আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

একটি মুভিঃ টেবিল নং ২১ সাথে র‌্যাগিং

আপন আলোয় আলোকিত হবার অব্যাহত চেষ্টা কাস্টঃ রাজীব খান্ডেলওয়াল,টিনা দেসাই, পরেশ রাওয়াল। আমার কাহিনীঃ আমরা যে টেলিভিশন চ্যানেল দেখি, তার ৭০ ভাগেরও বেশি ইন্ডিয়ান চ্যানেল। চ্যানেল চেঞ্জ করতে গেলে এগুলার উপর দিয়েই করতে হয়। এই সিনেমার ট্রেলারে বিকিনি পরিহিত অবস্থায় নায়িকা দেখে স্বভাবতই ভাবছিলাম যে আর আট দশটা হিন্দি ছবির মতই মাসালা মুভি হবে এবং এক বিশেষ শ্রেণীর দর্শক টানতেই এই স্বল্পবসনা। যদিও আজকাল হিন্দি ছবিগুলোতে এটা এখন স্বাভাবিক পর্যায়ে নেমে এসেছে।

তবুও আমাদের (আমার) ,নৈতিকতা,মূল্যবোধের কারণে দৃষ্টিকটু লাগে। যাই হোক,এক বন্ধু বলছিল গত কদিন ধরে ঘটে যাওয়া র‌্যাগিং নিয়ে তোলপাড় হচ্ছে। এই মুভিটা দেখিস। আমি বললাম, এটার সাথে মুভি দেখার কি সম্পর্ক? সে বলল, আগে দেখ। মুভির কাহিনী সংক্ষেপঃ ছবি মাত্র রিলিজ হওয়া তাই ক্যমপ্রিন্ট।

শুরুতেই দেখা যায় এক লোক গুলি খেয়ে পড়ে আছে। ছবির কাহিনী কেন্দ্রীভূত হয়েছে এক কাপল ভিভান(রাজীব) এবং সিয়া(টিনা) কে কেন্দ্র করে। তারা ফিজি তে যাবার এক ফ্রি ট্রিপ পায় তাদের ৫ম বিবাহবার্ষিকী তে। ওখানেই বিকিনি পরে একটা গান আছে আর কি, যেটা ট্রেলারে দেখেছিলাম। যাই হোক, ভিভান জবলেস।

ব্যাংকেও টাকা নেই তেমন। মোটামুটি এমন এক অবস্থায় তাদের এক লোভনীয় অফার দেয় খান নামের এক ব্যবসায়ী। সে এক অনলাইন গেম চালায়, যার নাম ," টেবিল নং ২১"। মোট ৮টি প্রশ্ন, সাথে কিছু টাস্ক। পুরস্কার ৩১ কোটি রুপি।

খেলার রুল একটাই, "ইফ ইউ লাই, ইউ ডাই" টাকার অঙ্ক শুনেই সিয়া ভিভান কে বলে গেম টা খেলতে কারণ তাদের টাকার খুবই দরকার। ভিভান রাজী হয়, শুরু হয় খেলা। প্রথম দিকের প্রশ্নগুলো থাকে সোজা, টাস্কগুলোও তাই। ব্যক্তিগত প্রশ্ন থাকে, থাকে ভরা রাস্তায় একে অপরকে চুম্বন করার মত টাস্ক। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে প্রশ্নের ধরণ এবং টাস্ক দুটোই বদলাতে থাকে।

একটা সময় আসে যখন ভিভান কে আধা লিটার রক্তের বিনিময়ে সিয়া কে বাঁচাতে হয়। সিয়াকে হাত উঠাতে হয় তার স্বামীর উপর। ভিভান গেমের একটা রুল ভংগ করায় সিয়াকে স্ট্রিপ সেজে নগ্ন হবার উপক্রম হয়। সিয়াকে ভিভান নিজের হাতে সব চুল শেভ করে দেয়। এমন অনেক মনস্তাত্তিক লড়াই এর মধ্য দিয়ে যেতে হয় এ দুজন কে।

ছবির এ অবস্থায় মনে হয় মিঃ খান (পরেশ রাওয়াল) ভিলেন। আর বাকি দুজন নায়ক নায়িকা। কিন্তু ধৈর্য নিয়ে পুরো ছবি দেখলে এ ধারণা আর থাকবে না। ছবির একদম শেষ পর্যায়ে ভিভান কে বলা হয়, তার স্ত্রীকে হত্যা করতে, সে রাজি হয় না। তখন বলা হয়, অন্য কাউকে হত্যা করতে হবে।

ভিভান যাকে হত্যা করতে যাবে সেটা আগেই ঠিক করে দেয়া থাকে। ভিভান গিয়ে দেখতে পায়, একটি মানসিক প্রতিবন্ধী ছেলেকে হত্যা করতে দেয়া হয়েছে তাকে। ছেলেটির মুখের দিকে তাকাতেই ভিভানের মনে পড়ে যায়, এই ছেলেকে চেনে সে। ছেলেটির নাম আকরাম। দশ বছর আগে ভার্সিটি তে নতুন ভর্তি হয়েছিল ছেলেটি।

ভিভান তখন সিনিয়র। র‌্যাগিং এর নামে ছেলেটিকে শারিরীক এবং মানসিক অত্যাচার করে ভিভান আর তার বন্ধুরা। সিয়াও ছিল। র‌্যাগিং ছিল, ফাস্ট ইয়ারের এক মেয়েকে দিয়ে চড় খাওয়ানো। সে ড্রিঙ্ক করে না জেনেও জোর করে ড্রিঙ্ক করানো, খাওয়ার সময় তার পাতে কেচো রেখে তাকে খাওয়ানো, একটি চক এনে দেবার কথা বলে বারবার তাকে সিড়ি দিয়ে উঠানো-নামানো, তাকে দিয়ে একটি দোকানে ভাংচুর করান এবং লোকজন তাকে গ্ণপিটুনি দিলে তাকে রেখে বাকি সবাই মিলে পালিয়ে যাওয়া, বাথরুমে গেলে ভেতর থেকে ছিটকিনি আটকিয়ে সারা রাত অন্ধকারে বন্ধ করে রাখা।

আকরাম বাসায় বলতেও পারত না এসব কথা। কারণ বাসায় বলত, সে বাহানা বানাচ্ছে। প্রিন্সিপালের কাছে নালিশ করতে গিয়ে ধরা পড়ে সে। তাকে বৃষ্টির মধ্যে নগ্ন করে দাঁড়া করিয়ে রাখে ভিভান। পরিণতি , মানসিক রোগী হয়ে পড়ে আকরাম।

আর মিঃ খান, গেমের সঞ্চালক আকরামের বাবা। ভিভান, সিয়া কে দিয়ে সেই গেমই খেলানো হয় যেটা তারা দশ বছর আগে আকরামের সাথে খেলেছিল। আকরামের বাবা বলে, চাইলে অনেক আগেই তোমাদের মেরে ফেলতে পারতাম, দেখাতে চাচ্ছিলাম, আমার ছেলের সাথে তোমরা যা করেছ, তোমাদের সাথে করলে কেমন লাগে, এই পাপ কোনদিন তোমাদের পিছু ছাড়বে না। প্রথম দৃশ্যে যে ছেলেটিকে গুলি খেয়ে পড়ে থাকতে দেখা যায়, সেও ভিভানের সাথে র‌্যাগিং এ সাহায্য করত। ছবির শেষে র‌্যাগিং নিয়ে একটি পরিসংখ্যান দেখানো হয়।

যেখানে দেখানো হয়, ভারতে র‌্যাগিং এর অবস্থা কি। এর ফলে কতজন মানসিক রোগী হয়ে গেছে, কতজন লেখাপড়া বন্ধ করে দিয়েছে। র‌্যাগিং নিয়ে আমাদের দেশেও একই অবস্থা। র‌্যাগিং কোন মজার বিষয় হতে পারে না। মজা করতে চাইলে নবীন বরণেই করা যেতে পারে।

আর র‌্যাগিং আমাদের কোন জাতিগত ঐতিহ্য না যে অবশ্য পালনীয়। র‌্যাগিং এর নামে নোংরামি বন্ধ করা হোক। সবাই বিশেষ করে নবাগত ছাত্ররা একত্রে সোচ্চার হলে বড় ভাই নামক মালগুলো এগুলো করতে সাহস পাবে না। বড় ভাইদের বলি, বড় ভাইয়ের মত আচরণ করেন। কারণ আপনি বড় ভাই মানে আপনার ছোট ভাই-বোন আছে।

অন্য বড় ভাইয়েরা আপনার ছোট ভাই-বোনকে র‌্যাগিং নামে নোংরামি করলে আপনার নিশ্চয় ভাল লাগবে না। আমার অন্তত লাগবে না,এটা আমি বলতে পারি। র‌্যাগিং বন্ধ হোক।  ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১২ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.