স্বপ্ন দেখতে ভালোবাসি । তবে স্বপ্ন দেখা নিয়ে কিছুদিন যাবত একটা সমস্যা হয়ে গেছে । নতুন দেখা স্বপ্নগুলো কেন যেন পূরণ হচ্ছে না খুব শীঘ্রই এই সমস্যা কেটে যাবে এই আশাতেই আছি । হায়রে নাম !
বহু মাজারে দৌড়া-দৌড়ি, মানতের পর যে ছেলেটি দুনিয়াতে আসল খালিদ বিন ওয়ালিদের নামানুযায়ী ডাক নাম রাখা হলো খালিদ । রাখলেন ছোট চাচা ।
মুসলমান হিসেবে শুরুতে মোহাম্মদ আর শেষে বংশের নাম সহ পুরো নামটা শেষ পর্যন্ত গিয়ে যা দাড়ালো তা মোটামুটি মেগা সাইজেরই বলা যায়, মোঃ খালিদ রহমান গাজী । শেষের অংশটার বন্ধুদের কল্যানে মাঝেমাঝে মেয়েদের সামনে বদলে গিয়ে নতুন রুপে আবির্ভূত হয়ে মনে বিভীষিকা ছড়ানোর কারণ হয়ে গেলো । এর জন্য দোষ আসলে আমারই । অন্যদের যে নেড়ি, গিট্টু, ময়ূরী ,মেনা টাইপ দুর্ধর্ষ নাম দিয়ে বা সবার কাছে তুমুল জনপ্রিয় করতে অগ্রনী ভূমিকা রেখেছে তাকে অন্যরা ছাড়বে কেন? দেখতে দেখতে ক্লাস টেনে উঠে গেলাম । এস. এস. সি পরীক্ষার রেজিস্ট্রেশনের সময় নামের অক্ষর ধরে ধরে গোল্লা ভরাট করতে করতে আমি তো একেবারে টায়ার্ড! বন্ধু - বান্ধবদের কত্তো সুন্দর ছোট ছোট নাম - আসিফ ইকবাল, সাজিদুল ইসলাম, রফিকুল ইসলাম, রিফাত আহমেদ; লেখা শুরু করে OMR শিটে দুই একবার কলমের খোঁচা দিতে না দিতেই নাম লেখা শেষ ।
আর আমার মাশআল্লাহ্ স্পেস সহ টোটাল ঘর লাগলো ২১ টা!! কপাল ভালো মোহাম্মদকে ইংরেজিতে সংক্ষেপে " Md " দিয়ে বোঝানো যায়, না হলে খুব সম্ভবত দুইটা OMR শিট একসাথে জোড়া দিয়ে নাম লিখতে হতো , একটাতে আটতো না ।
নামটা সুন্দর সন্দেহ নেই , সব বয়সের উপযোগীও নিঃসন্দেহে ( ভাবুন তো ৮০ বছরের কোন বুড়োকে আমরা ডাকছি জনি, সোহাগ, পাভেল , রাব্বি , অন্তর অথবা কোন বুড়িকে পিয়া, নিপা , কাব্য ,টুশি বা রিমি! একটু কেমন কেমন লাগে না?) । কিন্তু আমার ভোকাল কর্ডেই হোক কিংবা অন্যজনের কান দেড় ব্যাটারি হওয়ার জন্যেই হোক কেউ একবারে এ নাম বুঝে না । মানুষ যখন নাম জিজ্ঞেস করে তখন স্বভাবসুলভ "বিনম্রতায়" " মিষ্টি করে " ভারী গলায় জবাব দেই,
- খালিদ ।
- কি!?
- জ্বী আংকেল , খালিদ।
- ও আচ্ছা, খালেদ । সুন্দর নাম ।
- আংকেল খালেদ নাতো, খা লি দ ( নিঃশ্বাস থামিয়ে , আস্তে আস্তে ফুসফুসের বাতাস ছেড়ে , আরবি হরফের মতো একেক বর্ণে একেক মাপের প্রসার দিয়ে , গলার মিষ্টিনেসর বদলে খড়খড়নেস এনে ) !!!
- ও আচ্ছা আচ্ছা , খালিদ খালিদ ।
ফেসবুকে তো আর মুখে বলতে হয় না । তবুও এখানেও সেই একই ব্যাপার ।
রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় প্রায় রুটিন করেই শুনি কে যেন চিৎকার করে মোটামুটি আকুল স্বরে ডাকছে, " ঐ খালিদ " । আমাকে কার এতো দরকার জানতে পিছন ফিরে দেখি কেউ একজন কোন এক রিকশাওয়ালার সাথে ভাড়া দরদাম করছে । ডাকটা আসলে ছিলো .............বুঝতেই পারছেন ।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষার ভাইভা দিতে গেছি । রুমে ঢোকার আগে ছাত্রলীগের এক **** অহেতুক বাজে ব্যবহারে মেজাজ খুবই খুবই খারাপ ।
ডিসিশন নেয়া হয়ে গেছে এই ফাজিল জায়গায় পড়ার প্রশ্নই আসে না । একলাখ টাকা স্কলারশিপ দিলেও না । কাজেই ভাইবা যত তাড়াতাড়ি শেষ করে চলে আসা যায় আমার চিন্তা সেদিকে । ভাইভার স্যারও শুরু করলেন নাম দিয়েই ।
- কি নাম আপনার?
- স্যার , খালিদ ।
- কি নাম??
ভাবলাম স্যারের ঘটনাও বোধহয় সবার মতোই । বিরক্তি চেপে উপরের মেথড ফলো করে বললাম,
- জ্বী স্যার , খা লি দ!!
- ঠিক মতো বলেন ।
বুঝলাম শুধু ডাকনাম বলায় স্যারের পছন্দ হয়নি । এতো সুবিশাল নাম বলা ঝামেলা । তাই বুদ্ধি করে আরেকটু বাড়িয়ে বললাম ,
- খালিদ রহমান ।
স্যার দেখি তবুও সন্তুষ্ট না । Enrollment এর লিস্টে চোখ বুলিয়ে বললেন
- Are you sure about that? আমি তো অন্য নাম দেখতে পাচ্ছি ।
আজব!আমার নাম নিয়ে আমি সিউর কিনা তা জানতে চেয়ে আমাকেই প্রশ্ন? আমার নাম আমার থেকে তিনি ভালো জানেন নাকি!! বাধ্য হয়ে আরেকটু ডিটেইলসে যেতে হয়,
- মোঃ খালিদ রহমান ।
স্যার এবার আর কিছু না বলে চশমার উপর দিয়ে তাকিয়ে থাকলেন । আমি হাল ছেড়ে দুই কাঁধ ঝাঁকিয়ে জবাব দিয়ে চেয়ারে প্রায় আধশোয়া হয়ে গেলাম ।
- Sir, My name is Mohammad Khalid Rahman Gazi.
ইন্টারভিউ টাইম নাম জানতে জানতেই অর্ধেক শেষ । প্রশ্নকর্তা উত্তরদাতার বুদ্ধিমত্তার ব্যাপারে সন্দিহান ও হতাশ আর উত্তরদাতা বিরক্ত ও রাগে দাঁত কিড়মিড় করার মতো ক্ষুব্ধ । ইন্টারভিউ রুমে স্যার আমাকে আর বেশিক্ষণ আটকে রেখে কষ্ট দেননি ।
এমন ঘটনা আরো আছো । সেসব না টেনে বরং এখানেই থামি........এই বিশাল নাম রচনা আমার সেই সব বাস্তব জীবনে পরিচিত ও ফেসবুকের মানুষদের উৎসর্গ করা হলো যারা হয় বয়রা অথবা কানা :/ . অভিনন্দন আপনাকেও , কারণ আপনার ধৈর্য রবার্ট ব্রুসের মতো না হলেও কাছাকাছি পর্যায়ের ।
( এখানে উল্লেখিত নামগুলোর কোনটার সাথে নিজের নামের মিল খুজেঁ পেলে তার জন্য যিনি খুজেঁছেন তিনিই পুরোপুরি দায়ী ) ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।