১.
হাঃ হাঃ হাঃ ... হাসতে হাসতে গড়িয়ে পড়ছে খাদিজা। এই বুঝি পেটে খিল লাগে! হাতে একখানা চিঠি। আর কলিমুল্লাহটা পিছনে পিছনে চেঁচিয়েই যাচ্ছে- ভাবি, ভাল হবে না কিন্তু... ভাইয়াকে বলে দিলে একদম ভাল হবে না কিন্তু...
তার কথাকে পাত্তাই দেয় না খাদিজা। উল্টো গতি পায় উৎসাহ। জানালার পাশে গিয়ে চিঠিটাকে চোখের সামনে ধরে কলিমুল্লাহকে আড়াল করে বলে- আ-হা-হা-হা-হা... এ না-কি প্রে-মে-র ডায়লগ! হাঃ হাঃ হাঃ।
ছোঁ মেরে চিঠিটা কেড়ে নিতে চায় লাজুক কলিমুল্লাহ। পারেনা। ‘ধরা পড়ে গেছি, ধরা পড়ে গেছি’ ভঙ্গিতে বলতে থাকে- ভাবি, এইটা কিন্তু ঠিক হচ্ছে না... একদম ভাল হচ্ছে না...
কিন্তু খাদিজাকে ঠেকায় কে? চিঠি পড়তে শুরু করে। এদিক-সেদিক হেলে-দুলে নাকি সুরে পড়তে শুরু করে। আঁমাকে কঁলিমুল্লাহ বলে ডেকোনা।
হাঃ হাঃ হাঃ।
আবার ছোঁ মারে কলিমুল্লাহ। আবারও ব্যর্থ। জানালার দিক থেকে ঘুরে যায় খাদিজা।
-এঁই নামে ডাকলে বুঁড়া-বুঁড়া লাগে।
হাঃ হাঃ হাঃ। হৃঁদয় বলে ডেকো। হাঃ হাঃ হাঃ।
দেবর-ভাবির কাহিনী এতক্ষনে ধরতে পেরেছে চেয়ারে বসে বই পড়তে থাকা আব্দুল্লাহ – প্রেমপত্র লিখতে গিয়ে ধরা পড়েছে বেচারা। এতে মজা পায় আব্দুল্লাহও।
মুচকি মুচকি হাসতে থাকে। প্রশ্রয়ের হাসি। একসময় তার নিজেরওতো এমনই মনে হতো! বেচারার আর দোষ কি? আর মনে মনে বকতে থাকে বাবাকে। তার জন্যইতো আজকে এই অবস্থা! কীসব সেকেলে সেকেলে নাম রাখে – সলিমুল্লাহ, আব্দুল্লাহ, কলিমুল্লাহ... যত্ত সব!
আব্দুল্লাহর চিন্তায় ছেদ পড়ে হঠাৎ। কী যেন চকচক করতে দেখে সে।
ভাল করে খেয়াল করে। দেখে- খাদিজার চোখ ছলছল করছে। শেষ বিকেলের তির্যক আলো জানালা অতিক্রম করে সে জল ছুঁয়ে গেছে। খুব ভাল লাগে আব্দুল্লাহর। কারণ আর কেউ না জানুক, সে তো জানে- খাদিজা দুঃখে কাঁদে না, পাথর হয়ে থাকে।
আবার আনন্দের অশ্রু ধরে রাখতে পারে না কিছুতেই। অনেকদিন পর এ দৃশ্য দেখে ভাল লাগে আব্দুল্লাহর। আবার ভয়ও পায়। তবে কি খাদিজা ভুলে গেছে সেদিনের কাহিনী? নাহ, এমন তো হওয়ার কথা নয়। সেইবার প্রথম যখন তাদের সন্তান হয়, খাদিজার ইচ্ছে ছিল ছেলের নাম রাখবে ‘মেঘ’।
তাও আসল নাম না, ডাক নাম। কিন্তু একথা বাবাকে জানাতেই তিনি একনায়কের ভঙ্গিতে ডিক্টেশন জারি করেন- আমার নাতির এমন অমুসলিম নাম রাখা চলবে না। তার নাম হবে ‘এনায়েতউল্লাহ’। খাদিজার স্তব্ধতা সেদিন ভাঙ্গেনি।
২.
খাদিজা-আব্দুল্লাহর সংসারে এক নতুন অতিথি এসেছে আজ।
গতকাল সারারাত আজরাইল-ডাক্তারে টানাটানির পর আজ সকালে পৃথিবীর আলো দেখেছে নবাগত ছেলে। সিজারিয়ান বেবী। মায়ের গর্ভে বাচ্চার পজিশন নাকি উল্টা ছিল। মা-ছেলে দুজনেরই প্রাণ যায় যায়। রক্ত লেগেছে এক ব্যাগ।
ঐ সময় রক্ত না পেলে কী যে হত, আল্লাহই জানেন। পরিবারের কারো সাথে খাদিজার রক্তের গ্রুপ মিলেনি। এত রাতে কিভাবে রক্ত পায়- সে চিন্তায় সবাই যখন দিশেহারা, তখন কলিমুল্লাহ এক যুবককে নিয়ে আসে। রাত ১২টার সময় রক্ত দিয়ে গেছে অজানা-অচেনা সে যুবক - স্বেচ্ছায়, বিনামূল্যে। ভার্সিটিতে পড়ে সে।
নাম সৌরভ। আশ্চর্য লাগে আব্দুল্লাহর। চেনেনা-জানেনা, অথচ এত রাতে এসে রক্ত দিয়ে গেল! শ্রদ্ধা জাগে মনে। তার জন্য দোয়া করতে ভুলে না - আল্লাহ তার মঙ্গল করুন।
আশংকার সময় কেটে গেছে।
হাসপাতালের বেডে শুয়ে আছে নতুন অতিথি। সবার আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু। আব্দুল্লাহর বড় ভাই সলিমুল্লাহ প্রস্তাব দেয়- এ ছেলের নাম বরকতউল্লাহ রাখলে কেমন হয়? পাশ থেকে নরম অথচ দৃঢ় কন্ঠে আব্দুল্লাহর বাবা জানিয়ে দেন- এর নাম হবে ‘সৌরভ’।
নাম শুনে অবাক তাকিয়ে রয় সবাই। ভুল শুনছি না তো? খাদিজা কোন কথা বলে না।
তার দু’চোখ বেয়ে ঝরে পড়ে ক’ফোঁটা জল।
(বাস্তব ঘটনা অবলম্বনে)
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।