দ্যা ব্লগার অলসো.....
মুখবন্ধ: ইহা একটি আধুনিক রুপকথা। বাস্তবের সাথে এর মিল না খুঁজিয়া গল্পটি পড়িয়া হাসিবার চেষ্টা করুন। কারন, হাস্য মানবজীবনের উত্তম সম্পদ।
‘কোন উপলক্ষ্য আছে ?’ নাটকীয় ভঙ্গিতে প্রশ্নটা করল প্রথমজন।
‘তার মানে?’ ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেল দ্বিতীয়জন ।
‘মানে আর কি, কোন কারণ ছাড়া তো আর বাঙালী মদ খায়না। ’
‘আসলে আপনি ঠিকই ধরেছেন ব্রাদার, কারণ একটা অবশ্যই আছে। ’
‘কি সেটা?’
‘আসলে আমি একজন কবি’ অনেকটা লাজুক গলায় বলল দ্বিতীয়জন।
‘অ্যাঁ!’ আশ্চর্যান্বিত গলায় বলল প্রথমজন। তারপর দ্বিতীয়জনকে আগাগোড়া দেখতে লাগল সে।
জিন্সের প্যান্ট পরনে, গায়ের টি-শার্টের উপর মাইকেল জ্যাকসনের ছবি, সেখানে লেখা-‘‘ড্যানজার’’। নতুন জমানার কবি, ভাবল সে, বলল-‘আচ্ছা, মানলাম আপনি একজন কবি, তো?’
‘বর্ষা নিয়ে একটা কবিতা লিখব। ’
‘ভালো কথা, কিন্তু তার সাথে মদের কি সম্পর্ক?’
‘একজন আমাকে বলেছে বর্ষা নিয়ে কবিতা লিখতে হলে সেরকম পরিবেশ দরকার। ’
‘কিরকম?’
‘অরিজিনাল বৃষ্টি এবং মদ। ’
‘কে বলেছে এই কথা, জানতে পারি?'
‘জি, ওনার নাম হিমু।
’
‘হিমু হোক আর দিমু হোক, সে যে প্রথম শ্রেণীর পাগল এবং বাংলাখোর তাতে আমার কোন সন্দেহ নেই। ’
‘কিন্তু একটু আগেই তো আপনি বললেন,- মনে জোশ আনার জন্য বাংলা মদের কোন বিকল্প নেই। ’
‘হ্যাঁ, তা অবশ্য সত্যি। ’
‘তাহলে আর কোন কথা নয়, শুরু হোক পান। ’
‘হ্যাঁ, শুরু হোক’।
‘চিয়ার্স ফর আওয়ার ফ্রেন্ডশিপ অ্যান্ড দ্য রেইন!’ বলল দ্বিতীয়জন।
‘চিয়ার্স!' সায় দিল প্রথমজন।
এরপর শুরু হল ভেসে যাবার পালা।
‘প্রথমে অল্প অল্প করে শুরু করতে হবে, বুঝলেন ব্রাদার, তারপর যেতে হবে গভীরে’ প্রথমজনের টিপস।
দ্বিতীয়জনের অবশ্য প্রথমে একটু সমস্যা হল, কিন্তু সে ওটা সহ্য করে নিল।
‘কেমন লাগছে ভায়া?’ প্রথমজনের প্রশ্ন।
‘অসাধারণ! এই বাংলা মদ আবিষ্কারককে ‘‘নোবেল’’ দেওয়া উচিৎ !’
‘কেন কেন, নোবেল কেন, অস্কার নয় কেন?’
‘কারণ নোবেল এমন একটি প্রাইজ যা কেবল ভালো কাজের জন্যই দেওয়া হয়। আর বিক্ষিপ্ত মনকে শান্ত করার জন্য এই জিনিসের জুড়ি নেই। সেক্ষেত্রে এই ভালো কাজের জন্য এর অবশ্যই নোবেল প্রাইজ পাওয়া উচিত। ’
‘যথার্থ বলেছেন ভায়া।
’ সায় দিল প্রথমজন।
তারপর কিছূক্ষণ কেটে গেল নীরবে।
‘কি উপলক্ষ?’
এবার ভ্যাবাচ্যাকা খাবার পালা দ্বিতীয়জনের। ‘মানে?’বলল সে।
‘মানে আপনার ব্যাপারটা কি, বললেন নাতো।
’
দ্বিতীয়জনের বুক চিরে বেরিয়ে এল দীর্ঘশ্বাস, বলল-‘কি আর বলব ভাই, যখন কুমার ছিলাম তখন কবিতা আমিও লিখতাম। ’
‘কুমার ছিলাম মানে, বিয়ে করেছেন নাকি ব্রাদার?’
‘আরে রাখুন ভাই, বিয়ে করেছি না বলে জিজ্ঞেস করুন শহীদ হয়েছি কিনা! আক্ষেপ ঝরল প্রথমজনের কন্ঠে, ‘জীবনটাকে নরক করে দিল হারামজাদী!’
‘কেন এরকম কথা বলছেন ভাই?’
‘শুনবেন কেন বলছি?’
‘আপনি বললে, অবশ্যই। ’
‘একটা উদাহরণ দিলেই বুঝতে পারবেন কেমন খান্ডারনী সে। বিয়ের দশদিন পরের কথা। নতুন বউ, তাকে মুগ্ধ করার জন্য নানান চেষ্টা করতাম।
কিন্তু সে যে আস্ত একটা জল্লাদ তার প্রমাণ আমি পেয়ে গেলাম ওইদিনই। সেদিন বৃষ্টি হচ্ছিল খুব। মনের মধ্যে খেলে গেল রোমান্টিক ভাবনা। বউকে ডেকে বললাম-‘ঝিনুক, চলো, আজ আমরা বৃষ্টিতে ভিজব,
তারপর ভেজা গায়ে একটা কবিতা লিখব। সেটা হবে পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর ভালোবাসার কবিতা।
’
‘হাউ রোমান্টিক! তারপর?’ দ্বিতীয়জন উৎসাহ দিল।
‘তারপর আমার বউ আমাকে বলল-‘শুনো, আমি বৃষ্টিতে ভিজবনা, কারণ বৃষ্টিতে ভিজে ব্যাঙেরা। আমার কাজ ঘর-সংসার করা , বৃষ্টিতে ভিজা নয়।
এক কাজ কর, তুমি ব্যঙদের মতো বৃষ্টিতে ভিজ, তার পর ব্যাঙদের ভাষায় একটা কবিতা লিখ, ঘ্যাঙর ঘ্যাঙ, ঘ্যঙর ঘ্যাঙ। দেখবে ওই কবিতা সবাই লুফে নেবে।
’
মুখ দিয়ে চুক চুক করে সহানুভুতিসুচক আওয়াজ করল দ্বিতীয়জন।
‘দুটো বছরে সে আমার মনের ভিতরের কবিটাকে একটু একটু করে খুন করেছে’ বলল প্রথমজন।
‘সো স্যাড’ দ্বিতীয়জনের মন্তব্য।
খানিক নীরবতা, ভাঙল দ্বিতীয়জন, বলল- ‘আচ্ছা ব্রাদার, পুরো বোতল শেষ করে ফেললাম কিন্তু মাথায় তো কিছুই আসছেনা। দ্বিতীয়জনের গলায় উষ্মা প্রকাশ পেল।
কথা জড়িয়ে আসছে ওর।
‘মনে হচ্ছে আপনাকে কোমায় যেতে হবে। ’
‘তাহলে হয়ে যাক দ্বিতীয় রাউন্ড, এবার আমার তরফ থেকে’ বলল দ্বিতীয়জন। ‘এই যে ভাই,’ মওলার উদ্দেশ্যে হাঁক দিল সে, ‘আরো দুই বোতল। ’
মওলা ভাবছে কি করে এই মাকুন্দা দুটোকে তাড়ানো যায়।
কাস্টোমারকে সরাসরি যেতে বলাটাও একজন দোকানির পক্ষে অশোভন। সে মদের বোতল দুটো টেবিলের উপর রেখে সটান হয়ে দাড়াঁল, তারপর তারপর তার স্বভাবজাত ভঙ্গিতে বলল-‘মহোদয়গণের প্রস্থান করিতে আজ্ঞা হউক। আমি দোকান বন্ধ করিব। ’
‘কেন বিরক্ত করছ বাওয়া,’ প্রায় মাতাল কন্ঠে বলল প্রথমজন ‘মাথাটা ঘুরতে
শুরু করেছে, এমন লাগছে যেন বেশ উপরে চলে গেছি, এর মানে কি জান তুমি? এর মানে হচ্ছে আমরা প্রায় কোমার কাছাকাছি চলে গেছি, আর তুমি বলছ যেতে?’
‘এই! তোমার নাম কি? তোমার নাম কি বল! আমি তোমার নামে প্রধানমন্ত্রীর কাছে নালিশ করব, যাতে তোমার দোকানের লাইসেন্স বাতিল করে। ’ দ্বিতীয়জন প্রায় পুরোপুরি ডাউন।
‘বল ভাই, তোমার নাম বল, এখন ওকে ঘাঁটানো ঠিক হবেনা,’ প্রথমজন পরামর্শ দেবার সুরে বলল। তারপর মওলার কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বলল-‘প্রধানমন্ত্রীর বেশ কাছের লোক’।
মওলা অভিজ্ঞ, ঝানু লোক। সে এখানে শুধু বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী নয়, জর্জ বুশের কাছের লোককেও দেখেছে। সে সিদ্ধান্ত নিল আরো কিছুক্ষণ এদের উৎপাত সহ্য করবে।
বলল-‘জি,অধমের নাম গোলাম মওলা। ’
‘কি!গোলমাল মওলা! এতো নাম থাকতে এই গোলেমেলে নাম কেন বাওয়া?’দ্বিতীয়জন কিঞ্চিত বিস্মিত, ‘নামটা কেমন যেন চেনা চেনা মনে হচ্ছে?’
‘তুমি চিনতে না পারলেও আমি ঠিকই চিনতে পেরেছি, এ শালা একাত্তরের ওই বদমাশটা; কি যেন নাম ওর? গোলাম......., দূর, মনে পড়ছেনা। যাই হোক, আমি নিশ্চিত, এ শালা ওই। জনগনের ভয়ে নাম পাল্টে বারটেন্ডারের ছদ্মবেশ নিয়েছে’ বলল প্রথমজন।
‘ও আচ্ছা, বাবা মওলা, তোমার বাপ-মা তোমার জন্য সহি নামই রেখেছিলেন।
তুমিতো পাকিস্তানিদের গোলামই ছিলে। আর এখন গোলামী করছ আমাদের । এখন মানে মানে কেটে পড়, আমরা আরো কিছুক্ষণ থাকব’। দ্বিতীয়জন বলল।
‘আচ্ছা, ঠিক আছে’।
ভেতরে ভেতরে ক্রোধে ফুঁসছে মওলা, কিন্তু চেহারায় মোটেও তার ছাপ পড়তে দিলনা।
(ক্রমশ..)
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।