চাকরি করা বা চুক্তিভিত্তিক কাজ করা মানুষের অন্যতম অধিকার।
বিশ্ব মানবাধিকার ঘোষণার ২৩ নম্বর অনুচ্ছেদে মানুষের কাজ করার অধিকারের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এই অনুচ্ছেদে এটাও বলা হয়েছে যে, মানুষ তার কাজ বা পেশা বেছে নেয়ার ব্যাপারে স্বাধীন।
নারীর কর্মসংস্থানের বিষয়টি আধুনিক যুগের বিষয়। গত দুই শতকে নানা ধরনের ঘটনা ও পরিবর্তনের ফলে নারীর কর্মসংস্থানের ঝোঁক এবং প্রবণতা ক্রমেই বাড়ছে।
শিল্প বিপ্লবের পর কল-কারখানাসহ নানা ধরনের কর্মক্ষেত্রের সংখ্যা বহু গুণ বেড়েছে। পুঁজিপতিরা অতিরিক্ত মুনাফা অর্জন ও উতপাদন-ব্যয় কম রাখার জন্য তাদের কারখানায় সস্তা শ্রম শক্তি নিয়োগের পথ খুঁজছিলেন। আর নারীকেই তারা বেছে নিয়েছেন এ জন্য।
নানা প্রতিবেদনে দেখা গেছে, বিশ্বে এখনও নারী কর্মী ও শ্রমিকরা অপেক্ষাকৃত কম পারিশ্রমিক পাচ্ছে।
আধুনিক যুগেও নারী কর্মী ও শ্রমিকরা শোষণের শিকার হচ্ছে।
নারীর ওপর চাপিয়ে দেয়া হচ্ছে কঠিন ও ব্যাপক শ্রম-সাধ্য কাজ। ফলে অসুস্থ হচ্ছে তারা। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই নারীকে এমন কর্মক্ষেত্রে নিয়ে আসা হচ্ছে যেখানে তারা কাজ করতে পারছেন না স্বচ্ছন্দে। বিশেষ করে পাশ্চাত্যে নারীর নানা কর্মক্ষেত্রে যে অনৈতিক পরিবেশ বিরাজ করছে তা তাদের জন্য খুবই বিপজ্জনক। অথচ পশ্চিমা সরকারগুলো নারী অধিকারের রক্ষক বলে দাবি করছে এবং তারা নারীর প্রতি বৈষম্য দূর করার দাবি করে আসছে!
নারী ও পুরুষের সমান অধিকারের নামে নারীবাদীরা ঘরের বাইরে নানা কর্মক্ষেত্রে নারী ও পুরুষকে একসঙ্গে কাজ করতে উতসাহ যুগিয়ে থাকে।
পশ্চিমা শিল্প-সমাজের কর্তারাও নারীবাদীদের ওই লক্ষ্যের সঙ্গে তাল মিলিয়ে সব ধরনের কর্মক্ষেত্রে নারীকে টেনে এনেছে। নারী ও পুরুষের স্বাভাবিক শক্তি-সামর্থ্য, মানসিক অবস্থা ও শারীরিক গঠনের বা আকর্ষণের পার্থক্যকেও তারা বিবেচনায় আনেননি এক্ষেত্রে। ফলে কর্মক্ষেত্রে ভারসাম্য নারীর অনুকূল না হয়ে পুরুষের অনুকূল হয়ে পড়েছে। অর্থাত এই পরিবর্তনের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে নারী। কর্মক্ষেত্রে শক্তিমান পুরুষের কুদৃষ্টি ও যৌন নির্যাতনের হাত থেকে সুদর্শনা ও দুর্বল নারীর আত্মরক্ষার কোনো উপায় রইল না।
পশ্চিমা নারীবাদীদের দৃষ্টিতে সমান অধিকারের অন্যতম অর্থ হল ঘরের বাইরে নারী ও পুরুষের জন্য চাকরির অধিকার নিশ্চিত করা। যে নারী কেবলই গৃহবধূ তাকে পশ্চাদপদ বলে মনে করে নারীবাদীরা। এভাবে পাশ্চাত্য নারীকে কেবলই সামাজিক ভূমিকায় ব্যস্ত রেখে তাদের মাতৃত্ব ও স্ত্রীর ভূমিকাকে বিলুপ্ত করছে। পশ্চিমে নারী ও মায়েদের ওপর মানসিক চাপ ক্রমেই বাড়ছে।
অন্যদিকে মানুষের জীবনের জন্য পরিপূর্ণ বা পূর্ণাঙ্গ বিধানের ব্যবস্থা করেছে ইসলাম।
এই ধর্ম অধিকারের দিক থেকে নারী ও পুরুষের সমান অধিকারের কথা বলে।
ইসলাম নারীর মালিকানা ও অর্থনৈতিক ততপরতাকে স্বীকৃতি দিয়েছে। এর পাশাপাশি নারীর অর্থনৈতিক চাহিদাগুলো পূরণ করা স্বামীর দায়িত্ব বলে উল্লেখ করেছে যাতে নারী কোনো দুশ্চিন্তা ছাড়াই তার সাংসারিক দায়িত্বগুলো পালন করতে পারে। এরই আলোকে ঘরের বাইরে কাজ করার কোনো প্রয়োজন নেই নারীর। বাইরে চাকরি করা নারীর জন্য বাধ্যতামূলক কোনো বিষয় নয় বরং তা তাদের ইচ্ছাধীন বিষয়।
তারা ঘরের বাইরে যে কোনো বৈধ পেশা বেছে নিতে পারেন।
ইসলামের দৃষ্টিতে নারী সাংসারিক বা পারিবারিক দায়িত্ব পালন ছাড়াও সামাজিক ও অর্থনৈতিক ততপরতায় জড়িত হতে পারেন। তবে তাদেরকে এই দায়িত্ব এমনভাবে পালন করতে হবে যাতে স্বামী ও সন্তানের প্রতি দায়িত্ব পালনের কাজটি ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। নারীর সবচেয়ে বড় ও আসল কাজ হল সন্তানের প্রশিক্ষণ এবং পরিবার রক্ষা করা। এই দায়িত্ব বা মিশনের ক্ষতি না হওয়া পর্যন্ত নারীর যে কোনো বাড়তি কাজ বা ভূমিকাকে ইসলাম সমর্থন করে।
মোটকথা, ইসলাম নারীর কাজ বা চাকরিকে মর্যাদা দেয়। পুরুষ বা স্বামী নারীকে ঘরে ও বাইরে কাজ করতে বাধ্য করার অধিকার রাখে না। অর্থাত নারী ঘরেও বিনা পারিশ্রমিকে ঘর-কন্না ও সংসারের কাজ করতে বাধ্য নয়। নারী স্বামীর সহযোগী হিসেবেই বা জীবন-সঙ্গী হিসেবে ঘরের কাজে স্বেচ্ছায় সহায়তা করে মাত্র।
ইসলামও নারী ও পুরুষের সমান অধিকারকেও সমর্থন করে।
তবে তা পশ্চিমাদের কথিত সমান অধিকারের অর্থে নয়। বরং নারীর প্রকৃতি ও বৈশিষ্ট্যের আলোকে তাকে কাজ দেয়ার কথা বলে ইসলাম। কারণ, খুব কঠিন কায়িক শ্রমের কাজ নারীর পক্ষে করা সম্ভব নয় এবং তা ব্যক্তি, পরিবার ও সমাজের স্বার্থেরও অনুকূল নয়।
মার্কিন লেখিকা মিসেস ন্যান্সি লিইঘ ডি-মস লিখেছেন,
“নারীদেরকে ঘর-সংসারের কাজের ব্যাপারে অসন্তুষ্ট হতে উতসাহ দেয়া এবং তাদের বেশি আনন্দ দেয়ার জন্য ঘর থেকে বের করে আনা –এসবই নারীর জন্য মাত্রাতিরিক্ত টেনশন বা উদ্বেগ ছাড়া অন্য কোনো ফল বয়ে আনেনি। বিপুল সংখ্যক নারী আজ মানসিক চিকিতসক ও নানা ধরনের ওষুধের সাহায্য ছাড়া জীবন যাপন করতে পারছেন না।
যেসব নারী সব সময় এক স্থান থেকে আরেক স্থানে যাচ্ছে ও এক পেশা ছেড়ে অন্য পেশা ধরছে তাদের বেশিরভাগই অনৈতিক সম্পর্কের শিকার হয়েছেন ও হচ্ছেন। ”
ইসলামের দৃষ্টিতে নারী ও পুরুষের পেশাগত পার্থক্য এবং তাদের অধিকারের পার্থক্য এক কথা নয়। তাদের অধিকার সমান। যেমন, আমিরুল মুমিনিন হযরত আলী (রা.) ও হযরত ফাতিমা (রা.)-উভয়ই উচ্চতর আধ্যাত্মিক মর্যাদার অধিকারী। কিন্তু ঘরের বাইরের কাজগুলো ছিল আলী (রা.)’র পেশা, আর ঘরের বা ঘরোয়া কাজগুলো করা ছিল বেহেশতি নারীকুলের নেত্রী ফাতিমা (রা.)’র পেশা।
জ্ঞান-বিজ্ঞান, প্রতিভা ও শারীরিক শক্তির দিক থেকে মানুষে মানুষে রয়েছে পার্থক্য। তাই মহান আল্লাহ সবার জন্য তার উপযোগী কাজ নির্ধারণ করেছেন। নারী-পুরুষও এর ব্যতিক্রম নয়। যেসব পার্থক্য প্রকৃতিগত তা পরিবর্তন করা যায় না।
শিশুর প্রাথমিক শিক্ষা সম্পন্ন হয় দয়াময় মায়ের স্নেহের আচলে।
কিন্তু পুঁজিবাদী সমাজ নারীকে চাকরি দেয়ার অজুহাতে নারীকে তার মূল কাজ থেকে দূরে রাখছে যাতে তাদেরকে পুঁজিবাদের সেবায় বেশি ব্যবহার করা যায়।
কানাডীয় লেখক উইলিয়াম গার্ডনার এ প্রসঙ্গে বলেছেন, কর্মজীবী মায়েরা শিশুদেরকে যে ডে কেয়ার সেন্টারে রেখে যান তা কখনও শিশুর জন্য পরিবারের মত উত্তম নয়। ফেমিনিস্ট বা নারীবাদীরা আজও এ প্রশ্নের জবাব দেননি।
উইলিয়াম গার্ডনারের মতে নারীবাদ গড়ে উঠেছে কাজের ব্যাপারে বিপুল সংখ্যক পশ্চিমা নারীর ক্লান্তি, শ্রান্তি ও হতাশার মত বাস্তবতা থেকে। এইসব নারীই তাদের সন্তানকে ডে-কেয়ার সেন্টারে পাঠান ও কম বেতনের চাকরি পেলেও তা আঁকড়ে ধরেন।
অথচ এ ধরনের চাকরির প্রতি তাদের কোনো আগ্রহই নেই।
এ কথা অনস্বীকার্য, শিশুদেরকে স্নেহের ছায়াতলে যথাযথ শিক্ষা দেয়া মায়েদের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব। এ শিক্ষা নিয়ে তারা যখন বড় হবে তখন তারা হবে সঠিক পথে চলা সুস্থ মন-মানসিকতাসম্পন্ন মানুষ। তারা হবে কুসংস্কার, গোঁড়ামি, কলুষতা ও হীনমন্যতামুক্ত। পাশ্চাত্যের যুব প্রজন্ম আজ এইসব সংকটেই আক্রান্ত।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।