আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ভারত বাংলাদেশ সমুদ্রসীমা বিতর্ক

কম্পিউটার বিশারদ পেশায়, নেশায় যুক্তিবাদী

ভারত-বাংলাদেশ সমুদ্রসীমা নিয়ে উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। ব্লগেও আমি কিছু লেখা দেখলাম এ নিয়ে। তাই এ নিয়ে কিছু লেখা দেব ভাবলাম। আশাকরি আমার লেখায় উত্তেজনার কিছু প্রশমন ঘটবে। যে অঞ্চলে ভারতীয় সার্ভেয়ার (কোনো যুদ্ধজাহাজ নেই বলেই জানি ) ও নৌবাহিনীর জাহাজগুলো আছে সেটাকে ওভারল্যাপিং ওয়াটার্স বলে।

এর মানে হল, এই অঞ্চলের ওপর একাধিক রাষ্ট্রের দাবী আছে। বাংলাদেশ সাম্য (equity) নীতি মেনে নিজের সমুদ্রসীমা নির্ধারণ করে, কারণ এছাড়া বাংলাদেশের জলসীমা আন্তর্জাতিক জলপথ অবধি পাওয়া যায় না। ভারত ও মায়ানমার সমদূরত্ব (equidistant) নীতি অনুসারে সমুদ্রসীমা আঁকে। এখন, কিছুটা অংশ আছে যা উভয়েরই দাবীতে পড়ে। এরকম ওভারল্যাপিং অংশের পরিমাণ মায়ানমারের সাথে অনেক বেশী, ভারতের সাথে অনেক কম।

এসব সত্ত্বেও উভয় দেশই ওই অংশে তেল ও গ্যাস অনুসন্ধান কাজে উৎসাহী ও সংশ্লিষ্ট ব্লক নিলামে তুলেছে। এই হল ঘটনা। (একটা লিঙ্ক একটা সাক্ষাৎকার ) এখন বাংলাদেশ পক্ষের দাবী হল যতদিন পর্যন্ত সীমা নির্ধারণ করা হয় নি ততদিন ভারত ওই ওভারল্যাপিং অংশে অনুসন্ধান কাজ বন্ধ রাখুক। ভারতের দাবী হল, ওভারল্যাপিং হলে উভয় দেশই তাতে সার্ভের কাজ চালাতে পারে। এরই মধ্যে সামনের বছর ভারত ও মায়ানমার জাতিসঙ্ঘে নিজেদের মত সমদূরত্ব নীতিতে আঁকা সমুদ্রসীমা পেশ করবে।

বাংলাদেশকেও নিজের দাবী পেশ করতে হবে ২০১১ সালের মধ্যে , নাহলে কোনো আলাদা চুক্তির অনুপস্থিতিতে সমদূরত্ব নীতিতেই সীমা চিহ্নিত হবে। জাতিসঙ্ঘের সমুদ্রসীমা সংক্রান্ত আইনের ১৫ নম্বর অনুচ্ছেদ অনুসারে, কোনো আলাদা চুক্তির অনুপস্থিতিতে সমদূরত্ব আইনেই সীমা চিহ্নিতকরণ করা হয়। সেদিক থেকে ভারতের অবস্থানে আমার কোনো ভুল ধরা পড়ে না। কদিন আগে ঝামেলার পরে বাংলাদেশের সাথে মায়ানমারের আলোচনা কোনো সমাধানসূত্র ছাড়াই শেষ হয় । মায়ানমার বাংলাদেশকে একটা করিডর (ছোটো অঞ্চল যেখান দিয়ে আন্তর্জাতিক জলপথ অবধি যাবার ব্যবস্থা থাকবে) দিতে সম্মত হলেও বাংলাদেশ তাতে রাজী হয়নি।

বাংলাদেশ সরকার যদি সমদূরত্বের পরিবর্তে সাম্য নীতিতে ভারত ও মায়ানমারের সাথে সমুদ্রসীমা নির্ধারণে উদ্যোগী হয়, তাহলে প্রথমেই উচিত আন্তর্জাতিক বিচারালয়ে ব্যাপারটা নিস্পত্তির জন্য আবেদন করা। কারণ, বাংলাদেশের সাথে মায়ানমার ও ভারত উভয়ের আলোচনাই ফলপ্রসূ হয়নি। আর, ২০১১ অবধি স্থিতাবস্থা চললে এমনিতেই সমদূরত্ব নীতিতে সমুদ্রসীমা চিহ্নিত হবে। তাই, বাংলাদেশের উচিত কোর্টে যাওয়া, কোর্টে এখন এরক্কম অসংখ্য মামলা চলছে , কোর্টে গেলে সবার মেনে নেবার মত কোনো সমাধানসূত্র পাওয়া যাওয়া উচিত। আপডেট বাংলাদেশের এক উচ্চপদস্থ সমুদ্র বিশেষজ্ঞের সাক্ষাতকার (লিঙ্ক কাজ করছে না বলে ক্যাশ থেকে নিলাম) থেকে কিছু অংশ তুলে দিলাম।

সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়েছে ২৮ নভেম্বর ২০০৮। "সমুদ্র-সীমানা নির্ধারণে কারিগরি দক্ষতা কেন এত গুরুত্বপূর্ণ? আসলে পুরো ব্যাপারটিই কারিগরি। সুতরাং এখানে কারিগরি বিষয় অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বিবেচনার দাবি রাখে যা নতুনভাবে বলার প্রয়োজন নেই। বস'ত এর জন্য আনক্লস-১, আনক্লস-২ ও আনক্লস-৩ সম্যকভাবে বুঝতে হবে। এর ফলে আমরা এক্ষেত্রে বিশেষায়িত হয়ে উঠব।

নইলে প্রতিবেশী ভারত ও মিয়ানমারের সঙ্গে সমুদ্র সীমানা নিয়ে আমরা আলোচনা তো দূরের কথা প্রাথমিক আলোচনাও করতে পারব না। " "নিয়ম অনুযায়ী ২০১১ সালের মধ্যে সমুদ্র-আইন রিভিউ বা আপডেটেড করে তা জাতিসংঘে পেশ করতে হবে। আসলে আমরা কী আন্তর্জাতিক সমুদ্র-আইন নির্ধারিত সময়ের মধ্যে জাতিসংঘে পেশ করার যোগ্যতা অর্জন করেছি? সমুদ্রসীমা নির্ধারণে উপকূলীয় এলাকায় চার্ট তৈরির জন্যে ১৯৯০ সালের দিকে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে বিদেশিরা ১০-১২ মিলিয়ন ডলার সাহায্য দিয়েছিল। ওই প্রকল্পে হাজার খানেক চার্টও প্রস্তুত করা হয়েছিল। কিন্তু আন্তর্জাতিক সমুদ্র আইন সম্পর্কে সম্যক ধারণার অভাব ও কারিগরি বিষয়ে অজ্ঞতার কারণে সেগুলো সমুদ্রসীমা নির্ধারণে কোনও কাজেই আসেনি।

সমুদ্রসীমা নির্ধারণে কারিগরি দক্ষতার মিশেলে কোনও জরিপ করার প্রাথমিক কর্মকান্ডেও আমরা এখনও শুরু করতে পারিনি। " "মিয়ানমারের সঙ্গে বাংলাদেশের সামপ্রতিক উত্তেজনা কী সমুদ্র সীমানা নির্ধারণের বিষয়টি অমীমাংসিত রাখার অনিবার্যতা নয়? এবং প্রতিবেশী ভারতের সঙ্গেও এ নিয়ে বিরোধের আশঙ্কা কতখানি? খুর্শেদ আলম : হ্যাঁ, বিষয়টি অবশ্যই সমুদ্রসীমা নির্ধারণ অমীমাংসিত রাখার অনিবার্যতা। এ নিয়ে ভারতের সঙ্গেও আমাদের বিরোধ দেখা দিতে পারে। এ বিরোধের মীমাংসা তথা বঙ্গোপসাগরে আমাদের সমুদ্র অধিকার প্রতিষ্ঠা নির্ভর করছে এ বিষয়ে আমাদের কারিগরি দক্ষতা কত হালনাগাদ হলো তার ওপর। আপডেট ২ ভারতীয় জাহাজগুলো সমীক্ষা শেষে জায়গা ছেড়ে চলে গেছে।

(প্রথম আলো )

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.