আমরা মানবতার জয়গান গেয়ে যাই। কেউ ধর্মের নাম তুলে কেউ বা ধর্মহীনতার। ইরাকে নারী ধর্ষিতা হলে আমাদের শিউরে উঠি, ঘৃণা জানিয়ে বিচার চাই বিশ্ববাসীর কাছে। প্যালেস্টাইনে শিশু নির্যাতন, হত্যা হলে ক্ষত বিক্ষত হয় আমাদের বিবেক। আগুন ঝরা লেখায় সাধ্যমতো প্রতিবাদ জানাই, কেনই বা নয়!!! বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিমান রাষ্ট্রসমূহের এহেন কর্মে ঘৃণা জানানো ছাড়া আর কিইবা করার আছে আমাদের!!! বিশ্বমানবতা, ভাতৃত্ববোধও এমনটীই বলে..
অথচ, দুঃখজনক হলেও সত্য আমাদের দেশে আমার পাশে দাঁড়িয়ে ক্রন্দনরত চার বছরের নির্যাতিতা শিশু বন্যার আর্তনাদ আমাদের কানে পৌঁছেনা! ইরাকে ধর্ষিতা নারীর চেয়ে বর্বরোচিত ধর্ষন নির্যাতনের শিকার রাহেলাদের দীর্ঘশ্বাস আমাদের সেভাবে ব্যথিত করেনা, আমাদের বিবেককে জাগ্রত করেনা! রাহেলার ধর্ষকদের বিরুদ্ধে আমাদের লজ্জাকর নীরবতা... এই নীরবতা কোন অক্ষমতা থেকে নয়, এই মৌনতা আমাদের মৃত বিবেকের জড়তা থেকে।
অন্যায় অবিচার মেনে নিয়ে নিজেদের মাথা নত করে চলার প্রবণতা থেকে। আমরা জানি যে আমাদের প্রত্যেকের একটু প্রচেষ্টা সন্মিলিত ভাবে হয়তো একটি শক্তিতে রূপ নিবে, এই নরপশুদের বিচারে সাহায্য করবে। তবু, আমরা তা করিনা..
রাহেলার কথা
"রাহেলা- ২০০৪ সালে কুলাঙ্গার লিটন যার সাথে করে মানবতার ইতিহাসের অন্যতম নিকৃষ্ট ও জঘণ্যতম বর্বরোচিত আচরন! শ্রমজীবি দরিদ্র মেয়েটির বেতনের টাকা ও গহনা ছিনিয়ে নেয়, ৩ জন সহযোগী নিয়ে পাশবিক ভাবে ধর্ষন করে রাহেলাকে। সেখানেই ক্ষান্ত দেয়না নরপশুরা, নিজেদের অপকর্মের সাক্ষ্য মিটাতে হত্যার উদ্দেশ্যে ছুরি দিয়ে ক্ষতবিক্ষত করে রাহেলার শরীর। গলা কেটে দেয়, ছিন্ন ভিন্ন করে রাহেলার স্পাইনাল কর্ড! পচে মরার জন্য হতভাগিনীর ক্ষতবিক্ষত দেহটিকে ফেলে আসে ময়লা জঙ্গলে!
মানুষ রাগের মাথায় বা আতংকিত হয়ে অনেক সময় তাৎক্ষনিক ভাবে কান্ডজ্ঞান হারিয়ে ভয়ংকর কাজ করে বসে, তবে কিছুক্ষণ পর অথবা কয়েক ঘন্টা পর সম্বিৎ ফিরে পেলে অনুতপ্ত হয়।
এই কুলাঙ্গার ধর্ষকদের নীচতা ও পাশবিকতা এমন ভয়াবহ যে, দু'তিন দিন পর পরিত্যাক্ত দেহটির হাল জানতে গেলে যখন দেখে, রাহেলা জীবিত এবং আকন্ঠ পিপাসার্ত হয়ে তাদের কাছে পানি চাইছে তৃষ্ণা মেটাতে.. এই নরপশুরা পানির পরিবর্তে এসিড ঢেলে দেয় তৃষ্ণার্ত মেয়েটির গলে পচে যাওয়া শরীরের উপর। । । ।
অসহায়, দরিদ্র ঘরের কন্যা.. তাঁর পরিবারের অঢেল টাকা, পরিচিতি, ক্ষমতা কিছুই নেই.. কালের স্রোতে হারিয়ে যায় এসব নির্যাতিতা হতভাগিনীদের কথা... পুরনো পত্রিকার পাতার খবর হয়েই থেকে যায়..এঁদের প্রতি করা অন্যায়ের প্রতিবাদ করার তেমন কেউ নেই, তাঁদের হয়ে লড়াই করার কেউ থাকেনা.. মূল্যহীন এঁদের জীবন, তার চেয়েও মূল্যহীন এঁদের মৃত্যু.. অথচ, আপনার আমার মতোই এরা বাংলাদেশী, আমাদের কারো চেয়ে এদের নাগরিক অধিকার এতোটুকু কম হবার কথা ছিলোনা... "
শতাধিক ব্লগার সাংবাদিকদের অনুরোধ জানিয়েছিলেন রাহেলা হত্যার বিচার চেয়ে লেখালেখি করার জন্য।
দুঃখজনক হলেও সত্য অনেকে প্রতিশ্রুতি দিয়েই ক্ষান্ত দিয়েছেন, অনেকে তাও করেননি।
কৃতজ্ঞতা ব্লগার 'ফয়সল নোই' এর প্রতি যিনি কোন বড় বড় কথার মাঝে না গিয়ে মাঠে নেমেছেন, অনেক শ্রম ও মূল্যবান সময় ব্যয় করে তাৎক্ষনিক ভাবে রাহেলা কেসের উপর একটি বিস্তারিত প্রতিবেদন "চ্যানেল আই" এর মতো জনপ্রিয় টিভি চ্যানেলে প্রচার করেছেন। কৃতজ্ঞতা ব্লগার "বিপ্লব রহমান" সহ বি.ডি.নিউজ টুয়েন্টিফোরের সাংবাদিকদের প্রতি যাঁরা সাধ্যমতো রাহেলা হত্যা মামলা'র করুণ দশা সম্পর্কে জনগনকে অবগত করেছেন। বিশেষ কৃতজ্ঞতা এবং শ্রদ্ধা ব্লগার 'মনোজ মুকুটে'র প্রতি যিনি সংবাদটি কক্সবাজারের স্থানীয় সংবাদপত্রে ছাপিয়েছিলেন। তিনি জানতেন, এই সংবাদ সমগ্র দেশবাসীর চোখে পড়বেনা, তারপরও নিজের অবস্থান থেকে সাধ্য মতো চেষ্টা করে স্থানীয় জনগনকে সচেতন করেছেন।
অনেক সন্মানিত ব্লগার সংবাদপত্র সহ বিভিন্ন মাধ্যমে চেষ্টা করেও তাদের ঘুম ভাঙ্গাতে পারেননি, তাঁদের সেই চেষ্টার প্রতি সন্মান।
সম্প্রতি ব্লগার "ফয়সল নোই" জানিয়েছেন মামলাটির বর্তমান দুরাবস্থার কথা। আমাদের দুর্নীতি গ্রস্থ দেশটিতে হত্যা মামলার আলামত এবং তদন্তের করুন অবস্থার কথা। ভয়াবহ একটি সম্ভবনার কথা, "হয়তো এই ঘৃণ্য খুনির দল বেকসুর খালাশ পেয়ে যাবে"...
প্রত্যেক বিবেকবান ব্লগারকে অনুরোধ করছি, আসুন আমরা সবাই নিজের অবস্থান থেকে আরেকবার সাধ্যমতো চেষ্টা করি। সাংবাদিকদের পক্ষে সম্ভব না হলেও আমরা সাধারন মানুষ নিজেদের মতো চেষ্টা করি...
এখন দেশে উৎসব আর মেলার সময়, কমবেশি আমরা সকলেই সেসব স্থানে যাই.. যাবার সময় হাতে যদি এই নরপশুদের বিচার চেয়ে কিছু লিফলেট নিতে পারি, তেমন সম্ভব না হলে এই ব্লগ থেকে রাহেলার বিচার চেয়ে লেখা অনেক পোস্টের ভীড় থেকে কোন পোস্টের কিছু প্রিন্ট আউট নিয়ে মেলায় মানুষের হাতে ধরিয়ে দেই।
প্রিয় লেখকের বইয়ে তাঁর স্বাক্ষর নেবার সময় বিনীত ভাবে লিফলেটটি পড়ার অনুরোধ জানাই। সনামধন্য সাংবাদিক, কলামিস্টদের দৃষ্টি আকর্ষন করি রাহেলা হত্যা মামলার প্রতি...তিন চার জন লিফলেট/প্রিন্ট আউটটি ছুঁড়ে ফেলবেন, চতুর্থজন হয়তো পড়বেন! এমনি দু চারজনের থেকে থেকে হয়তো ব্লগার 'ফয়সল নোই', 'বিপ্লব রহমান', 'মনোজমুকুটে'র মতো সচেতন বিবেকবান সাংবাদিক বেড়িয়ে আসবেন। এই বর্বরদের শাস্তির দাবীতে কলম ধরবেন.. জনগনকে সচেতন করবেন...
আমাদের নিজেদের ঘরে আগুন না লাগলে আমরা আগুনের ভয়াবহতা বুঝতে অক্ষম। নিজেদের শরীরে আঘাত না পাওয়া পর্যন্ত ঘুরে দাঁড়াতে জানিনা। তাই যখন ঘুরে দাঁড়াই অধিকাংশ সময় দেখা যায়, সেই লড়াই শুধু ব্যক্তির লড়াই, ব্যাক্তির নিজের একার লড়াই হয়ে থেকে যায়।
আজ, রাহেলা হত্যার সুবিচার হুমকীর সন্মূখীন। হত্যার আলামত নষ্ট করা হয়েছে/হারিয়ে ফেলেছে,। ভয়ংকর একটি সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে, হয়তো খুনিরা একে একে ছাড়া পেয়ে যাবে! ধর্ষক "লিটনের'" মতো এই নরকের কীটরা বেকসুর খালাশ পেয়ে যাবে!" ছাড়া পেলে এই নরপশুর দল নতুন উদ্যমে মহাবিক্রমে মেতে উঠবে নিজেদের বিকৃত লালসার মিটানোর উৎসবে। সুতরাং, সেইদিন দূরে নয় যখন আঘাত এই লেখার পাঠক/পাঠিকাদের স্পর্শ করবে....
আমরা এতোজন মানুষ গুটিকয়েক বিবেক বর্জিত নরপশুর কাছে হেরে যাচ্ছি... মানবতা ডুকরে কাঁদছে আর পশুর দল মেতে উঠছে আনন্দ উৎসবে..
আসুন আমরা আরেকবার চেষ্টা করে দেখি, আরেকবার ঘুরে দাঁড়াতে চেষ্টা করি...
যদি সুবিচার সম্ভব হয় রাহেলার মতো হতভাগীদের হত্যা আর নির্যাতনের...
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।