(সৌজন্যে: দৈনিক আমাদের সময়)
সোভিয়েত ইউনিয়নকে মোকাবিলা করতে গিয়ে মার্কিনিরা আফগানিস্তানে তালেবান জন্ম দিয়েছে, পাকিস্তানকে জঙ্গিস্থানে পরিণত করেছে। তাদের দেয়া অর্থ ও অস্ত্রে লাদেন এবং ‘আল কায়েদা’র সৃষ্টি। ফিজিক্যাল ওসামা এখন আর গুরুত্বপূর্ণ নয় তার নাম দিয়েই জিহাদ হচ্ছে এবং এ নাম ব্যবহার করেই ঘোষিত হচ্ছে ওয়ার অন টেরর। দুবিবেচনাতেই ওয়ান ইলাভেন পশ্চিমাদের নিজেদেরই সৃষ্টি যার পেছনে রয়েছে দেশ দখল, অস্ত্র ব্যবসা ও বিশ্বের জ্বালানি সম্পদ নিয়ন্ত্রণের কৌশল।
বাংলাদেশ মার্কিনিদের নানা অপরাজনীতির শিকার।
একাত্তরে তারা পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর সমর্থনে সপ্তম নৌবহর পাঠিয়েছে এবং নিশ্চিত পরাজয় জেনে জাতিসংঘে যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব উত্থাপন করেছে। স্বাধীন বাংলাদেশকে বিপাকে ফেলার জন্য ৭৪ সালে চট্টগ্রাম বহিঃবন্দর থেকে চালের জাহাজ ফেরত নিয়ে দুর্ভিক্ষ সৃষ্টির চেষ্টা হয়েছে। তাদের ইমপ্লান্ট মুশতাক-রশীদ-ফারুককে কাজে লাগিয়ে সিআইএ-র প্রত্যক্ষ মদদে ৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে তারা ইতিহাসের চাকা পেছনের দিকে ঘোরাতে শুরু করে। আইএসআই ও তাদের এদেশীয় দোসররা স্বাধীনতার ৫০ বছরের মধ্যে জামায়াতে ইসলামীকে বাংলাদেশের রাষ্ট্রক্ষমতায় বসানোর পরিকল্পনা গ্রহণ করে, যার প্রথম ধাপ হিসেবে একজন সেক্টর কমান্ডারকে ক্ষমতার লোভে ফেলে ‘দালাল আইন’ বাতিলের মাধ্যমে যুদ্ধাপরাধীদের পুনর্বাসন শুরু হয়। বহুদলীয় গণতন্ত্রের নামে জিয়াউর রহমান বস্তুত ধর্মব্যবসার রাজনীতিই পুনঃপ্রবর্তন করেন।
১৯৮১ সালে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের মাধ্যমে ভারত বাংলাদেশের বাজারের নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করলেও জামায়াতে ইসলামীর বিকাশ তখনো অব্যাহত থাকে। ১৯৯০ সালে এরশাদের পতন ঘটলে সামরিক-বেসামরিক আমলাতন্ত্রের সহযোগিতায় বিএনপি ও জামায়াতের গোপন আসন সমঝোতা ঘটিয়ে খালেদা জিয়াকে ক্ষমতায় বসানো হয়। জামায়াতে ইসলামী ১৭টি আসন লাভ করে। সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণে সহায়তা সত্ত্বেও বিএনপির মুক্তিযোদ্ধাদের প্রবল আপত্তির মুখে জামায়াতকে সরকারে নেয়া যায়নি। জামায়াতও সময়টা ব্যবহার করে আওয়ামী লীগের সমান্তরালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আন্দোলনে অংশগ্রহণের মাধ্যমে রাজনৈতিক গ্রহণযোগ্যতা অর্জনের কাজে।
১৯৯৬ সাল তারা পৃথক নির্বাচন করে আসনওয়ারী ভোট ব্যাংক প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হয়, যা বিএনপিকে ২০০১ সালে চারদলীয় জোট গঠনে প্রলুব্ধ করে। সরকার গঠন করে বিএনপি অবাধ দুর্নীতি ও সন্ত্রাসে জড়িয়ে পড়লেও জামায়াতে ইসলামী পুরো সময়টা ব্যবহার করে মৌলবাদের অর্থনীতি এবং জঙ্গি নেটওয়ার্কের নির্বিঘœ প্রসারে। দেশি-বিদেশি পত্র-পত্রিকায় বিষয়টি ফাঁস হয়ে গেলে সরকারের সহযোগিতায় জামায়াতুল মুজাহিদীন নামে ক্ষুদ্র একটি অংশকে উগলে দিয়ে তারা পুরো নেটওয়ার্কটিই প্রায় অক্ষত অবস্থায় বাঁচিয়ে নেয়।
সকল মহল থেকে জঙ্গি তৎপরতার সঙ্গে জামায়াতে ইসলামীর সম্পৃক্ততা তুলে ধরা হলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তাদের সমর্থনে ‘মডারেট ইসলামিক পার্টি’র সার্টিফিকেট নিয়ে এগিয়ে আসে এবং এই তত্ত্বও প্রচার করতে থাকে যে, জামায়াতকে প্রকাশ্যে রাজনীতির সুযোগ না দেয়া হলে ইসলামিস্টরা আন্ডারগ্রাউন্ডে চলে গিয়ে জঙ্গি হয়ে উঠবে। বাস্তবে ঘটছে ঠিক তার উল্টো জামায়াতে ইসলামীর প্রত্যক্ষ মদদে এবং সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সমর্থনেই বাংলাদেশে জঙ্গিবাদের বিস্তার ঘটছে।
এ তথ্য জানা সত্ত্বেও মার্কিনিরা মুখে ভিন্নতর কথা বলছে, কেননা তারা ৭১-এর শোধ নেয়া ও জামায়াতকে ক্ষমতায় বসানোর ৫০ বছরের পরিকল্পনা বাস্তবায়নের পাশাপাশি তাদের ইকোনোমিক রাইভ্যাল ভারত ও চীনকে উত্যক্ত করার কাজেও জামায়াতের জঙ্গিদের ব্যবহার করতে চায়। প্রয়োজনে পাকিস্তানের মতো জঙ্গি প্রাদুর্ভাব ঘটিয়ে ইউএন বাহিনীর নামে বাংলাদেশে ঘাঁটি করার জিও-পলিটিক্যাল পরিকল্পনাও যুক্তরাষ্ট্রের রয়েছে। মার্কিনিদের অশুভ ব্লু-প্রিন্ট আফগানিস্তান ও পাকিস্তানকে আজ ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করেছে, বাংলাদেশকে তাদের সুগভীর চক্রান্ত থেকে রক্ষা করতে হলে এবারই জামায়াতকে প্রতিটি আসনে পরাজিত করতে হবে, প্রত্যেক দেশপ্রেমিক নাগরিকের এটা আজ পবিত্র দায়িত্ব।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।