যুদ্ধাপরাধীর বিচার ও জামায়াতের রাজনীতি নিষিদ্ধ করার দাবী করছি
১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে যে সংগঠনগুলো সংঘবদ্ধ ভাবে দলীয় সিদ্ধান্তের নিয়ে বাংলাদেশের জন্মের বিরোধীতা করেছে - তার নাম জামায়াতে ইসলামী (আধুনা বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী বা বাজাই)। এরা দলীয় ভাবে শুধু বিরোধীতা করেই তাদের কার্যক্রম সীমাবদ্ধ করেনি - বিভিন্ন ধরনের প্যারা-মিলিটারী শক্তি তৈরী করে বাংলাদেশের জন্মের যুদ্ধের বিপরীতে অবস্থান নিয়েছিলো। তাদের কর্মান্ডের প্রমান করার জন্যে ইতিহাস পর্যালোচনার দরকার নেই। ওদের নিজেদের পত্রিকা দৈনিক সংগ্রামের ১৯৭১ সালের সংখ্যাগুলোর দিকে নজর দিলেই পরিষ্কার হবে।
জামায়াতের দলীয় ভাবে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধীতা ও গনহত্যা-ধর্ষন-লুট আর অগ্নি সংযোগের জন্যে যে সংগঠন গুলো ব্যবহার করেছে, তা হরো
১) রেজাকারার বাহিনী ( রাজাকার বাহিনী) - জামায়াতের কর্মপরিষদের ৩য় সদস্য মাওলানা একেএম ইউসুফ এই বাহিনীর প্রতিষ্ঠাতা আর জামাতের সদস্যরাই ছিলো মুলত এর নেতৃত্বে।
২) আল-বদর বাহিনী - জামায়াতের ছাত্র শাখা ইসলামী ছাত্র সংঘ ( বর্তমান ইসলামী ছাত্র শিবির) এই বাহিনীর মুল। জামাতাতে বর্তমান আমীর মতিউর রহমান নিজামী ছিলো আল-বদর বাহিনীর সমগ্র পাকিস্থানের প্রধান আর বতর্মান সেক্রেটারী জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ ছিলো পূর্ব পাকিস্থান শাখার প্রধান। এই আল-বদর বাহিনীই মুলত ১৪ই ডিসেম্বরের বুদ্ধিজীবি হত্যাসহ বুদ্ধিজীবি নিধন কর্মকান্ডের সাথে জড়িত।
৩) দালাল মন্ত্রীসভার মন্ত্রীত্ব - দেশের মানুষ যখন মুক্তিযুদ্ধের বিজয়ের স্বপ্নে বাস্তবায়ন করার লক্ষ্যে জীবন দিচ্ছে - তখন জামায়াত পাকবাহিনীর যোগসাজসে একটা পাতানো নির্বাচনের নামে সিলেকশান করে সরকার গঠনের চেষ্টা করে। পাক বাহিনীর বসানো পুতুল গভর্নর মালেকের তৈরী মন্ত্রী সভায় যোগ দেয় জামাতের আব্বাস আলী খান ও মাওলানা একেএম ইউসুফ।
৪) পাকবাহিনীর কর্তৃক সংগঠিত গনহত্যার পক্ষে কুটনীতি - জামায়াতের আমীর গোলাম আজম পুরো যুদ্ধকালীন সময়ে বিশ্বের নেতৃবৃন্দকে বুঝানোর চেষ্টা করে - পূর্ব পাকিস্তানে (বাংলাদেশ) যা হচ্ছে তা তুচ্ছ ঘটনা - সেখানে কোন গনহত্যা হয়নি।
৫) স্বাধীনতার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র - ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর দেশ স্বাধীন হলে জামায়াতের অধিকাংশ নেতা পালিয়ে পাকিস্তান আর মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে চলে যায়। সেখানে বসে এরা বাংলাদেশকে মেনে না নিতে নানান তৎপরতা চালায়। এদের কুটনীতির কারনেই মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো ১৯৭৫ এর বঙ্গবন্ধু হত্যার আগ পর্যন্ত বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়নি। এ ছাড়াও গোলাম আজমের নেতৃত্বে লন্ডনে বসে পাকিস্তান পুনরোদ্ধার আন্দোলনের নামে বাংলাদেম বিরোধী কর্মকান্ড চালায়।
৬) বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে স্বীকার না করা - ২০০৮ সালের নভেম্বর পর্যন্ত এই দলটি বাংলাদেশের জন্মের কারন মুক্তিযুদ্ধের কথা স্বীকার করতো না। এইটা ধারনা করা সহজ যে - শুধু মাত্র ভোটের রাজনীতিতে নিজেদের অস্তিত্বকে টিকিয়ে রাখার জন্যেই সাম্প্রতিক এরা মুক্তিযুদ্ধকে নামমাত্র স্বীকার করলেও এদের বাংলাদেশের মুল্যবোধের উপর সামান্যতম শ্রদ্ধা নেই।
উপরের বিষয়গুলো থেকে সহজেই বলা যায় - জামায়াতে ইসলামী নামক দলটি দলীয় ভাবে বাংলাদেশ বিরোধী ও এই দলটি মুলত যুদ্ধাপরাধীদের দ্বারাই চালিত।
এই প্রসংগে দৈনিক প্রথম আলোর একটি প্রতিবেদন দেখা যেতে পারে। এখানে বলা হয়েছে "জামায়াতের নির্বাহী কমিটির ১৫ সদস্যের মধ্যেই ১১ জনই ছিলেন পাকিস্তানি বাহিনীর দোসর" Click This Link
এখন প্রশ্ন আসে - জামায়াতের নেতাদের অপরাধ আদালতে প্রমানিত কিনা?
অবশ্যই প্রমানিত।
১৯৭২ সালের দালাল আইনের অধীনে চালু বিশেষ ট্রাইব্যুনালগুলোতে যে ১১,০০০ যুদ্ধাপরাধী বিচারাধীন ও সাজাপ্রাপ্ত হয়েছিলো তাদের মধ্যে জামায়াতের শীর্ষ নেতা মাওলানা একেএম ইউসুফ ও মকবুল হোসেন অন্যতম। তা ছাড়া পলাতক গোলাম আজমসহ অনেক জামায়াত নেতার নাগরিকত্ব বাতিল করা হয়। ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্টের হত্যাকান্ডের পর সামরিক সরকার এসে একটা আদেশ দিয়ে ট্রাইবুনালগুলোর কার্যক্রম স্থগিত করে। আর গোপনে সাজাপ্রাপ্তদের রাজনৈতিক বিবেচনায় জেল থেকে বের করে দেওয়া হয়।
সুতরাং বলা যায় - যুদ্ধাপরাধীর বিচার শুরু করা মানে স্থগিত বিচার প্রকিয়াকে চালু করা।
নতুন করে কিছুই করার দরকার নেই। আদালত ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ে এখন প্রচুর নথি জমে আছে - যাতে জামায়াতের নেতাদের বিচারের জন্যে নতুন তথ্য প্রমানের দরকার হবে না।
তা হলে বিচারের কার্যক্রমের উপর প্রদত্ত সামরিক ফরমানটি বাতিল করে বিচার কার্যক্রম চালু হচ্ছে না কেন?
এর উত্তর পাওয়া যাবে প্রথম আলোর আরেকটা প্রতিবেদনে - যেখানে জামায়াতের মতো যুদ্ধাপরাধী দলটির নেতারা রাজনীতি করার সুযোগ পাওয়া ও বিচারের থেকে নিজেদের বাঁচানোর মুর কারন হিসাবে আমাদের দেশের "রাজনীতি"কেই দায়ী করা হয়েছে। ১৯৭২ থেকে ১৯৭৫ পর্যন্ত বিচার চলছিলো। ১৯৭৫ থেকে ১৯৯০ পর্যন্ত সামরিক/বেসামরিক পোষাকে সামরিক সরকাগুলো তাদের ডানপন্থী রাজনীতির সুবিধার জন্যে জামায়াতকে সুযোগ করে দিয়েছে।
এখানে মধ্যপ্রচ্যের অগনতান্ত্রিক সরকারগুলোর বাংলাদেশের মতো একটা মুসরিম প্রধান দেশে গনতান্ত্রিক ব্যবস্থার ভিতরে প্রগতিলীলতাকে ঠিক মেনে নিতে না পারাও একটা কারন বটে। তারপর সামরিক শাসনের অবসানের পর নির্বাচিত গনতান্ত্রিক সরকারটিও দু:খজনক ভাবে তাদের উত্তরসুরী সামরিক সরকারের নীতিকে মেনে জামায়াতকে রক্ষার সিদ্ধান্ত নেয় এবং যুদ্ধাপরাধী বিচারের দাবীতে শহীদ জননী জাহানারা ইমামের নেতৃত্ব গড়ে উঠা আন্দোরনকে দমনে উৎসাহী দেখা যায়। পরবর্তী মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বপ্রদানকারী দলটি সরকার গঠন করলেও তাদের দেউলিয়া নেতৃত্ব যুদ্ধাপরাধী বিচারের বিষয়টি এড়িয়ে চলে।
রাজনীতি কুটচালে স্থগিত বিচারের দাবী থেকে আমরা সরে যাইনি। এই দাবী ৩০ লক্ষ শহীদ পরিবারের - এই দাবী ২ লক্ষ নির্যাতিত মায়ের সন্তানের।
এই দাবীর সাথে যারা বেঈমানী করেছে - তারা মুলত ৩০ লক্ষ শহীদের সাথে বেইমানী করেছে। বেঈমানদের ক্ষমা নেই - ইতিহাস এদের ক্ষমা করবে না।
আর বিচার - এইটা সময়ের ব্যাপার মাত্র। দীর্ঘ ৩৮ বছরে যে দাবী থেকে আমাদের সরানো যায়নি - শত চেষ্টা করেও ইতিহস ভুলানো যায় নি- তার থেকে হয়তো সাময়িক ভাবে চোক বন্ধ করে রাখা যাবে - কিন্তু প্রতিটি ডিসেম্বর - প্রতিটি মার্চ আমাদের মনে করিয়ে দেবে - শহীদদের ঘাতকরা বিচারে বাইরে বসে বসে আছে।
শহীদের রক্তের ঋন প্রতিটি বিবেকবান মানুষকে তাড়া করবে - দিনে দিনে বিচারে দাবী আরো জোড়ালো হবে।
(ছবিগুলো ডেইলি স্টারের সৌজন্যে - শেষ ছবিটি শহীদ বুদ্ধিজীবি সেলিনা পারভিনের) Click This Link
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।