আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

একটি অখ্যাত জীবনী-০৩

আমার এই পথ চাওয়াতেই আনন্দ

সময়ের সাথে দাদির জীবনের একটা পর্যায় শেষ হয়ে আসে। দাদা ১৯৭২ সালে অবসরে যান। আমার বাবা ও বড় চাচা চাকুরি শুরু করেন। দাদি সে সময় দেশের বাড়ি। অবসর গ্রহনের পর দাদা নিজেও দেশে চলে যান।

গ্রামে দাদা দাদির জীবনের দ্বিতীয় পর্যায় আমার প্রায় অজানা। এর মধ্যে বড় চাচা করে বিয়ে সত্তর দশকের শেষ দিকে করে। আমার বাবা বিয়ে করে ১৯৮২ সালে। দাদি আর শহরে আসে না। ঢাকাতে শুরু হয় তার ছেলেদের সংসার।

আমার এক ছোট চাচা (সপ্তম) সুইডেন চলে যায় ১৯৮৪ এর দিকে। কিন্তু তার আগে ছোট চাচার বড় জন (ষষ্ঠ জন) বাড়ি ছেড়ে চলে যায় বড় চাচীর সাথে ঝামেলা করে। তার আজ প্রায় ২৫ বছর ধরে কোন খবর নেই। তখন থেকেই বড় চাচার পরিবারের সাথে, পরিবারের অন্যদের সমস্যা শুরু হয়। আমার বাবা নিজ পছন্দে মাকে বিয়ে করে বলে দাদা দাদি প্রথমে আমার মায়ের প্রতি খুবই অসন্তুষ্ট ছিল।

পরে মায়ে আমার মা তার কঠোর শুশুর শাশুড়ির সেবার মাধ্যমে তাদের মন জয় করে। এমনকি, দাদা মৃত্যুর পূর্বে আমার মায়ের কাছে তার অতীতের বলা কিছু শক্ত কথা ও ব্যবহারের জন্য ক্ষমা চেয়ে যায়। দাদা দাদি হজ্বে যায় ১৯৯৩ সালে। হজ্ব শেষে দাদা মারা যায়, সৌদিতেই জান্নাতুল বাকি কবরস্থানে দাদার কবর হয়। কিন্তু, অবাক করার কথা হল, দাদার মৃত্যুর পর দাদি কাউকেই জানায় নাই দাদার মৃত্যুর খবর।

শুধু বলেছিল দাদা অসুস্থ, দোয়া করতে। প্রায় ১০ দিন পর আমরা জানতে পারি দাদা মারা গেছে। হজ্ব থেকে আসার পর দাদি কিছুদিন আমাদের ঢাকার বাসায় থাকে এবং পরে দেশের বাড়ি চলে যান। এরপর প্রায় ৭ বছর তিনি গ্রামে ছিলেন। দাদার মৃত্যুর প্রায় ৭ বছর পর দাদি একেবারে ঢাকায় চলে আসেন।

২০০১ সালে ছোট চাচা দাদিকে সুইডেন নিয়ে যায়। প্রায় আট মাস দাদি সুইডেন ছিল। সুইডেন থেকে আসবার পরেও দাদি এলিফেন্ট রোডের বাসাতেই থাকত। মাঝে মাঝে আমাদের বাসায় আসত। অদ্ভুত ব্যাপার, এলিফেন্ট রোডে একই বাড়িতে থাকা তার বড় ছেলে তার খোঁজও নিত না।

দাদির জীবনী লেখা এখানেই শেষ। আরো অনেক অনেক কথা আছে যা এখানে লিখে শেষ করা সম্ভব নয়। এক সাথে সব মনেও পরে না। মাঝে মাঝে মনে পড়ে অনেক অনেক কথা যা দাদির কাছ থেকে রাতের পর রাত শুনেছি। বৃদ্ধা বৃদ্ধদের প্রতি আমার বিশেষ আকর্ষণের জন্য হয়ত।

আকর্ষণ এই জন্য যে, তারা প্রত্যেককে ইতিহাসের প্রত্যক্ষ দর্শক। এই বয়সে সব থেকে কঠিন বস্তবতা হল একাকিত্ব। স্বামী স্ত্রী একসাথে না থাকলে এই বয়স সত্যিই দুর্বিষহ। আমাদের বাসায় এসে দাদি একা একা শুয়ে থাকত রাতে। এক নিশাচরী ছাত্র হিসেবে আমি রাতেই পড়তাম আর ফাকে ফাকে দাদির কাছে কথা শুনতাম।

কখনও ক্লান্ত হই নি। দাদির আমার সাথে বলা কথা গুলোর মধ্যে অন্যতম বিষয় ছিল তার মৃত্যুর পর আমাদের করণীয়। কিভাবে কি করতে হবে, সব নিয়ম কানুন দাদি আমাকে বলতেন। কপাল এমন দাদির মৃত্যুর পর প্রায় সব কিছু আমাকে একা করতে হয়েছে। ২০০৭ সালের জানুয়ারির এক তারিখ, দাদির মৃত্যুর মাধ্যমে আমি শিখেছি মৃত্যু কি জিনিস।

এর গভীরতা কতটুকু। এর পরের শেষ পোস্টের বিষয় হবে দাদির শেষ দিন।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.