... ... ... ...
হিমালয়ের কাব্যের ঘোড়ারোগ দেখছি কয়েকদিন ধরে...বাল্যকালে কবিতা লেখার শখ!! বাঙ্গালী মাত্রই নাকি জীবনে একবার হলেও কবিতা লেখে। আমি সেই দলে পড়ি না...আবার দলছাড়াও নই। শানে নযুল বলি...
ছোটোবেলা থেকেই আমরা কাজিনরা খুবই মিশুক আর নিজেদের মধ্যে ব্যাপকই মজা করি সবসময়। যতোটা না আমি বন্ধুদের সাথে উপভোগ করি, তার চাইতে বেশি আমি কাজিনদের সাথে বেশি ফূর্তিতে থাকতে পারি। বন্ধুদের মধ্যকার সংকীর্ণতাগুলো এখানে নেই, তাই আড্ডা-বেড়ানো-গান-হাসি-ঠাট্টা...এই নিয়ে আমরা ছিলাম, এখনো আছি।
তো আমারই এক মামাতো ভাই গীটার কিনে শেখা শুরু করে দিলো একদিন। আমিও কয়েকদিন চেষ্টা করতে গেলাম। কিন্তু একে তো আমি তালকানা ( কিংবা সুরকানাও বলতে পারেন! ), তার উপরে গীটারের তারে ফিঙ্গারিং ভীষণ বিরক্তিকর মনে হলো... ... আমার ধৈর্যেও কুলালো না। তাই গীটারের চিন্তা বাদ দিলাম। আমি অন্য কিছু নিয়ে মেতে রইলাম।
তারপর অনেকদিন পার হলো। একদিন হঠাৎ খেয়াল করলাম আমার গীটারওয়ালা কাজিন বেশ ভালোই গীটার বাজাতে পারে। আমাদের আড্ডা তখন থেকে অন্যরকম হয়ে গেলো। কারো ছাদে কিংবা লিভিং রুমে আমাদের আড্ডা গুলো গান আর সুরময় হয়ে যেত। ও বাজাতো...আমরা সবাই মিলে হেড়ে গলায় গাইতাম।
গাইতে গাইতে বের হয়ে এলো যে আমার আরেক ভাগ্নের(ভাগ্নে হলেও প্রায় সমবয়সী, মাঝে মাঝে কাজিন বলেও ভুল হয়) গলা গান গাওয়ার মতো, কমপক্ষে আশেপাশের মানুষ গান শুনে পিটাতে আসবে না। গান বলতে গাইতাম যাত্রী, আর্টসেল, অর্থহীনের গান অথবা এই ধরণের কিছু গান। গাইতে গাইতে একসময় দেখলাম, যে একই কিছু গান আমরা ঘুরে ফিরে গাইছি...বিশেষ করে আমাদের এতোই প্রিয় ছিল আর্টসেলের নোনা স্বপ্ন, যে ওই গানটা শুনতে শুনতে আশেপাশের সবার গানটার প্রতি ভক্তিই উঠে গিয়েছিল। গাইতে শুনলেই সবাই পারলে মাইর লাগায়...
আমাদের ব্যান্ডে( ) কেউ গাইতো, কেউ গীটার বাজাতো। হারমোনিয়ামের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে কেউবা কীবোর্ডিস্ট!! কেউ সাউন্ড ইঞ্জিনিয়ার(!)...শুধু আমিই শ্রোতা ছিলাম।
আরো বড় কথা আমাদের ব্যান্ডই হয়তো পৃথিবীর প্রথম এবং একমাত্র ব্যান্ড যাদের একজন মেম্বার সমালোচনা আর আইডিয়া দেয়া ছাড়া কিছুই করতো না। মেম্বারটা ছিলাম আমি। তো নোনা স্বপ্নের ইতিহাস তো বললামই...ব্যান্ডের সবাই চিন্তা করলো যে নতুন কিছু করতে হবে। একমাত্র বেকার মেম্বারকে একটিভ করানোরও বুদ্ধিও পেয়ে গেলো। আমার হাতে ধরিয়ে দিলো কাগজ কলম।
গান লিখতে হবে! নিজেরাই সুর দিবো, নিজেরাই গাইবো। সেদিন থেকেই আসলে নিজেদের ব্যান্ড বলে মনে হতে লাগলো। ভালো কথা, আমাদের ব্যান্ডটার নাম ছিল কারিগর। আগেই বলেছি, তেলাপোকার নর্তন-কুর্দনের কাছে আমার সাহিত্যমান প্রায়ই হারিয়ে যেতে চাইতো। তাই হাতের লেখা লুকাতে আমি বাংলায় লেখার বদলে টাইপ করা শুরু করলাম।
শুরু করলাম গান লেখা... ...
১) কারিগর
হিজিবিজি লিখে চলি কথার যন্ত্রনা
গীটারের তার ছিড়ে সুরের মুর্ছনা
ভাঙ্গাচোরা গলা তবু তুলবই তুলব সুরের ঝড়
আমরা স্বপ্ন কারিগর।
গান শুনে মাথা ব্যথা
কান পেতে থাকা দায়
কেউ বলে যন্ত্রনা
আর কত সওয়া যায়
কারো কাছে কারিগর নামটাই ভয়ংকর
আমরা স্বপ্ন কারিগর।
২)অণুগান
হয়েছে কি কখনো এমন
চাঁদটা থেকে সুর্যটা মলিন
জোনাকিরা দিনকে ভালবেসে
কখনো কি সূর্যে হয় বিলীন?
কখনো কি ঘুম ঘোরে মনে পড়েছিলো আমাকে
কখনো কি ভুলে যাবার কথা ছিলো তোমাকে...
৩)স্বপ্ন হারাক...
এক ফালি জোছনা উঁকি মারে চুপি চুপি আমার ছোট্টো আঁধার ঘরেতে
চার কোনা আকাশটা জানালার ফাঁক গলে গড়িয়ে পড়ে আমার চাদরে
তারাগুলো ভাবনায়, আকাশটা খালি করে পড়বে কি ঝরে আমার স্বপনে
আমি জেগে জেগে স্বপ্ন গড়ি আপন মনে
চার বেহারার পালকি চড়ে আসবে সে এই নিরজনে...
দেখতে কি পাব তাকে স্বপ্নহারা এই নীলচে রাতে
স্বপ্ন হারাক তবু স্মৃতি রয়ে যাক...তাহার সাথে।
ইচ্ছেগুলোর ইচ্ছে হলো রাত ফুরোবার আগেই
স্বপ্নটাকে ডেকে তুলে চাঁদকে দেখাবে
স্বপ্ন ভাবে চাঁদকে বেঁধে রাখবে সুতোর টানে
আমি তখন তাকে ভাবি আপন মনে...
চার বেহারার পালকি চড়ে আসবে সে এই নিরজনে...
দেখতে কি পাব তাকে স্বপ্নভরা এই জোসনা রাতে
স্বপ্ন হারাক তবু স্মৃতি রয়ে যাক...তাহার সাথে।
৪)ছুঁয়ে দেখা হলো না...
ঘুম এল না
তাই স্বপ্নরা নিরাশায় ফিরে গেল
স্বপ্ন ফিরে গেল যে তাই তুমি এলে না
তুমি এলে না
তাই তোমার কল্পনা
ছুঁয়ে দেখা হল না... ...
ঝিম ধরা পড়ন্ত দুপুরে
রোদ পোহাতে তুমি এলে না
তুমি এলে না
তাই বিকালটাও অভিমানী
মান ভাঙ্গানো গেল না
তাই তোমার কান্না ছুঁয়ে দেখা হল না... ...
অশ্রু জমেছে নিদ্রাহীন এ দুচোখে
স্বপ্নেরা থাকবে কোথায়...বল না
স্বপ্ন যদি ফিরে যায়
তোমার কান্না
আজো ছুঁয়ে দেখা হবে না ... ...
৫)নেশার ঘোরে
ক্লান্ত এই রাস্তায়
ফুটপাথে ঢলে পড়া নেশাতুর কোনো ভাবনায়
পুরো চাঁদটাতে হাত টুকু রেখে
ভুলে যাওয়ার আগে মনে করে তোকে
ভীষন অসহায়...
আনমনা মনে স্বপ্নডানায়
খেয়ালির অদ্ভুত চেতনায়
ছলকে পড়া চায়ের কাপে কি তোর ছায়া দেখা যায়??
বলেছিলাম না, আমি জীবনে কবিতা লেখিনি, লিখেছিলাম গান।
আমাদের প্রথম গানটা আমরা রেকর্ডও করেছিলাম, মোটামুটি কিছু একটা বানিয়েছিলাম আর কি, নিজেদের কাছে সে সৃষ্টি দারুণ লাগতো... সেই গানটা দিতে ইচ্ছে করছে না। কেন যেন ওই গানটাকে নিয়ে সমালোচনা শুনতে ভালো লাগেনা। আরো কিছু গান হয়তো এদিক-ওদিক ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে... ...কিন্তু আপনাদের বিরক্তির উদ্রেক করার জন্যে এই ৫টাই যথেষ্ঠ মনে হয় । হিমালয় ভাইয়ের সাথে একমত, নিজের সৃষ্টি একটা সময় পরে নিজের কাছেই হাস্যকর মনে হয়। যে কারণে অসংখ্যবার কবিতা সামনে পেলেই আমি বলে এসেছি..."কুবিতা ভালা পাই না"
এখানে আপনারাও একই কথা বলতে পারেন, কিন্তু ভুলেও কবিতা বলবেন না...এইগুলারে কিন্তুক গান বলে
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।