আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

একটি অখ্যাত জীবনী- ০২

আমার এই পথ চাওয়াতেই আনন্দ

একটি অখ্যাত জীবনী - ০২ ১৯৪৭ এর দেশ বিভাগের পর দাদা দাদিকে নিয়ে যশোরে সংসার শুরু করে। সেখানে আমার বড় চাচার জন্ম হয়। মাঝে একটি মেয়ে হয়েছিল, যে জন্মের কয়েক মাস পরেই মারা যায়। এরপর দাদা ঢাকায় বদলি হয় এবং পরিবার সহ চলে আসে এখানে। ১৯৫২ সালে আমার বাবার জন্ম।

বাবার জন্মের পরে আরও দুই চাচার জন্ম হয়। এরই মাঝে এক সময় দাদি ছেলেমেয়েদের নিয়ে দেশের বাড়ি থাকা শুরু করে। খুব সম্ভবত ১৯৫৫ সালের দিকে আমার বাবা অসম্ভব অসুস্থ হয়ে পড়ে। বাবার মামা ঢাকায় দাদাকে খবর দেয়। দাদির বলেছিল, তার ভাই যখন দাদাকে এই খবর জানায় দাদা তখন নবাবপুরে তার অফিসের সামনে শসা (এই ছিল তার লাঞ্চ) খাচ্ছিল।

খবর পাওয়া মাত্র দাদা শসা শেষ করে পুরানো ঢাকার কায়েতটুলি চলে আসে এবং একটা বাসা ভাড়া করে। সেই দিনই দাদা বাড়ি গিয়ে দাদি সহ সবাইকে ঢাকায় নিয়ে আসে এবং দাদির ঢাকায় সংসার জীবন শুরু হয়। এরই মাঝে পিছনের একটা কথা বলতে হয়। দাদি কলকাতায় থাকতে সেই সময়ে প্রায় ১৪০০ টাকা সঞ্চয় করেছিল হাস মুরগী ও শাক-সবজী বিক্রি করিয়ে। সে টাকা আবার ধার করেছিল, রুনু বুবুর স্বামী।

ঢাকা এসে তার কাছে টাকা চাইলে, সে জানায় নগদ টাকা দিতে পারবে না। তবে, সে দাদাকে জমি কিনে দিতে পারবে। টাকা সে জমির মালিককে দেবে। প্রস্তাবে দাদা দাদি রাজি হয়। তখন, দাদাকে দুইটা জায়গা দেখানো হয়েছিল।

একটা আজকের মতিঝিলে একটা ডোবা প্রায় ১ বিঘা (বর্তমানে সেখানে সেনা কল্যান ভবন) অন্য একটা হাতিরপুলে পাঁচ কাঠা (বাটা সিগন্যালের কাছে)। দাদা মতিঝিলের ডোবা নিতে রাজি হয় না, পছন্দ করে হাতিরপুলের জমি। কিন্তু, দিন যায় জমি হস্তান্তর করে না। একদিন দাদার অজান্তে দাদি ছেলে মেয়েদের নিয়ে ঐ বাড়িতে হাজির হয় এবং বলে আজ থেকে তারা এই বাড়িতে থাকবে। সেইদিনই বাড়ি ছাড় নইলে, টাকা দাও।

দাদির নাছোড়বান্দা আচরনে জমির মালিক সে দিন রাত একটায় জমি রেজিস্ট্রি করে দেয় এবং পরিবার নিয়ে চলে যায়। দাদা জমি বুঝে পায়। প্রথমে ঐ জমিতে টিনের একটা বাড়ি ছিল। পরের দাদির জমানো টাকাতেই সেখানে ইটের দুইটা রুম করে দাদা। এ সব পঞ্চাশের দশকের কথা।

এমনি সময় একবার দাদাকে ঢাকার বাইরে বদলি করা হয়। দাদা পড়ে মহা বিপদে। এতগুলো ছেলে মেয়েকে নিয়ে যাওয়াও সমস্যা, আবার ঢাকাকে পরিবার রেখে যাওয়াও সমস্যা। এ সময় এক সকালে আমার দাদি তার সব ছেলেমেয়েদের নিয়ে খাদ্য বিভাগের ডিজির বাসায় গিয়ে উঠে। সকালে বেলায় ডিজির বঊ দাদি ও তার গং দেখে ভিমরী খায়।

দাদি মহিলাকে জানায়, তার স্বামী (ডিজি) দাদাকে বদলি করেছে, এখন দাদির পরিবার নিয়ে ঢাকায় একা নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে কাটাতে হবে, তাই সে ছেলেমেয়ে সহ ডিজির বাসায় চলে এসেছে। ডিজির বঊ নাছোড়বান্দা দাদিকে নিয়ে পড়ে মহা ঝামেলায়। সে সাথে সাথে ডিজিকে খবর জানায়। ডিজি সেই দিনই দাদার বদলি বাতিল করে। এরপর দাদাকে আর কখনও ঢাকার বাইরে বদলি করা হয় নাই।

আমার দাদির অর্থনৈতিক কর্মকান্ড সব সময় চালু ছিল। এলিফেন্ট রোডের বাসাতেও সে হাঁস-মুরগী পালত আর বাবাকে দিয়ে বাজারের দোকানে বিক্রি করাতো। দাদি সেই পুরানো আমলের হলেও, মানসিকতা আধুনিক ছিল। দাদার পক্ষে তার সাত ছেলে মেয়ের সংসারে সবাইকে মন মত সব দেওয়া সম্ভব ছিল না। দাদি ছেলেমেয়ের এই চাহিদার দিক গুলো মেটাতে চেষ্টা করছে।

অন্তত আমার বাবার গুলোতো অবশ্যই। এরই মাঝে ১৯৬৪ সালে বাবার দাদা অসুস্থ হয়ে পড়ায়, দাদি দেশের বাড়ি চলে যায় তার দেখাশুনার জন্য। তার সাথে যায় আমার ছোট দুই চাচা। বাকিরা ঢাকায় দাদার সাথে থেকে যায়। মূলত এ সময়ই শুরু হয় পরিবারে ধ্বস।

বাবা বা বড় চাচা সে সময় যথেষ্ট বড় থাকায় তাদের ওপর প্রভাবটা তেমন পড়েনি। তবে বাবার ছোট দুই চাচার লেখা পড়া প্রায় নষ্টই হয়েছে বলা যায়। তাদের ছোট দুজন নোয়াখালিতেই বড় হয়। পরে অবশ্য দাদি ঢাকায় চলে আসে। কিন্তু, ততদিনে ক্ষতি যা হবার তা হয়ে যায়।

আমার এক চাচা ক্লাস ফাইভে থাকার সময় অজ্ঞাত কারনে ঘর থেকে চলে যায়। আসে প্রায় ২০ বছর পর। তার ছোটজনের ক্লাস ফোরে থাকার সময় কঠিন অসুখে পড়ে। তিন বছর পড়া লেখা বন্ধ থাকায়, তার শিক্ষাজীবন আর বেশি দূর আগায় নাই। এই চাচার জীবন অত্যন্ত মর্মান্তিক।

তার কথা লিখতে গেলে, আমার আর একটা সিরিজ শুরু করতে হবে। আমার বাবা ভাগ্য ক্রমে ঢাকা কলেজ গড়িয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত পৌছে। বাবার ভাগ্যের ঘটনাটাও মজার। কিন্তু, এখানে না। পরে লিখব হয়তো।

(একটি অখ্যাত জীবনী-০৩ )

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.