আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

নীতিমালার বাস্তবায়ন না হওয়ায় শিশুরা অধিকার বঞ্চিত



------------------------------------------------------ শিশুদের জন্যে গৃহীত নীতিমালাসমূহ বাস্তবায়িত না হওয়ায় শিশুরা তাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। সুস্থ ও সুন্দরভাবে বেড়ে উঠার জন্যে শিশুদের সাংবিধানিক অধিকারসমূহ ও জাতিসংঘ শিশু অধিকার সনদে উল্লেখিত অধিকারসমূহ রাষ্ট্র কর্তৃক নিশ্চিত করা প্রয়োজন। কারা শিশু: জাতিসংঘ শিশু অধিকার সনদ মোতাবেক যদি না শিশুদের জন্যে প্রয়োগকৃত আইনে আরো কম বয়সে সাবালকত্ব নির্ধারিত হয়ে থাকে তা হলে এই সনদ অনুযায়ী শিশু বলতে বোঝায় ১৮ বছরের কম বয়সী প্রত্যেকটি মানব সন্তানকে। বাংলাদেশের বিভিন্ন আইনে শিশুর বয়স সীমা ভিন্ন ভিন্ন ভাবে নির্ধারণ করা হয়েছে। বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপট বিবেচনা করে ১৪ বছর পূর্ণ হয়নি এমন ছেলেমেয়েদের শিশু হিসেবে গণ্য করা হবে।

শিশু অধিকার সনদ: ১৯২৪ সালে শিশু অধিকার সম্পর্কে জেনেভা ঘোষণা ও ১৯৫৯ সালের ২০ নভেম্বর সাধারণ পরিষদে গৃহীত শিশু অধিকার ঘোষনায় শিশুদের প্রতি বিশেষ যতেœর কথা বলা হয়েছে। ইতিহাসে শিশু অধিকার সনদ হচ্ছে সবচেয়ে ব্যাপকভাবে গৃহীত মানবাধিকার চুক্তি। ১৯৮৯ সালের নভেম্বর মাসে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে সর্বসম্মতিক্রমে এ চুক্তি গৃহীত হয়। ১৯৯০ সালের সেপ্টেম্বরে এটি আন্তর্জাতিক আইনের একটি অংশে পরিণত হয়। জাতিসংঘের ১৯৩টি সদস্য দেশের মধ্যে বাংলাদেশসহ ১৮৭টি দেশ চুক্তিটি অনুমোদন করেছে।

শিশু অধিকার সনদে স্বীকৃত অধিকারের আওতায় শিশুর স্বাস্থ্য, শিক্ষা, শিশু ও পিতা-মাতার মধ্যকার সম্পর্ক, সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডে, নাগরিক অধিকার, শিশু শোষণ এবং অপরাধের সাথে জড়িত শিশুসহ অনেক বিষয়ই অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে। ১৯৯০ সালের জাতিসংঘ শিশু অধিকার সনদ অনুমোদনের পর থেকেই বাংলাদেশ শিশু অধিকারসমূহ আদায়ে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করে আসছে। ১৯৯৭ সালে প্রকাশিত এক প্রতিবেদন মোতাবেক শিশুদের টিকাদানের হার শতকরা ৭০ ভাগের কাছাকাছি উন্নীত হওয়ায় শিশুদের স্বাস্থ্য ও বেঁচে থাকার ক্ষেত্রে অগ্রগতি হয়েছে। তবে এ প্রসঙ্গে নোয়াখালী জেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা বলেন, বিশ্বের যে কোন দেশে দুই তিন বার পোলিও টিকা খাওয়ানোর পরই সে দেশ পোলিও মুক্ত হয়েছে। অথচ এ দেশে তা দশবার খাওয়ানোর পরও পোলিও মুক্ত হয়নি।

শিশু শ্রম কমিয়ে আনার লক্ষ্যে গার্মেন্টস শিল্প থেকে পর্যায়ক্রমে শিশুদের প্রত্যাহার, তাদের জন্যে বিশেষ বিদ্যালয় স্থাপন, যেখানে সম্ভব তাদের পরিবারের সদস্যদের কাজে লাগানো এবং তাদের হারানো আয় পুষিয়ে নেয়ার জন্যে তাদের বৃত্তি প্রদানের ব্যবস্থা করা হয়েছে। তবুও দেশের সম্পদের স্বল্পতা, অনুন্নয়ন এবং কর্মসংস্থানের অভাবে শিশু শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পুষ্টি এবং বাসস্থানের মত মৌলিক চাহিদা থেকে এখনো অনেক শিশু বঞ্চিত রয়েছে। এক জরিপে দেখা যায়, ৩৫% শিশু প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আসা যাওয়া করে। তন্মধ্যে ১০ জনই অধিকাংশ দিন না খেয়ে বিদ্যালয়ে যায়। বাকি ৬৫ জনের মধ্যে ১৫ জন স্কুলে যায়।

২৫ জন বিদ্যালয়ে যাওয়া বাদ দিয়ে পারিবারিক কাজে সহায়তা করে। আর বাকী ২৫ জন কোন দিনই স্কুলে যায় না। ১৯৯৭ সালের এক হিসেবে দেশের জনসংখ্যা ১২৪ মিলিয়ন। তন্মধ্যে ১৮ বছরের নীচে শিশুর সংখ্যা ৬১৭ মিলিয়ন যা জনসংখ্যার ৪৯.৬%। ০-৪ বছর বয়সী কন্যা শিশু ৭.৭ মিলিয়ন যা সেই জনসংখ্যার ১২.৬৬%।

৫-৯ বছর বয়সী কন্যা শিশুর সংখ্যা ৯ মিলিয়ন যা মোট জনসংখ্যার ১৫.২৯%। ১০-১৪ বছর বয়সীদের সংখ্যা ৭.৭ মিলিয়ন যা ১২.৬ ভাগ মোট জনসংখ্যার এবং ১৫-১৭ বছর বয়সী মোট জনসংখ্যার ২.২৯%। শিশু অধিকার ও কন্যা শিশু: শিশু অধিকার সনদ অনুযায়ী ১৮ বছর বয়সের কম প্রত্যেক মানব সন্তানই শিশু। এবং এখানে পুত্র শিশু ও কন্যা শিশু বলে আলাদা কোন ধরণ নেই। কিšদ সরজমিনে দেখা যায়, জন্মের পর থেকেই কন্যা শিশুরা সামাজিক বৈষম্যের শিকার হয়।

নোয়াখালী সুধারাম উপজেলার সোন্দলপুর ইউনিয়নের মোঃ হোসেন বলেন, ছেলেদের চেয়ে কন্যা শিশুরা সাধারণতঃ মা-বাবা বা অন্যদের কাছে অনেক সময় কম øেহ আদর পেয়ে থাকেন। তবে সাধারণত অশিক্ষা ও কুসংস্কার এর জন্যে দায়ী। এ প্রসঙ্গে বাটইয়া মওদুদ আহমেদ উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক মিজানুর রহমান বলেন, কন্যা শিশুরা কাজ করে না, উপার্জন করতে পারে না এ ধারণা থেকে তাদের যে বৈষম্যের শিকার হতে হয়, তা ভুল ধারনা। ৫-১২ বছর বয়সী ও ১৩-১৯ বছর বয়সী কন্যা শিশুরা নানা ধরনের গৃহস্থালী কাজে অংশগ্রহণ করে। তাদের এ সকল কাজে গোবর কুড়ানো, খড়ি কুড়ানো, রাস্তার পাশ থেকে কিংবা মাঠ থেকে কাঁচা তরকারি কুড়ানো, পশু পালন, পশুর আহার যোগান দেয়া, রান্না করাও পরিবারের ছোটদের সেবা দান বড়/অসুস্থ্যদের পরিচর্যা করা ও রয়েছে।

পরিসংখ্যান অনুযায়ী ১০-১৪ বছর বয়সী কন্যা শিশুদের মধ্যে ২.৩ মিলিয়ন শিশু এবং ১৫-১৯ বছর বয়সী কন্যা শিশুদের মধ্যে ২.৪ মিলিয়ন অর্থনৈতিক কাজে জড়িত। গ্রামাঞ্চলে শিশুদের যে শ্রমক্ষেত্র রয়েছে সেখানে কন্যা শিশুদের উপযোগী তেমন কোন শ্রম নেই। শিশু আমেনা বেগম (১১) বলেন, আমি এক বাড়িতে ঝিয়ের কাজ করি। আমাকে তারা মাসে ২০০ টাকা দেয় আর খাবার দেয়। অথচ আমার ভাই চা দোকানে চাকুরি করে।

খাওয়াসহ তাকে মাসে ৮০০ টাকা হারে বেতন দেয়। কন্যা শিশুরা কর্মক্ষেত্রেও নানাভাবে বৈষম্যের শিকার। তারা অন্যদের চেয়ে কম মজুরী পায়। পারিবারিক এবং সামাজিকভাবে কন্যা শিশুদের মানসিক ও শারীরিক বিকাশের জন্যেও তেমন কোন সহায়ক পরিবেশের সুযোগ সৃষ্টি হয় না। বরং তারা নানা ধরনের নিরাপত্তাহীনতা, যৌন নির্যাতন ও হয়রানীর শিকার হয়।

শিক্ষার দিক থেকেও কন্যা শিশুরা পিছিয়ে রয়েছে। ঘোষবাগ ইউনিয়নের একরাম উদ্দিন বলেন, মেয়েরা বিয়ের পর অন্যের ঘরে চলে যাবে। এ ধারণা থেকে তাদের সাধারণত শিক্ষার প্রতি গুরুত্ব দেওয়া হয় কম। ১৯৯৮ সালের রিপোর্টকৃত খরচ অনুযায়ী ১০-১৯ বছর বয়সী ৪০৬ জন কিশোরীকে ধর্ষণ করা হয়। এ ছাড়া ঐ বয়সী ৪৫ জন এসিড নিক্ষেপ, ৮৭ জন অপহরণ ও ৪৮ জন যৌতুকের দায়ে নির্যাতনের শিকার হয়।

আত্মহত্যা করে ৭২ জন। শিশু অধিকার গুচ্ছ ও বাস্তবতা: জাতিসংঘ শিশু অধিকার সনদে বর্ণিত অধিকারসমূহকে সাধারণতঃ চারটি গুচ্ছে ভাগ করা হয়। সেগুলো হলো ১. বেঁচে থাকার অধিকার, এর মধ্যে রয়েছে জীবনধারনে সহায়ক মৌলিক বিষয়াদির অধিকার, যেমন স্বাস্থ্য সেবা, পুষ্টিকর খাদ্য, বিশুদ্ধ পানি এবং স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশ। ২০০০ সালের মধ্যে সবার জন্যে স্বাস্থ্য নিশ্চিত করার নিয়েছিল বাংলাদেশ। গ্রামাঞ্চলের শিশুদের স্বাস্থ্যের অবস্থা অত্যন্ত নাজুক।

প্রায় প্রতিটি শিশুই কমবেশী পুষ্টিহীনতায় ভুগছে। সাধারণ মানুষ থেকে জানা যায়, দারিদ্র্যতাই শিশুদের স্বাস্থ্যহানীর মূল কারণ। এ প্রসঙ্গে ফতেজঙ্গপুর গ্রামের আবুল বাসার বলেন, গ্রামের মানুষকে একবেলা খেয়ে আরেক বেলা না খেয়ে থাকতে হয়। ভিটামিন ‘এ’ এর অভাবে প্রতিদিন প্রায় ১০০ জন শিশু অন্ধ হয়ে যায় এবং অর্ধেকের বেশি অন্ধ হওয়ায় এক সপ্তাহের মধ্যে মারা যায়। ৬ থেকে ৭২ মাস বয়সের ১০ লাখ শিশু কম বেশি ভিটামিন-এ এর অভাবে ভোগে।

পশুরামপুর গ্রামে সরজমিনে দেখা যায়, গ্রামের অধিকাংশ শিশু ডায়রিয়া, নিউমোনিয়া, আমাশয়সহ নানাবিধ রোগে ভূগছে। বিকাশের অধিকার: বিকাশের অধিকারের মধ্যে আছে শিশুর শিক্ষার অধিকার, গড়ে উঠার জন্যে জীবনযাত্রার মান ভোগের অধিকার এবং অবকাশ যাপন, বিনোদন ও সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডে অংশগ্রহণের অধিকার। সরজমিনে পরিদর্শনে দেখা যায়, প্রয়োজনীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, শিক্ষক, উপকরণ, দারিদ্র্যতা, অভিভাকদের অসচেতনতা, শিবিখা কার্যক্রম যথাযথ বাস্তবায়ন না হওয়ায় শিশুরা শিক্ষার অধিকার হতে বঞ্চিত হচ্ছে। সোন্দলপুর ইউনিয়নের বড় রামদেবপুর গ্রামের বিদ্যালয় গমনোপযোগী অনেক শিশু শুধুমাত্র দারিদ্র্যতার কারণে বিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারছে না। এ গ্রামের ফজির আহম্মেদ বলেন, সারাদিন হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রম করে ৫০/৬০ টাকা পাই।

৬/৭ জনের সংসার তাদের খাবার যোগাতেই সবশেষ হয়ে যায়। তাই শিশুদের পড়াশুনা হয় না। একই বাড়ির লেদু মিয়ার মোট ৮টি ছেলে মেয়ে। লেদু মিয়া রিকশা চালায়। তাতে সংসার চলে না।

তাই লেদু মিয়া স্কুলে না পাঠিয়ে দুই ছেলেকে চা দোকানে কাজ করার জন্যে দিয়েছে। লেদু মিয়ার বড় ছেলে খোকনের সাথে আলাপে জানা যায়, তার পড়ালেখার খুব ইচ্ছে কিšদ তার বাবা তাকে পড়তে না দিয়ে চা দোকানে কাজ করার জন্যে দিয়েছে। জাতিসংঘ শিশু অধিকার সনদে শিশুর নিজের মতামত খোলাখুলীভাবে প্রকাশ করার এবং মতামতকে যথাযথ গুরুত্ব দেয়ার কথা বলা থাকলেও তা কার্যত প্রান্তিক পর্যায়ে লঙ্ঘিত হচ্ছে। ফলে শিশুরা তাদের শিক্ষার অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। সুরক্ষার অধিকার: এ অধিকারে আছে শিশুদের অধিকারসমূহ, যেমন উদ্বাস্তু শিশু, পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন শিশু এবং শোষণ, নির্যাতন ও অবহেলার শিকার হবার সম্ভাবনা রয়েছে এমন শিশু।

পরিত্যক্ত, অবহেলিত, অনাথ, সুস্থ ও আশ্রয়হীন শিশুদের উপযুক্ত পরিবেশ, ভরণ-পোষণ, শিক্ষা, প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসনের অধিকার রয়েছে। বানদত্ত মোহাম্মদী নুরানী হাফিজিয়া মাদ্রাসার ছাত্র রাসেলের সাথে আলাপে জানা যায়, তাদেরকে মাদ্রাসায় সকালে এক ঘন্টা, দুপুরে দু ঘন্টা ও সন্ধ্যায় এক ঘন্টা পড়ানো হয়। বাকী সময়ে মাদ্রাসার সবজী বাগানের কাজ, কখনো মাদ্রাসার উন্নয়নমূলক কাজ কখনো এতিমখানার জন্যে চাঁদা উঠাতে বাইরে থাকতে হয়। ফলে অনাথ শিশুরা এতিমখানায় সামান্য মাথা গোঁজার ঠাই পায়। এছাড়া তেমন কোন সুযোগ সুবিধা পায় না।

সমস্ত শিশু ঝুঁকিপূর্ণ পরিশ্রম, শোষণ এবং দুষিত পরিবেশের ভয়াবহতা হতে রক্ষার অধিকার রয়েছে। কিšদ আমাদের দেশের চলমান দরিদ্রতার জন্যে আমাদের শিশুরা সকল ঝুঁকিপূর্ণ কায়িক শ্রম ও অন্যান্য ভয়াবহ পেশায় জড়িয়ে পড়ছে। ১৯৬৫ সালের ফ্যাক্টরী আইনে ১৮ বছরের কম বয়সীদের যথাযথ নির্দেশনা, সতর্কতামূলক ব্যবস্থা ও তত্ত্বাবধান ছাড়া বিপজ্জনক মেশিনে কাজ করা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। ১৯৩৮ সালের শিশু নিয়োগ আইনে ১২ বছরের কম বয়সী শিশুদের নির্দিষ্ট কয়েক ধরনের কাজ করা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। যেখানে বিপজ্জনক কাজ করা হয়।

এগুলোর মধ্যে রয়েছে বয়ন, চামড়া পাকাকরণ, বিড়ি, সাবান, কার্পেট, ম্যাচ ও বি®েফারক তৈরির কাজ। নোয়াখালী সদর থানার চাপরাশিরহাটে একটি বিড়ি কারখানায় দেখা যায়, ৫ বছরের কম বয়সী শিশুরা কাজ করছে। ভ্যাপসা গরমে, বদ্ধ ঘরে বসে শিশুদের কাজ করতে খুবই কষ্ট হয়। এ প্রসঙ্গে কারখানার দায়িত্ব নিয়োজিত নাম না প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যক্তি জানান, গ্রামের মানুষ দরিদ্রতার কারণে তাদের ছেলে মেয়েদের কারখানার কাজে নিয়োজিত করে। বিপজ্জনক কাজে নিযুক্ত শিশুরা তাদের শিক্ষা, পরিশ্রম এমনকি অবকাশের অধিকার থেকেও বঞ্চিত হয়ে থাকে।

অংশগ্রহণের অধিকার: এর মধ্যে রয়েছে শিশুদের কথা শোনার অধিকার, অন্যদের সাথে সম্পর্ক গড়ে তোলার অধিকার এবং তথ্য ও ধারণা চাওয়া পাওয়া ও প্রকাশের অধিকার। বানদত্ত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চতুর্থ শ্রেণীর এক ছাত্রী জানায় আমরা যদি কোন কারণে একদিন বিদ্যালয় কামাই করি তাহলে আমাদের কোন কথা না শুনে শিক্ষকরা আমাদের প্রহার শুরু করে। শিশুদের কথা বলার অধিকার থাকলেও এ ক্ষেত্রে তাদের অধিকার লঙ্ঘিত হয়। গ্রামাঞ্চলের প্রায় প্রত্যেক শিশুকে তাদের পারিবারিক গন্ডীর ভেতর থাকতে হয়। তাই তাদের আগ্রহ থাকলেও তারা সবার সাথে সমানভাবে মিশতে পারে না।

ফলে তারা অংশগ্রহণের এ অধিকার থেকেও বঞ্চিত। শিশু অধিকার সনদ মূলনীতি ও বাস্তবতা: জাতিসংঘ শিশু অধিকার সনদে চারটি মুলনীতি রয়েছে। সেগুলো হলো বৈষম্যহীনতা, শিশুর সর্বোত্তম স্বার্থ, শিশুদের অধিকার সমুন্নত রাখতে পিতা-মাতার দায়িত্ব ও শিশুদের মতামতের প্রতি সম্মান প্রদর্শন। এ প্রসঙ্গে অশ্বদিয়া খো“োদপুর গ্রামের আলমগীর বলেন, শিশুদের শিক্ষা, মূল্যায়ন, øেহ সব কিছুই পরিবারের অর্থনৈতিক অবস্থার কথা বিবেচনা করেই হয়ে থাকে। অর্থনৈতিক অবস্থা ছাড়াও শিশুদের বিশেষ বৃত্তি, পুরস্কার প্রদান ইত্যাদি ক্ষেত্রে অনেক শিশু ধর্ম ও বর্ণের শিকার হন।

পিতা-মাতা, সংসদ, আদালত ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষসমূহ শিশু সম্পর্কিত যে কোন কর্মকান্ডে অবশ্যই সংশ্লিষ্ট শিশু বা শিশুদের সর্বোত্তম স্বার্থে পরিচালিত হবেন। শিশুদের উন্নয়নকে দিয়ে মূলত মানব উন্নয়নের সূচক নির্ধারণ করা হয়। শিশুর জন্মগ্রহণ পিতামাতার উপর বর্তালেও শিশুর বাকী অধিকার নিশ্চিত করার দায়িত্ব সরকারের। শিশু অধিকার ও জন্ম নিবন্ধিকরণ: শিশু অধিকার সনদে জন্মের পরপরই প্রত্যেক শিশুর নিবন্ধিকরণ করা একান্ত প্রয়োজন। ইউনিয়ন পরিষদ ও পৌরসভা এ দায়িত্ব পালন করে থাকে।

বড়রামদেবপুর গ্রামে অনেক পরিবার জন্ম নিবন্ধনের কথা জানেন কিšদ তাদের সন্তানদের নিবন্ধন হয়েছে কিনা তা অনেকেই জানেনা। শিশুদের অধিকারসমূহ রক্ষার জন্যে জন্ম নিবন্ধিকরণ একান্তই জরুরি। শিশুর নিবন্ধন থাকলে তাতে শিশুর জাতীয়তার অধিকার, অল্প বয়সে বিয়ে রোধ, সঠিক বয়সে স্কুলে গমন, ইত্যাদি সুবিধা পাওয়া যায়। ১৯৯৭ সালের জরিপ অনুযায়ী ১০ শতাংশ শিশুর জন্ম নিবন্ধন করা হয়, বাকীদের তা হয় না। শিশু সুন্দর জীবন নিশ্চিত করতে পারলেই সুন্দর একটি দেশের স্বপ্ন দেখা সম্ভব।

সেজন্যে শিশুদের শিক্ষা, চিকিৎসা, খাদ্য, বৈষম্যহীন আচরণ ইত্যাদি নিশ্চিত করতে হবে।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.