এই জাহাজ মাস্তুল ছারখার, তবু গল্প লিখছি বাঁচবার। আমি রাখতে চাইনা আর তার, কোন রাত দুপুরের আবদার। তাই চেষ্টা করছি বারবার ...... সাতরে পাড় খোজার । ।
অনেকদিন পর আমার আড্ডা দেওয়ার সঙ্গী আকমল চাচা ফোন করলেন।
থাকেন সিলেটে। জমে থাকা গল্প শেষ হবার পর তিনি জানালেন “একজন কে পাঠাচ্ছি, দেখো তো কিছু করতে পার কিনা, খুব খুশি হব। ” ...... পাঠিয়ে দিতে বললাম।
ভেবেছিলাম কোন চাকুরি প্রত্যাশী দেখা করতে আসবে। রাকিবকে (ছদ্মনাম) দেখে আমি খুব অবাক হলাম।
১৮/২০ বছরের মায়া মাখা সভ্য শান্ত একটি ছেলে। একটি প্রাইভেট ইউনিভার্সিটিতে Electrical & Electronic Engineering (EEE) অধ্যায়নরত। বলল তার টিউশনি খুব দরকার। আমি আকাশ থেকে পড়লাম। আমার পক্ষে হয়তো ছোট খাটো চাকরি ব্যবস্থা করে দেওয়া সম্ভব ...... টিউশনি নামক শব্দের সাথে আমার সম্পর্ক নেই বহু বছর।
তাকে হতাশ করতে ইচ্ছে করল না। তাই আশ্বাস দিলাম এবং বললাম যোগাযোগ রাখতে । আসলে একজন ছাত্রের মাঝে যে সকল বৈশিষ্ট থাকার কথা তার সবই আছে তার মাঝে । নিজের বিলাসি এবং উশৃঙ্খল ছাত্রজীবনে কল্পনায় সর্বদাই রাকিবের মত সভ্য শান্ত হতে চেয়েছিলাম ...... পারিনি কখনো।
এরই মাঝে রাকিবের সাথে বড় ভাই - ছোট ভাই সম্পর্ক তৈরি হয়েছে।
জানতে পারলাম মধ্যবিত্ত পরিবারের বড় সন্তান সে। পাবলিক ইউনিভার্সিটিতে ভালো সাবজেক্টে চান্স না পেয়ে বাধ্য হয়েই প্রাইভেট ইউনিভার্সিটিতে তে ভর্তি হয়েছে। বাবাকে কথা দিয়েছিলো, ইউনিভার্সিটি ফি ব্যাতীত অন্য সব খরচ টিউশনি করে যোগার করবে। ৭ মাস কেটে গেলো, তার থাকা খাওয়ার খরচ এখনো বাসা থেকে নিতে হয়। ...... মা তাকে প্রতিদিন ফোন করে জানতে চায় ‘আর কতদিন বাবা’?
আমি অনেক চেষ্টা করেও ওর জন্য কিছু করতে পারলাম না।
রাকিবের অসহায় মুখ দেখে একদিন বললাম যতদিন টিউশনির ব্যবস্থা না করতে পারি, ততদিন তোমার হোস্টেল খরচ আমার কাছ থেকে ধার হিসেবে নিও, পরে পড়ালেখা শেষে যখন ভালো চাকুরি পাবে তখন শোধ করে দিও। ছেলেটা বড় বেশি আত্মমর্যাদা সম্পন্ন। তার চেহারাই বলে দিচ্ছে আমার এই প্রস্তাবে প্রচন্ডরকম বিব্রতবোধ করছে সে। ...... মাথা নিচু করে শুধু বলল আমাকে ২টা টিউশনি ব্যাবস্থা করে দিলেই আমার খুব উপকার হবে।
কান্নামাখা কন্ঠে গত শুক্রবার রাকিব আবার ফোন দিল।
বলল হয়ত এই মাস শেষে তাকে ঢাকা থেকে চলে যেতে হবে। তার বাবার পক্ষে আর কোনভাবেই প্রতিমাসে হোস্টেল ফি টাকা বহন করা সম্ভব না। ...... জানিনা আর কত রাকিবকে শুধুমাত্র থাকা খাওয়ার খরচের অভাবে ইঞ্জিনিয়ার হবার স্বপ্ন ধুলিস্যাত করে দিয়ে গ্রামে ফিরে যেতে হবে।
আমার এই লেখার একটি উদ্দেশ্য আছে। আমি টিউশনি যোগার করতে পারি নাই অসহায় এক ছাত্রের জন্য।
হয়তো পাঠকদের পরিচিত কারো গৃহশিক্ষক প্রয়োজন। ...... আমরা চাইলেই রাকিবকে ঢাকায় রাখতে পারি।
*** ছদ্মনাম ব্যাবহার করেছি কারন রাকিবের অর্থনৈতিক দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে পরিচিত বন্ধুবান্ধব যেন সামাজিকভাবে হেউপ্রতিপন্ন করতে না পারে। ***
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।