কোথাও যদি হারিয়ে আমি যাইগো কোন দিন , যেও ভুলে , আমায় যেও ভুলে
আমি নকিয়া ৩২২০। জন্ম ২০০২ সালের শেষের দিকে চীনে। গায়ের রং সিলভার । কিন্তু আমার ব্যাটারী খানা জার্মানীর তৈরী। যাই হোক জন্ম কাহিনী বলতে গেলে আপনারা বিরক্ত হতে পারেন তাই বেশী বাড়ালাম না।
আমাকে বিক্রি করার জন্য নিয়ে আসা হলো ইতালীতে । আমার কপাল খারাপ তাই আমাকে কিনল এক বাংলাদেশী, ভাবলাম ইতালীতে এসে কোন ইতালীয়ানের কাজে লাগব তা না পড়লাম এক বিদেশীর হাতে। যদিও আমার ধারনা কে ভুল প্রমাণিত করেছিল সে। কেনার পরদিনই আমি দীর্ঘ বিমান ভ্রমন করে বাংলাদেশ নামক একটি দেশে আসলাম। চীন কিংবা ইতালীতে আমার জীবন ছিল না , তাই আমি জানিনা সে দেশ গুলো এর চেয়ে সুন্দর ছিল কিনা ।
দেশ টা মানুষের স্বপ্নের মত, সবুজ ছায়া ঢাকা মায়া ভরা।
আমার প্রথম দিনটার কথা বলি বাংলাদেশে। আমার মালিক সতের বছরের ছেলেটা কলেজের প্রথম বর্ষের ছাত্র। সে আমাকে হাতে নিয়ে কি বলল জানেন
"চেয়েছিলাম একটা লাল রংয়ের ফোন , পেলাম রঙিন ফোন কি মজা"।
ওর হাতে আমার দিন গুলো খুবই ভাল কাটছিল।
কারণ সে আমাকে খুব বেশী কষ্ট দিত না। এবং সব সময়ই আমাকে খাবার দিয়ে পরিপূর্ণ রাখত। দীর্ঘ একটা বছর এভাবে কাটল। তার পর সে চলে এল গ্রাম থেকে শহরে। বদলাল আমার নাম্বার।
জানেন সে কি নিল ডিজুস। আমি তো ভয়ে নেই কারণ আমি জানতাম ডিজুস কি । কিন্তু এবার ও সে আমাকে এবং তার সব বন্ধুদের আবাক করে রাতে আমাকে নিয়ে আরামে ঘুমোত। বছর খানেক পরে সে মাঝে মাঝে টেলিটক ব্যবহার করত। এই টেলিটকই আমার ও তার সর্বনাশ করল।
০১৫২ এই নাম্বারটা দিয়ে সে একটা মেয়ের প্রমে পড়ল। ওহ! কি যে কষ্ট সারা রাত আমাকে জ্বালাত, খিদেয় প্রাণ যা্য় যা্য় কিন্তু তার কোন মায়া নেই আমার জন্য। মায়া ্যত ঐ মেয়ের জন্য।
কিন্তু যখন সে বাংলালিংকের সাথে আমার সম্পর্ক করল আমার দষা রসা। দিন আর রাত নেই।
কথা বলছে তো বলছেই। থামতেই আর চায় না। মাঝে সে আমার পেটে দুটো সীম লাগাল, যণ্রায় আমার পেটাই ফুলে গেল। একদিন ফেটেও গেল। কিন্তু তার কোন মাথা ব্যাথা নেই।
এভাবেই কাটছিল আমার দিন আর রাত গুলো , কিন্তু ঘুম কি আমি তা ভুলেই গিয়ে ছিলাম।
শত কষ্টের মাঝে তার একটা কাজ আমার ভাল লাগত, সেটা হলো সে শুধু একটা মেয়ের সাথে ই ব্যাস্ত থাকত। ভুলেও সে কোন দিকে নজর দেয় নি। যদি কেউ চেষ্টা করত তাহলে তার কপালে খুব খারাপ কথা এবং অপমানিত ছাড়া আর কিছুই জুটতনা। তার অব্যশ একটা কারণও ছিল , একটা মেয়েকে সে প্রতি দিন সুন্দর সুন্দর এস এম এস পাঠাত।
কিন্তু কল করত না। মেয়েটা কল করলে ধরত না। মাস তিনেক পরে সে মেয়েটার কল ধরলে মেয়েটা তাকে খুব জটিল কিছু কথা শুনায় তাই সে আর কোন দিন ঐ ভুল করেনি।
ST নামক মেয়ের ভালবাসা , রাগ ,অভিমান সব কিছু মিলিয়ে শেষের দিকে যখন আমার জীবনটা ভালই লাগ ছিল, তখনই আমার করুণ পরিণতি হলো। গ্রাম থেকে ফিরে সে যখন আমাকে খেতে দিয়ে দোকানের কাজে ব্যাস্ত ছিল তখন এক চোর আমাকে আমার সুখের জীবন থেকে দূরে নিয়ে গেল।
চার বছরের সম্পর্ক ছিন্ন হলো।
যখন আমি অবৈধ হলাম তখন আর নিজের জীবন টাকে অসাধারণ থেকে অতি সাধারণ মনে হলো তাই আমি সাধারণই হয়ে গেলাম।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।