আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

একটি র‌্যাংগস ভবন ও একটি কংকালের পাহারা দেয়া

একটি বাংলাদেশ, তুমি জাগ্রত জনতা, সারা বিশ্বের বিস্ময়, তুমি আমার অহংকার

আজ থেকে বেশ কযেক মাস আগে সিদ্ধান্ত হয় ভেঙ্গে ফেলা হবে র‌্যাংগস ভবন। এটার মামলা অনেক আগে থেকে কোর্টে ঝুলছিল। কোন সরকারই এর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারেনি। মামলার রায় হয় ভেঙ্গে ফেলতে হবে। কারণ এর পাশেই রয়েছে পুরাতন বিমান বন্দর (যদিও পরিত্যাক্ত)।

আর তার চেয়ে বড় কারণ হলো বিজয় স্বরণীর সাথে যোগ হবে তেঁজগাও কে। অর্থাৎ একটি রাস্তা হবে। বেশ চওড়া রাস্তা। এটা নিশ্চই একটা ভাল পদক্ষেপ। কারণ রাজধানীর ট্র্যাফিক জ্যাম কমাতে এই রাস্তা খুবই প্রয়োজন ছিল।

অনেক আগে থেকে এই রাস্তাটি ছিল প্রস্তাবিত। কিন্তু কোর্টের এই রায় কার্যকর করাও কঠিন ছিল। তাহলে বিড়ালে গলায় ঘন্টা কে বাধঁবে? কে ভাঙ্গবে এই সুন্দর ভবনটি। অবশেষে সকল জল্পনা কল্পনার অবসান ঘটিয়ে এর দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিল বর্তমান তত্তাবধায়ক সরকার। ভালো ভালো খুব ভালো।

কোন সমস্যা নেই। আমরা সবাই মোটামুটি মৌন সমর্থন দিয়ে দিলাম। কিন্তু বেশ কয়েকটি বিষয় প্রশ্ন হয়ে ঠেকলো মানুষের মনে। হাইকোর্টে রায়ের পরের দিনই সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ উপস্থিত হলো বুলডোজার, হাতুড়ি, বাটাল নিয়ে। মাত্র ২৪ ঘন্টার পুর্ব নোটিশ দিয়ে এত বড় একটা কাজ কেন করতে গেল কর্তৃপক্ষ? অতি উৎসাহী একজনকে (আইন প্রনেতা) দেখা গেল এই চলমান প্রক্রিয়াকে আরো বেগবান কি ভাবে করা যায় সে ব্যবস্থা করতে।

অবশ্য সেই ব্যাক্তিকে লজ্জা সহকারে বিদায় নিতে হয়েছে তার পদ থেকে। তবে শোনা যায়, নাকি সেই ব্যাক্তির ছেলের সাথে র‌্যাংগস গ্র“পের কি একটা গন্ডোগোল ছিল। তারই ধারাবাহিকতায় ২৪ ঘন্টায় এই পরিনতি। এরপর শুনলাম র‌্যাংগস ভবন ভাঙলেও যে রাস্তাটা হবে সে রাস্তাটা মাঝখানে একটু সরু করে ফেলা হয়েছে নকশায়। কারন হিসেবে যেটা জানলাম, নকশার মাঝখানে নাকি প্রতাপশালী এক ভদ্রমহিলার জায়গা পড়ে গেছে।

তবে পরে সেই ভদ্রমহিলাকেও বিদায় নিতে হয়েছে স্বঅবস্থান থেকে। আমরা তার মুখের অনেক ঝাঁঝালো কথাই শুনতাম টিভি চালু করলে। ভাঙ্গার দায়িত্ব দেয়া হলো একটি শিপিং কোম্পানীকে (সিক্স ষ্টার) যাদের সংশ্লিষ্ট কাজে কোন পূর্ব অভিজ্ঞতা ছিল বলে সন্দেহ হয়? শুরু হলো ভাংচুর। দে বারি, আরো জোরে, জোরসে বলো। ভাঙ্গা হচ্ছে দালান।

হঠাৎ দুর্ঘটনা। নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে গেল কয়েকটি প্রাণের, নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে গেল কয়েকটি পরিবারের। বাতাসের সাথে মিশে গেল কয়েকটি প্রানের শেষ প্রাণবায়ুটুকু। কি নির্মম পরিহাস। লাশ উদ্ধার হলো।

একে একে বেরিয়ে আসছে লাশ গুলো কফিনে করে। পাওয়া গেল না চাপাইনবাবগঞ্জের এক সন্তানকে। সে ছিল একজন সিকিউরিটি গার্ড। ঘোষনা হলো আর কোন লাশ নেই ধ্বংশস্তুপের ভিতরে। কিন্তু তার বাবা ভেঙ্গে যাওয়া ভবনের মতই দাড়িয়ে থাকে সন্তানের লাশ নেবার জন্য।

একে একে সবাই চলে যায়। বাবা থেকে যায়। বাবা আজও শুনতে পায় তার ছেলের কষ্ট পেয়ে মরে যাবার সময়ের আর্তনাদ গুলো ধ্বংশস্তুপের ভিতর থেকে ভেসে আসছে। আজ পাঁচ মাস পরে সেই ছেলেকে পেল বাবা। কিন্তু লাশ নয় কংকাল।

যেন এই পাঁচ মাস সে একটি মুহুর্তের জন্যও তার কর্তব্য অবহেলা করেনি। পাহারাদারের খাকি পোষাক পরে পাহারা দিয়েছে প্রতিটি মুহুর্ত। হয়ত সে দেহে জীবন ছিলনা কিন্তু দেহটা তো ছিল। কংকালের সাথে পচে লেপ্টে আছে তার খাকি কালারের ড্রেসটি। কি নির্মম পরিহাস।

আমার একবার র্দুভাগ্য হয়েছিল সেই র‌্যাংগস ভবনের সামনে দাড়ানো সেই বাবাকে দুর থেকে দেখার। ওখানে সমবেত মানুষেরা তখন বলাবলি করছিল, "গরীব বইলাই এই লাশ খুজার কোন টাইম নাই, বড় অফিসার হইলে দ্যাকতেন মাটি খুইদা লাশ বাহির কইরা আনতো। " আসলেই তাই। গরীব বাবা বলেই হয়ত কেউ তখন দাম দেয়নি তার কথাকে।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.