বন্ধ জানালা, খোলা কপাট !
বড়ই প্রীত হইয়াছি-টাইপ দৃষ্টি নিয়ে নীশির দিকে তাকালাম । প্রীত হয়েছিতো বটেই । নীশি নাম্নী এই অতি রূপবতীর কথায় প্রীত না হয়ে উপায় কি ! আমিই না কেবল , যে কোন তরুণের সামনে গিয়ে, বিনে খরচার মধুর হাসি বিলিয়ে এ মেয়ে যদি বলে,-'ভাই শুনুন ! আমি একটি এক্সপেরিমেন্ট করতে চাইছি। আমার হাতের এই ধারালো ছুরিটা আপনার বুকে চালিয়ে দেব আশা করছি , আপনি আমায় সাহায্য করতে পারেন ?' কোন এক অজানা কারণে ওই তরুণ মুখে হাসি ফুটিয়ে -With great pleasure- বলবে বলেই আমার ধারণা । নীশির মত রূপবতীর সামনে আমার গলায় কথা আটকে যায় ।
নিজের হৃত্তপিন্ডের ধুঁকপুকানির শব্দ নিজেই শুনতে পাই । তবু বাঁচোয়া, একই ছাদের নীচে আমাদের বসবাস । নীশি আমার কাজিন হবার সুবাদে কখনও সখনও তার সাথে আমার কিঞ্চিত বাত্তচিত হয় । যেমন আজ হয়েছে । ঈদের নামাজ পড়ে বাসায় আসতেই, সামনে দাঁড়িয়ে ও বলল,
-মদন কুমার ! আনন্দিত হবার মত একটি খবর তোমায় দিতে পারি !
-বলে ফেলুন, জনাবা !
-আজকের দিনটিতে আমার সঙ্গে ঘুরে বেড়াবার সুবর্ণ সুযোগ তুমি পাবে !
চেহারায় বিমোহিত ভাব ফুটিয়ে ভাব নিয়ে চুর করে রইলাম ।
ও বলল,-মদন কুমার ! তুমি রাজি ?
টেনেটেনে বললাম- দে-খি !
-দেখাদেখি আবার কি ! হ্যাঁ অথবা না উত্তর বলো ।
-সারাদিন বন্ধুদের সাথে থাকার কথা ছিল ।
-বন্ধুদের ছেড়ে নীশির সাথে থাকলে সময় খারাপ কাটবে বলেতো মনে হয় না ।
-তোর সাথে থেকে কাজটা কি ?
-উহুঁ; নো কোশ্চেন, থাকবি ব্যাস ।
- ও !
-তার মানে থাকছিস ?
-তুই বললে...!
-ঝটপট বের হ তবে ।
হাতে সময় দশমিনিট ।
নয় মিনিটের মাথায় নীশিকে নিয়ে রাস্তায় নামলাম । এক সময় আবিস্কার করলাম,নীশির হাতে থাকা চটের ভারি থলেটা হাত বদলে এখন আমার হাতে (বোঝা বইবার জন্যই আমারে আনা । হায় !) পাশে রূপবতী হাতে চটের থলে ! বড়ই মনোহর দৃশ্য ! দেখার মত ( কে রে আমার এই অবস্থা দেইখা দাঁত কেলায় !) । আমার এই করুণ দশায় কেউ দন্ত বিকশিত করবেন না, প্লীজ ! আমার জন্য এ দৃশ্য তেতো ।
শুধু তেতো না, নিমতেতো ! চট করে রিক্সায় উঠলাম । অসম্মানজনক এ দৃশ্য যত কম মানুষে দেখবে, ততই মঙ্গল । রিক্সা সামনে এগুতেই নীশি বলল,-'মদন কুমার; আমার পাশে এইভাবে গুটিয়ে থাকার প্রয়োজনতো দেখিনা । আরাম করে বসো !' দিলে চোট পাইলাম, বারবার মদন কুমার সম্বোধনে মেয়েটা আমাকে অপমান করার চেষ্টা করছে । অন্যে বললে অন্য কথা ছিল ।
সে জানে, তার বলা মদন কুমার আমার কানে 'প্রেমকুমার' হয়ে বাজে ! আমাকে অপমান করার ওর ব্যর্থ প্রয়াসেই আমার দিলে চোট । দেখলাম চোখ সরু করে তাকিয়ে আছে ও । সুধালাম,- 'এনিথিং রং ?'
-এই স্লিপারি পাঞ্জাবিটা কোন আক্কেলে পড়েছিস তুই ?
ফিক করে বোকার মত হেসে ফেললাম । স্লিপারি রোড হয় জানতাম । তাই বলে স্লিপারি পাঞ্জাবি ! এক্কেরে নতুন জিনিস ! ইচ্ছে হলো বলি,-'গত ঈদের পাঞ্জাবি এই ঈদেও পরার কারণতো তোমার জানার কথা, সোনা !' কিন্তু বলা হলো না ।
এই অহংকারী মেয়েটাকে ওরকম বলার মত যথেষ্ট সাহস আমার নেই বলেই জানি । পাশে থাকা মানবীকে তাই সাহসের অভাবে মুখে না বলে, কল্পণাতেই বলতে শুরু করলাম,-'নীশি সোনা !'
-উম্ ?
-এটা স্লিপারি পাঞ্জাবি ?
- হুঁ !
-কোন যুক্তিতে ?
-হিঃ হিঃ হিঃ !
-একটা প্রশ্ন করলে রাগ করবেনাতো ?
-না ।
- আমার ঈদ বাজেটটা নিয়ে কি করা হলো,জানতে পারি ?
হঠাত্ত হার্ড ব্রেক কষে রিক্সা থেমে যায় । এ রিক্সাওয়ালা উড়াল দিয়ে আসছিল এতক্ষণ । মেয়ে যাত্রী পেলেই এরা এটা করে ।
পাখির মত উড়ে যেতে চায় ! রিক্সার ঝাঁকুনিতে ঝাঁকি খায় আমার কল্পণা । থেমে যায় । চটের থলে নিয়ে নীশি নেমে যায় । এরপরের দৃশ্য আমার কাছে কেবলি বিস্ময়ের !
রাস্তার পাশে উদোম গায়ে কিছু একটা খুঁজছে একদল শিশু । কাছে গিয়ে হাত ইশারায় নীশি ওদের ডাকে ।
শিশুর দল নীশিকে ঘিরে দাঁড়ায় । পাঁচ শিশুর এই দলে আছে একজন কিশোরী । ওর গায়েই কেবল একটি পুরনো ময়লা জামা । চটের থলের মুখ খুলে নীশি বের করে আনে একটি সবুজ জামা । পরপর চারটি শিশুর হাতে শোভা পায় একই রঙ্গের সবুজ জামা ।
একমাত্র কিশোরীর জামার রং, লাল ! রাজ্যের বিস্ময় নিয়ে নীশির দিকে চেয়ে আছে ওরা । পরীর মত একটি মেয়ে ওদের উপহার দিচ্ছে, এ-ই কি বিস্ময়ের কারণ !
ঈদ বাজেটের হিসেব পেয়ে যাই আমি । ফিরে এসে রিক্সায় বসে নীশি । আমার মনে হয়,উড়ালপঙ্ক্ষি গতীতে রিক্সাওয়ালা আমাদের উড়িয়ে নিয়ে যাচ্ছে । পাশে বসে থাকা অহংকারী মেয়েটার কাঁধে মাথা রাখতে ভীষণ ইচ্ছে করে আমার...।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।