নিউইয়র্কে একটা অফিসে কাজ করি। আরো দুজন বাঙালী আছে। একজন রফি, দুজনে একই কামড়ায় বসি। লোকটা কেতাদুরস্ত, ক্লিন সেভ, পোষাক আসাক কথাবার্তা সবকিছু আমার সাথে মিলে। অমায়িক ভদ্রলোক।
কয়েদিনের মাঝেই সে আমার বন্ধু হয়ে গেল। আমারা অফিসশেষে যেখানে সেখানে যাই, কোন অনুষ্ঠান বাদ দেইনা। রফি সাহেব প্রতিটি অনুষ্ঠানে আনন্দফুর্তি করে মাতিয়ে রাখে। গান গায়, চুটকীতে সেরা। বিশেষ করে কৌতুক।
গান,শিল্পী, সিনেমা, রাজনীতি সবকিছুতে তার দখল আছে। এমনকি তার সাথে সাহিত্য নিয়েো আলোচনা হয়। পারিবারিকভাবে আমরা আরো কাছাকাছি এলাম। একজনের মনের কথা অকপটে আর একজনকে বলি। এমন একজন বন্ধু মিলা ভাগ্যের ব্যাপার।
একদিন অফিসে একটি রংনাম্বার এল। হ্যালো বলতেই অপর পাশ থেকে ঝরনার কলতান কলকল করে ভেসে এল। জিজ্ঞেস করল, অমুক আছে নাকি? বুঝলাম রং নাম্বার। মহিলার একসেন্ট শুনে বুঝলাম তিনি এশিয়ান বংশোদ্ভব। ঝরনার কলতান চালু রাখার যতগুলো কায়দাকানুন জানা ছিল সব কাজে লাগালাম।
শেষ পর্যন্ত কাজ হল। আমাদের ফোন নাম্বার আদান প্রদান হল।
এখন আমার কাজ হল অফিসে পৌছেই কোকিলকন্ঠিকে ফোন করা। চলে ঘন্টার পর ঘন্টা। সবচেয়ে আশ্চর্য হলাম যখন এই মধুর কন্ঠে বাংলায় কথা বলল।
তিনি বঙ্গললনা! জানলাম তার বাড়ী আমার পাশের জেলায়। তার অনেক গল্প কাহিনী শুনলাম। সকালে, দুপুরে, বিকেলে আলাপ চলল। এমনকি রাতে শুয়েো ঝরনার কলতান কানে বাজে। মানুষের কন্ঠস্বর এত মধুর হয়! "এখনো তারে চোখে দিখিনি, শুধু বাশী শুনেছি'।
না জানি দেখতে কত সুন্দর! কল্পনায় একটা ছবি একে নিলাম। তাতে আমার স্মৃতিপটে আঁকা কারোর পটলচেরা চোখ , কারোর উন্নত নাসিকা, করোর ঢেউখেলানো কুন্তল রাশি কোমর ছারিয়ে গেছে, দীর্ঘাঙ্গি বিধাতার এক অপূর্ব সৃষ্টি।
আনন্দে আকাশে ভাসছি। কিন্তু আমি ভুলে গেলাম আমার এই আকাশচারনা আমার বন্ধু রফিকে ধরশায়ী করবে। আমাদের সব কথা সে কান পেতে শুনে।
একদিন তো আমার হাত ধরে বলেই ফেলল, আমার সাথে পরিচয় করিয় দিননা। এমনভাবে বলল, যেন প্রয়োজনে পায়ে ধরতে প্রস্তত। ঠিক সেদিনই আমাদের এপয়েন্টমেন্ট হল। আগামীকাল অমুক জায়গায়, অমুক রেষ্টুরেন্টে, এতটার সময় আমাদের সাক্ষাত হবে। আহা কি আনন্দ! রফির এই কাকুতি দেখে বললম, চলুন আমার সাথে কাল বিকেলে, সাক্ষাত পরিচয় করিয়ে দিব।
তখন রফির যে কি আনন্দ! আমার সাথে সেো আকাশে উড়ছে। তার চোখগুলি চিক চিক করে উঠল।
পরদিন রফি খুব ভাল পোষাক পরে এল। গায়ে আতরের খুশবু, চোখে একটু ছুরমার প্রলেপ। অফিসশেষে আমরা রোয়ানা দিলাম অভিসারে।
অভিসার! প্রেমলীলা ,, বৃন্দাবন গাথা অই প্রণয়স্বপন! কল্পনা আজ বাস্তবে ধরা দিবে!
আমরা ঠিক সময়ে ঠিক জায়গায় গিয়ে পৌছলাম। কিন্তু সুন্দরি কোথায়! এই তো সেই রেষ্টুরেন্ট, এর সামনে এই প্রসপেক্ট পার্কের কোনে সে থাকবে। হাতে থাকবে একটা লাল রংএর ব্যাগ, পরনে হাল্কা গোলাপী সার্ট, আর সবুজ পেন্ট! শুধু এক্জন মহিলাই তো সেখানে দেখা যায়। একজন আফ্রিকান মহিলা মানে নিগ্রো। কোকিলকন্ঠি সুন্দরি কোথায়! কিন্তু পোষাক আসাকে তো মিলে।
রফিকে বললাম, বলুন তো এখন কি করা যায়? নাকি আমাকে ডজ দিল? রফি বলল, এ মহিলাকে জিজ্ঞেস করলে কেমন হয়?
আরে না, এ তো নিগ্রো মহিলা। সাইজ তো চার ফুটের বেশি হবেনা। আর এতো বাঙালি নয়। তাকে জিজ্ঞেস করে লাভ কি?
রফি বলল, তারপরো জিজ্ঞেস করতে অসুবিধা কি? আপনি দাড়ান, আমি জিজ্ঞেস করে আসি। বলে সে এগিয়ে গেল।
দেখলাম ইনিই তিনি। দুজনে হেসে হেসে কথা বলছে। রফি আমাকে হাত নেড়ে কাছে ডাকল।
আমি বললাম, আপনারা কথা বলুন। বলে দে দৌড়।
পরে শুনলাম রফি তার বাসায় গিয়েছিল, অনেক রাতে ঘরে ফিরেছে। এ মহিলার সাথে তার সম্পর্ক বহুদিন চলল।
তখনো জানিনা এই রফিটা কে? দুবছর পর সাইদী নিউইয়র্ক এল। তার বক্তৃতার বিরোধিতা করতে গিয়ে দেখি রফি সাইদির সাথে সাথে। মনে করলাম োয়াজ শুনতে এসেছে বোধ হয়।
পরে জানলাম রফি জামাতের রোকন। নিউইয়র্কে জামাতের সব কর্মকান্ডে তার প্রধান ভুমিকা।
ইদানিং দেখলাম তার দাড়ি পেট ছাড়িয়ে গেছে। কিন্তু পাঁচ বছরে আমি তাকে চিনতে পারিনি। কেউ জানেনা তারা কিভাবে মুখোশ পরে আছে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।