আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বার্মিংহাম - ১৫

ইচ্ছেমতো লেখার স্বাধীন খাতা....
অফিস থেকে আমাকে বলা হয়েছিল, জাকিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ করে তার সঙ্গে আমাকে কাজে যেতে হবে। কাজে যাবার আগে আমার বিন্দুমাত্র ধারণা ছিল না কাজটা কেমন হবে। আমি শুধু খুজছিলাম যে কোনো ধরনের একটা কাজ। আমার ধারণা হয়েছিল জাকিয়া হয়তো আমাদের উপমহাদেশের কোনো অঞ্চলেরই মেয়ে হবে। জাকিয়াকে ফোন করলাম।

ইংরেজি উচ্চারণ খুবই স্পষ্ট। ব্রিটিশদের মতো দুর্বোদ্ধ না। গলার স্মর শুনে খুব আন্তরিক বলেই মনে হলো। সে জানালো, পরদিন সকাল ঠিক সাতটার সময় সিটি সেন্টারের কর্পোরেশন স্ট্রিটের ৫৫ নাম্বার বাসস্ট্যান্ডে তার সঙ্গে দেখা করতে। সেখান থেকে আমরা কাজে যাবো।

আগের দিন থেকেই ব্রিটেনে প্রথম কাজে যাবার জন্য আমার উৎসাহের সীমা নেই। আগের দিনই ওদের দেওয়া ইউনিফর্মটা পড়ে ট্রায়াল দিলাম। সকালে যেয়ে যেন ঝামেলা না হয় এজন্য আগেই বাসের সময়সূচি দেখে নিলাম। জাকিয়া কেমন হবে, ওর সঙ্গে কোথায় যেতে হবে এগুলো নিয়েও খুব চিন্তিত ছিলাম। তার মধ্যে কাজে যোগ দেওয়ার স্টাইলটা ছিল অনেকটা ডেটিংয়ের মতো।

তার মধ্যে আমি জাকিয়াকে কখনো দেখিনি। ফলে কালকের ডেটিংটা কেমন হবে এ চিন্তাতে আমার রাতে ঘুমই হলো না..... বার্মিংহামের একটা বাসস্ট্যান্ড। শীতকালে ঠাণ্ডা বাতাস থেকে যাত্রীদের বাঁচানোর জন্য এখানকার বাসস্ট্যান্ডগুলো এরকম কাঁচ দিয়ে ঘেরা থাকে.... সে সময় এখানে শীতকাল। সকাল সাতটা মানে ঘোর অন্ধকার আর খুব ঠাণ্ডা। এর মধ্যে কখনো গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি হয় আর বেশ জোরে বাতাস বয়।

বিশেষ করে ঠাণ্ডা বাতাস কিভাবে যেন জ্যাকেট ভেদ করে শরীরে চলে আসে। আমি অবশ্য বাংলাদেশ থেকে আসার সময়ই ঢাকার বঙ্গবাজার থেকে সাড়ে পাঁচশ টাকা দামের বেশ মোটা একটা জ্যাকেট কিনে নিয়েছিলাম। সেটা এদেশের আবহাওয়ায় খুবই কার্যকর প্রমাণিত হয়েছে। ইউনিফর্মের উপরে সেই জ্যাকেটটা চাপিয়ে পরদিন খুব সকালে রওনা দিলাম। তাপমাত্রা প্রায় ০ ডিগ্রি।

এ সময় আমার নিজেরই নাক দিয়ে বের হওয়া বাষ্প দেখে মনে হচ্ছিলো যেন সিগারেটের ধোঁয়া। সাইনবোর্ডে ঝুলানো ম্যাপ দেখে কর্পোরেশন স্ট্রিট খুজে বের করলাম এবং ৫৫ নাম্বার বাসস্ট্যান্ডে গিয়ে বসলাম। এ সময় পাশে এক বয়স্ক আফ্রিকান বংশোদ্ভূত মহিলা এসে বসে ঘুরে ঘুরে আমার দিকে তাকাতে লাগলো। আমিও তার দিকে তাকিয়ে ভাবছি, এই কি জাকিয়া? টেলিফোনে তো গলার স্মর তরুণীর মতোই মনে হলো। একবার ভাবলাম জিজ্ঞাসা করে দেখি, এক্সকিউজ মি।

আপনি কি জাকিয়া? পরে ভাবলাম এদের কথাবার্তা কিছু বুঝিনা। উল্টাপাল্টা কথা বলে শেষকালে পুলিশে ধরুক আরকি। ভয়ে কিছু জিজ্ঞাসা করলাম না। সাতটা পার হয়ে সাড়ে সাতটা বেজে গেল। এ মহিলা ছাড়া আর কেউ নাই এখানে।

বিরক্ত মুখে বসে থাকলাম। চাকরিটা নিয়েই সন্দেহ তৈরি হলো। ঠিক সাড়ে সাতটার সময় সেখানে জিন্সের প্যান্ট আর জ্যাকেট পড়া আফ্রিকান বংশোদ্ভূত এক তরুণী এসে বসলো। সেও আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমি বাসস্ট্যান্ডের এ মাথা থেকে ও মাথায় দুইবার হাঁটলাম।

ভাবছিলাম, দুই বয়সের দুই নারী। একজন বয়স্ক, অন্যজন স্মার্ট তরুণী। কাকে জিজ্ঞাসা করবো.... এক্সকিউজ মি, আপনি কি জাকিয়া? আট দশ মিনিট পার হয়ে গেল। ওদের কেউ কোনো কথা বলে না। বিরক্ত হয়ে আমি বাসস্ট্যান্ড থেকে বের হয়ে গেলাম।

বাসস্ট্যান্ডের ঠিক বাইরে হেলান দিয়ে রাস্তার দিকে তাকিয়ে থাকলাম। কিছুক্ষণ পর মোবাইলে একটা কল আসলো। পকেটে হাত ঢুকিয়ে মোবাইল বের করার আগেই লাইনটা কেটে গেল। বাসস্ট্যান্ডে বসা তরুণী মেয়েটা আমার সামনে হাসিমুখে এগিয়ে এসে বললো, আচ্ছা তুমিই তাহলে দুরন্ত। ঠিক সে সময়ই একটা ৫৫ নাম্বার বাস বাসস্ট্যান্ডে চলে আসলো।

জাকিয়া বললো, আমার সাথে আসো। আমি দ্রুত জাকিয়াকে অনুসরণ করে বাসে উঠে পড়লাম। বাসে বসে জাকিয়া জানালো, সে বার্মিংহাম ইউনিভার্সিটির ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজের আন্ডারগ্রাজুয়েটে পড়ছে। সে আরো জানালো, দুই বছর আগে সে আফ্রিকার ঘানা থেকে এসেছে। পরিচয় হওয়া মাত্রই তাকে আমি জানিয়ে রাখলাম, আমার এ এলাকার মানুষের ইংলিশ উচ্চারণ বুঝতে সমস্যা হয় এবং আমি এ সমস্যা কাটানোর জন্য খুবই চেষ্টা করছি।

সে জানালো, এখানে আসার পর প্রথম চার-পাঁচ মাস সে কিছুই বুঝতো না। তবে এখন এ সমস্যা নেই বললেই চলে। কোথায় কোন বিষয়ে পড়ছি, ইংল্যান্ড আমার কেমন লাগছে এসব বিষয়ে জাকিয়া অনেক কিছু জিজ্ঞাসা করে নিলো। কথা প্রসঙ্গে সে আরো জানালো, ইংল্যান্ড তার একটুও ভালো লাগে না। কারণ এখানকার সবাই শুধু কাজ আর টাকা ছাড়া কিছু চিনেনা।

পড়াটা শেষ হলেই সে তার দেশে চলে যাবে। জাকিয়াকে কাজের প্রসঙ্গে কিছুই জিজ্ঞাসা করলাম না। ভাবলাম, সরাসরি গিয়েই দেখা যাক, কি কাজ করতে হয়।
 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.