আমি এমন এক সাধারন মানুষ হতে চাই যে অসাধারন হবার পেছনে দৌঁড়ায়না এবং বিনা প্রশ্নে কিছু গ্রহন করেনা ।
বৃষ্টিস্নাত সন্ধ্যায় একের পর এক লোকাল বাস আসছে আর যাচ্ছে । সুমন ভ্রুক্ষেপ করলোনা ।
দুপুর থেকে কিছু খায়নি মনে পড়লে পেটে ক্ষিধা মোচড় দিয়ে উঠলো । সন্তর্পনে হাতে জিনিসটা নিয়ে হাঁটছিলো এতক্ষণ যাবত ।
আশেপাশে কোথাও সস্তা রেস্টুরেন্ট আছে কিনা দেখে নিতে চেষ্টা করলো । ভালো করে বেছে নিয়ে বসে পড়লো একটায় । খাবারের অর্ডার দিয়ে কিছু পাশে পরম অবহেলায় পড়ে থাক আজকের পত্রিকা হাতে নিলো । হেডিং আর শেষের পৃষ্ঠা বাদে সাধারণত আর কোন পাতায় চোখ বুলায়না সে । আজকে তার ব্যতিক্রম করতে আরম্ভ করলো ।
পত্রিকা পড়তে পড়তে হাতের কাছেই রাখা জিনিসটা কাছে আছে কিনা সচেতন চোখে দেখে নিলো । দেখে নিশ্চিন্ত হয়ে পুনরায় পত্রিকা পড়তে লাগলো । আমলা - মন্ত্রীদের মিথ্যাচার পড়ে প্রথম প্রথম ঘেন্নায় বমি আসতো । এখন দেখে দেখে অভ্যস্ত হয়ে কেবল হাই তোলে । সাত নম্বর পৃষ্ঠায় তার সাথে ঘটে যাওয়া ঘটনাটিকে যেভাবে ছাপা হতে দেখলো পড়ে চোখ - মুখ শক্ত হয়ে গেলো ।
চারিদিকে শুয়োরের বাচ্চা সব কিলবিল করছে । সে তবু আর কোন হারামজাদাকে পরোয়া করেনা । জীবনের যেই প্ল্যাটফর্মে পৌঁছালে মানুষের সকল প্রতিকূলতাকে অতিক্রম করবার মানসিকতা ধারণ করাটা অনিবার্য হয়ে দাঁড়ায় সুমন এখন ঠিক সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে । তাছাড়া তার তো আরো কিছু আছেই । পুনরায় দেখলো যে জিনিসটা চোখের সামনে থেকে সরে গেছে কিনা ।
সামান্য পানি গড়িয়ে যেতে দেখলে প্রচন্ড ক্ষিপ্রতায় জিনিসটিকে নিজের পাশে এনে রাখলো ঠিক যেন আসন্ন বিপদের আভাস দেখলেই কোন মা তার সন্তানকে কাছে টেনে নেয় ।
অবশেষে খাওয়া শেষ হলে ধীরেসুস্থে বিল মিটিয়ে দিয়ে আবারো জিনিসটি হাতে নিয়ে হাঁটতে শুরু করে । দুই - একবার তার স্পর্শে আন্দোলিত হতে চায় । পরক্ষণেই মনঃস্থির করে এখনই নয় । আগে গন্তব্যে পৌঁছাক ।
চলার পথের ডান দিকে দুইটা পুলিশকে পানওয়ালার কাছ থেকে বিনা পয়সায় পান নিতে দেখেও কোন প্রতিক্রিয়া হলোনা । ধীর পায়ে হেঁটে যেতে লাগলো গন্তব্য বরাবর । সেই সময় আসন্ন সাক্ষাতের তাড়নায় পারিপার্শ্বিককে ভুলে থাকতে চেয়েছিলো । ঠিক এটাই তার কাল হলো । ঠিক এই জায়গাতেই সুমনরা বারবার হেরে যায় ।
সুমন হাঁটতে হাঁটতে একবারও লক্ষ্য করেনি যে আজকে রাস্তা অসম্ভব রকমের শুনশান । যেই কারণে রাস্তা নিশ্চুপ হতে পারে সেটা অবশ্যই তার জানবার কথা । গত তিনদিনে দক্ষিণ ওয়ারীর এই জায়গায় চারটা একশন হয়েছে । চারপাশে অসম্ভব থমথমে পরিবেশ । রাত আটটা সাইঁত্রিশ মিনিটের বেলায় হঠাৎ যখন রাস্তায় যখন বিনা পয়সায় পান খাওয়া সেই তিন পুলিশের সাথে সাথে দুই প্লাটুন র্যাবের অফিসার ওই ধর ধর বলে দৌড় লাগালো তখনও সুমনের সম্বিত ফেরেনি ।
সে মগ্ন ছিলো তার সাথে থাকা জিনিসটায় । সেই জিনিসটার সাথে বিজড়িত সব স্মৃতি উপাখ্যানে নিমজ্জিত হতে গিয়ে গোলাগুলি শুরু হয়ে যাবার পরে আচমকা চমকে উঠে । হাত থেকে জিনিসটা পড়ে যেতে গেলে সে ঝাঁপিয়ে পড়ে জিনিসটাকে মাটিতে পড়ে যাওয়া থেকে বাঁচাতে যায় । রাইফেল থেকে একজনের উদ্দেশ্যে নিক্ষিপ্ত বুলেট গিয়ে তার বুকের বাম পাশে গিয়ে বিঁধে । সুমন ছিটকে পড়ে যায় ।
রক্তাক্ত বাম হাত দিয়ে তবু ধরে রাখতে পারে জিনিসটিকে । বিথীর স্পর্শ পাওয়া এক তোড়া রজনীগন্ধা । কোন এক বিকালে সে বিথীকে বলেছিলো তার হাতের ছোঁয়া পাওয়া এক তোড়া রজনীগন্ধা থেকে ভেসে আসা সৌরভ প্রতিবার বিথীর চলে যাবার গাড় বেদনা থেকে সুমনকে মুক্তি দেয় । যেন রজনীগন্ধার নয় বিথীর সৌরভই থেকে যায় সুমনের কাছে পরম আকাঙ্খিত সঞ্চয় হিসাবে । শেষ মুহূর্তে সুমন অনুভব করে তখনও বিথীর সৌরভই সেই একতোড়া রজনীগন্ধা থেকে সে পাচ্ছে ।
এই শহরে প্রতিদিন ঠিক এমন অজস্র সৌরভ বুলেটে জর্জরিত হয়ে ইতিহাসের কোথায় স্থান পায়না ।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।