আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

গ্রামীণের ৭ প্রতিষ্ঠানের দাবি সঠিক নয়: এনবিআর

বৃহস্পতিবার এনবিআর কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে গোলাম হোসেন বলেন, “গ্রামীণ ব্যাংকের সহযোগি সাতটি কোম্পানি কর রেয়াত বিষয়ে যে বক্তব্য দিয়েছে তা সঠিক তথ্যনির্ভর নয়। ”
গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক থাকাকালে নোবেল বিজয়ী মুহাম্মদ ইউনূস অনিয়ম ও ক্ষমতার অপব্যাবহারের মাধ্যমে আয়কর অব্যাহতি নিয়েছেন অভিযোগ করে তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে মন্ত্রিসভা।   
গত সোমবার ওই সিদ্ধান্তের পর অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, ইউনূসের বিভিন্ন কোম্পানি গ্রামীণ ব্যাংকের নাম দিয়ে আয়কর সুবিধা নিয়েছে, অথচ আয়কর দেয়নি।
কর সংক্রান্ত এই অনিয়মের বিষয়ে গ্রামীণ ব্যাংকের কাছে ব্যাখ্যা চাওয়া হবে বলেও এনবিআরের পক্ষ থেকে আগেই জানানো হয়।
এই প্রেক্ষাপটে বুধবার ওই সাত কোম্পানির পক্ষ থেকে যৌথ বিবৃতিতে দাবি করা হয়, বেআইনি কর রেয়াত সুবিধা নেয়ার যে অভিযোগ তাদের বিরুদ্ধে আনা হয়েছে, তা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন।


নিয়মিত আয়কর রিটার্ন দাখিলের পাশাপাশি নিয়ম অনুযায়ী কর দেয়ার কথাও দাবি করা হয় ওই যৌথ বিবৃতিতে।
প্রতিষ্ঠানগুলো হলো- গ্রামীণ মৎস্য ও পশুসম্পদ ফাউন্ডেশন, গ্রামীণ ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্ট লিমিটেড, গ্রামীণ কমিউনিকেশন্স, গ্রামীণ শক্তি, গ্রামীণ উদ্যোগ, গ্রামীণ ট্রাস্ট ও গ্রামীণ কল্যাণ।
এনবিআরের সংবাদ সম্মেলনে প্রতিষ্ঠানগুলোর দাবি নাকচ করে গোলাম হোসেন বলেন, “আইন অনুযায়ী কর দেয়ার বাধ্যবাধকতা থাকলেও তারা তা দেয়নি।
এসব প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন সময়ে আয়কর ছাড় নিলেও যেভাবে তা নেয়া হয়েছে- তা ঠিক হয়নি বলে উল্লেখ করেন এনবিআর চেয়ারম্যান।
গ্রামীণ মৎস ও পশুসম্পদ ফাউন্ডেশন সম্পর্কে গোলাম হোসেন বলেন, প্রতিষ্ঠানটি বিভিন্ন করবর্ষে দাখিলকৃত রিটার্নে আয়ের উৎস হিসেবে মৎস্য, কৃষি, পশুসম্পদ খাত ও ব্যাংক সুদকে দেখিয়েছে।


“মৎস্য ও পশু সম্পদ খাতের আয় শর্ত সাপেক্ষে করমুক্ত হলেও কৃষি খাত ও ব্যাংক সুদ আয়ের ওপর আয়কর প্রযোজ্য থাকলেও করদাতা তা প্রদান করেনি। এছাড়া করদাতা নির্ধারিত সময়ের ১০ শতাংশ সরকারি বন্ডে বিনিয়োগের বাধ্যবাধকতা পরিপালন করেনি। ”
গ্রামীণ ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্ট লিমিটেড সম্পর্কে তিনি বলেন, প্রতিষ্ঠানটি সব ধরনের মার্চেন্ট ব্যাংকিং কার‌্যক্রম(ইস্যু ম্যানেজমেন্ট, আন্ডার রাইটিং, পোর্ট ফলিও ম্যানেজমেন্ট, ফাইন্যান্সিয়াল এডভাইজরী, সিকিউরিটিজ ম্যানেজমেন্ট)করার পাশাপাশি শেয়ার কেনা-বেচা ব্যবসায় জড়িত।
“শেয়ার কেনা-বেচা থেকে অর্জিত মুনাফা প্রতিষ্ঠানটি করমুক্ত হিসেবে দাবি করলেও নিয়মিত শেয়ার ট্রেডিং ব্যবসা থেকে অর্জিত মুনাফার ওপর আয়কর প্রদান করেনি। ”
গ্রামীণ কমিউনিকেশনস সম্পর্কেও একই ধরনের অভিযোগ তুলে গোলাম হোসেন বলেন, প্রতিষ্ঠানটি প্রতিবছর একাউন্টস রিসিভএবল হিসাবে সম্পদ হতে কু-ঋণ সঞ্চিতি বাবদ বিপূল পরিমাণ অর্থ বাদ দিয়ে অবশিষ্ট অংশ প্রতিষ্ঠানের স্থিতিপত্রে সম্পদ হিসেবে প্রদর্শন করার মাধ্যমে প্রকারান্তরে সমপরিমান মুনাফা কম প্রদর্শন করে আসছে।


“প্রতিষ্ঠানটির কু-ঋণ সঞ্চিতি খরচ হিসেবে অনুমোদনযোগ্য না হওয়া সত্ত্বেও এরূপ খরচ দাবি করার মাধ্যমে সঠিক মুনাফা দেখায়নি। ”
গ্রামীণ শক্তি তিনি বলেন, কোম্পানিটি সৌরশক্তি, বায়োল্যান্ড ইত্যাদি উৎপাদনের প্রযুক্তি বিক্রি ও অন্যান্য উৎস থেকে আয় অর্জন করে থাকে। এটি একটি করযোগ্য প্রতিষ্ঠান। ইনফ্রাস্টাকচার ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি (ইডকল) থেকে প্রাপ্ত বিপুল পরিমাণ অনুদানের অঙ্ক প্রতিষ্ঠানটির ক্যাপিটাল ফ্যান্ড হিসেবে দেখানো হয়েছে।
“আয়কর আইনে ধর্মীয় ও দাতব্য উদ্দেশ্যে প্রাপ্ত স্বেচ্ছাপ্রণোদিত অনুদানকে করমুক্ত করা হয়েছে।

কিন্তু প্রতিষ্ঠানটি সৌরশক্তি, বায়োল্যান্ড ইত্যাদি উৎপাদনের প্রযুক্তি বিক্রি ব্যবসায় নিয়োজিত, যা ধর্মীয় ও দাতব্য উদ্দেশ্যে গঠিত নয়। ফলে প্রাপ্ত অনুদান করযোগ্য আয় হিসেবে বিবেচনাযোগ্য। ”
গ্রামীণ উদ্যোগ সম্পর্কে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, প্রতিষ্ঠানটি গ্রামীণ ব্যাংক ও গ্রামীণ ফান্ড থেকে প্রাপ্ত অনুদান দিয়ে ক্যাপিটাল (মূলধন) গঠন করেছে।
“আয়কর আইনে ধর্মীয় ও দাতব্য উদ্দেশ্যে প্রাপ্ত স্বেচ্ছাপ্রণোদিত অনুদানকে করমুক্ত করা হয়েছে। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটি কাপড় তৈরি ও বিক্রি ব্যবসায় নিয়োজিত, যা ধর্মীয় ও দাতব্য উদ্দেশ্যে গঠিত নয়।

ফলে প্রাপ্ত অনুদান করযোগ্য আয় হিসেবে বিবেচনাযোগ্য। ”
গ্রামীণ ট্রাস্ট আয় বর্ধনকারী কার‌্যক্রমের জন্য অর্থ ও কারিগরি সহায়তা দেয়ার মাধ্যমে দারিদ্র্য বিমোচন করার উদ্দেশ্যে গঠিত। ক্ষুদ্র ঋণের মাধ্যমে সুদ আয় অর্জনই প্রতিষ্ঠানটির মুল কাজ।
কোম্পানির ব্যাংক সুদ ও লভ্যাংশ আয় করযোগ্য হওয়া সত্ত্বেও প্রতিষ্ঠানটি ওই আয়কে করমুক্ত আয় হিসেবে দাবি করে কোনো আয়কর দেয়নি, বলেন গোলাম হোসেন।
তিনি বলেন, গ্রামীণ কল্যাণ গ্রামীণ ব্যাংকের সদস্য ও কর্মচারীদের কল্যাণে বিবিধ ও বহুমুখী কর্মসূচি গ্রহণের উদ্দেশ্যে গঠিত এ প্রতিষ্ঠান ‘গ্রামীণ কৃষি ফাউন্ডেশন’কে কোনো সুদ ব্যতীত বিপুল পরিমাণ অর্থ রিকভারেবল ফান্ড হিসেবে দিয়েছে।


“অথচ প্রতিষ্ঠানটি অন্যান্য প্রতিষ্ঠান থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ ঋণ হিসেবে নিয়েছে এবং এর বিপরীতে সুদ খরচ হিসেবে দাবি করেছে। ফলে ‘গ্রামীণ কৃষি ফাউন্ডেশন’কে সুদ ব্যতিরেকে ঋণ দিয়ে সুদ খাতে আয় দেখানো হয়নি এবং এ খাতে আয়কর দেয়া হয়নি। ”
আয়কর আইন অনুযায়ী করদাতা ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের তথ্য প্রকাশ করা বেআইনি হওয়ায় এনবিআর এসব প্রতিষ্ঠানের আয়কর ফাঁকির পরিমাণ বা বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করেনি।

সোর্স: http://bangla.bdnews24.com

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.