২য় পর্ব
এক সময় গাড়ীবহর এসে থামল একটা একতলা বাড়ীর সামনে। এটাকে দালান বলা যায়না, আবার কাচা ঘর ো বলা যায়না। বড় বড় এক প্রকার ইট তৈরি হয় এদেশে। সেই ইট দিয়ে দেয়াল করা হয়েছে তবে আস্তরের কাজ করার সময় নেই। ভেতরেো তাই।
দেয়ালের উপর টিন - একচালা যাকে বলে। আমার বাংগালি ভাইয়েরা ঘুমান নীচে বিছানা করে। এটা সৌদি স্টাইল। বসতে হয় নীচেই। কারো কোন অসুবিধা হয়না কারন সবাই এখন সৌদি পোষাক পরে সৌদি হয়ে গেছে।
কিন্তু আমি প্যান্ট সার্ট পরি। বসব কিভাবে? তাই আমার জন্য একটা চেয়ারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। যেন দিল্লার বাদশা আকবরের সিংহাসন। একজন বলল, চেয়ারে তসরিফ নিন মেহেরবানী করে। আমি তসরিফ নিলাম।
তাকিয়ে দেখলাম পাশে আর একটা রুম আছে। আমি বসতেই সকলে মাদুরের উপর বসল। বসে আমার চেহারা মোবারকের দিকে তাকিয়ে রইল। আহা, আমাদেরই লোক! কেমন নূরানী চেহারা! সবাই অপেক্ষা করছে আমার মুখের অমৃত বাক্য শোনার জন্য। ঠিক এসময় পাশের রুম থেকে একজন এসে বলল, সব রেডি।
স্যারকে নিয়ে আসেন। আগে খাবার তারপর গল্প।
পাশের রুমে গিয়ে দেখি বিরাট ব্যাপার। একটা মাঝারি সাইজের টেবিল। ভর্তি।
কত রকমের আয়োজন। বাঙালি, সৌদি খাবার মিলে মহা জজ্ঞ ব্যাপার। সেই চেয়ারটা এখানে নিয়ে এল একজন। খুব তাজিমের সাথে চেয়ারটা বসিয়ে হাত কচলিয়ে বলল, স্যার তসরিফ নিন। আমরা এখানে সবাই বেচেলর।
এমন কিছুই করতে পারিনি আপনার যোগ্য সন্মান দেখানোর জন্য। যা করতে পেরেছি তাই একটু মুখে দিবেন। আমি বসলাম। দুজন দুপাশে দাড়োয়ানের মত দাড়িয়ে রইল পরিবেশন করার জন্য। সবাইকে এক সাথে বসতে বললাম।
কয়েকজন বসল। মাদুরের উপর মেজেতে। আর বাকীরা বলল, আমরা পরে খাব।
খাোয়া চলল। দুজন দুপাশ থেকে পরিবেশন করছে, টেবিলের োপাশ থেকেো কেউ কেউ বলছে, খাশির গোসত আর একটু দাো, স্যার কেমন হয়েছে? এটা আর একটু দিই? এটা একটু নিন ইত্যাদি দেখে মনে হচ্ছে তারা পারলে আমাকে চামচ দিয়ে খাইয়ে দেয়।
কারন আমি তাদেরই লোক। আমার পদবীর সাথে মিলে যায়। এই পদবীর সেবা করলে দুনিয়া আখেরাতের মঙ্গল। তারা তা করতে পারছে। তাদের সকলের চোখে মুখে খুশির ঝিলিক।
আমি এক একটা গ্রাস মুখে দিই আর তাদের চোখ নেচে উঠে। এক সময় খাোয়া শেষ হল। হাত ধুতে হবে। দেখলাম একজন একটা জগে পানি নিয়ে দাড়িয়ে আছে। কারন তাদের এখানে হাত ধোয়ার বেসিন নেই।
আর একজন এগিয়ে এল সাবান নিয়ে। একজন পানি ঢালছে আর একজন সাবান লাগিয়ে দিচ্ছে। হাত ধোয়া শেষ হলে সোজা হয়ে দাড়াতেই দেখি আর একজন তোয়ালে হাতে দাড়িয়ে আছে। আহা আমি বাদশা আকবর। প্রজা দর্শনে এসেছি!
তারপর ফিরে এলাম প্রথম রুমে।
চেয়ারটা আবার এখানে আনা হল। আমি দিল্লীর বাদশা সিংহাসনে বসলাম। আমার প্রজারা সকলে মেজে বসে আমার পবিত্র মুখপানে চেয়ে রইল। অমৃত বাক্য শ্রবনের আশায়।
কয়েক মুহুর্ত নীরবতা।
নীরবতা ভেংগে একজন বলল, স্যার যদি কিছু মনে না করেন তাহলে একটা কথা জিজ্ঞেস করব!
বলুন, কি বলবেন!
শুনেছি আপনি এর মধ্যেই দুজন বাঙালির চাকরি দিয়েছেন। এখন কি আর কোন লোক নিবেন? আমার কাজ নাই আজ দেড় মাস।
না, আপাতত কোন পজিশন খালি নেই।
আর একজন জিজ্ঞেস করল, স্যারের কি ব্যারিষ্টার সাহেবের সাথে পরিচয় আছে?
কোন ব্যারিষ্টার?
ব্যারিষ্টার আখতারউদ্দিন!
ষ্টেট ব্যাংকের লিগেল এডভাইজার ছিল সেই আখতারউদ্দিন?
জ্বি, জ্বি!
ঐ রাজাকারের কথা বলছেন? এই কুত্তার বাচ্চার সাথে আমার পরিচয় থাকবে কেন? এই কুত্তার বাচ্চা কত লোক খুন করেছে জানেন! তার কারনেই সৌদি আরব এখনো বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয় নাই। সে পাকিস্তানি পাসপোর্ট নিয়ে এদেশে এসে বড় চাকরি জুটিয়ে নিয়েছে।
তার সাথে আরো কয়েকটা রাজাকার যোগ হয়ে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে কাজ করছে। তারা বাংলাদেশের শত্রু, বাঙালির শত্রু!
সবাইর মুখ কালো হয়ে গেল! পিন ড্রপ সাইলেন্ট! মনে হল এই কামড়ায় যতগুলো মানুষ আছে সব মারা গেছে। হঠাত বজ্রপাতে। একি করলাম! এতগুলো মানুষ খুন করে ফেললাম! একটা কথা দিয়ে! এত স্বাধ করে, চেষ্টা করে আমাকে তাদের আপন করার সব চেষ্টা শেষ হয়ে গেল এক মুহুর্তেই! সকলের দৃষ্টি এমনিতেই নীচের দিকে চলে গেল। কেউ কারো সাথে কথা বলছেনা।
তাদের ভাষা হারিয়ে গেছে! কয়েক মিনিট বসে রইলাম চুপচাপ। আর কি কথা বলব খোজে পাচ্ছিনা। পেলেো তারা জবাব দিবে কিনা কে জানে! এতবড় আয়োজন মুহুর্তে ভেস্তে গেল!অতিথি আপ্যায়নকারি অতিথির সাথে কথা না বললে কতক্ষন অপেক্ষা করা যায় তা না জানার কারনে আমি উঠে দাড়ালাম। বললা, আপনাদের আথিতেয়তার জন্য অনেক ধন্যবাদ। এখন আসি!
কোন উত্তর নেই! গাড়ীবহরের সবকটা গাড়ী পাশাপাশি পার্ক করা আছে দেখলাম।
আমি পদব্রজে বড় রাস্তায় এসে পৌছলাম। আমার পাশে কেউ নেই।
তাদের সাথে আর কোনদিন সাক্ষাত হয়নি। পরি শুনেছি তাদের সবাইকে চাকরি দিয়েছে তাদের রাজাকার লিডার আখতারউদিদন।
বি:দ্র: এই কোম্পানীতে এক পাকিস্তানি বাংলাদেশে ছিল পাকসেনা।
যুদ্ধের সময় লুট করা স্বর্ন পাচার করতে পারেনি। মাটির নীচে পুতে রেখে সারেন্ডার করেছিল। আমার নামের পদবী দেখে সে সেই স্বর্নের খবর দেয় ভাগভাগি করার জন্য। এটা দেখতে পাবেন 'গুপ্তধন' নামে একটি গল্প। পাবেন: সদালাপ.কম
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।