আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

একটি প্রোপাগান্ডা, বিকৃতি এবং আমার কিছু কথা

যেতে চাও যাবে, আকাশও দিগন্তে বাঁধা, কোথায় পালাবে!

ব্লগে আমার সাম্প্রতিক অবস্থানের কারনে আমাকে উদ্দেশ্য করে যে সংগঠিত এবং অসংগঠিত প্রোপাগান্ডা চালানো হবে, মন্তব্যের বিকৃতি করা হবে আমাকে একটি নির্দিষ্ট কালার দেবার চেষ্টা চলবে তাতে আমি খুব একটা অবাক হইনা । কৌতুহলী হয়ে দেখি কিভাবে মিথ্যার বেসাতি চালানোর চেষ্টা চলছে এবং কারা কারা তাতে পিঠ চাপড়ানি দিচ্ছেন । গত দুএকদিন বিভিন্ন মন্তব্য আকারে কথা বলা হলেও আজ দেখলাম একটা পোষ্ট দেওয়া হলো এবং সেখানে আমার করা দুএকটি মন্তব্যের খন্ডাংশের সাথে তার নিজের মনগড়া কথা জুড়ে দিয়ে আমাকে রাজাকারী চেতনা বা রাজাকারদের প্রতি সহানুভুতিশীল প্রমাণের অপচেষ্টা করা হলো । এই প্রসঙ্গে দু একটি কথা বলা উচিত কেননা এতে সাধারণ ব্লগারদের বিভ্রান্ত হবার সুযোগ আছে । প্রথম যে মন্তব্যটির খন্ডাংশটি দেওয়া হলো তা হচ্ছে আমি বলেছি "জামাত-শিবিরের মতাদর্শধারী আর যুদ্ধাপরাধী কিন্ত এক জিনিস নয়।

" কথাটি এতটুকু ছিলনা এবং এটি সরাসরি আমার কথাও ছিলোনা । এম এ হামিদ সারওয়ার চৌধুরীর একটা মন্তব্যের ব্যাপারে আমার একটি পোষ্টে আমার বক্তব্য জানতে চাইলে আমি কিছু মন্তব্য করি লিংক -------------------------------------------------------------------- ১২ ই জানুয়ারি, ২০০৮ সকাল ৯:৫০ comment by: এম.এ.হামিদ বলেছেন: সারওয়ারচৌধুরী বলেছেন : ২০০৭-১০-০২ ০২:৩৩:৪৬ 'বরং জামাত ইসলামকে অপমান করসে আল বদরের মত খুনি ধর্ষক বাহিনী গঠন কইরা, বদর যুদ্ধের পবিত্রতা আর সাহাবী আর রাসুলকে অপমান করার মাধ্যমে' এই কথার সাথে আমার দ্বিমত নাই। কিন্তু আমি বলছি প্রেকটিক্যাল বিচারের কথা আর আপনি থিওরীর দিকে দৌড় মারেন। বলছি সেই সব সাধারণ লোক সম্পর্কে যারা গত ২০/২৫ বছরে জামায়াতে যোগ দিয়েছেন ইসলামের মায়ায়, তাদেরকে 'জামাতি যুদ্ধাপরাধি' বলি কেমনে? জবাব দিন|মুছে ফেলুন | ব্লক করুন --------- আপনার জবাবটি লিখুন ১২ ই জানুয়ারি, ২০০৮ সকাল ১০:০২ লেখক (মিরাজ) বলেছেন: বুঝলাম এম এ হামিদ । আপনি এই কথার ভিত্তিতে সারওয়ারচৌধুরীকে রাজাকার বলে ইচ্ছেমত গালি দেবার লাইসেন্স পেতে চান? জামাতে ইসলামীর সদস্যদের একটা বড় অংশ গ্রামের সাধারণ মানুষ ।

যারা ইসলামী নাম থাকায়, ভ্রান্ত মায়ায় জামাতে ইসলামী সমর্থন করে । আমাদের দরকার তাদের ভ্রান্তি ভাংগানো এবং তাদেরকে প্রকৃত ইসলামের সাথে জামাতের ইসলামের পার্থক্য বোঝানো। এইটাই না মতাদর্শের প্রচার । বাতিল মতাদর্শ থেকে সঠিক মতাদর্শে আনা । নাকি তাকে কেউ ভুল বুঝিয়ে তাদের পথে নিতে পেরেছে বলেই তাকে "জামাতি যুদ্ধাপরাধি" বলবেন? আওয়ামী লীগের সব লোক যেমন মুক্তিযোদ্ধা না তেমনি জামাতের সব লোকও নিশ্চয়ই যুদ্ধাপরাধী না ।

আওয়ামী লীগের সব লোক মুক্তিযোদ্ধা হলে রাজাকার আওয়ামী মন্ত্রীসভায় স্থান পেতনা । জামাতের মধ্যেও সহজ সরল আমার বাংলার মানুষ আছে । আর যারা যুদ্ধাপরাধী তারা শত চিতকার করলেও যুদ্ধাপরাধী । দুইটার মধ্যে কিছুটা হলেও পার্থক্য আছে । তারপরও বুঝলাম যে সারওয়ারচৌধুরী খুব অন্যায় মন্তব্য করেছেন।

------------------------------ এখন দেখেন আমি কি মন্তব্য করেছি আর প্রোপাগান্ডা কি চালানো হচ্ছে । কতটা নীচে নামলে মন্তব্যের এতটা বিকৃতি করা সম্ভব? আমার কথার প্রায় বিপরীত কথাকে আমার নামে করে চালানোর কতটা ঘৃণ্য অপচেষ্টা !! এরপর আসা যাক ২য় যে মন্তব্যটির খন্ডাংশ তুলে ধরা হয়েছে সেটার দিকে । বলা হয়েছে যে আমি নাকি বলেছি ""আলজেরিয়া, সুদান, রুয়ান্ডা বা ইথিওপিয়াতে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হয়নি। যদিও এসব দেশে ঘৃণ্যতম যুদ্ধাপরাধ সংঘটিত হয়েছে। বিচার হয়েছে ইউরোপে।

" এখন আমাদের ঠিক করতে হবে আমরা কাদেরকে উদাহরন হিসাবে বেছে নবো " বাংলাদেশ তো ইউরোপ নয়, আলজেরিয়া সুদানের মত বা আরো অনুন্নত। অতএব, ইউরোপ হওয়ার আগ পর্যন্ত আমরা যুদ্ধাপরাধী নিয়ে মাথা ঘামাই কেন! এখানে প্রথম অংশটি আমার একটি মন্তব্যের খন্ডিত রূপ আর ২য় অংশটি প্রোপাগান্ডা যিনি চালাচ্ছেন তার নিজের কথা আমার নামে চালিয়ে দেওয়া । দেখা যাক আমি কি মন্তব্য করেছি । জামাল ভাস্করের একটি পোষ্টে সম্প্রতি এ ব্যাপার নিয়ে আমার মন্তব্য ছিল নিম্নরূপ লিংক --------------------------- জামাল ভাস্কর, সমাজ একটা ক্রমপরিবর্তনশীল এনটিটি, এটা সময়ের দাবীতে, সময়ের প্রয়োজনে পরিবর্তিত হয়। সময়ের এই প্রয়োজনটা সে সমাজ বুঝতে পারে, সেই সমাজ উন্নত হয়, সেটা পুজিবাদী সমাজই হোক আর সমাজতান্ত্রিক সমাজই হোক ।

এই রেসে পিছাইয়া পড়া শুরু করলে শুধু পিছাইয়াই পড়তে হয়। কারন সমাজে বিদ্যমান নানাবিধ সমস্যা একটা অপরটার সাথে সম্পর্কিত কোনটাই একটা স্বতন্ত্র সমস্যা হিসাবে আবির্ভূত হয়না । যুদ্ধাপরাধী বিচারের সমস্যাও এইরকমই একটা সমস্যা । যেটা সমাজের অন্যান্য সমস্যা থেকে বিচ্ছিন্ন নয়। আমি তাই সমাজ পরিবর্তনের অংশ হিসাবেই যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চাই।

যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ছাড়া সমাজ পরিবর্তিত হবেনা এই ধারণায় আমি বিশ্বাসী নয়। বরং উল্টোটা মনে করি যে, বর্তমান সমাজ পরিবর্তিত হলেই যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হবে, নইলে শুধু বিচার বিচার নাটক হবে, শাসক গোষ্ঠী মাঝে মাঝে নাটকের পাত্র - পাত্রীদের শক্তি ক্ষমতা যাচাই করবে, শক্তিমত্তা অনুযায়ী কিছু প্রতিশ্রুতি আসলেও আসতে পারে। তারপর আবার সেই পূর্ব-অবস্থা । এইভাবে একদিন এইসব যুদ্ধাপরাধীরা স্বাভাবিক মৃত্যুবরণ করবে যা তাদের প্রাপ্য নয়। কেন এই অবস্থা হচ্ছে? এর একটা বড় কারণ হচ্ছে রাজনৈতিক দলগুলির রাজনৈতিক নীতিহীনতা আর সাধারণ মানুষের অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা ।

দুইটার কোনটাকেই ছোট করে দেখতে রাজী নই । রাজনৈতিক দলগুলির নীতিহীনতার সমস্যা না থাকলে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার আরও আগে সম্পন্ন হতো। সেই নীতিহীনতা অদূর ভবিষ্যতে দুর হবে তার কোন সম্ভাবনা দেখিনা, তার মানে দাড়াচ্ছে বিচারও খুব শীঘ্রি হবে সেটাও আশা করিনা । শাসকগোষ্ঠী বিচার করতো যদিনা তারা মন ভুলানো বিভিন্ন প্রতিশ্রুতি আর নাটুকেপনা দিয়ে জনসাধারণকে বিভ্রান্ত করতে না পারতো। এখন আসেন ২য় ব্যাপারটিতে, যেটাকে বললাম সাধারণ মানুষের অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা।

দেশের সিংহভাগ মানুষের কাছেই একমাসের আহার জোগানোর (ক্ষেত্র বিশেষে এক সপ্তাহ বা এমনকি ১ দিনের) মত টাকা নেই । তাই যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবী তার কাছে খুব একটা গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়না, এরা ঠিকই যুদ্ধাপরাধীদের ঘৃণা করে কিন্তু এদের বিচারের চাইতে নিজের পরিবারের জন্য আহার জোগানোটাকে অনেক বেশী গুরুত্বপূর্ণ মনে করে। আপনি এদের এই বাস্তবতাকে অস্বীকার করতে পারবেননা। আর সেজন্যই আসে সমাজ পরিবর্তনের মাধ্যমে সমাজ উন্নয়নের কথা । বিদ্যমান সমস্যাগুলিকে একত্রে দেখা, বিচ্ছিন্নভাবে নয়।

দেশের মূল সমস্যাগুলি (যুদ্ধাপরাধীদের বিচার তাদের মধ্যে প্রধান একটি) সমাধানের জন্য যদি সবাই সচেষ্ট হয়ে সমাজ উন্নত করা যায় ( আপনার সাথে দ্বিমত জানিয়ে বলি এটা পুজিবাদি উন্নয়নের মাধ্যমেই সম্ভব), তখন যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের জন্য অনেক বাধাই দুর হবে। সব মানুষ স্বত:স্ফূর্তভাবেই এই দুষ্টক্ষত শরীর থেকে দুর করার জন্য আগাবে। রুয়ান্ডা, আলজিরিয়ার মত দেশে ভয়াবহ সব যুদ্ধাপরাধ সংগঠিত হয়েছে কিন্তু কোন বিচার সম্ভব হয়নি, অদূর ভবিষ্যতেও হবে এমন কোন সম্ভাবনা দেখিনা । কিন্তু ইওরোপে কিন্তু বিচার সম্ভব হয়েছে, প্রয়োজনীয় আইন করা গেছে, বিচার এখনো চলছে। তাই আমাদের দেখতে হবে আমরা কোন উদাহরণকে সামনে রেখে আগাতে চাই? এজন্যই বলি যুদ্ধাপরাধীদের বিচারকে আলাদা করে দেখলে বাংলাদেশের মত পশ্চাৎপদ সমাজে সফলতার সম্ভাবনা কম।

সমাজ পরিবর্তনের অংশ হিসাবে দেখতে হবে। একজন জামাল ভাস্কর বা একজন মিরাজ কিন্তু সাধারন বাংলাদেশের সমাজকে প্রতিনিধিত্ব করেনা । এইটা বুঝতে হবে। -------------------------------------------------------- পুরো মন্তব্যটি একটু বড় হলেও তুলে দিলামা বুঝতে সুবিধা হবার জন্য । প্রোপাগান্ডার নেতৃত্বে থাকা ব্যক্তি যে বক্তব্যকে আমার ব্ক্তব্য বলে দাবী করেছেন তার সাথে আমার প্রকৃত বক্তব্যের যে আকাশ পাতাল তফাত তা বুঝতে কারো অসুবিধা হবার কথা নয় ।

এখন গালিবাজির বিপক্ষে আমার অবস্থানের কারণে এর পৃষ্ঠপোষকরা যে নীতিহীন প্রোপাগান্ডা চালাবেন কোন সততার ধার ধারবেননা সেটা বুঝতে কষ্ট হয়না । আর এখানে আর একটি ব্যাপার লক্ষণীয় সব ক্ষেত্রে কোন কথাকে কারো মন্তব্য হিসাবে দেখাতে সাধারণত: স্ক্রীন শট দেয়া হয় এখানে তা দেয়া হয়নি কারণ তাহলে তাদের হীন উদ্দেশ্য চরিতার্থ করা যেতনা । তবে সম্প্রতি আমার পাস হ্যাক করার যে চেষ্টা চলছে তাতে সফল হলে আমার নিককে দিয়ে কিছু বিতর্কিত মন্তব্য করিয়ে কারপর তার স্ক্রীণ শট দেওয়া হতে সেটা নিশ্চিত। এই ধরণের সত্যের সাথে বিন্দুমাত্র সম্পর্কহীন অপপ্রচারের এটি শুরু এর পরবর্তী ধাপে হয়ত আমাকে রাজাকার পন্থী হিসাবে দাবী করে ইচ্ছামত গালিগালাজ শুরু হবে । তবে এইসব সস্তা অপপ্রচার আমার অবস্থানের যৌক্তিকতাকেই সবার সামনে আরো শক্তভাবে তুলে ধরে।

দেখা যাক এরপর কি নাটক অপেক্ষা করছে এবং কর্তৃপক্ষ কতদিন এইসব প্রোপাগান্ডা আর মিথ্যার বেসাতিকে এন্টারটেইন করেন । এইসব নোংরা মানসিকতার লোকগুলো মুক্তিযুদ্ধ বর্মের আড়ালে গালিগালাজ, অশ্লীলতা আর বিকৃতিকে বারবার প্রকাশ করে সত্যিকারভাবে ক্ষতি করছেন মুক্তিযুদ্ধের সত্যিকার চেতনাকে এবং প্রকারান্তরে এর মাধ্যমে সহায়তা করছেন রাজাকারদের । মুক্তিযুদ্ধ আমাদের নীতিহীন হতে শেখায়না, মিথ্যাবাদী হতে শেখায়না । মুক্তিযুদ্ধ আমাদের শেখায় সত্যের পথে, আদর্শের পথে অন্তহীন সংগ্রাম করাকে । এই সত্যটা সাধারণ ব্লগারদের বুঝতে হবে ।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.