যুদ্ধাপরাধীর বিচার ও জামায়াতের রাজনীতি নিষিদ্ধ করার দাবী করছি
দুপুরই ফোন করে ঠিক করলো তিন বন্ধু তাদের পরিবার নিয়ে আসবে। প্রবাস জীবনের আনন্দই হলো পারিবারিক পরিবেশে আড্ডা। কিন্তু আজ পড়েছে প্রচন্ড শীত। -৩২ সে.। এই কঠিন শীত উপেক্ষা করে সবাই এসে হাজির।
হালাকা খাবার আর চায়ের সাথে শুরু হলো আড্ডা।
এখনকার সবচেয়ে আলোচিত বিষয় - আমেরিকান প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রাইমারী নিয়ে। বারাক ওবামার পক্ষে প্রায় সবাই। আমি বললাম - আমি যদি আমেরিকান হতাম তবে হয়তো ওবামাকেই ভোট দিতাম। সেটা কালো বলে নয় - বরঞ্চ নতুন চিন্তাধারার মানুষ বলেই।
আর ওবামার পাকিস্তান বিষয় দৃস্টিভঙ্গীই আমাকে বিশেষ ভাবে আকর্ষন করেছে। ওবামার মতো আমারও ধারনা আফগানিস্থানে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্যে পাকিস্থানের ভিতরে একটা বড়ধরনের শুদ্ধি আবশ্যক। নতুবা এই যুদ্ধ যুগের পর যুগ ধরে চালালেও কোন শান্তির সম্ভাবনা নেই - কারন সকল সমস্যার উতসমূল হলো পাকিস্থান।
এই মন্তব্য আমার এক বন্ধুর মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃস্টি করলো। সে উঠে দাড়িয়ে গেল।
প্রায় চিতকার করেই প্রশ্ন করলো - হোয়াট বিজিনেজ ওয়েস্ট হ্যাব ওভার দেয়ার?
আমি দেখলাম বেকায়দা। বাসায় বাচ্চারা অন্য ঘরে থাকলেও এই চিতকারে ভয়ও পেতে পারে। বন্ধুকে সবিনয়ে জিজ্ঞাসা করলাম - তুমি একজন কানাডিয়ান হিসাবে বিষয়টা ভাবো। ধর্মটাকে একটু আলাদা রাখো।
উত্তরে বন্ধু হেসে বললো- তুমি আমাকে দূর্বল করতে চাও।
উল্লেখ্য যে - গত সপ্তাহে বন্ধু কানাডিয়ান হিসাবে শপথ নিয়েছে।
তখন আলোচনা একটু ঘুরে গেল।
এবারের বিষয় হলো - কানাডার আফগান মিশন। আগামী কাল সংসদে বিল আসছে। সংখ্যালঘু কনজারভেটিভ সরকার কানাডার আফগান মিশন ২০১১ পর্যণ্ত বৃদ্ধি করতে প্রস্তাব করেছে।
সংসদের ৩য় ও ৪র্থ দল যথাক্রমে কুইবেকের বিচ্ছিন্নাবাদী "ব্লক কুইবেকুয়া" আর বামপন্থী "এনডিপি" ইতোমধ্যে মিশনের সময় বৃদ্ধির বিপক্ষে তাদের অবস্থান পরিষ্কার করেছে। সমস্যায় পড়েছে ২য় বৃহত্তম দল লিবারেল পার্টি। লিবারেল পার্টি দীর্ঘ দশ বছর শাসন করার পর দুই বছর যাবত ক্ষমতার বাইরে আছে। আর এই বিলটি যদি সংসদে পাশ না হয় - তবে সরকার সেটাকে তাদের প্রতি অনাস্থা হিসাবে বিবেচনা করে সংসদ ভেঙ্গে দেবে। লিবারেল পার্টি সেহেতু ক্ষমতায় যাওয়ার কথা মাথায় রেখেছে - সুতরাং এরা সম্পূর্ন প্রস্তুতি ছাড়া নির্বাচনে যেতে আগ্রহী নয়।
আবার আফগান মিশনের উপর মাত্র ৩৩% জনগনের সন্মতি আছে। তাই এরা সরকারের সাথে একটা সমযোতায় আসার চেষ্টা চালাচ্ছে।
কোন কথা না বলে শুনছিলাম বন্ধুদের আলোচনা। তিনজনের কেউই আফগানিস্থানে কানাডিয়ান সৈন্যদের অবস্থানের পক্ষে না। যদিও ইতোমধ্যে ৮০ জন কানাডিয়ান সৈন্য সেই মিশনে জীবন দিয়েছে।
প্রায় সবাই ইতিহাস থেকে বিভিন্ন তথ্য নিয়ে আফগানিস্থানের এই অবস্থার জন্যে আমেরিকাকেই দায়ী করতে দেখা গেল।
তখন জানতে চাইলাম - ইতিহাসতো সবাই জানি। সমাধানটা কি?
সবাই কেমন যেন চুপ করে গেল।
আমি বললাম - কানাডিয়ান সৈন্যরা যা করছে সেটা খুবই জরুরী কাজ। একদিকে যুদ্ধবাজ আর পপি'র মাফিয়াদের সাথে লড়াই করছে - অন্যদিকে স্কুল-হাসপাতাল আর রাস্তা নির্মানসহ হাসপাতাল আর চিকিতসা সেবা দিয়ে সাধারন আফগানীদের জীবনকে সহজ করতে সাহায্য করছে।
আর কানাডিয়ান পুলিশ আফগান পুলিশবাহিনীকে ট্রেনিং দিয়ে একটা দক্ষবাহিনী হিসাবে গড়ে তুলছে।
একটা শান্তিপূর্ন আফগানিস্থানের জন্যে তার জনগনের জীবনের নিরাপত্তা খুবই জরুরী।
একজন বললো - কানাডাকে কেন করতে হবে?
আমি বললাম - বিশ্বে এখন কোন দেশ তার সমস্যাকে নিজের সীমানায় আটকে রাখতে পারে না। সমস্যা অন্য যায়গায় ছড়িয়ে পড়ার আগেই যদি তার উতসস্থলে সমাধান করা যায় - সেটা কি ভাল না? কানাডার সামর্থ্য আর সম্পদ আছে - তা দিয়ে যদি একটা রাষ্ট্রের শান্তিস্থাপনে সহায়তা করে - সেটা কি ভাল নয়। সেটাইতো আসল বন্ধুর কাজ।
বন্ধুরা একটু চুপচাপ হয়ে গেল। একজন বললো - তুমি একজন কানাডিয়ানের মতো কথা বলছো।
আমি বললাম - তুমি ঠিকই ধরেছো, আমি একজন বাংলাদেশী-কানাডিয়ান।
এর মধ্যে গিন্নিরা তাগিদ দিলো - কাল সোমবার, বাচ্চাদের স্কুল আছে। উঠতে হবে।
সুতরাং আড্ডা সেখানেই সমাপ্ত হলো।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।