহাতে যদি লোকে তাহার কথায় কান দেয় মন্দ কি । তারপর হইতে গাঁয়ের মাথাওয়ালদের সাথে সে একটু হাসিটি ঢঙটি রঙটি করিয়া কথা বলে । বুঝুক বা না বুঝুক মাথাওয়ালাদের কথা হৈলে তা যা বলেছেন দাদা, এক্কেবারে শতভাগ ঠিক কথা বলিয়া গদগদ ভাব দেখায় । গাঁয়ের মাথাওয়ালারাও শহরে পড়ালেখা করা মেয়ের প্রশংসা , তদুপরি উপরি হিসাবে খন্ডকালীন রঙটি ঢঙটি পাইয়া আকর্ণলম্বিত হাসি সহকারে গর্বিত বোধ করে ।

এইরুপে একটি ভালো প্রভাব বলয় এরই মধ্যে তৈরী করিয়া লইয়াছে দুর্গন্ধমেদিনী । সেই ইঁচড়েপাকাটিকে পাওয়া যাইলে এখন সে তাহার চৌদ্দপুরুষের খবর করিয়া দিতে পারিত । কিন্তু বদমাইশটাকে পাওয়া যাইবার কোনোই সম্ভাবনা নাই দেখিয়া ধীরে ধীরে তাহার রাগ সব গিয়া পড়িল লৈথু হারামজাদাটার উপর । আজ সেসব তিলে তিলে উসুল করিবার লগ্নটি আসিয়াছে । নাওয়া খাওয়া ঘুম ভুলিয়া গাঁয়ের মোড়লের কাছে নালিশের পর নালিশ জানাইতে লাগিল দুর্গন্ধমেদিনী ।

মোড়ল ব্যাস্ত মানুষ , কাহার বউকে কে কি বলিয়াছে জাতীয় তুচ্ছ ব্যাপারে তিনি জড়াইতে চান না । সুতরাং ব্যাপারটিকে বড় করিতে হইবে বলিয়া ঠিক করিল দুর্গন্ধমেদিনী । সে ও তাহার ঢঙ রঙএর মাথাওয়ালা বন্ধুরা মিলিয়া আলাদা আলাদাভাবে নালিশ লইয়া যাইতে লাগিল মোড়লবাড়ী । তাহাতেও কাজ হয় না । ইংরাজিতে নালিশ পাঠাইল ।

লৈথুর স্বভাবটাই উচ্ছন্নে যাওয়া বলিয়া বুঝাইতে লাগিল ঘরে ঘরে ঘুরিয়া । বাঈজি বাড়ীতে গিয়া সে বাঈজির সাথে কিসব নোংরা কথা বলিয়া বেড়াইয়াছে তাহার হুবহু বর্ণনাও নিয়া আসিল ঢঙরঙের বন্ধুরা । গাঁয়ের বৌঝিরা দাঁতে-জিভ কাটিল । রাম রাম । একি কলিযুগ আসিল ।

বাঈজি বাড়ীতে কেহ যে ধর্মালোচনার জন্য যায় না একথাটি কিন্তু কেহ বলিল না । সামনাসামনি দরবার না করিলেও মোড়ল ঠিকই বুঝিয়াছিলেন ঘটনা কি । দুর্গন্ধমেদিনী মেয়েটি গাঁয়ের সব মাথাওয়ালাদেরও দলে ভিড়াইয়া ফেলিয়াছে । এখন তাহাদের বিরুপ করিতে গেলে গাঁয়ে মাতব্বরী বজায় রাখাই দায় হইয়া দাঁড়াইবে । আবার সামনাসামনি সালিশ বসাইতে গেলে কাহারো গলা টিপিয়া না ধরার নীতিটি লইয়া লোকের টিটকারির মুখে পড়িতে হইবে ।

লাঠিয়ালকে ডাকিয়া তাই তিনি যথার্থ নির্দেশটি দিয়া দিলেন । দুর্গন্ধমেদিনী বা কারো সহিত এই নিয়া আলাপে মাতিলেন না । পরদিন সকালে দীঘিরপাড়ের বটগাছটায় গামছা দিয়া গলা প্যাঁচানো লৈথুর লাশটি পাওয়া যাইলে, গাঁয়ের লোক আনন্দমিছিল বাহির করিলো । বদমাশটার উপযুক্ত শাস্তি হইয়াছে বলিয়া বৌ-ঝিরা খিড়কির দরজা হৈতে নেত্রী দুর্গন্ধমেদিনীর উদ্দেশ্য হাত নাড়াইলো । আনন্দ মিছিলেই ব্যাটারা যাহারা তাদের সাথে ছিল না তাহাদের উদ্দেশ্য লিঙ্গ এবং শরীরের তাবৎ নোংরা বলিয়া পরিচিত জায়গাগুলার উপমা দিয়া গালাগালি করিলেও গাঁয়ের বৌঝিরা বা দুর্গন্ধমেদিনী তাহা কানে তুলিল না ।

পুরুষ মানুষ অমন একটু করেই ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.