মরে, অত:পর বেঁচে ওঠা নিরন্তর ফিনিক্স পাখি
আমাদের সময় থিকা নেওয়া
শামছুদ্দীন আহমেদ: যুদ্ধাপরাধের বিচার প্রক্রিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হওয়ার পর প্রথমদিকে এবং কিছুদিন আগ পর্যন্ত জামায়াতকে প্রায় একঘরে-ই মনে করা হচ্ছিল। চারদলীয় জোটের প্রধান শরিক বিএনপিসহ বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ ও ইসলামী মূল্যবোধ ঘরানার রাজনৈতিক শক্তিগুলো এসময়ে একরকম নিরব ছিল। বিএনপি-জামায়াত ঘরানার বুদ্ধিজীবী মহল কিংবা সংগঠনগুলোও এ নিয়ে দেশে-বিদেশে তেমন কোনো কথা বলেনি। তবে গত ১০-১৫ দিনের ধারাবাহিকতা পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, মানবতা বিরোধী অপরাধের বিচার ইসুতে জামায়াত এখন আর একঘরে নয়। আস্তে-আস্তে অনেকেই মানবতা বিরোধী অপরাধের বিচারের বিরুদ্ধে মুখ খুলতে শুরু করেছেন।
বিএনপি মহাসচিব খোন্দকার দেলোয়ার হোসেনসহ দলটির কেন্দ্রীয় নেতাদের অনেকেই গত কয়েকদিনে মানবতা বিরোধী অপরাধের বিচার ইসুতে সরকারের সমালোচনা করেছেন। কয়েকটি বাম ও ইসলামী রাজনৈতিক সংগঠনও জামায়াতের কণ্ঠে সুর মিলিয়ে কথা বলেছে। এমনকি মুক্তিযুদ্ধে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখা কয়েকজনও বিচারের বিপক্ষে কথা বলেছেন। দেশে-বিদেশে বিভিন্ন সংগঠনও বিচারের বিপক্ষে জনমত গঠনের চেষ্টায় ধারাবাহিক সভা-সেমিনারের আয়োজন করছে। সম্প্রতি সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে বিএনপি-জামায়াত সমর্থিতদের জয়ী হওয়ার ঘটনাও এই বিচারকাজে একধরনের পরোক্ষ প্রভাব ফেলছে বলে মনে করছেন রাজনীতি পর্যবেক্ষকরা।
‘দি ন্যাশনাল ফোরাম ফর প্রটেকশন অব হিউম্যান রাইটস’ নামের একটি সংগঠন গত শুক্রবার রাজধানীতে ‘আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনাল অ্যাক্ট ১৯৭৩’ শীর্ষক এক সেমিনারের আয়োজন করে। এতে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেছেন, রাজনৈতিক উদ্দেশে যুদ্ধাপরাধের বিচারের আয়োজন করলে তারা ২৬ হাজার আইনজীবীকে সঙ্গে নিয়ে তা প্রতিহত করবেন। অনুষ্ঠানে বিএনপি নেতা বিচারপতি টিএইচ খান বলেছেন, যেভাবেই হোক সাজা দেয়ার জন্যই যুদ্ধাপরাধের বিচারের আয়োজন চলছে।
একই অনুষ্ঠানে বিএনপির ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার বলেছেন, যুদ্ধাপরাধের বিচারের কোনো দরকার নেই। বিএনপি ঘরানার বুদ্ধিজীবী অধ্যাপক এমাজউদ্দিন আহমেদ সরকারকে উদ্দেশ্য করে বলেছেন, বিচার করতে গিয়ে আপনারা নিজেরাই যেন বিচারের কাঠগড়ায় না দাঁড়ান সেদিকে খেয়াল রাখুন।
সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার বিচারপতি আব্দুর রউফ বলেছেন, ন্যায়বিচার না হলে দেশে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হবে।
শুক্রবারের এই সেমিনারে বিএনপি নেতা অ্যাডভোকেট জয়নাল আবেদীন বলেন, বিচার নিরপেক্ষ হবে কি-না তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। বিএনপি দলীয় সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকনের মতে, এই বিচার আরেক ধরনের মানবতা বিরোধী কাজ হবে।
শুক্রবারে চরমোনাই পীর ও ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলন বাংলাদেশের আমীর মুফতি সৈয়দ রেজাউল করিম বলেছেন, আওয়ামী লীগে থাকা যুদ্ধাপরাধীদের বিচার আগে করতে হবে।
গত রোববার পূর্ব লন্ডনে মানবাধিকার ও ন্যায়বিচারভিত্তিক ক্যাম্পেইন সংগঠন ‘বাংলাদেশ হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড জাস্টিস সোসাইটি, ইউকে’ আয়োজিত এক সভায় সংগঠনটির চেয়ারম্যান ড. শাহাদাত হোসেন বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেই মানবতা লঙ্ঘন করছেন।
একইদিন বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতির ওপর নিউইয়র্কে আয়োজিত এক সেমিনারে বক্তারা বলেছেন, বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধের বিচারে ট্রাইব্যুনাল গঠন একটি প্রহসন।
গত ১২ এপ্রিল জাতীয় প্রেসক্লাবে ‘ন্যাশনাল সিকিউরিটি পার্টি’ আয়োজিত এক আলোচনা সভায় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল নোমান বলেছেন, যুদ্ধাপরাধের বিচার প্রক্রিয়া সংবিধান বিরোধী। এর আগে ১০ এপ্রিল জাতীয় প্রেসক্লাবে ‘চিরন্তন বাংলাদেশ ফাউন্ডেশন’ আয়োজিত আলোচনা সভায় বিএনপির হান্নান শাহ বলেছেন, প্রকৃত যুদ্ধাপরাধীদের খুঁজতে বেশি দূর যাওয়ার দরকার নেই। অ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয়েই ১৯৫ জন যুদ্ধাপরাধীর তালিকা আছে। বিচার করতে হলে পাকিস্তানের ওই ১৯৫ জন যুদ্ধাপরাধীরও বিচার করতে হবে।
তিনি এও বলেছেন, যুদ্ধাপরাধের আগে এই সরকারের বিচার করতে হবে। বিএনপির হামিদুল্লাহ খান বলেছেন, বিচারের নামে প্রহসন চলছে। একই অনুষ্ঠানে বিএনপির গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেছেন, মানবতা বিরোধী অপরাধের বিচারের নামে অবিচারের আয়োজন চলছে।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গত ৯ এপ্রিল দলীয় এক সমাবেশে বলেছেন, আগে সরকারি দলের যুদ্ধাপরাধীদের তালিকা প্রকাশ করতে হবে। তিনি নাম উল্লেখ না করে সরকারি দলের কয়েকজনকে যুদ্ধাপরাধী বলে অভিযুক্তও করেন।
এর আগে গত ৮ এপ্রিল ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে মাসিক ‘সহজকথা’ আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে জাসদ একাংশের সভাপতি আসম আব্দুর রব বলেছেন, ’৭১-এ পাকিস্তানের পক্ষে থাকলেও জামায়াত তখন মানবতা বিরোধী কোনো কাজ করেনি। খেলাফত আন্দোলন গত ৬ এপ্রিল বলেছে, ইসলামী দলগুলোকে ধ্বংস করতেই এই বিচারের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। গত ২ এপ্রিল ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ সভাপতি কাদের সিদ্দিকী বলেছেন, রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের জন্যই সরকার ট্রাইব্যুনাল গঠন করেছে। একইদিন গণতান্ত্রিক মজদুর পার্টির আলোচনা সভায় বক্তারা বলেছেন, ’৯৬ সালে আওয়ামী লীগ জামায়াতকে সঙ্গে নিয়ে আন্দোলন করেছিল। গত ৩১ মার্চ কাদের সিদ্দিকী বলেছেন, আওয়ামী লীগেও যুদ্ধাপরাধী রয়েছে।
আগে ওদের বিচার করতে হবে। একইদিন অপর এক অনুষ্ঠানে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য এম কে আনোয়ার বলেছেন, যুদ্ধাপরাধের বিচারে সরকারের রাজনৈতিক চিন্তা কাজ করছে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।