আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ছাত্র বিক্ষোভে শাহরিয়ার কবিরের ভূমিকা ছিল - গোপনে ইন্ধন আওয়ামী লীগের



তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিরুদ্ধে রাজপথে বিক্ষোভ সৃষ্টির জন্য আওয়ামী লীগের গোপনে ইন্ধন ও পৃষ্ঠপোষকতা দিয়েছে বলে গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে। কয়েকদিন আগে যে ছাত্র বিক্ষোভের ঘটনা ঘটেছে তার পেছনেও আওয়ামী লীগের ইন্ধন কাজ করেছে। আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর বিশ্বস্ত বলে পরিচিত ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির নেতা শাহরিয়ার কবির সম্প্রতি দিল্লি সফরকালে সেদেশের একজন গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রীর দিক-নির্দেশনা নিয়ে আসার পর আওয়ামী লীগ রাজপথে সরকার বিরোধী বিক্ষোভের পেছনে ভূমিকা পালন করেছে। গোয়েন্দাদের অব্যাহত অনুসন্ধান ও তদন্তে এসব তথ্য তারা পেয়েছে বলে জানা গেছে। গোয়েন্দা সংস্থাগুলো এই প্রেক্ষাপটে আগামীতে সরকারের বিরুদ্ধে রাজপথে আবারো বিক্ষোভ আন্দোলন সৃষ্টির আশংকা করছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, নিজ দলের যাদের এতোদিন বিশ্বস্ত মনে করতেন তাদের ওপর থেকে তার আস্থা হারানোর পর থেকে শেখ হাসিনা শাহরিয়ার কবিরকে সবচেয়ে বেশি বিশ্বস্ত মনে করছেন। বর্তমানে শেখ হাসিনা ও ভারতের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্কের মাধ্যম হিসেবে কাজ করছেন শাহরিয়ার কবির। তারই অংশ হিসেবে শেখ হাসিনার পক্ষে ভারতের সাহায্য আদায়ের জন্য আগস্টের প্রথম সপ্তাহে শাহরিয়ার কবির ভারত সফরে যান এবং আগস্টের দ্বিতীয় সপ্তাহে নয়াদিল্লিতে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রণব মুখার্জির সাথে বৈঠক করেন। ওই বৈঠকে শাহরিয়ার কবির শেখ হাসিনার মুক্তি এবং দেশে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে বাংলাদেশের বর্তমান সরকারের উপর ভারত চাপ সৃষ্টি না করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন বলে জানা যায়। জবাবে ভারতীয় মন্ত্রী পরোক্ষভাবে ভারত এ প্রশ্নে চাপ প্রয়োগ করে যাচ্ছে বলে তাকে আশ্বস্ত করেন।

সাথে সাথে পরামর্শ দিয়ে বলেন, এজন্য রাজপথে আন্দোলন বিক্ষোভ সৃষ্টির কোন বিকল্প নেই। এরপরই ২০ আগস্ট থেকে ছাত্র বিক্ষোভের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনার পেছনে শাহরিয়ার কবির বিভিন্নভাবে ভূমিকা পালন করেছেন বলে গোয়েন্দা সূত্র জানিয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, শাহরিয়ার কবির আওয়ামী লীগের নেতাদের বলেছেন, শেখ হাসিনার ওপর বর্তমানে ভারত নাখোশ। এ কারণেই ভারত হাসিনার মুক্তির ব্যাপারে বাংলাদেশের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করার কোন চেষ্টা করছে না।

একমাত্র ভারতীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রণব মুখার্জি ছাড়া আর কেউ আওয়ামী লীগকে সেভাবে সাহায্যে এগিয়ে আসছে না। ‘র’ প্রধান অশোক চতুর্বেদী ও বাংলাদেশে ভারতীয় দূতাবাসের উপ-হাইকমিশনার সর্বজিৎ চক্রবর্তী শাহরিয়ার কবিরকে জানান যে পাকিস্তানী গোয়েন্দা সংস্থা ‘আইএসআই’ আওয়ামী লীগ নেতা জাফরুল্লাহ ও সালমান এফ রহমানের মাধ্যমে হাসিনাকে নির্বাচনী ফান্ডের জন্য মোটা অংকের টাকা দেন। বর্তমান তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পূর্বে যখন আওয়ামী লীগ নিশ্চিত ক্ষমতায় যাচ্ছে-এমনটি মনে করার পরই ‘আইএসআই’ এ টাকা দেয়। ভারতীয় দূতাবাস কর্মকর্তা শাহরিয়ার কবিরকে বলেন, ‘আমরা শেখ হাসিনাকে বিশ্বাস করি না। তিনি ‘আইএসআই’ থেকে ২৫০ কোটি টাকা নিয়েছেন।

আমরা তাকে ৩০০ কোটি টাকা দিতে পারি কিন্তু ‘আইএসআই’ যদি তাকে ৩৫০ কোটি টাকা দিতে চায় তাহলে তিনি যে আমাদের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবেন না তার নিশ্চয়তা কোথায়। ’ সূত্রগুলো বলছে ‘র’ ও ভারত সরকার বর্তমানে আওয়ামী লীগের রাজ্জাক, তোফায়েল, আমু ও সুরঞ্জিতকে দলের শীর্ষ নেতৃত্ব পরিবর্তনের লক্ষ্যে পুরোপুরি সমর্থন দিয়ে আসছে। তারা হাসিনাকে পুরোপুরি সরিয়ে দেয়ার পক্ষে। গোয়েন্দা তথ্যমতে, শাহরিয়ার কবির বর্তমানে শেখ হাসিনার সাথে রয়েছেন। তার বিশ্বাস হাসিনাকে ছাড়া আওয়ামী লীগ ধ্বংস হয়ে যাবে।

সেজন্যই তিনি চতুর্বেদী ও চক্রবর্তীকে শেখ হাসিনাকে সমর্থন দেয়া এবং তাকে মুক্ত করার জন্য সরকারের উপর চাপ প্রয়োগ করার অনুরোধ করেন। তবে বর্তমানে একমাত্র প্রণব মুখার্জি ছাড়া আর সকল ভারতীয় নেতা, গোয়েন্দা সংস্থা আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব থেকে হাসিনার অপসারণ চায়। কারণ তিনি তাদের আস্থা হারিয়েছেন বলে বলা হচ্ছে। শাহরিয়ার কবিরের সাথে ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’-এর সম্পর্ক বর্তমানে ভালো যাচ্ছে না বলে একটি সূত্রে বলা হচ্ছে। ওই সূত্র মতে, শাহরিয়ার কবিরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটিকে ‘র’ ১৯৯৮ সাল থেকে ফান্ড দিয়ে আসছিল যা চলতি বছরের মার্চ মাস পর্যন্ত অব্যাহত ছিল।

ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির লাইব্রেরী স্থাপনসহ ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন’-এর নামে গৃহীত অন্যান্য কর্মসূচি বাস্তবায়নে ‘র’ এসব অর্থ দিয়েছে। কিন্তু ‘র’-এর নতুন প্রধান অশোক চতুর্বেদী দায়িত্ব নেয়ার পর সেই ফান্ড দেয়া বন্ধ করে দেন। তিনি খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন যে, ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি একটি অতি ক্ষুদ্র ও পকেট সংগঠন। সারাদেশে এই সংগঠনের উল্লেখযোগ্য কোন সমর্থক নেই। চলতি বছরের এপ্রিল মাস থেকে ‘র’ তাদের ফান্ড বন্ধ করে দেয়।

শাহরিয়ার কবির এ ব্যাপারে প্রণব মুখার্জির সাথে যোগাযোগ করেন। প্রণব মুখার্জি আগে থেকেই শাহরিয়ার কবিরকে নানাভাবে সমর্থন ও সহযোগিতা দিয়ে আসছিলেন। কিন্তু তার সাথে যোগাযোগ করেও ‘র’-এর সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করাতে পারেননি। সর্বশেষ শাহরিয়ার কবির নিজেই আবার কলকাতা হয়ে দিল্লি সফরে যান। তিনি প্রণব মুখার্জির সাথে বৈঠকের পাশাপাশি কয়েকজন বাম নেতার সাথেও সাক্ষাৎ করেন যারা শেখ হাসিনাকে গ্রেফতার করার পর বাংলাদেশ সরকারের কড়া সমালোচনা করেন।

তিনি তার সংগঠনের কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বাজেট থেকে ফান্ড পাওয়ার চেষ্টা করেন। - এদিকে ২০ আগস্ট এবং তৎপরবর্তী ছাত্র বিক্ষোভ ঘটনার সঙ্গে জড়িত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্র শোয়েব আক্তার গোয়েন্দাদের জিজ্ঞাসাবাদে ছাত্র বিক্ষোভের ঘটনায় চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছেন। জিজ্ঞাসাবাদে তিনি জানান, শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত সহকারী ড. হাসান মাহমুদ-এর সাথে ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আশরাফ এবং ছাত্রলীগ জগন্নাথ হল শাখার সভাপতি কবি সংকর-এর ২০ আগস্ট দুপুরে মোবাইলে কথোপকথন হয়। এই সময় তিনি বড় ধরনের আন্দোলন ও মিটিং-মিছিল, ভাংচুর করার জন্য বলেন। এছাড়া সরকারের পতন ঘটানোসহ দেশের সব জায়গায় আন্দোলন করার মাধ্যমে জরুরি অবস্থা ভাঙ্গার জন্য বলেন।

তাছাড়া ছাত্রলীগ নেতা গোলাম সরোয়ার কবীর ও আওয়ামী লীগের সিনিয়রদের সাথে কথা বলেন। ডাঃ দিপু মনি (মহিলা সম্পাদক আওয়ামী লীগ) সূর্যসেন হল শাখা ছাত্রলীগের সহ-সম্পাদক ও নাজমুলের সাথে মোবাইলে কথা বলেন এবং আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার জন্য আহবান জানান। একই সময় জাসদ নেতা হাসানুল হক ইনু, জাসদ ছাত্রলীগের সেক্রেটারী স্বপন এবং জয়েন্ট সেক্রেটারী সাজ্জাদের সাথে টেলিফোনে আলাপ করে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার জন্য আহবান জানান। শোয়েব আক্তার জানান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগ নেতা মিন্টু আকরাম , মিলন, আশরাফ ও নিরব দেশের জরুরি আইন প্রত্যাহার করার দাবিতে শিক্ষকদের সাথে আন্দোলনের ব্যাপারে একাত্মতা ঘোষণা করেন। আওয়ামী লীগ নেতা হাজী সেলিম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের সভাপতি সোহেল রানা টিপু এবং ছাত্রলীগের সেক্রেটারী সাজ্জাদ সাকিবকে ২০ আগস্ট ২০০৭ তারিখে নগদ টাকা প্রদানের ব্যবস্থা করেন এবং তা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হলে, ৫ জনের এক একটি গ্রুপকে ২০ হাজার টাকা করে দেয়ার জন্য বলেন।

আওয়ামী লীগ নেত্রীর প্রটোকল অফিসার জাহাঙ্গীর আলম ছাত্রলীগ নেতা কবি সংকরের সাথে টেলিফোনে কথা বলেন ও আন্দোলনের ব্যাপারে সব ছাত্রদের সাথে যোগাযোগ করার জন্য বলেন। ছাত্রলীগের সহ-সম্পাদক এনামুল হকও আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় নেতাদের সাথে আন্দোলনের ব্যাপারে কথা বলেন। জিজ্ঞাসাবাদে শোয়েব আক্তার জানান, আওয়ামী লীগ নেতা সৈয়দ আবুল হোসেন টেলিফোনে মিন্টুকে বলেন যে, আন্দোলন করতে হবে, গাড়ি ভাংচুর করতে হবে এবং অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করে সরকারের পতন ঘটাতে হবে। আরো জানা যায় যে, আওয়ামী লীগ নেত্রীর ব্যক্তিগত সহকারী ড. হাসান মাহমুদ ছাত্রলীগ নেতা টিপুর মাধ্যমে টাকা প্রদান করেন। ।

। ইত্তেফাক : ৩১.০৮.২০০৭ । ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.