আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

এরা মীরজাফর নয়, রাজাকারও নয়

soroishwarja@yahoo.com

বাংলা ব্যাকরণে শব্দের অনেক প্রকারভেদ আছে, কিন্তু সাধারণ মানুষের ব্যবহার অনুযায়ী শব্দ দুই প্রকার। বাংলা ভাষার সব শব্দকে তারা দুই ভাগে ভাগ করে নিয়েছে। তাদের কাছে শব্দ ইতিবাচক ও নেতিবাচক। এই সাধারণ সত্যটা মনে না থাকায় আমি আজ ধরা খেয়েছিলাম। ল্যাবএইডের পাশের রাস্তার ফুটপাতে দাঁড়িয়ে আমি আর আমার এক বন্ধু চা খাচ্ছি আর আড্ডা মারছি।

বন্ধুর বন্ধু গিয়েছে ল্যাবএইডে। তার এক আত্মীয় ওখানে রোগী। আমরা চা শেষ করে দ্বিতীয়বার চা খাওয়া শুরু করলাম। এ সময় বন্ধুর বন্ধুটি এল। বন্ধুর বন্ধুটির সঙ্গে এই আমার প্রথম দেখা।

পরিচয় ও কুশল বিনিময়ের পর আমরা আমাদের কথাবার্তার আগের ধারায় ফিরে গেলাম। লেখালেখি করেন বলেই বন্ধুর বন্ধুর নামটি আমার আগে থেকেই জানা ছিল। কথাবার্তার এক পর্যায়ে বন্ধুর বন্ধু তাঁর আট বছর বয়সী ছেলের কথা বললেন। ছেলেটি নাকি ওই বয়সেই লেখালেখি শুরু করে দিয়েছে। পত্রিকার বিভিন্ন পাতায় সে রীতিমতো লেখা পাঠায়।

লেখা পাঠায়, লেখা ছাপা হয় না। আবার পাঠায়। এই রকম চলছিল। তো কয়েকদিন আগে ছেলের একটি লেখা ছাপা হয়েছে। ওই লেখার জন্যই পত্রিকাওয়ালারা আবার একটা প্রাইজবন্ডও পুরস্কার দিয়েছে।

এতে তো ছেলে মহাখুশি। ছেলের খুশিতে বাবাও খুশি। লিখিয়ে বাবার কাছে ছেলের এই গল্প শুনে আমি প্রশংসা করার জন্যই একটু রসিকতা করে বললাম, বাপ তো বিভিন্ন পত্রিকায় লেখালেখির `ঘাগু ঘুঘু'। এটা জানতাম। কিন্তু ছেলেটাও যে বাপের পথ ধরেছে তা তো জানতাম না।

আমার কথা শুনে বন্ধুর বন্ধু তো রেগে আগুন। বললেন, শব্দ ব্যবহারে শালীনতা বজায় রাখবেন। ... শুনে আমি তো পুরো আহাম্মক হয়ে গেলাম। একটু পরই বুঝতে পারলাম ভুলটা কোথায়। `ঘাগু ঘুঘু' বলায় তিনি মাইন্ড করেছেন।

দুঃখ প্রকাশ করে রক্ষা পেলাম। বাসায় ফিরে প্রথমেই অভিধান খুললাম। বাংলা একাডেমীর `সংক্ষিপ্ত বাংলা অভিধান বলছে: ঘাগু (বিশেষণ) ঘা খেয়ে পোক্ত বা অভিজ্ঞ। (বিশেষ্য) ১ সেয়ানা; সুচতুর; ঝানু; পাকা। ২ দাগি বা পূর্বে দণ্ডপ্রাপ্ত।

৩ ভুক্তভোগী। একই অভিধান আরো বলছে: ঘুঘু (বিশেষ্য) স্বনামখ্যাত পক্ষীবিশেষ; পায়রা জাতীয় পাখি; ঢুলি। (বিশেষণ) ১ অতি কৌশলী; ধূর্ত ও ফন্দিবাজ। ২ দক্ষ বা বিশেষ অভিজ্ঞ। অভিধানে ইতিবাচক ও নেতিবাচক_ দুই রকমের অর্থ থাকলেও বন্ধুর বন্ধুটির ব্যবহারে বুঝতে পারলাম, এই শব্দ দুটোও প্রত্যেকটি এক একটি অর্থের বেড়াজালে আটকে গেছে।

বাংলা ভাষার এই রকম অনেক শব্দই একটি মাত্র অর্থের বদ্ধকূপে আটকা পড়ে গেছে এবং যাচ্ছে। যেমন: পাণ্ডা, পাঁড়, পাঁয়তারা ইত্যাদি। এই শব্দরা `মীরজাফর' নয়, `রাজাকার' নয়। তবু এদের কূপমণ্ডূক বানানোর একটা সামাজিক অপচেষ্টা চলছে। বহুমাত্রিক এসব শব্দকে এভাবে জব্দ করে কার কী লাভ?


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.