(একটি গল্প)
প্রথম পর্ব
আমার নামের পদবীটা শুনলে কারো কাছে মনে হবে বেহেস্তি একটা ফুরফুরে হাোয়া আশেপাশে আনাগোনা করছে। যারা বেহেস্তে সিট পাবার জন্য সর্বদা ব্যস্থ থাকে তারা এই পদবীটাকে যথেস্ট সমীহ করে, প্রয়োজনে জান দিতে রাজি। কারন বেহেস্তে গেলে অনেক .. পাোয়া যায়। তাদের কাছে এই পদবীধারীরা খুব কিমতি চিজ।
জেদ্দা শহরটা তখন কাজ শুরু করেছে।
বস্তি থেকে রাজপ্রাসাদ। আমরা মিসকীন দেশের মিসকীনরা তখন সবে কামলা দিতে শুরু করেছি। আমি মিসকীন যখন পৌছলাম তখন কয়েক হাজার বংগজ কামে পুরানা হয়ে গেছে। পৌছে দিশেহারা। কোথায় যাব, কার কাছে, রাস্তার নাম নেই, বাড়ীর নাম্বার নেই।
থাক সেসব। আমার প্রয়োজন একটা কাজ। কাজ হয়েই গেল। একটা কোম্পানীর ম্যানেজার। খবরটা ছড়িয়ে গেল।
দূতাবাস পর্যন্ত। জেদ্দায় একমাত্র বাঙালি ম্যানেজার, প্রথম বাঙালী ম্যানেজার। অনেকেই আসে। কেউ আসে অভিনন্দন জানাতে, কেউ আসে সালাম জানাতে, কেউ আসে সালাম দিতে আর কেউ আসে এই ভাগ্যবানকে এক নজর দেখতে।
অফিসের সময়সূচী সকাল নয়টা থেকে একটা, বিকেল পাঁচটা থেকে রাত নয়টা।
অফিস শুরু করেই দেখলাম অনেক দেশের অনেক কর্মচারি। তার মাঝে বেশ কিছু পাকিস্তানি। বেশিরভাড় আফ্রকান। স্থির করলাম এখন থেকে আর কোন দেশি এই কোম্পানীতে আসেত পারবেনা। এক সপ্তাহের মাঝে কাম করেই ফেললাম।
দুজন বাংগালি নিয়োগ দিলাম। সুনাম আরো ছড়িয়ে গেল। একদিন নয়টায় অফিসশেষে বের হতেই দুজন সুফেদ বস্ত্র পরিহিত মানে বেহেস্তি পোষাক পরিহিত মানুষের সামনে পড়লাম। একজনের মাথায় একটা রুমাল যা বাংলাদেশীরা হজ্ব করার পর হাজীর আইডি হিসেব ব্যবহার করে থাকেন সেটা পেচানো। তার উপর আবার সৌদি চাক্কিটা বেধেছে।
মনে করলাম নিশ্চয়ই সৌদি, মালিকের কাছে এসেছে হয়ত। সালাম দিয়ে সামনে দাড়াতেই বুঝলাম আমার কাছে এসেছে। আমার ভুল ভাঙল যখন একজন সালাম দিয়ে বাংলায় বলল "স্যারের নাম শুনে দেখা করতে এলাম, ভাল আছেন তো স্যার?" ভদ্রতার খাতিরে এই বিদেশে তাদের সাথে কিছু কথা বলতে হয়। কোথায় থাকেন, কতদিন এদেশে এসেছেন ইত্যাদি। প্রথম পর্ব শেষ হতেই দ্বীতিয় জন বলল,"স্যার যদি বেয়াদপি না নেন তাহলে একটা কথা বলব, কিন্তু সাহস পাচ্ছিনা।
"
কি কথা বলুন।
আমাদের এই গরীবের বাসায় যদি একদিন পদধূলি দিতেন!
এই কথা! এখন তো খুব ব্যস্ত। পরে একদিন দেখা যাবে।
সেই থেকে শুরু হল তাদের আসা যাোয়া। কবে তসরিফ নিতে পারব শুধু দিনক্ষনটা জানার জন্য।
তারা ধরে নিয়েছে আমি তাদের বাসায় তসরিফ নিব।
তারপর একদিন বললাম, আগামী বৃহস্পতিবার অফিসশেষে আপনাদের বাসায় যাব। বৃহস্পতিবার অর্ধ দিবস অফিস। সেই বৃহস্পতিবার অফিস থেকে বেরিয়ে দেখি তারা দুজন নয়, পনের বিশজন, গাড়ী একটা নয় ছয়টা গাড়ী। সব পুরনো গাড়ী।
সবাই লাইন ধরে একে একে এসে সালাম দিয়ে নিজের নাম বলল। তারপর যে গাড়ীটা একটু দেখতে কম পুরনো মনে হয় তাতেই আমাকে বসতে বলল। গাড়ীতে বসতেই চলল বাব মক্কার দিকে। পেছনে চলল না মানে আমি বাদশা আকবর, প্রজা দর্শনে যাচ্ছি, তাই গার্ড অব অনার দিয়ে নিয়ে যাোয়া হচ্ছে।
এই পদধুলির পেছনে অনেকগুলো কারন থাকতে পারে।
প্রথমত আমার পদবী শুনে তারা ভেবেছ আমি তাদেরই লোক। কাজেই এতবড় একজন ম্যানেজারকে তাদের বাসায় নিতে পারা মানে বিরাট ব্যাপার। বুক ফুলিয়ে বলা যাবে দেখ, আমাদের লোক কোন পদে আছে! দেখ আমাদের লোক আল্লাহর খাস বান্দা। আর আল্লাহর নিয়ামত নাজিল হয় আল্লার খাস বান্দাদের উপর। দ্বীতিয়ত এনোসি।
তখন এনোসির ব্যাপারটা ছিল আকাশের চাঁদ। একজন ম্যানেজার ইচ্ছে করলে যে কোন সময় দুচারটা এনোসি দিতে পারে। এনোসি মানে ভিসা। আসলে পারে কি পারেনা সেটা বড় কথা নয়। সাধারন মানুষের এই ধারনা।
(আর ইচ্ছে করছেনা, সময় লাগবে, চলবে)
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।