আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

রা.বিতে গঠিত হলো 'ভাষ্কর্য রক্ষা মঞ্চ'



[রা.বি 'ভাস্কর্য রক্ষা মঞ্চ'-এর সংবাদ-সম্মেলনে পঠিত বক্তব্য] ভাস্কর্য ধ্বংসের অপচেষ্টা... রুখে দাঁড়াই দীর্ঘ সংগ্রামের পথ ধরে রচিত হয়েছে বাংলাদেশের ইতিহাস। এই ইতিহাসের স্বাক্ষর হয়ে আছে ৫২’র ভাষা আন্দোলন, ৬৯’র গণঅভ্যুত্থান, ৭১’র মুক্তিযুদ্ধ। এই সংগ্রাম আমাদের মনে চিরজাগরুক হয়ে আছে বিভিন্ন স্থাপত্য-ভাস্কর্যের মধ্য দিয়ে। এই স্থাপত্য-ভাস্কর্যগুলো আমাদের সেই সংগ্রামী ইতিহাসের কথাই মনে করিয়ে দেয়। এগুলো আমাদের জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

অপরদিকে এই স্থাপত্য-ভাস্কর্যগুলো আমাদের সংস্কৃতি-ঐতিহ্যের পরিচায়কও বটে। সম্প্রতি জিয়া আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর গোলচত্বরে নির্মীয়মান ৫টি বাউল ভাস্কর্যও আমাদের সংস্কৃতিরই প্রতিনিধিত্ব করে। ধর্মান্ধ ও ধর্মের অপব্যাখাকারী একটি গোষ্ঠীর চাপে গত ১৬ অক্টোবর’ ০৮ তারিখে নির্মীয়মান এই ৫টি বাউল ভাস্কর্য অপসারণ করা হয়েছে। তার আগে তারা ভাস্কর্যগুলোর গায়ে দড়ি বেঁধে সেগুলোকে ভেঙে ফেলার চেষ্টা করে। উল্লেখ্য যে, ভাস্কর্যগুলোর ৮০ ভাগ কাজ সম্পন্ন হয়ে গিয়েছিল।

সরকার তাদের দাবি মেনে নিয়ে ভাস্কর্যগুলো অপসারণ করে। সরকারের এই পদক্ষেপ জনমনে তীব্র অসন্তোষ তৈরি করে। উপরন্তু গত ১৮ অক্টোবর’ ০৮ তারিখে মুফতি আমিনী একটি সংবাদ সম্মেলনে ক্ষমতায় গেলে দেশের সকল ভাস্কর্য ভেঙ্গে দেয়ার হুমকি দেন যা আমরা আমাদের দেশীয় ঐতিহ্য, মূল্যবোধ এবং শিল্পচর্চার স্বাধীনতার উপর চরম আঘাত বলে মনে করি এবং তার এই বক্তব্যের তীব্র নিন্দা জানাই। ভাস্কর্য অপসারণের পর সারা দেশের সচেতন মানুষ তীব্র নিন্দা ব্যক্ত করে এবং এই ঘটনার প্রতিবাদ জানায়। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ ছাত্রছাত্রী, বিভিন্ন বিভাগ, ছাত্র সংগঠন ও সাংস্কৃতিক সংগঠন পৃথক পৃথকভাবে এই ঘটনার প্রতিবাদে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে।

কিন্তু যেহেতু সবার লক্ষ্য একই তাই ভাস্কর্য পুনঃস্থাপনের দাবিতে বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তোলার লক্ষ্যে আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক ও ছাত্র সংগঠনের কর্মী-সংগঠকেরা যৌথভাবে “ভাস্কর্য রক্ষা মঞ্চ” গঠন করেছি এবং বাউল ভাস্কর্য পুনঃস্থাপন না করা পর্যন্ত আমরা আমাদের আন্দোলন অব্যহত রাখার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করছি। জিয়া আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর চত্বরের নাম ‘লালন চত্বর’ করার প্রস্তাব করা হয়েছে। আমরা এই প্রস্তাব সমর্থন করি। দেশের বিভিন্ন স্থানে ভাস্কর্য পুনঃস্থাপনের দাবিতে যে আন্দোলন চলছে আমরা সেগুলোর সাথে একাত্মতা প্রকাশ করছি। ধর্ম চেতনা মানে মুক্তিমুখিন চেতনা।

প্রত্যেক ধর্মে এই মুক্তিমুখিনতা মুখ্য। আর সংস্কৃতি মানুষের মুক্তির চর্চা। ধর্ম আর সংস্কৃতি বিরোধাত্মক নয় বরং সম্পূরক। সেই কারণেই ধর্মীয় মূল্যবোধ মানুষকে শিক্ষা দেয় মুক্তিমুখিনতা ও মুক্তিচর্চা। ১৬ তারিখের ভাস্কর্য ভাঙ্গার অপচেষ্টা কোনো ধর্মীয় মূল্যবোধের পরিচায়ক নয়।

আমরা মনে করি এই ঘটনা ধর্মহীন পাশবিকতা এবং ধর্মকে পুঁজি করে কায়েমী স্বার্থ বাস্তবায়নের প্রচেষ্টা। আসুন, আমরা এর বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিরোধ গড়ে তুলি এবং শিল্পচর্চার যথোপযুক্ত পরিবেশ বজায় রাখি।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.