ভাবতে ভাল লাগে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রগতিশীল ছাত্রজোটের উপর হামলার পর কেন্দ্রিয় কর্মসূচী অনুসারে প্রগতিশীল ছাত্রজোট রাবি শাখা ১০ অক্টবর বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করার সিদ্ধান্ত নেয়। যথারীতি ১০ তারিখে টুকিটাকি চত্তর থেকে মিছিল শুরু হয়ে প্রশাসন ভবনের সামনে গেলে পুলিশের এসি আবুল হাসনাত শান্তিপূর্ণ মছিলে বাধা দেয়। নেতারা তাঁর বাঁধা উপেক্ষা করে মিছিল এগিয়ে নিতে গেলে বেধরক লাঠিপেটা করে এবং রাবি শাখা ছাত্র ফেডারেশনের সাধারন সম্পাদক উৎসব মোসাদ্দেক, ছাত্র ফ্রন্টের আহবায়ক সোহরাব হোসেন-সহ পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করে মতিহার থানায় নিয়ে যায়। এই লেখায় রাজনৈতিক নিষেধাজ্ঞার যৌক্তিকতা ও মিডিয়ার ভূমিকাকী তা বোঝার চেষ্টা করা হবে।
১,
রাবি কাম্পাসে ২০০৯ সাল থেকে রাজনৈতিক নিষেধাজ্ঞা জারি আছে।
এই নিষেধাজ্ঞা কার জন্য? প্রশাসন বলে ধর্মীয় রাজনীতির বিরুদ্ধে। ধর্মীয় রাজনীতির বিরুদ্ধে যে নিষেধাজ্ঞা সেই আইনের বলেই প্রশাসন পুলিশের সহায়তাই উপুর্যপুরি সবাইকে হেনস্থা, কার্যক্রমে বাঁধা প্রদান করে যাচ্ছে। কিন্তু প্রশাসনের “শিবির কাম্পাসে কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারবে না” এই মর্মে কোন বক্তব্য দিতে পারেনি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এরুপ নিষেধাজ্ঞা নাই, তাই বলে কী শিবির তাদের কার্যক্রম চালাতে পারে? পারে না। তাহলে রাবিতে শিবির ঠেকাতে আইন করেও কেন পারা যাচ্ছে না? তবু কেন ২ অক্টবরের মতো এতো সহিংস ঘটনা ঘটে? কার্যত এই রাজনৈতিক নিষেধাজ্ঞা প্রগতিশীল ছাত্রজোটের জন্য যেন তাঁরা কোন নায্য দাবী নিয়ে আন্দোলন করতে না পারে।
২০০৯ সালের এই নিষেধাজ্ঞা পরর্বতী প্রশাসনও তুলে নেবে না। কারন ছাত্রদের দমন করে যাচ্ছেতাই করার জন্য এটি একটি ভালো অস্ত্র। বি,এন,পি-জামাত জোট ক্ষমতাই আসলে তারা এই আইন ব্যবহার করবে ছাত্রজোট ও ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে। তাহলে পাঠক অঙ্কের হিসাবে দুই ধরনের প্রশাসন-ই এই আইন ব্যবহার করবে প্রগতিশীল ছাত্রজোটের কর্মকান্ডের উপর। প্রগতিশীল ছাত্রজোট নিষ্ক্রিয় রাখতে পারলে বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনা করা দুধভাত খাওয়ার মতো সহজ ব্যপার।
কেননা ছাত্রদল, ছাত্র শিবির ও ছাত্রলীগ নিকট অতীতে ছাত্র অধিকার আদায়ে কোন আন্দোলন সংগ্রাম করেনি এবং ভবিষ্যতেও করতে পারবে না তাদের রাজনৈতিক নীতির কারনে। সুতরাং প্রগতিশীল ছাত্রজোট নিষ্ক্রিয় থাকা মানে ছাত্রদের রাজনৈতিক ক্ষমতা শুন্য হয়ে পরা। আমরা এটা হটে দিতে পারিনা, বিবেকবান ও সাহসী শিক্ষার্থীদের তাই নিজেদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।
২।
১০ তারিখ পর্যন্ত মৈসুমি বানার ওয়ালাদের জন্য রামু সহিংসতা নিয়ে কর্মসূচী দেওয়া ছিল খুব জরুরি ।
কেননা এইসব ইস্যুতে ভালো কাভারেজ পওয়া যায় যা মৈসুমি ব্যানার ওয়ালাদের আস্তিত্ব জানান দেওয়ার একমাত্র উপায়। সেদিন যারা রামু নিয়ে কর্মসূচী দিয়েছিলেন তারাই যথাসম্ভব ইলেকট্রনিক মিডিয়াকে ডেকে এনেছিল। প্রগতিশীল ছাত্রজোটের ভাগ্যভাল যে তারা যখন মিছিল নিয়ে যাচ্ছিল তখন ক্যামেরাগুল তাদের সাথে সাথে যাচ্ছিল বলেই এই মারের দৃশ্যটা দেশবাসী দেখতে পেল। আর দুরভাগ্য ব্যানার ওয়ালাদের তারা অনেক দিনের পর একটি কাজ করেও কাঙ্খিত কাভারেজ পেল না। যাইহোক প্রগতিশীল ছাত্রজোটের আবার কাবারেজ না পেয়ে না পেয়ে একটা বিশ্বাস জন্মে গেছে যে, ‘পুজিবাদি প্রচার মাধমগুল’কে ডেকে লাভ নাই কারন তারা কাভার করবে না।
তবে সেদিনত পাওয়া গেল। সেদিনের কাভারেজ নিয়ে অনেকেই আমাকে বলেছেন যে, ২ অক্টবর ছাত্রলীগ-শিবিরের সংঘর্ষের পর পুলিশ কোন ব্যবস্থা নেয়নি উপরন্তু ১০ তারিখের ঘটনায় পুলিশকে একশনে যেতে দেখা গেছে একারনে এটির ‘বিশেষ’ সংবাদ মূল্য ছিল। তাছাড়া একই ঘটনার প্রেক্ষিতে ছাত্রজোট দেশব্যপী বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ পালন করলো তাঁর কোন সংবাদ বড় আকারে কথাও ছিল না কেন? জমায়েত কম এটা সদুত্তর হতে পারে না কারন নায্য কাজ একজন করলেও তা গুরুত্বের দাবী রাখে। অনেকের সাথে আমিও একমত একারনে যে, প্রশাসন ও পুলিশ উভয়েই বলেছে, কাম্পাসে রাজনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আছে। এবং ১১ তারিখ পুলিশের রাজশাহী বিভাগীয় অতিরিক্ত কমিশনার এসে ছাত্রনেতাদের সাথে প্রায় দুঘন্টা রুদ্ধদার বৈঠক করেন।
কোন মিডিয়ার এই ঘটনা দেশবাসীদের জানানোর আগ্রহ হয়নি, কারন কী? এমনকি দীর্ঘদিনের গণতান্ত্রিক আন্দলন-সংগ্রামের ফসল যে ১৯৭৩ সালের বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাদেশ তাঁর চূড়ান্ত লংঘন করে যে রাজনৈতিক নিষেধাজ্ঞা তা নিয়েও প্রচার মাধ্যমগুলোর কোন মাথাব্যথা নাই। কেন নাই? মিডিয়া কী এই কালাকানুনের নির্মমতা বুঝতে পারছে না, নাকি ঘটনা অন্যখানে? এই প্রশ্নের উত্তরটা শিক্ষার্থীদের অনুধাবন করতে হবে। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।