ইচ্ছেমতো লেখার স্বাধীন খাতা....
বার্মিংহামে এসে প্রথম কয়েকটা কাজের মধ্যে ছিল ব্যাংক একাউন্ট খোলা, ন্যাশনাল ইন্সুরেন্স নাম্বার নেয়া, জিপির কাছে রেজিস্ট্রেশন করা ইত্যাদি। এর মধ্যে ব্যাংক একাউন্ট খোলার কাজটা ছিল আমার জন্য কঠিন। এর জন্য ইউনিভার্সিটি থেকে ঠিকানা প্রমাণ পত্র ও পাসপোর্ট ইত্যাদি সব নিয়ে একদিন ন্যাটওয়েস্ট ব্যাংকে গিয়ে হাজির হলাম।
ব্যাংকের রিসিপশনে বসে থাকা মহিলা অফিসার অন্য এক অফিসারের সঙ্গে দেখা করার সিরিয়াল দিয়ে বসিয়ে রাখলো। কিছুক্ষণ পর ডাক পড়লো।
এ ব্যাংক অফিসার ছিল ইংলিশ ছবির নায়িকা অ্যাঞ্জেলিনা জোলির মতো দেখতে। আমার কাগজপত্র দেখে একটা ফর্ম পূরণ করা শুরু করলো। আপনার নাম?, মাতার মেইডেন নাম (অর্থাৎ মহিলাদের বিয়ের আগের নাম)? ঠিকানা?, ইনকাম? ইত্যাদি। পিতার নাম জিজ্ঞাসা করলো না।
জিজ্ঞাসা করলো, আপনি কি বিবাহিত?
বললাম, নাঃ।
অবাক হলাম তার পরবর্তী প্রশ্নে, কোনো সন্তান আছে?
প্রশ্নটা বুঝতে একটু সময় লাগলো। আরে বাবা আমি তো বিয়েই করিনি, সন্তান কিভাবে হবে? মহিলার দিকে ভালোভাবে তাকিয়ে বুঝার চেষ্টা করলাম, আমার সঙ্গে মজা করছে নাকি? মনে হলো সিরিয়াসলি বলছে। তাই কঠিন মুখে বলতে হলো,
না, কোনো সন্তানও নাই (যে দেশের যে নিয়ম)।
বৃটেনে প্রায়ই বিভিন্ন প্রশ্নে বিবাহ আর সন্তান- এ দুটোকে আলাদা হিসেবে ধরা হয়। বিয়ে না করলেও এখানে সন্তান স্বাভাবিক ব্যাপার।
এর পরের কাজ ছিল স্থানীয় ডাক্তার বা জিপির (জেনারেল প্র্যাকটিশনার্স) কাছে রেজিস্ট্রেশন করা। এদেশে ইচ্ছা করলেই কেউ একজন ডাক্তারের কাছে গিয়ে চিকিৎসা করাতে পারে না। যে যেখানে রেজিস্টার্ড সেখানেই চিকিৎসার জন্য যেতে হয়। সেখানকার ডাক্তার প্রয়োজনে বড় ডাক্তারের কাছে পাঠায়। ডাক্তার দেখাতে টাকা লাগে না, সম্পূর্ণ ফ্রি (তবে প্রাপ্তবয়স্ক সুস্থদের ওষুধের দাম দেওয়া লাগে)।
এর পর জিপির রেজিস্ট্রেশন, ব্যাংক একাউন্ট নাম্বার, দুইটা চাকরির রিফিউজাল লেটার নিয়ে গেলাম এন আই বা ন্যাশনাল ইন্সু্রেন্স নাম্বারের জন্য। ফোনে অ্যাপয়েন্টমেন্ট টাইম জেনে সব কাগজপত্র বগলে করে হাজির হলাম।
এখানে ন্যাশনাল ইন্সুরেন্স নাম্বারটা চাকরির জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। এ নাম্বারটা ছাড়া চাকরি পাওয়া খুব কঠিন। চাকরিদাতা প্রতিষ্ঠান প্রত্যেক কর্মচারীর এনআই নাম্বারে কতো টাকা দিয়েছে তা সরকারকে সরবরাহ করে।
সরকার এ নাম্বার দেখে ইনকাম ট্যাক্সের হিসাব ঠিক আছে কিনা তা পর্যবেক্ষণ করে। অর্থাৎ প্রত্যেক মানুষের ন্যাশনাল ইন্সুরেন্স নাম্বারের বিপরীতে ট্যাক্স কাটা হয়। এজন্য এখানে ট্যাক্স ফাকি দেওয়া খুব কঠিন কাজ। ইন্টারভিউ দেওয়ার ১০-১২ দিনের মধ্যেই বাসায় একটা চিঠি এসে গেল। নিজের নাম খোদাই করা এন আই নাম্বার সহ একটা প্লাস্টিকের কার্ডও পেয়ে গেলাম।
ব্যাংকের একাউন্ট নাম্বারটা আগে পেলেও ডেবিট কার্ডটা পেতে ২০-২২ দিন সময় লাগলো। এবার চাকরি খুজতে শুরু করলাম দ্বিগুণ উৎসাহে। কবে যে চাকরি পাবো!
(ছবি: মোবাইল ক্যামেরায় তোলা মটরওয়ের একটি সার্ভিস স্টেশন)
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।