আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ঝিনুক ফোঁটা সাগরবেলা.....

জীবন যখন যেখানে যেমন

সমুদ্র বিলাস...কথাটার মাঝে মোহনীয় একটা আবেগ অনুভূতির,একটা আতিশয্যের ছোঁয়া পাওয়া যায়। সঠিক ভাবে সমুদ্র বিলাস বলতে যে কি বোঝায় সেটা আমার জানা নেই...তবে সমুদ্র দেখতে আমার অনেএএএক ভাল লাগে। বাংলাদেশে থাকতে প্রায় মনে হতো কক্সবাজার থেকে কিছুদিনের জন্য ঘুরে আসতে পারলে খুব ভালো হতো। শহুরে বন্দি জীবনটা যেন গলা চেপে ধরে দম আঁটকে ফেলতে চাইতো। কিন্তু বাংলাদেশে থেকে সমুদ্র দেখার সৌভাগ্য আমার খুব একটা হয়নি... মোটে দুইবার যাওয়া হয়েছিল কক্সবাজারে আর একবার গেছিলাম সেন্টমার্টিন দ্বীপে।

অদ্ভুত সুন্দর লেগেছিল...স্বপ্নের মত একটা জায়গা মনে হয়েছিল সেন্টমার্টিন দ্বীপটা। প্রথমবার যখন যাই কক্সবাজারে তখন আমি ক্লাস টেন এ পড়ি। দারুন একটা দূর্দান্ত বয়স ছিল সেটা... দৌড়ঝাপ,ছুটোছুটি আর চঞ্চলতায় ভরা পুরোটা সময়। তখন সবকিছুই ভাল লাগতো,অবাক হয়ে তাকিয়ে দেখতে ইচ্ছা হত যেকোন কিছুকে। সেই সময়ে আমার আব্বুর ২ বন্ধুর ফ্যামিলী আর আমরা মিলে গেছিলাম কক্সবাজারে।

পুরোটা রাস্তা অনেক মজা করতে করতে গেছিলাম,আব্বুর বন্ধুর মেয়েটা আমার থেকে কিছুটা ছোট হলেও ভালই খাতির হয়ে গেছিল তার সাথে আমার। এত বড় একটা সাগরকে প্রথমবার দেখে খুব অবাক লেগেছিল। আমাদের যেতে যেতে সন্ধ্যা হয়ে গেছিল,সেখানে যেয়েই আমরা বললাম আগে সাগর দেখব। যদিও অন্ধকারে কিছুই দেখা যাবে না তারপরেও হোটেলে যাওয়ার আগেই সাগর পাড়ে গেলাম। অন্ধকারের মাঝে খালি সাগরের গর্জন শুনতে পাচ্ছিলাম আর কি বাতাআআআস....আহ মনে পড়লে এখনও প্রাণটা জুড়িয়ে যায়.... আমি অন্ধকারের মাঝে অনেক কষ্টে সাগরটা কত দূরে দেখার জন্য একটু একটু করে সামনে এগুচ্ছিলাম।

মনে হলো কি জানি সাদা সাদা দেখা যাচ্ছে,ঐ খানেই মনে হয় পানি হবে...ভাবলাম যাই পা টা একটু ভিজিয়ে আসি। ওমনি একজন চিৎকার করে উঠলো.....আরে আরে করছেন কি,পানিতে ভেসে চলে যাবেন তো... আসলে আমি যেটা দেখছিলাম সেটা ছিল সাগরের ঢেউ,তীব্র পানির ঢেউ গুলো ফেনার মত করে এসে পাড়ে আঁছড়ে পড়ছিল। কিন্তু সেটা ছিল কোমর পানি সমান দূরে আর আমি ভেবেছিলাম রাতের অন্ধকারে পায়ের পাতাটা একটু সাগরের পানিতে ভিজিয়ে আসি..... যাক সে যাত্রায় বেঁচে গেছিলাম। সাগর পাড় থেকে উপরে তাকিয়ে দেখলাম মাথার উপরের খোলা আকাশটা কে অনেক বড় লাগছে। তারা গুলো কে দেখে মনে হচ্ছিল অসংখ্য ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র হীরার টুকরো জ্বলজ্বল করছে।

তারারা যে রাতে ঝিকমিক করে সাগরপাড় থেকে সেটা খুব ভাল ভাবে বুঝতে পারলাম। অনেক জায়গা ঘুরে ছিলাম আমরা সেবার ---টেকনাফ,মহেশখালি,বৌদ্ধমন্দির,রামু,স্পিডবোটে করে মহেশখালিতে আদিবাসীদের গ্রামেও গেছিলাম। কাঠের তৈরি বাসা গুলো দেখতে বেশ ভালই লেগেছিল। আরেকবার কক্সবাজার গেলাম ২০০৫ অথবা ২০০৬ হবে,এবার গেলাম আমার বন্ধুর ফ্যামিলীর সাথে। এবারও বেশ মজা হয়েছিল,অনেক কিছু বদলে গেছে দেখলাম।

অনেক আধুনিক হয়েছে সবকিছুই। কিন্তু এই বদলে যাওয়া আধুনিক কক্সবাজারটাকে কেন যেন আগের বারের মত আর ভাল লাগেনি। হয়ত আমিই আধুনিকতার সাথে পাল্লা দিয়ে আমার দেখার দৃষ্টিভঙ্গিটাকে পাল্টাতে পারিনি... তবে সেন্টমার্টিন দ্বীপে যেয়ে আমার মনটা আবার ভাল লাগার মুগ্ধতায় ভরে গেছিল। অসম্ভব সুন্দর জায়গা...আমার দেখা বাংলাদেশের মধ্যে সবচেয়ে সুন্দরতম জায়গা হলো সেন্টমার্টিন। হুমায়ন আহমেদ কি আর সেখানে শুধু শুধু তার সমুদ্র বিলাস বাড়িটা তৈরি করেছেন... আমার ক্ষমতা থাকলে আমিও ঐখানে বাড়ি বানাতাম... হিহিহি।

টেকনাফ থেকে আমরা লঞ্চে করে সেন্টমার্টিন গেছিলাম,অসম্ভব সুন্দর নীলচে সবুজ জলরাশির উপর দিয়ে আমাদের লঞ্চটা যাচ্ছিল। যাওয়ার পথে দেখলাম মোহনা,অদ্ভুত লাগলো নাফ নদী আর বঙ্গ পো সাগরের মিলনস্থলটা। যেতে যেতে প্রায় আড়াই ঘন্টা লেগে গেছিল। দূর থেকে দেখা যাচ্ছিল সাগরের বুকে যেন দিগন্ত ছুঁয়ে আছে দ্বীপটি। দুপুরে গেছিলাম আমরা,এক রাত থেকে ছিলাম সেই স্বপ্নের দ্বীপটিতে।

প্রাসাদ পেরাডাইস হোটেলে ছিলাম,যদিও তখনও পুরো দ্বীপটিতেই ইলেকট্রিসিটির কোন লাইনই ছিল না। রাত ৯ টা পর্যন্ত জেনারেটর চালু ছিল হোটেলের। আমরাও তাড়াতাড়ি খাওয়া দাওয়া শেষ করে অন্ধকারের মাঝে কিছুক্ষণ সাগর পাড়ে হেঁটেছিলাম। শুধু একটা জিনিষেরই অভাব ছিল সেটা হলো পূর্ণিমার চাঁদ। ইশ সে রাতে যদি পূর্ণিমা হত তাহলে মনে হত আমি কোন স্বর্গরাজ্যে আছি.... সকালে ঘুম থেকে উঠে যখন রুমের জানালার পর্দাটা সরালাম সাগর কে একপলক দেখার জন্য,ওফফফ সে কি অসম্ভব সুন্দর দৃশ্য ছিল লিখে বুঝাতে পারবো না আমি।

আমাদের হোটেলের সামনে অনেক নারকেল গাছের বাগান ছিল আর লাল,নীল,বেগুনী,সবুজ,হলুদ পতাকা দিয়ে সাজানো ছিল বাগানটা তার পরেরই ছিল বালুকাবেলা। জানালা দিয়ে দেখলাম সকাল বেলার সূর্যের সোনালী আলোয় বালুগুলো চিকচিক করছে আর নীলচে সবুজ সমুদ্রটা অসম্ভব শান্ত হয়ে আছে। সেই দৃশ্যটা এখনও মনে গেঁথে আছে...বাকিটা জীবনও থাকবে। রুম থেকে বেরিয়েই চলে গেছিলাম সাগর পাড়ে হাঁটতে...কি সেই দিন ছিল,ভাবলে এখন কান্না আসে আবার যেতে ইচ্ছা করে... আমি হাঁটছিলাম সাগরপাড়ে,পায়ের নীচে অসংখ্য রঙবেরঙের ছোট বড় শামুক,ঝিনুকের খোলস যেন বিছানো ছিল। অনেক অনেক ছোট বড় মাঝারি পাথর ছিল চারিদিকে...যেন রক মিউজিয়াম সেটা।

সাগরের পানি এসে পাথরের গায়ে আঁছড়ে পড়ছিল। অনেকক্ষণ ধরে বহুদূর পর্যন্ত হেঁটেছিলাম আমি সেদিন সাগরপাড়ে। বাংলাদেশের বাইরে যখন মালেয়শিয়া ঘুরতে গেলাম...তখন দেখলাম আন্দামান সাগর,সাগরটা খুবই শান্ত। মালেয়শিয়াতে আমরা আন্দামান সাগর পাড়ি দিয়ে গেছিলাম (Pulau Payar Marine Park) নামের একটা দ্বীপে,খুবই সুন্দর ছিল জায়গাটা। যাইহোক তারপরে আমি আসলাম আফ্রিকায়,এইখানে আমার বাসা থেকে ৩০ মিনিট লাগে আটলান্টিক মহাসাগরের পাড়ে যেতে।

প্রথম প্রথম প্রায় যাওয়া হতো বীচে,এখন আর ভাল লাগে না। বঙ্গ পো সাগর দেখে যতটা উচ্ছাস মনের মধ্যে জেগে ছিল এত বড় আটলান্টিক মহাসাগর দেখে সেই উচ্ছাসটা কেন যেন মনের মধ্যে জাগেনা। সমুদ্র তো সমুদ্রই শুধু পানি আর পানি,সব গুলোই ভাল লাগার কথা। তারপরেও আমার সেই ক্লাস টেন এ থাকতে দেখা কক্সবাজারের সমুদ্রটাই সবচেয়ে বেশী ভাল লেগেছিল। এইবার গেছিলাম কানাডা ঘুরতে,সেখানে দেখলাম প্রশান্ত মহাসাগরকে খুব কাছে থেকে।

বেশ ভাল লাগলো দেখে,কিন্তু মনের গহীনের থেকে যে ভাল লাগার একটা উচ্ছাস আসে সেটা এবারও আসেনি... তাহলে কি আমার মনের সব ভাল লাগার উচ্ছাস শেষ হয়ে গেছে ??...প্রাণচঞ্চলতায় ভরা যেই মনটা ছিল আমার সেটা কি মরে গেছে এখন ??... হয়ত তাই হবে ঠিক জানিনা... ******************************************************************** আমাদের বাসার কাছের আটলান্টিকের আমার তোলা কিছু ছবি দিলাম আর আমার খুব প্রিয় একটা গানের লিঙ্ক দিলাম...শুনে দেখবেন হয়ত ভাল লাগবে আপনদের... Click This Link

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।